-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. আর-রাহমান(১),
(১) অর্থাৎ দয়াময় আল্লাহ। সূরাটিকে ‘আর-রাহমান’ শব্দ দ্বারা শুরু করার তাৎপর্য সম্ভবত এই যে, মক্কার কাফেররা আল্লাহ তা’আলার এই নাম সম্পর্কে অবগত ছিল না। তাই মুসলিমদের মুখে রহমান নাম শুনে ওরা বলাবলি করতঃ রাহমান আবার কি? তাদেরকে অবহিত করার জন্য এখানে এই নাম ব্যবহার করা হয়েছে। [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) অনন্ত করুণাময় (আল্লাহ);
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন(১),
(১) এখান থেকে সমগ্র সূরায় আল্লাহ তা'আলার দুনিয়া ও আখেরাতের অবদানসমূহের অব্যাহত বৰ্ণনা হয়েছে। প্রথমেই عَلَّم বাক্য দিয়ে সূচনা করার উদ্দেশ্য এটা হতে পারে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এর রচয়িতা নন, এ শিক্ষা দানকারী স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা। তারপর (عَلَّمَ الْقُرْآنَ) বলে সর্ববৃহৎ অবদান দ্বারা শুরু করা হয়েছে। কুরআন সর্ববৃহৎ অবদান। কেননা, এতে মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় প্রকার কল্যাণ রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম কুরআনকে কায়মনোবাক্যে গ্ৰহণ করেছেন এবং এর প্রতি যথার্থ মর্যাদা প্রদর্শন করেছেন। ফলে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে আখেরাতের উচ্চ মর্যাদা ও নেয়ামত দ্বারা গৌরবান্বিত করেছেন এবং দুনিয়াতেও এমন উচ্চ আসন দান করেছেন; যা রাজা-বাদশাহরাও হাসিল করতে পারে না।
ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী عَلَّم ক্রিয়াপদের দুটি কর্ম থাকে - এক যা শিক্ষা দেয়া হয় এবং ‘দুই যাকে শিক্ষা দেয়া হয়। আয়াতে প্রথম কর্ম উল্লেখ করা হয়েছে অর্থাৎ কুরআন। কিন্তু দ্বিতীয় কর্ম অৰ্থাৎ কাকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে, তার উল্লেখ নেই। কোন কোন তফসীরবিদ বলেনঃ এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্দেশ্য। কেননা, আল্লাহ তা'আলা প্রত্যক্ষভাবে তাকেই শিক্ষা দিয়েছেন। অতঃপর তার মধ্যস্থতায় সমগ্র সৃষ্টজীব এতে দাখিল রয়েছে। [আদওয়াউল বায়ান, আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২) তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। [1]
[1] বলা হয় যে, এটা মক্কাবাসীদের সেই কথার উত্তর, যাতে তারা বলত যে, এই কুরআন মুহাম্মাদকে কোন মানুষ শিক্ষা দেয়। কেউ কেউ বলেছেন, এটা তাদের ‘রহমান আবার কি?’ কথার উত্তর। কুরআন শিখানোর অর্থঃ তা সহজ করে দিয়েছেন। অথবা আল্লাহ তাঁর নবীকে শিখিয়েছেন এবং নবী তাঁর উম্মতকে শিখিয়েছেন। এই সূরায় মহান আল্লাহ তাঁর বহু নিয়ামতের কথা বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই সমস্ত নিয়ামতের মধ্যে মান-মর্যাদা, গুরুত্ব ও উপকারিতার দিক দিয়ে কুরআনের শিক্ষাদান যেহেতু সর্বাধিক প্রকট, তাই প্রথমে এই নিয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন। (ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ(১),
(১) অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছেঃ (وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ) অর্থাৎ আমি জিন ও মানুষকে শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যে সৃষ্টি করেছি। [সূরা আয যারিয়াত: ৫৬]
এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে মানুষকে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হওয়া কোন আশ্চর্যজনক ব্যাপার নয়। বরং তাঁর পক্ষ থেকে যদি এ ব্যবস্থা না থাকতো তাহলে সেটাই হতো বিস্ময়কর ব্যাপার। এ বিষয়টি কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভঙ্গিতে বুঝানো হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছেঃ “পথ প্রদর্শন করা আমার দায়িত্ব।” [সূরা আল-লাইল: ১২] আবার কোথাও বলা হয়েছেঃ “সরল সোজা পথ দেখিয়ে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব। বাকা পথের সংখ্যা তো অনেক।” [সূরা আন-নাহল: ৯] অন্যত্র উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফেরাউন মূসার মুখে রিসালাতের পয়গাম শুনে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ তোমার সেই ‘রব’ কে যে আমার কাছে দূত পাঠায়? জবাবে মূসা বললেনঃ “তিনিই আমার রব যিনি প্রতিটি জিনিসকে একটি নির্দিষ্ট আকার-আকৃতি দান করে পথ প্রদর্শন করেছেন।” [সূরা ত্বা-হা: ৪৭–৫০]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ। [1]
[1] অর্থাৎ, এরা বানর ইত্যাদি জীব-জন্তু থেকে অভিব্যক্তি বা ক্রমবিকাশ লাভ করতে করতে মানুষ হয়ে যায়নি; যেমন মিষ্টার ডারউইনের বিবর্তনবাদ থিউরীতে বলা হয়েছে। বরং মানুষকে এই আকার-আকৃতিতেই শুরু থেকেই মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন যা পশুদের থেকে ভিন্ন এক স্বতন্ত্র সৃষ্টি। এখানে ‘মানুষ’ শব্দটি ‘জিনস’ তথা জাতি হিসাবে ব্যবহার হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাষা(১),
(১) মূল আয়াতে البيان শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর একটি অর্থ হচ্ছে মনের ভাব প্রকাশ করা। অর্থাৎ কোন কিছু বলা এবং নিজের উদেশ্য ও অভিপ্ৰায় ব্যক্ত করা। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট করে তোলা। বাকশক্তি এমন একটি বিশিষ্ট গুণ যা মানুষকে জীবজন্তু ও পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টিকুল থেকে পৃথক করে দেয়। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] বিভিন্ন ভূখণ্ড ও বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন বাকপদ্ধতি সবাই এই বর্ণনা শিক্ষার বিভিন্ন অঙ্গ এবং এটা কার্যত (وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا) [সূরা আল-বাকারাহ: ৩১] আয়াতের তফসীরও।
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে। [1]
[1] এখানে ‘ভাব প্রকাশ’ বলতে প্রত্যেক ব্যক্তির মাতৃভাষাকে বুঝানো হয়েছে, যা বিশেষ শিক্ষা গ্রহণ ছাড়াই প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে নিজেই বলতে পারে এবং এতে নিজের মনের ভাবকে প্রকাশ করতে পারে। এমন কি যে শিশুর কোন জ্ঞান ও বোধশক্তি থাকে না, সেও বলতে পারে। এটা আল্লাহর এই শিক্ষার ফল, যার উল্লেখ এই আয়াতে হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. সূর্য ও চাঁদ আবর্তন করে নির্ধারিত হিসেবে(১),
(১) حسبان শব্দটি কারও কারও মতে ধাতু। এর অর্থ হিসাব। কেউ কেউ বলেন যে, এটা حساب শব্দের বহুবচন। [ইরাবুল কুরআন] আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, সূর্য ও চন্দ্রের গতি এবং কক্ষপথে বিচরণের অটল ব্যবস্থা একটি বিশেষ হিসাব ও পরিমাপ অনুযায়ী চালু রয়েছে। সূর্য ও চন্দ্রের গতির উপরই মানব জীবনের সমস্ত কাজ-কারবার নির্ভর করে। এর মাধ্যমেই দিবারাত্রির পার্থক্য, ঋতু পরিবর্তন এবং মাস ও বছর নির্ধারিত হয়। حسبان শব্দটিকে حساب এর বহুবচন ধরা হলে অর্থ এই হবে যে, সূর্য ও চন্দ্র প্ৰত্যেকের পরিক্রমণের আলাদা আলাদা হিসাব আছে। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর, কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) সূর্য ও চন্দ্র রয়েছে (নির্ধারিত) হিসাবে। [1]
[1] অর্থাৎ, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হিসাব অনুযায়ী নিজ নিজ কক্ষপথে চলমান আছে; যা হতে বিচ্যুত হয় না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. আর তৃণলতা ও বৃক্ষাদি সিজদা করছে(১),
(১) نجم শব্দটির পরিচিত অর্থ তারকা হলেও আরবী ভাষায় কাণ্ডবিহীন লতানো গাছকেও نجم বলা হয়। [ফাতহুল কাদীর] আর কাণ্ডবিশিষ্ট বৃক্ষকে شجر বলা হয়। অর্থাৎ সর্বপ্রকার লতা-পাতা ও বৃক্ষ, আল্লাহ তা'আলার সামনে সিজদা করে। কোন কোন মুফাসসির বলেন, সিজদা চূড়ান্ত সম্মান প্ৰদৰ্শন ও আনুগত্যের লক্ষণ। তাই এখানে উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক বৃক্ষ, লতা-পাতা, ফল ও ফুলকে যে যে বিশেষ কাজ ও মানুষের উপকারের জন্যে সৃষ্টি করেছেন, তারা অনবরত সে কাজ করে যাচ্ছে এবং নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে মানুষের উপকার সাধন করে যাচ্ছে। এই বাধ্যতামূলক আনুগত্যকেই আয়াতে সিজদা বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। আর যদি نجم দ্বারা তারকা উদ্দেশ্য নেয়া হয় তবে অর্থ হবে, তারকা ও বৃক্ষরাজি সিজদা করছে। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর; ইবন কাসীর; কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) তৃণলতা (বা নক্ষত্র) ও বৃক্ষাদি সিজদা করে। [1]
[1] যেমন, অন্যত্র বলেন, {أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ} (অর্থাৎ, তুমি কি দেখো না যে, আল্লাহকে সিজদা করে যারা আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে; সিজদা করে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমন্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু, এবং সিজদা করে মানুষের মধ্যে অনেকে---। (সূরা হাজ্জ ১৮)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. আর আসমান, তিনি তাকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন দাঁড়িপাল্লা,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদন্ড, [1]
[1] অর্থাৎ, পৃথিবীতে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং মানুষকেও তার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, {لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ} অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আমি আমার রসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও তুলাদন্ড (ন্যায়-নীতি); যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। (সূরা হাদীদ ২৫)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. যাতে তোমরা সীমালঙ্ঘন না কর দাঁড়িপাল্লায়।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) যাতে তোমরা ওজনে সীমালংঘন না কর। [1]
[1] অর্থাৎ, ওজনে ন্যায়পরায়ণতার গন্ডি অতিক্রম না কর।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. আর তোমরা ওজনের ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠিত কর এবং ওজনে কম দিও না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) ওজনের ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠা কর এবং ওজনে কম দিয়ো না।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. আর যমীন, তিনি তা স্থাপন করেছেন সৃষ্ট জীবের জন্য;
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্টজীবের জন্য।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান