-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. যখন সংঘটিত হবে কিয়ামত(১),
(১) الْوَاقِعَة শব্দটির অভিধানিক অর্থ হচ্ছে, “যা ঘটা অবশ্যম্ভাবী”। এখানে الْوَاقِعَة বলে কিয়ামত বোঝানো হয়েছে। ওয়াকি'আহ কেয়ামতের অন্যতম নাম। কেননা, এর বাস্তবতায় কোনরূপ সন্দেহ ও সংশয়ের অবকাশ নেই। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) যখন সংঘটিতব্য (কিয়ামত) সংঘটিত হবে। [1]
[1] وَاقِعَة কিয়ামতের নামসমূহের অন্যতম নাম। কেননা, তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। তাই তার এই নাম।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. (তখন) এটার সংঘটন মিথ্যা বলার কেউ থাকবে না।(১)
(১) অর্থাৎ আল্লাহ যখন সেটা ঘটাতে চাইবেন তখন সেটাকে রোধ করে বা সেটার আগমন ঠেকানোর কেউ থাকবে না। [ফাতহুল কাদীর] অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ তাআলা তা বলেছেন, “তোমাদের রবের ডাকে সাড়া দাও আল্লাহর পক্ষ থেকে সে দিন আসার আগে, যা অপ্রতিরোধ্য; যেদিন তোমাদের কোন আশ্রয়স্থল থাকবে না এবং তোমাদের জন্য তা নিরোধ করার কেউ থাকবে না।” [সূরা আশ-শূরা: ৪৭] অন্যত্র বলা হয়েছে, “এক ব্যক্তি চাইল, সংঘটিত হোক শাস্তি যা অবধারিত—কাফিরদের জন্য, এটাকে প্রতিরোধ করার কেউ নেই।” [সূরা আল-মা'আরিজ: ১-২] তাছাড়া আরও এসেছে, “তাঁর কথাই সত্য। যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিনের কর্তৃত্ব তো তাঁরই। উপস্থিত ও অনুপস্থিত সবকিছু সম্বন্ধে তিনি পরিজ্ঞাত; আর তিনিই প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত।” [সূরা আল-আনআম: ৭৩] আয়াতে كاذبة এর অর্থ কোন কোন মুফাসসিরের মতে, “অবশ্যম্ভাবী”। কোন কোন মুফাসসিরের মতে, “যা থেকে কোন প্রত্যাবর্তন নেই”। আবার কারো কারো মতে, كاذبة শব্দটি عاقبة ও عافية এর ন্যায় একটি ধাতু। অর্থ এই যে, কেয়ামতের বাস্তবতা মিথ্যা হতে পারে না। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২) এর সংঘটন মিথ্যা কিছু নয়।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. এটা কাউকে করবে নীচ, কাউকে করবে সমুন্নত(১);
(১) “নীচুকারী ও উচুকারী” এর একটি অর্থ হতে পারে। সেই মহা ঘটনা সব কিছু উলটপালট করে দেবে। কেয়ামত ভয়াবহ হবে এবং এতে অভিনব বিপ্লব সংঘটিত হবে। আরেকটি অর্থ এও হতে পারে যে, তা নীচে পতিত মানুষদেরকে উপরে উঠিয়ে দেবে এবং উপরের মানুষদেরকে নীচে নামিয়ে দেবে। আরেকটি অর্থ এও হতে পারে যে, সেটার সংবাদ কাছের লোকদেরকে আস্তে আসবে আর দূরের লোকদের কাছে উচু স্বরে আসবে। মোটকথা: সেই মহাসংবাদটি দূরের কাছের সবাই শোনতে পাবে। আরেকটি অর্থ হচ্ছে, কিয়ামতের সেদিন কাউকে উঁচু জান্নাতে স্থান করে দেয়া হবে আর কাউকে নীচু জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [ইবন কাসীর; কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) এটা কাউকেও করবে অবনত, কাউকেও করবে সমুন্নত। [1]
[1] অবনত ও সমুন্নত করা বলতে লাঞ্ছিত ও সম্মানিত করা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, কিয়ামত আল্লাহর অনুগত বান্দাদেরকে সমুন্নত ও সম্মানিত এবং তাঁর অবাধ্যজনদেরকে অবনত ও লাঞ্ছিত করবে; যদিও দুনিয়াতে ব্যাপার এর বিপরীত হয়। ঈমানদাররা সেখানে সম্মানিত ও মর্যাদাবান হবেন এবং কাফের ও অবাধ্যজনরা সেখানে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. যখন প্ৰবল কম্পনে প্ৰকম্পিত হবে যমীন
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) যখন পৃথিবী প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. এবং চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে পর্বতমালা,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) এবং পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে। [1]
[1] رَجًّا এর অর্থ নড়াচড়া ও অস্থিরতা (কম্পন)। আর بسّ অর্থ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. অতঃপর তা পর্যবসিত হবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায়;
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) ফলে ওটা পর্যবসতি হবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায়।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. আর তোমরা বিভক্ত হয়ে পড়বে তিন দলে—(১)
(১) ইবনে কাসীর বলেনঃ কেয়ামতের দিন সব মানুষ তিন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। এক দল আরশের ডানপার্শ্বে থাকবে। তারা আদম আলাইহিস সালাম-এর ডানপর্শ্বে থেকে পয়দা হয়েছিল এবং তাদের আমলনামা তাদের ডান হাতে দেয়া হবে। তারা সবাই জান্নাতী। দ্বিতীয় দল আরশের বামদিকে একত্রিত হবে। তারা আদম আলাইহিস সালাম-এর বামপার্শ্ব থেকে পয়দা হয়েছিল এবং তাদের আমলনামা তাদের বাম হাতে দেয়া হবে। তারা সবাই জাহান্নামী। তৃতীয় দল হবে অগ্রবতীদের দল। তারা আরশাধিপতি আল্লাহর সামনে বিশেষ স্বাতন্ত্র্য ও নৈকট্যের আসনে থাকবে। তারা হবেন নবী, রাসূল, সিদ্দীক, শহীদগণ। তাদের সংখ্যা প্রথমোক্ত দলের তুলনায় কম হবে। [ইবন কাসীর] মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনের অন্যত্রও মানুষকে এ তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। আল্লাহ বলেন, “তারপর আমরা কিতাবের অধিকারী করলাম আমার বান্দাদের মধ্য থেকে যাদেরকে আমরা মনোনীত করেছি; তবে তাদের কেউ নিজের প্রতি অত্যাচারী, কেউ মধ্যমপন্থী এবং কেউ আল্লাহর ইচ্ছায় কল্যাণের কাজে অগ্রগামী। এটাই মহাঅনুগ্রহ—” [সূরা ফাতির: ৩২]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) এবং তোমরা বিভক্ত হয়ে পড়বে তিন শ্রেণীতে। [1]
[1] أَزْوَاجًا হল أَصْنَافًا (শ্রেণী বা প্রকার) এর অর্থে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. অতঃপর ডান দিকের দল; ডান দিকের দলটি কত সৌভাগ্যবান!(১)
(১) মূল আয়াতে (أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আরবী ব্যাকরণ অনুসারে مَيْمَنَةٌ শব্দটি يمين শব্দ থেকে গৃহিত হতে পারে, যার অর্থ ডান হাত। অর্থাৎ যাদের আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে বা যারা ডানপাশে থাকবে। আবার يمن শব্দ থেকেও গৃহিত হতে পারে যার অর্থ শুভ লক্ষণ বা “খোশ নসীব” ও সৌভাগ্যবান। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) ডান হাত-ওয়ালারা; কত ভাগ্যবান ডান হাত-ওয়ালারা! [1]
[1] এ থেকে বুঝানো হয়েছে এমন সব সাধারণ মু’মিনদেরকে, যাঁদেরকে তাঁদের আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে এবং যেটা তাঁদের সৌভাগ্য লাভের নিদর্শন হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. এবং বাম দিকের দল; আর বাম দিকের দলটি কত হতভাগা!(১)
(১) মূল ইবারতে (أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। مشأمة শব্দের উৎপত্তি হয়েছে شؤم থেকে। এর অর্থ, দূৰ্ভাগ্য, কুলক্ষণ, অশুভ লক্ষণ। আরবী ভাষায় বাঁ হাতকেও شؤمي বলা হয়। অতএব (أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ) অর্থ দুৰ্ভগা লোক অথবা এমন লোক যারা আল্লাহর কাছে লাঞ্ছনার শিকার হবে এবং আল্লাহর দরবারে তাদেরকে বা দিকে দাঁড় করানো হবে। অথবা আমলনামা বাঁ হাতে দেয়া হবে। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) আর বাম হাত-ওয়ালারা; কত হতভাগ্য বাম হাত-ওয়ালারা![1]
[1] এ থেকে বুঝানো হয়েছে কাফেরদেরকে যাদেরকে তাদের আমলনামা বাম হাতে ধরানো হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. আর অগ্রবর্তিগণই তো অগ্রবর্তী(১),
(১) আয়াতে বলা হয়েছে, السَّابِقُون অর্থাৎ যারা সৎকাজ ও ন্যায়পরায়ণতায় সবাইকে অতিক্রম করেছে, প্রতিটি কল্যাণকর কাজে সবার আগে থেকেছে। আল্লাহ ও রাসূলের আহবানে সবার আগে সাড়া দিয়েছে, জিহাদের ব্যাপারে হোক কিংবা আল্লাহর পথে খরচের ব্যাপারে হোক কিংবা জনসেবার কাজ হোক কিংবা কল্যাণের পথে দাওয়াত কিংবা সত্যের পথে দাওয়াতের কাজ হোক। মুজাহিদ বলেন, অগ্রবর্তীগণ বলে নবীরাসূলগণকে বোঝানো হয়েছে। ইবনে সিরীন এর মতে যারা বায়তুল মুকাদ্দাস ও বায়তুল্লাহ উভয় কেবলার দিকে মুখ করে সালাত পড়েছে, তারা অগ্রবর্তীগণ। হাসান ও কাতাদাহর মতে, প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে অগ্রবর্তী সম্প্রদায় রয়েছে। এসব উক্তি উদ্ধৃত করার পর ইবনে-কাসীর বলেনঃ এসব উক্তি স্ব স্ব স্থানে সঠিক ও বিশুদ্ধ। পৃথিবীতে কল্যাণের প্রসার এবং অকল্যাণের উচ্ছেদের জন্য ত্যাগ ও কুরবানী এবং শ্ৰমদান জীবনদানের যে সুযোগই এসেছে তাতে সে-ই অগ্রগামী হয়ে কাজ করেছে। এ কারণে আখেরাতেও তাদেরকেই সবার আগে রাখা হবে। [ইবন কাসীর; কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) আর অগ্রবর্তিগণ তো অগ্রবর্তী। [1]
[1] এঁরা হলেন বিশিষ্ট ঈমানদারগণ। আর এটা হল ঈমানদারদের তৃতীয় প্রকার, যারা ছিলেন ঈমান গ্রহণ করার ব্যাপারে অগ্রবর্তী এবং যাবতীয় নেকীর কাজে আগে বেড়ে অংশ গ্রহণকারী। মহান আল্লাহ তাঁদেরকে বিশেষ নৈকট্য দানে ধন্য করবেন। বাক্যটির শব্দবিন্যাস ঠিক এইরূপ, যেরূপ বলা হয়, তুমি তো তুমি, আর যায়দ তো যায়দ। এতে যায়দের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব অধিকহারে প্রকাশ করা উদ্দেশ্য হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান