-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. আসমানসমূহে যা আছে এবং যমীনে যা আছে সবই আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে, যিনি অধিপতি, মহাপবিত্র, পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে আল্লাহর, যিনি সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, পূত-পবিত্র, পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
*উম্মী দ্বারা আরবের লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে।
২. তিনিই উম্মীদের(১) মধ্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যিনি তাদের কাছে তেলাওয়াত করেন তার আয়াতসমূহঃ তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত(২); যদিও ইতোপূর্বে তারা ছিল ঘোর বিভ্ৰান্তিতে;
(১) أُمِّي বা ‘উম্মী’ শব্দটির অর্থ নিরক্ষর। আরবরা এই পদবীতে সুবিদিত। [কুরতুবী, বাগভী]
(২) নবী-রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য বর্ণনা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তিনটি গুণ উল্লেখ করা হয়েছে, (এক) কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত। আয়াতে বর্ণিত ‘তেলাওয়াত’ শব্দের আসল অর্থ অনুসরণ করা। পরিভাষায় শব্দটি কালাম পাঠ করার অর্থে ব্যবহৃত হয়। آيَات ‘আয়াত’ বলে কুরআনের আয়াত বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে প্রেরণ করার এক উদ্দেশ্য এই যে, তিনি মানুষকে কুরআনের আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনাবেন। (দুই) উম্মতকে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সকল প্রকার অপবিত্ৰতা থেকে পবিত্র করা, আয়াতে উল্লেখিত يُزَكِّيهِمْ শব্দটি ‘তাযকিয়াহ’ থেকে গৃহীত। ‘তাযকিয়াহ’ শব্দটি অভ্যন্তরীণ দোষ থেকে পবিত্র করার অর্থে অধিকতর ব্যবহৃত হয়; অৰ্থাৎ কুফর, শিরক ও কুচরিত্ৰতা থেকে পবিত্র করা। কোন সময় বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সর্বপ্রকার পবিত্রতার জন্যেও ব্যবহৃত হয়। এখানে এই ব্যাপক অর্থই উদ্দেশ্য। (তিন) কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়া। এখানে ‘কিতাব’ বলে পবিত্র কুরআন এবং হিকমত’ বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত উক্তিগত ও কর্মগত শিক্ষাসমূহ বোঝানো হয়েছে। তাই অধিকাংশ তফসীরকারক এখানে হিকমতের তাফসীর করেছেন সুন্নাহ। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২) তিনিই নিরক্ষরদের[1] মধ্যে তাদের একজনকে পাঠিয়েছেন রসূলরূপে, যে তাদের নিকট আবৃত্তি করে তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় গ্রন্থ ও প্রজ্ঞা, যদিও ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে।
[1] أُمِّيِّيْنَ (নিরক্ষর) থেকে এমন আরবদেরকে বুঝানো হয়েছে, যাদের অধিকাংশ লেখাপড়া জানত না। এদেরকে বিশেষ করে উল্লেখ করার অর্থ এই নয় যে, রসূল (সাঃ)-এর রিসালাত অন্যদের জন্য ছিল না। কিন্তু সর্বপ্রথম যেহেতু সম্বোধন তাদেরকেই করা হয়েছে, তাই তাদের উপর ছিল আল্লাহর বেশী অনুগ্রহ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. এবং তাদের মধ্য হতে অন্যান্যদের জন্যও যারা এখনো তাদের সাথে মলিত হয়নি।(১) আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(১) আয়াতে বৰ্ণিত آخَرِين এর শাব্দিক অর্থ ‘অন্য লোক’। আর (لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ) এর অর্থ যারা এখন পর্যন্ত তাদের অর্থাৎ, নিরক্ষরদের সাথে মিলিত হয়নি। কিন্তু এরা কারা যাদেরকে আয়াতে “অন্য লোক” বলা হয়েছে? এ ব্যাপারে তিনটি প্ৰসিদ্ধ মত রয়েছে। এক. এখানে কেয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সকল মুসলিমকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ রাসূলকে আল্লাহ্ তা'আলা পরবর্তী সমস্ত মানুষদের জন্যও রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, কেয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সকল মুসলিমকে প্রথম কাতারের মুমিন অর্থাৎ সাহাবায়ে-কেরামের সাথে সংযুক্ত মনে করা হবে। এটা নিঃসন্দেহে পরবর্তী মুসলিমদের জন্যে সুসংবাদ। দুই. কেউ কেউ وآخَرِين শব্দটিকে أُمِّيِّينَ এর উপর عطف করেছেন। তখন এ আয়াতের সারমর্ম এই হবে যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূলকে নিরক্ষরদের মধ্যে এবং তাদের মধ্যে প্রেরণ করেছেন, যারা এখনও নিরক্ষরদের সাথে মিলিত হয়নি। তিন. কেউ কেউ وآخَرِين শব্দের عطف মেনেছেন وَيُعَلِّمُهُمْ এর সর্বনামের উপর।
আর তখন আয়াতের অর্থ হবে এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দেন নিরক্ষরদেরকে এবং তাদেরকে যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি। যারা এখনো নিরক্ষর বা ‘উম্মী’দের সাথে মিলিত হয়নি তারা নিঃসন্দেহে কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী বিভিন্ন দেশের মুসলিম। ইকরিমা ও মুজাহিদ থেকে অনুরূপ বৰ্ণিত হয়েছে। তারা তাবেয়ী, তবে তাবেয়ী ও অনাগত আরব অনারব সকল মুসলিম। [কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর] তাছাড়া এক হাদীস থেকেও এ অর্থের সপক্ষে দলীল নেয়া যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার উম্মতের পুরুষ ও মহিলাদের বংশধরদের চতুর্থ অধঃস্তনদের থেকেও বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবে, তারপর তিনি (وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ) আয়াত পাঠ করলেন। [ইবনে আবি আসিম: আস-সুন্নাহ: ৩০৯]
কোন কোন মুফাসসির এখানে সুনির্দিষ্টভাবে পারস্যের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তাদের মতের সপক্ষে তারা দলীল পেশ করে বলেন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণনা করেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলাম, এমতাবস্থায় সূরা জুমুআ অবতীর্ণ হয়। তিনি আমাদেরকে তা পাঠ করে শুনান। তিনি (وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ) পাঠ করলে আমরা আরয করলামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ, এরা কারা? তিনি নিরুত্তর রইলেন। দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার প্রশ্ন করার পর তিনি পার্শ্বে উপবিষ্ট সালমান ফারেসী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর গায়ে হাত রাখলেন এবং বললেনঃ যদি ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রের সমান উচ্চতায়ও থাকে, তবে তার সম্প্রদায়ের কিছুলোক সেখান থেকেও ঈমানকে নিয়ে আসবে। [বুখারী: ৪৮৯৭, ৪৮৯৮, মুসলিম: ২৫৪৬, তিরমিযী: ৩৩১০] [বাগভী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) আর তাদের অন্যান্যদের জন্যও (রসূল পাঠিয়েছেন), যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি।[1] আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
[1] এর সংযোগ হল أُمِّيِّيْنَ এর সাথে। অর্থাৎ, بَعَثَ فِي آخَرِيْنَ مِنْهُمْ আর آخَرِيْنَ বলতে পারসীক এবং অন্যান্য অনারব লোক, যারা কিয়ামত পর্যন্ত রসূল (সাঃ)-এর উপর ঈমান আনয়ন করবে। কেউ কেউ বলেন, আরব ও অনারবদের সেই সমস্ত লোক, যারা সাহাবাদের যামানার পর কিয়ামত পর্যন্ত আসতে থাকবে। এতে পারস্য, রোম, বর্বর, সুডান, তুর্কিস্তান, মোগল, কুর্দিস্তান এবং চিন ও ভারত ইত্যাদি দেশের সমস্ত বাসিন্দা (বিশ্ববাসী)রা অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, রসূল (সাঃ)-এর নবুঅত সবার জন্য। তাই এরা সবাই তাঁর উপর ঈমান আনে। আর ইসলাম গ্রহণ করার পর এরা সবাই مِنْهُمْ (তাদের অন্যান্য) এর দলে শামিল হয়ে যায়। অর্থাৎ, প্রথম প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীরা أُمِّيِّيْن এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, সমস্ত মুসলমান হল একই উম্মত। এই (তাদের) সর্বনামের কারণে কেউ কেউ বলেন, ‘অন্যান্য’ বলতে পরে আগমনকারী আরবদেরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, ‘তাদের’ সর্বনাম দ্বারা (আরব) ‘নিরক্ষরদের’ প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. এটা আল্লাহরই অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছে তিনি এটা দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহের অধিকারী।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, [1] যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। আর আল্লাহ তো মহা অনুগ্রহশীল।
[1] ‘এটা’র ইঙ্গিত নবী (সাঃ)-এর নবুঅতের প্রতি অথবা ইসলাম, অহী, অথবা আরব-অনারব একীভূত করার প্রতি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তা বহন করেনি, তারা গাধার মত! যে বহু পুস্তক বহন করে।(১) কত নিকৃষ্ট সে সম্প্রদায়ের দৃষ্টান্ত যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে! আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না।
(১) এ আয়াতাংশের দুটি অর্থ। একটি সাধারণ অর্থ এবং অপরটি বিশেষ অর্থ। সাধারণ অর্থ হলো, যাদের ওপর তাওরাতের জ্ঞান অর্জন, তদনুযায়ী আমল এবং তাওরাত অনুসারে দুনিয়াকে পথপ্রদর্শনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তারা তাদের এ দায়িত্ব বুঝেনি এবং তার হকও আদায় করেনি। বিশেষ অর্থ হলো, তাওরাতের ধারক ও বাহক গোষ্ঠী হওয়ার কারণে যাদের কাজ ছিল সবার আগে অগ্রসর হয়ে সেই রাসূলকে সাহায্য-সহযোগিতা করা যার আগমনের সুসংবাদ তাওরাতে স্পষ্ট ভাষায় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারাই তার সবচেয়ে বেশী শক্রতা ও বিরোধিতা করেছে এবং তাওরাতের শিক্ষার দাবী পূরণ করেনি। পার্থিব জাঁকজমক ও ধনৈশ্বর্য তাদেরকে তাওরাত থেকে বিমুখ করে রেখেছে। ফলে তারা তাওরাতের পণ্ডিত হওয়া সত্বেও তাওরাতের নির্দেশাবলী বাস্তবায়নের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ মুর্খ ও অনভিক্তের পর্যায়ে চলে এসেছে।
আলোচ্য আয়াতে তাদের নিন্দা করে বলা হয়েছে যে, তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে গর্দভ, যার পিঠে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বৃহদাকার গ্রন্থ চাপিয়ে দেয়া হয়। এই গর্দভ সেই বোঝা বহন তো করে, কিন্তু তার বিষয়বস্তুর কোন খবর রাখে না এবং তাতে তার কোন উপকার হয় না। ইয়াহুদীদের অবস্থাও তদ্রুপ। তারা পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অর্জনের জন্যে তাওরাতকে বহন করে এবং এর মাধ্যমে জনগণের মধ্যে জাঁকজমক ও প্রতিপত্তি লাভ করতে চায়, কিন্তু এর দিকনির্দেশ দ্বারা কোন উপকার লাভ করে না। [দেখুন: ইবন কাসীর, কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়েছিল, অতঃপর তা তারা বহন করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত পুস্তক বহনকারী গর্দভ।[1] কত নিকৃষ্ট সেই সম্প্রদায়ের দৃষ্টান্ত যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আর আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
[1] أَسْفَارٌ হল سِفْرٌ এর বহুবচন। অর্থ হল, বড় কিতাব। কিতাব পাঠ করা হয়, তখন মানুষ তার অর্থসমূহে সফর করে। এই জন্য কিতাবকেও সিফ্র বা সফর বলা হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর) এখানে আমলবিহীন ইয়াহুদীদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হচ্ছে যে, যেমন গাধা; তার পিঠে যে কিতাবগুলো বোঝাই করা আছে তাতে কি লেখা আছে অথবা তার উপর যা বোঝাই করা হয়েছে তা কিতাব, না ঘাস-ভুসি তা জানে না। অনুরূপ এই ইয়াহুদীরাও; তাদের কাছে তওরাত আছে। তা পড়া ও মুখস্থ করার দাবীও করে, কিন্তু তারা না তা বোঝে, আর না তার নির্দেশ অনুযায়ী আমল করে। বরং তার অপব্যাখ্যা এবং তাতে হেরফের, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করে। কাজেই প্রকৃতপক্ষে এরা গাধার থেকেও বেশী নিকৃষ্ট। কারণ, গাধা জন্মগতভাবেই বিবেক ও বোধশক্তি থেকে বঞ্চিত হয়, আর এদের মধ্যে বিবেক-বুদ্ধি বিদ্যমান, কিন্তু এরা তার সঠিক ব্যবহার করে না। এই জন্য পরে বলা হয়েছে যে, এদের দৃষ্টান্ত বড়ই নিকৃষ্ট। অনুরূপ যারা তাদের অন্তর, চক্ষু ও কর্ণের সঠিক ব্যবহার করে না, তাদের সম্বন্ধে মহান আল্লাহ বলেছেন, أُولَئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ‘‘এরা চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্টতর।’’ (সূরা আ’রাফ ১৭৯ আয়াত) হুবহু দৃষ্টান্ত সেই মুসলিমদের, বিশেষ করে আলেমদেরও যারা কুরআন পড়ে ও মুখস্থ করে, কিন্তু তার নির্দেশ অনুযায়ী আমল করে না। (যেমন যে কিতাব বর্জন করে, তাকে সেই কুকুরের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যাকে তাড়া করলে সে জিভ বের করে হাঁপায় এবং এমনি ছেড়ে দিলেও সে জিভ বের করে হাঁপাতে থাকে। (ঐ ১৭৬ আয়াত)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. বলুন, হে ইয়াহুদী হয়ে যাওয়া লোকরা! যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু, অন্য লোকেরা নয়(১); তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
(১) কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে তাদের এই দাবী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন, তারা বলত: “ইয়াহুদীরা ছাড়া কেউই জান্নাতে যাবে না” [সূরা আল-বাকারাহ: ১১১]। “জাহান্নামের আগুন আমাদের কখনো স্পর্শ করবে না। আর আমাদেরকে যদি নিতান্তই শাস্তি দেয়া হয় তাহলে মাত্র কয়েক দিনের জন্য দেয়া হবে” [সূরা আল-বাকারাহ: ৮০, সূরা আলে ইমরান: ২৪]। “আমরা আল্লাহর বেটা এবং তাঁর প্রিয়পাত্র”। [সূরা আল-মায়েদাহ: ১৮]।
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) বল, ‘হে ইয়াহুদীগণ! যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু, অন্য কোন মানবগোষ্ঠী নয়, [1] তাহলে তোমরা মৃত্যু কামনা কর; [2] যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ [3]
[1] যেমন, তারা বলত যে, ‘আমরা আল্লাহর বেটা এবং তাঁরই প্রিয় বান্দা।’ (সূরা মায়েদাহঃ১৮) এবং দাবী করত যে, ‘জান্নাতে কেবল তারাই প্রবেশ করবে যারা ইয়াহুদী এবং খ্রিষ্টান হবে।’ (বাক্বারাহ ১১১ আয়াত)
[2] যাতে তোমরা সেই মর্যাদা-সম্মান অর্জন করতে পার, যা তোমাদের ধারণা অনুযায়ী তোমাদের জন্য হওয়া উচিত।
[3] কারণ, যে এ ব্যাপারে প্রত্যয়ী হয় যে, মরার পর তার জন্য রয়েছে জান্নাত, সে সেখানে সত্বর পৌঁছতে চায়। হাফেয ইবনে কাসীর এর তফসীর করেছেন, ‘মুবাহালা’র জন্য আহবান করা। অর্থাৎ, তাদেরকে বলা হল যে, তোমরা যদি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নবুঅতকে অস্বীকার করার ব্যাপারে এবং এবং আল্লাহর প্রিয় ও বন্ধু হওয়ার দাবীতে সত্যবাদী হও, তবে মুসলিমদের সাথে ‘মুবাহালা’ কর। অর্থাৎ, মুসলিম ও ইয়াহুদী উভয়ে মিলে আল্লাহর কাছে দু’আ করবে যে, ‘হে আল্লাহ! আমাদের উভয়ের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী, তাকে মৃত্যু দান কর।’ (সূরা বাক্বারার ৯৪ নং আয়াতের টীকা দ্রষ্টব্যঃ)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. কিন্তু তারা তাদের হাত যা আগে পাঠিয়েছে তার কারণে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। আর আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।(১)
(১) এখানে আল্লাহ্ তা'আলা ইয়াহুদীদের আসল চরিত্র তুলে ধরছেন। তা হচ্ছে, ইয়াহুদীরা কখনও মৃত্যু কামনা করবে না। কারণ, তারা আখেরাতের জন্যে কুফর, শিরক ও কুকর্ম ব্যতীত আর কিছুই পাঠায়নি। অতএব তারা ভালরূপে জানে যে, আখেরাতে তাদের জন্যে জাহান্নামের শাস্তিই অবধারিত রয়েছে। তারা আল্লাহর প্রিয়জন হওয়ার যে দাবি করে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা স্বয়ং তাদের অজানা নেই। তবে দুনিয়ার উপকারিতা লাভ করার জন্যে তারা এ ধরনের দাবি করে। তারা আরও জানে যে, যদি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথায় তারা মৃত্যু কামনা করে তবে তা অবশ্যই কবুল হবে এবং তারা মরে যাবে। তাই বলা হয়েছে, ইয়াহুদীরা মৃত্যু কামনা করতেই পারে না। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যদি সে সময় তাদের কেউ মৃত্যু কামনা করত, তবে তারা তৎক্ষণাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হত। [মুসনাদে আহমাদ: ১/২৪৮, মুসনাদে বাযযার: ২১৮৯ (কাশফুল আসতার), আসসুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী: ১১০৬১, মুসনাদে আবি। ইয়া'লা: ২৬০৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) কিন্তু তারা তাদের হস্ত যা অগ্রে প্রেরণ করেছে তার কারণে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না।[1] আর আল্লাহ যালেমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।
[1] অর্থাৎ, কুফরী, পাপ এবং আল্লাহর কিতাবে হেরফের ও পরিবর্তন ইত্যাদি করার কারণে কখনও এরা মৃত্যু কামনা করবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. বলুন, তোমরা যে মৃত্যু হতে পলায়ন কর সে মৃত্যু তোমাদের সাথে অবশ্যই সাক্ষাত করবে। তারপর তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে গায়েব ও প্রকাশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে অতঃপর তোমরা যা আমল করতে সে সম্পর্কে তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) বল, তোমরা যে মৃত্যু হতে পলায়ন কর, সেই মৃত্যুর সাথে তোমাদের অবশ্যই সাক্ষাৎ হবে। অতঃপর তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা (আল্লাহ)র নিকট এবং তোমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হবে, যা তোমরা করতে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. হে ঈমানদারগণ! জুমুআর দিনে(১) যখন সালাতের জন্য ডাকা হয়(২) তখন তোমরা আল্লাহ্র স্মরণে ধাবিত হও (৩)এবং কেনা-বেচা ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।
(১) এই দিনটি মুসলিমদের সমাবেশের দিন। তাই এই দিনকে ‘ইয়াওমুল জুম'আ’ বলা হয়। এইদিনের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন হাদীসে এসেছে; যেমন, আল্লাহ তা'আলা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও সমস্ত জগৎকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয়দিনের শেষদিন ছিল জুম'আর দিন। [মুসলিম: ২৭৮৯] আরও এসেছে, “যে দিনগুলোতে সূৰ্য উদিত হয় তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হচ্ছে, জুম'আর দিন। এই দিনেই আদম আলাইহিস সালাম সৃজিত হন, এই দিনেই তাকে জান্নাতে দাখিল করা হয় এবং এই দিনেই জন্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়। আর কেয়ামত এই দিনেই সংঘটিত হবে।” [মুসলিম: ৮৫৪] আরও এসেছে, “এই দিনে এমন একটি মুহুর্ত আছে, যাতে মানুষ যে দো'আই করে, তাই কবুল হয়।” [বুখারী: ১৯৩৫, মুসলিম: ৮৫২]
আল্লাহ তা'আলা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্যে এই দিন রেখেছিলেন। কিন্তু পূৰ্ববতীর্ণ উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ইয়াহুদীরা ‘ইয়াওমুস সাবত’ তথা শনিবারকে নিজেদের সমাবেশের দিন নির্ধারিত করে নেয় এবং নাসারারা রবিবারকে। আল্লাহ তা'আলা এই উম্মতকে তওফীক দিয়েছেন যে, তারা শুক্রবারকে মনোনীত করেছে। অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমরা সবশেষে এসেও কিয়ামতের দিন অগ্রণী হব। আমরাই প্রথম জান্নাতে প্ৰবেশ করব। যদিও তাদেরকে আমাদের আগে কিতাব দেয়া হয়েছিল, আর আমাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের পরে। কিন্তু তারা এতে মতভেদে লিপ্ত হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে তাদের মতভেদপূর্ণ বিষয়ে সঠিক পথ দিয়েছেন। এই যে দিনটি, তারা এতে মতভেদ করেছে। অত:পর আল্লাহ আমাদেরকে এ দিনের সঠিক হেদায়াত করেছেন। তা হলো, জুম'আর দিন। সুতরাং আজ আমাদের, কাল ইয়াহুদীদের। আর পরশু নাসারাদের।” [বুখারী: ৮৭৬, মুসলিম: ৮৫৫]
সম্ভবত ইয়াহুদীদের আলোচনার পর পবিত্র কুরআনের জুম'আর আলোচনার কারণ এটাই যে, তাদের ইবাদতের যুগ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন কেবলমাত্র মুসলিমদের ইবাদতের দিনের প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আর তা হচ্ছে জুম'আর দিন। মূর্খতাযুগে শুক্রবারকে “ইয়াওমে আরূবা” বলা হত। বলা হয়ে থাকে যে, আরবে কাব ইবনে লুয়াই সর্বপ্রথম এর নাম ‘ইয়াওমুল জুমুআ’ রাখেন। কারণ, জুম'আ শব্দটির অর্থ একত্রিত করা। এই দিনে কুরাইশদের সমাবেশ হত এবং কাব ইবনে লুয়াই ভাষণ দিতেন। সারকথা এই যে, ইসলাম পূর্বকালেও ক’ব ইবনে লুয়াই-এর আমলে শুক্রবার দিনকে গুরুত্ব দান করা হত। তিনিই এই দিনের নাম জুমআর দিন রেখেছিলেন। কিন্তু সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় যে, “আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টিকে এই দিন একত্রিত করা হয়েছিল বলেই এই দিনকে জুম'আ নামকরণ করা হয়েছে।” [মুস্তাদরাকে হাকিম: ১/৪১২, নং ১০২৮, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ ৩/১১৮, নং ১৭৩২, ত্বাবারানী: মুজামুল কবীর ৬/২৩৭ নং ৬০৯২, মুজামুল আওসাত: ১/২৫০, নং ৮২১, মাজমাউয যাওয়ায়িদ: ২/৩৯০]
(২) نُودِيَ অর্থ যখন ডাকা হয়। এখানে খোতবার আযান বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর, বাগভী] সায়েব ইবনে ইয়ায়ীদ বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ, আবু বকর এবং উমরের যুগে জুম'আর দিনে ইমাম যখন মিম্বরে বসত তখন প্রথম আযান দেয়া হত। তারপর যখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগ আসল এবং মানুষ বেড়ে গেল তখন তৃতীয় আহবানটি তিনি বাড়িয়ে দেন” [বুখারী: ৯১২]
(৩) আয়াতে বর্ণিত فَاسْعَوْا শব্দের এক অর্থ দৌড়ানো এবং অপর অর্থ কোন কাজ গুরুত্ব সহকারে করা। এখানে এই অর্থ উদ্দেশ্য। কারণ, সালাতের জন্যে দৌড়ে আসতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “প্রশান্তি ও গাম্ভীৰ্য সহকারে সালাতের জন্যে গমন কর।” [বুখারী: ৬৩৬, মুসলিম: ৬০২] আয়াতের অর্থ এই যে, জুমআর দিনে জুমআর আযান দেয়া হলে আল্লাহর যিকিরের দিকে গুরুত্বসহকারে যাও। অর্থাৎ সালাত ও খোতবার জন্যে মসজিদে যেতে যত্নবান হও। যে ব্যক্তি দৌড় দেয়, সে যেমন অন্য কোন কাজের প্রতি মনোযোগ দেয় না, তোমরাও তেমনি আযানের পর সালাত ও খোতবা ব্যতীত অন্য কাজের দিকে মনোযোগ দিও না।
এখানে ‘যিকর’ বলে জুম'আর সালাত এবং এই সালাতের অন্যতম শর্ত খোতবাও বোঝানো হয়েছে। বহু হাদীসে জুম'আর দিনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদে হাযির হওয়ার গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে জুম'আর দিনে জানাবত তথা অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়ার মত গোসল করবে, তারপর (প্রথম ঘণ্টায়) মসজিদে হাজির হবে সে যেন একটি উট কুরবানী করল। আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয় ঘণ্টায় গেল সে যেন গরু কুরবানী করল। যে তৃতীয় ঘন্টায় গেল সে যেন শিংওয়ালা ছাগল কুরবানী করল। যে চতুর্থ ঘন্টায় গেল সে যেন মুরগী উৎসর্গ করল। যে পঞ্চম ঘন্টায় গেল সে যেন ডিম উৎসর্গ করল। তারপর যখন ইমাম বের হয়ে যায় তখন ফেরেশতারা (লিখা বন্ধ করে) ইমামের কাছে হাযির হয়ে যিকর (খুতবা) শুনতে থাকে।” [বুখারী: ৮৮১] তাছাড়া এটা অনেকের নিকট দোআ কবুল হওয়ার সময়। এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জুম'আর দিনে এমন একটি সময় আছে কোন মুসলিম যদি সে সময়ে আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণ চায় তবে অবশ্যই তিনি তাকে সেটা দিবেন”। [বুখারী: ৬৪০০]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) হে বিশ্বাসীগণ! জুমুআর দিনে যখন নামাযের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের জন্য ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। [1] এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।
[1] এই আযান কিভাবে দেওয়া হবে, তার শব্দাবলী কি হবে? কুরআন মাজীদে কোথাও তার উল্লেখ নেই। অবশ্য হাদীসে আছে। এ থেকে জানা যায় যে, হাদীস ছাড়া কুরআন বোঝাও সম্ভব নয় এবং তার উপর আমল করাও সম্ভব নয়। ‘জুমআহ’কে জুমআহ এই জন্য বলা হয় যে, এই দিনে আল্লাহ তাআলা সমস্ত বস্তুর সৃষ্টির কাজ সমাপ্ত করেন। যেন সকল সৃষ্টি এই দিন ‘জমা’ (একত্রিত) হয়েছে। অথবা নামাযের জন্য মানুষ জমা ও সমবেত হয়, তাই এই দিনকে জুমআহর দিন বলা হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর) فَاسْعَوْا (ধাবিত হও) এর অর্থ এই নয় যে, দৌড়ে এস। বরং অর্থ হল, আযানের পর সত্বর চলে এস এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ কর। কেননা, হাদীসে নামাযের জন্য দৌড়ে আসতে নিষেধ এবং ধীর-স্থিরতার সাথে আসতে তাকীদ করা হয়েছে। (বুখারী, আযান অধ্যায়, মুসলিমঃ মাসজিদ অধ্যায়) কেউ কেউ وَذَرُوا الْبَيِعَ (ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর বা কেনাবেচা বন্ধ কর)-কে দলীল বানিয়ে বলেছেন যে, জুমআহ কেবল শহরেই ফরয, গ্রামবাসীদের উপর ফরয নয়। কেননা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় কেবল শহরেই হয়, গ্রাম-গঞ্জে হয় না। অথচ প্রথমতঃ দুনিয়াতে কোন গ্রাম এমন নেই, যেখানে কেনাবেচা এবং কোন ব্যবসা হয় না। অতএব এ দাবীই হল বাস্তবতার বিপরীত। দ্বিতীয়তঃ বেচাকেনা ও ব্যবসা বলতে বুঝানো হয়েছে, যাবতীয় পার্থিব ব্যস্ততাকে; তা যেমন এবং যে প্রকারেরই হোক না কেন, জুমআর আযানের পর তা ত্যাগ করতে হবে। গ্রামবাসীদের বৈষয়িক ব্যস্ততা থাকে না কি? চাষাবাদ, ঘর-সংসারের নানা ব্যস্ততা দুনিয়া থেকে ভিন্ন জিনিস নাকি?
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. অতঃপর সালাত শেষ হলে তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর ও আল্লাহকে খুব বেশী স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর[1] ও আল্লাহকে অধিকরূপে স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।
[1] এর অর্থ বৈষয়িক কাজ-কর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্য। অর্থাৎ, জুমআর নামায শেষ করার পর তোমরা পুনরায় নিজ নিজ কাজে-কামে এবং দুনিয়ার ব্যস্ততায় লেগে যাও। এ থেকে উদ্দেশ্য হল এই ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দেওয়া যে, জুমআর দিন কাজ-কর্ম বন্ধ রাখা জরুরী নয়। কেবল নামাযের জন্য তা বন্ধ রাখা জরুরী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান