-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. হে নবী! তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীগণকে তালাক দিতে ইচ্ছে কর তাদেরকে তালাক দিও ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে(১) এবং তোমরা ইদ্দতের হিসেব রেখো। আর তোমাদের রব আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো। তোমরা তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বহিস্কার করো না(২) এবং তারাও বের হবে না, যদি না তারা লিপ্ত হয় স্পষ্ট অশ্লীলতায়।(৩) আর এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা; যে আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে সে নিজেরই উপর অত্যাচার করে। আপনি জানেন না, হয়ত আল্লাহ এর পর কোন উপায় করে দেবেন।
(১) আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বর্ণনা করেন যে, তিনি তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিয়েছিলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গোচরীভূত করলে তিনি খুব নারায হয়ে বললেনঃ তার উচিত হয়েয অবস্থায় তালাক প্রত্যাহার করে নেয়া এবং স্ত্রীকে বিবাহে রেখে দেয়া। (তালাকটি রাজয়ী তালাক ছিল, যাতে প্রত্যাহারের সুযোগ থাকে) এই হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার পর আবার যখন স্ত্রীর হায়েয হবে এবং তা থেকে পবিত্র হবে, তখন যদি তালাক দিতেই চায়, তবে সহবাসের পূর্বে পবিত্র অবস্থায় তালাক দিবে। এই ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক প্রদানের আদেশই আল্লাহ তা'আলা (আলোচ্য) আয়াতে দিয়েছেন৷ [বুখারী: ৫২৫১, মুসলিম: ১৪৭১]
(২) এখানে ইদ্দত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে কি ব্যবহার করতে হবে তা জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, বলা হচ্ছে, স্ত্রীদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিষ্কার করো না। এখানে তাদের গৃহ বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যে পর্যন্ত তাদের বসবাসের হক পুরুষের দায়িত্বে থাকে, সেই পর্যন্ত গৃহে তাদের অধিকার আছে। [দেখুন: ইবন কাসীর]
(৩) প্ৰকাশ্য নির্লজ্জ কাজ বলে কি বোঝানো হয়েছে, এ সম্পর্কে তিন প্রকার উক্তি বৰ্ণিত আছে। (এক) নির্লজ্জ কাজ বলে খোদ গৃহ থেকে বের হয়ে যাওয়াই বোঝানো হয়েছে। এমতাবস্থায় এটা দৃশ্যত ব্যতিক্রম, যার উদ্দেশ্য গৃহ থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া নয়; বরং নিষেধাজ্ঞাকে আরও জোরদার করা। অর্থাৎ তালাকপ্ৰাপ্ত স্ত্রীরা তাদের স্বামীর গৃহ থেকে বের হবে না, কিন্তু যদি তারা অশ্লীলতায়ই মেতে উঠে ও বের হয়ে পড়ে তবে সে গুণাহগার হবে। সুতরাং এর অর্থ বের হয়ে যাওয়ার বৈধতা নয়; বরং আরও বেশি নিন্দা ও নিষিদ্ধতা প্রমাণ করা। (দুই) নির্লজ্জ কাজ বলে ব্যভিচার বোঝানো হয়েছে।
এমতাবস্থায় ব্যতিক্রম যথার্থ অর্থেই বুঝতে হবে। অর্থাৎ তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ব্যভিচার করলে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে তার প্রতি শরীআতের শাস্তি প্রয়োগ করার জন্যে অবশ্যই তাকে ইদ্দতের গৃহ থেকে বের করা হবে। (তিন) নির্লজ্জ কাজ বলে কটু কথাবার্তা, ঝগড়া-বিবাদ বোঝানো হয়েছে। আয়াতের অর্থ হবে এই যে, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিষ্কার করা জায়েয নয়। কিন্তু যদি যারা কটুভাষিণী ও ঝগড়াটে হয় এবং স্বামীর আপনজনদের সাথে দুর্ব্যবহার করে, তবে তাদেরকে ইদ্দতের গৃহ থেকে বহিষ্কার করা যাবে। [দেখুন: কুরতুবী, বাগভী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) হে নবী! (তোমার উম্মতকে বল,) তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে ইচ্ছা কর[1] তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে,[2] ইদ্দতের হিসাব রেখো[3] এবং তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করো; তোমরা তাদেরকে তাদের বাসগৃহ হতে বহিষ্কার করো না[4] এবং তারা নিজেও যেন বের না হয়; [5] যদি না তারা লিপ্ত হয় স্পষ্ট অশ্লীলতায়।[6] এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। আর যে আল্লাহর সীমা লংঘন করে, সে নিজের উপরই অত্যাচার করে।[7] তুমি জান না, হয়তো আল্লাহ এর পর কোন উপায় করে দেবেন।[8]
[1] নবী করীম (সাঃ)-কে সম্বোধন করা হয়েছে তাঁর সম্মান ও মর্যাদার কারণে। নচেৎ এই নির্দেশ উম্মতকে দেওয়া হচ্ছে। অথবা সম্বোধন তাঁকেই করা হয়েছে এবং বহুবচন ক্রিয়া তাঁর সম্মানার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আর উম্মতের জন্য তো তাঁর আদর্শই যথেষ্ট। طَلَّقْتُمْ এর অর্থ হল, যখন তালাক দেওয়ার পাকা ইচ্ছা করে নিবে। (ইদ্দত মানে গণনা। অর্থাৎ, তালাকের নির্ধারিত দিন গণনা করা।)
[2] এতে তালাক দেওয়ার তরীকা ও তার সময় উল্লেখ করা হয়েছে। لِعِدَّتِهِنَّ তে ‘লাম’ অক্ষরটি ‘তাওক্বীত’ (সময় নির্ণয়) এর জন্য ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, لأَوَّلِ অথবা لاسْتِقْبَالِ عِدَّتِهِنَّ (ইদ্দতের শুরুতে) তালাক দাও। অর্থাৎ, যখন মহিলা ঋতু (মাসিক) থেকে পবিত্র হয়ে যাবে, তখন তার সাথে আর সহবাস না করেই তালাক দাও। পবিত্র অবস্থা হল তার ইদ্দতের শুরু। এর অর্থ হল, মাসিক অবস্থায় অথবা পবিত্র অবস্থায় সহবাস করার পর তালাক দেওয়া ভুল তরীকা। এটাকেই ফিকাহ শাস্ত্রের পন্ডিতগণ ‘বিদয়ী তালাক’ এবং পূর্বের (সঠিক) তরীকাকে ‘সুন্নী তালাক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এর সমর্থন হাদীসেও পাওয়া যায়; ইবনে উমার (রাঃ) মাসিক অবস্থায় তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেন। এতে রসূল (সাঃ) রাগান্বিত হন এবং তাঁকে তালাক প্রত্যাহার করে নিতে বলার সাথে সাথে পবিত্র অবস্থায় তালাক দেওয়ার নির্দেশ দেন। আর এর সমর্থনে তিনি এই আয়াতকেই দলীল হিসাবে গ্রহণ করেন। (বুখারীঃ তালাক অধ্যায়) তবে মাসিক অবস্থায় দেওয়া তালাকও বিদআত হওয়া সত্ত্বেও তা তালাক বলে গণ্য হবে। মুহাদ্দিসগণের এবং অধিকাংশ আলেমগণের এটাই উক্তি। অবশ্য ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রঃ) এবং ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম (রঃ) বিদয়ী তালাককে তালাক গণ্য করেননি। (বিস্তারিত জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ নাইলুল আওতার, তালাক অধ্যায়, পরিচ্ছেদ, মাসিক ও পবিত্র অবস্থায় তালাক দেওয়া নিষেধ। এ ছাড়া অন্যান্য হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থও দেখুন।)
[3] অর্থাৎ, এর প্রথম ও শেষটার খেয়াল রাখ, যাতে স্ত্রী এর পর দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারে। অথবা তোমরাই যদি রুজু’ (প্রত্যাহার) করতে (স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে) চাও, তবে (প্রথম এবং দ্বিতীয় তালাকের পর) ইদ্দতের ভিতরেই যেন রুজু’ করতে পার
[4] অর্থাৎ, তালাক দেওয়ার সাথে সাথেই স্ত্রীকে নিজ ঘর থেকে বের করে দিও না, বরং ইদ্দত পর্যন্ত তাকে তোমাদেরই ঘরে থাকতে দাও। ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত তার বাসস্থান ও ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তোমাদের উপরেই থাকবে।
[5] অর্থাৎ, ইদ্দতের দিনগুলোতে স্ত্রীও যেন ঘর হতে বের হওয়া থেকে বিরত থাকে। তবে যদি একান্ত কোন জরুরী কাজে বের হতে হয় তবে সে কথা ভিন্ন।
[6] অর্থাৎ, ব্যভিচার, মুখ-খিস্তি, গালাগালি, ঝগড়া বা চরম অভদ্রতা প্রদর্শন করলে, যা থেকে ঘরের লোকদের কষ্ট হয়। এই অবস্থায় তাকে (বাড়ি থেকে) বের করা জায়েয হবে।
[7] অর্থাৎ, উল্লিখিত সমূহ বিধান হল আল্লাহর কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা। যা অতিক্রম করা নিজের উপর যুলুম করার নামান্তর। কেননা, এই সীমালঙ্ঘনের যাবতীয় ক্ষতি ভোগ করতে হবে সীমালঙ্ঘনকারী নিজেকেই।
[8] অর্থাৎ, পুরুষের অন্তরে তালাকপ্রাপ্তা মহিলার প্রতি চাহিদা ও আকর্ষণ সৃষ্টি করে দেবেন ফলে সে রুজু করার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে যাবে। কেননা, প্রথম ও দ্বিতীয় তালাকের পর স্বামী ইদ্দতের ভিতরেই ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার রাখে। এই জন্য কোন কোন মুফাসসিরদের মত হল, এই আয়াতে আল্লাহ কেবল এক তালাক দেওয়ার আদেশ করেছেন এবং এক সাথে তিন তালাক দিতে নিষেধ করেছেন। কেননা, সে যেদি একই সময়ে তিন তালাক দিয়ে দেয় (আর শরীয়ত যদি তার এই তালাককে বৈধ গণ্য করে কার্যকরী করে দেয়), তবে এ কথা বলার কি কোন অর্থ হবে যে, ‘হয়তো আল্লাহ কোন নতুন উপায় বের করে দেবেন।’ (ফাতহুল ক্বাদীর) এটাকেই দলীল বানিয়ে ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য উলামাগণ বলেছেন যে, বাসস্থান ও ভরণ-পোষণের উপর যে তাকীদ করা হয়েছে, তা কেবল সেই মহিলাদের জন্য, যাদেরকে তাদের স্বামীরা প্রথম অথবা দ্বিতীয় তালাক দিয়েছে। কেননা, এতে স্বামীর ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার অবশিষ্ট থাকে। আর যে মহিলাকে ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে দুই তালাক দেওয়া হয়ে গেছে, তৃতীয় তালাক তার জন্য তালাকে ‘বাত্তাহ’ অথবা ‘বায়েনাহ’ (কুবরা; যার পর আর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার থাকে না) গণ্য হবে। তার বাসস্থান এবং ভরণ-পোষণ স্বামীর দায়িত্বে থাকে না। তাকে সত্বর স্বামীর ঘর থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হবে। কেননা, স্বামী আর তাকে ফিরিয়ে নিয়ে তার সাথে সংসার করতে পারে না। حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ‘‘যে পর্যন্ত না স্ত্রী কোন অন্য পুরুষকে বিবাহ করেছে।’’ (অতঃপর সে স্বামী তালাক দিয়েছে বা মারা গেছে তারপর তাকে পুনর্বিবাহ করেছে।) এই জন্য এই স্ত্রীর আর তার স্বামীর কাছে থাকার এবং তার কাছ থেকে খোরপোশ আদায় করার অধিকার থাকে না। এর সমর্থন ফাতিমা বিনতে ক্বাইস (রাঃ) র ঘটনা থেকেও হয় যে, যখন তাঁর স্বামী তাঁকে তৃতীয় তালাকও দিয়ে দিলেন এবং তাঁকে স্বামীর ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য বলা হলে তিনি বের হতে চাইলেন না। পরিশেষে বিষয়টা রসূল (সাঃ)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি ফায়সালা করলেন যে, তাঁর বাসস্থান ও ভরণ-পোষণ নেই। তাকে সত্বর কোন অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়া উচিত। এমন কি কোন কোন বর্ণনায় পরিষ্কারভাবে এসেছে যে, (إِنَّمَا النَّفَقَةُ وَالسُّكْنَى لِلْمَرْأَةِ عَلَى زَوْجِهَا مَا كَانَتْ لَهُ عَلَيْهَا رَجْعَةٌ) অর্থাৎ, ভরণ-পোষণ ও বাসস্থান কেবল সেই মহিলার জন্য আছে, যাকে ফিরিয়ে নেওয়া তার স্বামীর অধিকারে আছে। (আহমাদ, নাসাঈ) অবশ্য কোন কোন বর্ণনায় গর্ভবতী মহিলার জন্যেও বাসস্থান ও খোরপোশের কথার উল্লেখ রয়েছে। (বিস্তারিত জানার জন্য নাইলুল আওতার দ্রষ্টব্যঃ) কেউ কেউ এই বর্ণনাগুলোকে কুরআনের উল্লিখিত لاَ تُخْرِجُوْهُنَّ مِنْ بُيُوْتِهِنَّ (তোমরা তাদেরকে তাদের ঘর হতে বের করে দিও না) এই নির্দেশের পরিপন্থী মনে করে তা প্রত্যাখ্যান করেন, যা সঠিক নয়। কেননা, কুরআনের আয়াত তার পূর্বাপর প্রাসঙ্গিক আলোচনার ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত নির্দেশ রজয়ী তালাক (যে তালাকের পর ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার থাকে) প্রাপ্তা মহিলার ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে। আর যদি এটাকে ব্যাপক ধরে নেওয়াও যায়, তবে হাদীসের এই বর্ণনাগুলো তার নির্দিষ্টকারী হবে। অর্থাৎ, কুরআনের সাধারণ নির্দেশকে হাদীসের এই বর্ণনাগুলো রজয়ী তালাকপ্রাপ্তা মহিলার জন্য নির্দিষ্ট করে দিল এবং ‘বায়েনাহ’ তালাকপ্রাপ্তা মহিলাকে উক্ত সাধারণ হুকুমের আওতা থেকে বের করে নিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. অতঃপর তাদের ইদ্দত পূরণের কাল আসন্ন হলে তোমরা হয় যথাবিধি তাদেরকে রেখে দেবে, না হয় তাদেরকে যথাবিধি পরিত্যাগ করবে: এবং তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে; আর তোমরা আল্লাহ্র জন্য সঠিক সাক্ষ্য দেবে। এ দ্বারা তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ করে দেবেন,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২) তাদের ইদ্দত পূরণের কাল আসন্ন হলে তোমরা হয় যথাবিধি তাদেরকে রেখে নাও, না হয় তোমরা তাদেরকে যথাবিধি পরিত্যাগ কর[1] এবং তোমাদের মধ্য হতে দুই জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখ;[2] তোমরা আল্লাহর জন্য সঠিক সাক্ষ্য দাও।[3] এটা দ্বারা তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, তাকে উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। [4]
[1] স্বামীর সম্পর্ক কায়েম হয়েছে (যার সাথে সহবাস করা হয়েছে) এমন তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দত হল তিন মাসিক পর্যন্ত। যদি ফিরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা হয়, তবে ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বেই ফিরিয়ে নাও, অন্যথা যথানিয়মে তাকে নিজের কাছ থেকে বিদায় করে দাও।
[2] রুজু, প্রত্যাহার বা ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে এবং কোন কোন উলামার নিকট তালাকের ব্যাপারে সাক্ষী রেখে নাও। তবে এই আদেশ ওয়াজেবের জন্য নয়, বরং ‘ইস্তিহবাব’ এর জন্য। অর্থাৎ, সাক্ষী রেখে নেওয়া ভাল, কিন্তু জরুরী নয়।
[3] এই তাকীদ সাক্ষীদের প্রতি। তারা যেন কারো কোন পরোয়া না করে ও কোন লোভে না পড়ে সঠিক সঠিক সাক্ষ্য দেয়।
[4] অর্থাৎ, যাবতীয় কঠিন সমস্যা ও পরীক্ষা থেকে নিষ্কৃতি লাভের উপায় বের করে দেবেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান করবেন রিযিাক। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।(১) আল্লাহ তার ইচ্ছে পূরণ করবেনই; অবশ্যই আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন সুনির্দিষ্ট মাত্ৰা।
(১) তিরমিযী ও ইবনে মাজায় বর্ণিত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যদি তোমরা আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা করতে, তবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে পাখির ন্যায় রিযিক দান করতেন। পাখি সকাল বেলায় ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাসা থেকে বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যায় উদরপূর্তি করে ফিরে আসে।” [মুসনাদে আহমাদ: ১/৩০, তিরমিযী: ২৩৪৪, ইবনে মাজাহঃ ৪১৬৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ আমার উম্মত থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্ৰবেশ করবে। তাদের অন্যতম গুণ এই যে, তারা আল্লাহর ওপর ভরসা করবে। [বুখারী: ৫৭০৫, মুসলিম: ২১৮, মুসনাদে আহমাদ: ১/৪০১]
(৩) এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রুযী দান করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করবে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করবেনই।[1] আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা। [2]
[1] অর্থাৎ, তিনি যা করতে চান, তা থেকে তাঁকে কেউ বাধা দিতে পারে না।
[2] কষ্টসাধ্য ও সহজসাধ্য সকল কর্মের জন্যই। নির্ধারিত সময়েই উভয় (সহজ ও কঠিন) জিনিসেরই পরিসমাপ্তি ঘটে। কেউ কেউ এর অর্থ নিয়েছেন, মাসিক ও ইদ্দত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. তোমাদের যে সব স্ত্রী আর ঋতুবতী হওয়ার আশা নেই।(১) তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস এবং যারা এখনো ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি তাদেরও; আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। আর যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ্ তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।
(১) এ আয়াতে তালাকে ইদ্দতের আরও কিছু অবস্থা ও তার হুকুম আহকাম বর্ণিত হচ্ছে, সাধারণ অবস্থায় তালাকের ইদ্দত পূর্ণ তিন হায়েয। কিন্তু যেসব মহিলার বয়োঃবৃদ্ধি অথবা কোন রোগ ইত্যাদির কারণে হায়েয আসা বন্ধ হয়ে গেছে, এমনিভাবে যেসব মহিলার বয়স না হওয়ার কারণে এখনও হায়েয আসা শুরু হয়নি তাদের ইদ্দত আলোচ্য আয়াতে তিন হয়েযের পরিবর্তে তিন মাস নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং গর্ভবর্তী স্ত্রীদের ইদ্দত সন্তান প্রসব সাব্যস্ত করা হয়েছে, তা যতদিনেই হোক। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) তোমাদের যেসব স্ত্রীদের মাসিক হবার আশা নেই, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস এবং যাদের এখনো মাসিক হয়নি তাদেরও।[1] আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত।[2] আল্লাহকে যে ভয় করবে, তিনি তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দেবেন।
[1] এ হল সেই মহিলাদের ইদ্দত, যাদের বার্ধক্যের কারণে মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে অথবা যাদের এখনোও মাসিক আরম্ভ হয়নি। জ্ঞাতব্য যে, বিরল হলেও এমনও হয় যে, মেয়ে সাবালিকা হয়ে যায়, অথচ তার মাসিক আসে না।
[2] তালাকপ্রাপ্তা মহিলা যদি গর্ভবতী হয়, তবে তার ইদ্দত হল সন্তান প্রসব করা সময় পর্যন্ত, যদিও সে তালাকের দ্বিতীয় দিনে প্রসব করে তবুও। এ ছাড়া আয়াতের বাহ্যিক অর্থ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, প্রত্যেক গর্ভবতীর ইদ্দত এটাই; তাতে সে তালাকপ্রাপ্তা হোক অথবা তার স্বামীর মৃত্যু হয়ে থাকুক। বহু হাদীস থেকেও এর সমর্থন হয়। (আরো জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য সুনান গ্রন্থসমূহের তালাক অধ্যায়) গর্ভবতী ছাড়া অন্যান্য যে মহিলাদের স্বামী মৃত্যু বরণ করবে, তাদের ইদ্দত হল ৪ মাস ১০ দিন। (সূরা বাকারাহ ২৩৪ নং আয়াত)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. এটা আল্লাহর বিধান যা তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন। আর যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে তিনি তার পাপসমূহ মোচন করে দেন এবং তাকে দেবেন মহাপুরস্কার।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) এটা আল্লাহর বিধান, যা তিনি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। আর আল্লাহকে যে ভয় করবে, তিনি তার পাপরাশি মোচন করবেন এবং তাকে দেবেন মহাপুরস্কার।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ ঘরে তোমরা বাস কর তাদেরকেও সেরূপ ঘরে বাস করতে দেবে; তাদেরকে উত্ত্যক্ত করবে না সংকটে ফেলার জন্য; আর তারা গর্ভবতী হয়ে থাকলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের জন্য ব্যয় করবে। অতঃপর যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্য দান করে তবে তাদেরকে পারিশ্রমিক দেবে এবং (সন্তানের কল্যাণ সম্পর্কে) তোমরা সঙ্গতভাবে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ কর। আর তোমরা যদি নিজ নিজ দাবীতে অনমনীয় হও তাহলে অন্য নারী পিতার পক্ষে স্তন্য দান করবে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যে স্থানে বাস কর, তাদেরকেও সে স্থানে বাস করতে দাও।[1] সংকটে ফেলার উদ্দেশ্যে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করো না।[2] তারা গর্ভবতী থাকলে সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তাদের জন্য ব্যয় কর।[3] অতঃপর যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্যদান করে, তাহলে তাদেরকে তাদের পারিশ্রমিক প্রদান কর।[4] (সন্তানের কল্যাণ সম্পর্কে) তোমরা সঙ্গতভাবে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ কর।[5] তোমরা যদি নিজ নিজ দাবীতে অনমনীয় হও, তাহলে অন্য নারী তার পক্ষে স্তন্য দান করবে। [6]
[1] অর্থাৎ, রজয়ী তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদেরকে (যাদেরকে তালাক দেওয়ার পর ফিরিয়ে নেওয়ার অবকাশ থাকে)। কারণ, ‘বায়েনাহ তালাকপ্রাপ্তা’ (যাদেরকে তালাকের পর ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে না সেই মহিলা)-দের জন্য বাসস্থান এবং ভরণপোষণ জরুরী নয়। এ কথা পূর্বে আলোচিত হয়েছে। ‘সামর্থ্য অনুযায়ী --- বাস করতে দাও’ এর অর্থ হল, যদি বাড়ী এমন প্রশস্ত হয় যাতে কয়েকটি কামরা আছে, তাহলে একটি কামরা নির্দিষ্ট করে দাও। অন্যথা নিজের কামরা তার জন্য খালি করে দাও। এতে যে যৌক্তিকতা ও কৌশলগত দিক রয়েছে তা হল এই যে, যখন সে কাছে থেকে ইদ্দত পালন করবে, তখন হতে পারে স্বামীর অন্তরে দয়া (প্রেম বা যৌনকামনা) সৃষ্টি হবে এবং ‘রুজু’ করার (ফিরিয়ে নেওয়ার) উৎসাহ তার অন্তরে সৃষ্টি হয়ে যাবে। বিশেষ করে যদি সন্তানাদি থাকে, তবে ফিরিয়ে নেওয়ার উৎসাহ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা অতি প্রবল থাকে। কিন্তু অনুতাপের বিষয় যে, বহু মুসলিম এই নির্দেশ অনুযায়ী আমল করে না। যার কারণে এই নির্দেশের উপকারিতা থেকে এবং তার কৌশলগত সুফল হতে সে বঞ্চিত হয়। আমাদের সমাজে তালাক দেওয়ার সাথে সাথেই মহিলাকে অচ্ছুত (অস্পৃশ্য) বানিয়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয় (অথবা মহিলা নিজেই দুঃখে অথবা ক্ষোভে গৃহত্যাগ করে) অথবা কখনো মেয়ের পক্ষের কেউ এসে তাকে তাদের ঘরে নিয়ে যায়। বলাই বাহুল্য যে, এই প্রচলন কুরআন কারীমের স্পষ্ট শিক্ষার পরিপন্থী।
[2] অর্থাৎ, খোরপোশ অথবা বাসস্থানের ব্যাপারে তাদের উপর সংকীর্ণতা সৃষ্টি করা এবং তাদের মানহানি করা, যাতে তারা ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। ইদ্দতের মধ্যে এ রকম আচরণ যেন না করা হয়। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, ইদ্দত শেষ হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি পর্যায়ে তোমরা আবার ‘রুজু’ করে (ফিরিয়ে) নাও এবং বারংবার এ রকম কর। যেমন, জাহেলিয়াতের যুগে ছিল। সুতরাং সে পথ বন্ধ করার জন্য শরীয়ত তালাক দেওয়ার পর ফিরিয়ে নেওয়ার সময় নির্দিষ্ট করে দিল। যাতে আগামীতে কেউ এইভাবে মহিলার উপর সংকীর্ণতার সৃষ্টি না করে। এখন একজন কেবল দু’বার এ রকম করতে পারে। অর্থাৎ, তালাক দিয়ে ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বেই ফিরিয়ে নিতে পারে। কিন্তু তৃতীয়বার আবার তালাক দিলে, তার ফিরিয়ে নেওয়ার মোটেই অধিকার থাকবে না।
[3] অর্থাৎ, তালাকপ্রাপ্তা মহিলা যদি গর্ভবতী হয়, তবে তার ভরণ-পোষণ ও বাসস্থান দেওয়া জরুরী, যদিও এ তালাক ‘বায়েনাহ’ (যে তালাকের পর ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার থাকে না তা) হয়। এ কথা পূর্বেও উল্লিখিত হয়েছে।
[4] অর্থাৎ, তালাক দেওয়ার পর তারা যদি তোমাদের শিশুদেরকে দুধ পান করায়, তাহলে তার পারিশ্রমিক তোমাদেরকেই দিতে হবে। (তখন ‘সম্পর্ক নেই বলে কোন অর্থ ব্যয় করব না’ বলা চলবে না।)
[5] অর্থাৎ, আপোসে পরামর্শ করে পারিশ্রমিক ও অন্যান্য সমস্ত বিষয় ঠিক করে নেবে। যেমন, শিশুর বাপ প্রচলিত নিয়মে পারিশ্রমিক দেবে এবং বাপের সামর্থ্য অনুযায়ী মা তার পারিশ্রমিক চাইবে ইত্যাদি।
[6] অর্থাৎ, পারিশ্রমিক ইত্যাদির ব্যাপারে যদি তাদের আপোসে মতের মিল না হয়, তবে অন্য কোন দুধ দানকারিণী মহিলার সাথে চুক্তি করে নেবে। সে তার শিশুকে দুধ পান করাবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. বিত্তবান নিজ সামৰ্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন তার চেয়ে গুরুতর বোঝা তিনি তার উপর চাপান না। অবশ্যই আল্লাহ কষ্টের পর দেবেন স্বস্তি।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) সামর্থ্যবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে[1] এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত,[2] সে আল্লাহ তাকে যা দান করেছেন, তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তার চেয়ে গুরুতর বোঝা তিনি তার উপর চাপান না।[3] আল্লাহ কষ্টের পর স্বস্তি দান করবেন। [4]
[1] অর্থাৎ, দুগ্ধদাত্রী মহিলাদেরকে পারিশ্রমিক নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী দিতে হবে। আল্লাহ যদি মাল-ধনে প্রাচুর্য দিয়ে থাকেন, তবে এই প্রাচুর্য অনুযায়ী দুগ্ধদাত্রীকে প্রচুর পারিতোষিক দেওয়া কর্তব্য।
[2] অর্থাৎ, আর্থিক দিক দিয়ে যে দুর্বল।
[3] এই জন্য তিনি দরিদ্র ও দুর্বলকে এই নির্দেশ দেন না যে, তারা দুধ দানকারিণীকে বেশী বেশী পারিশ্রমিক দিক। এই নির্দেশাবলীর উদ্দেশ্য হল, শিশুর পিতা-মাতার উচিত এমন পন্থা অবলম্বন করা, যা উভয়ের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর তারা যেন একে অপরকে কোন প্রকার কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা না করে এবং তার ফলে শিশুর দুধ পানের ব্যাপারটা যেন জটিল হয়ে না দাঁড়ায়। এই জন্য মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, لا تُضَارَّ وَالِدَةٌ بِوَلَدِهَا وَلا مَوْلُودٌ لَهُ بِوَلَدِهِ ‘‘মাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না এবং তাকেও না যার সন্তান।’’ (সূরা বাক্বারাহ ২৩৩ আয়াত)
[4] সুতরাং যারা আল্লাহর উপর আস্থা ও ভরসা রাখে, মহান আল্লাহ তাদেরকে স্বস্তি ও প্রশস্ততা দানে ধন্য করেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. আর বহু জনপদ তাদের রব ও তার রাসূলগণের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। ফলে আমরা তাদের কাছ থেকে কঠোর হিসেব নিয়েছিলাম এবং তাদেরকে দিয়েছিলাম কঠিন শাস্তি।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) কত জনপদ দম্ভভরে তাদের প্রতিপালকের ও তাঁর রসূলদের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল,[1] ফলে আমি তাদের নিকট হতে কঠোর হিসাব নিয়েছিলাম এবং তাদেরকে দিয়েছিলাম কঠিন শাস্তি।[2]
[1] عَتَت অর্থাৎ, বিদ্রোহ, বিরুদ্ধাচরণ, ঔদ্ধত্য ও অবাধ্যতা প্রদর্শন করেছিল।
[2] نُكْرًا، مُنْكَرًا فَظِيْعًا অর্থাৎ, কঠিন ও ভীষণ। হিসাব ও আযাব বলতে পার্থিব পাকড়াও ও শাস্তি। অথবা কারো কারো কথা অনুযায়ী বাক্যকে আগে-পিছে করা হয়েছে। عَذَابًا نُكْرًا সেই আযাব, যা দুনিয়াতে অনাবৃষ্টি, ভূমিধস ও আকৃতি-বিকৃতি ইত্যাদির আকারে তাদের উপর এসেছে। আর حِسَابًا شَدِيْدًا যেটা আখেরাতে হবে। (ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. ফলে তারা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করল; আর ক্ষতিই ছিল তাদের কাজের পরিণাম।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) অতঃপর তারা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করল, আর ক্ষতিই ছিল তাদের কর্মের পরিণাম।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. আল্লাহ তাদের জন্য কঠোর শাস্তি প্ৰস্তুত রেখেছেন। অতএব তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! যারা ঈমান এনেছ। অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন এক উপদেশ—
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) আল্লাহ তাদের জন্য কঠিন শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, হে বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ, যারা ঈমান এনেছ! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন উপদেশ।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান