-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. হে নবী! আল্লাহ্ আপনার জন্য যা বৈধ করেছেন আপনি তা নিষিদ্ধ করছেন কেন? আপনি আপনার স্ত্রীদের সস্তুষ্টি চাচ্ছেন(১); আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(১) বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যহ নিয়মিতভাবে আসরের পর দাঁড়ানো অবস্থায়ই সকল স্ত্রীর কাছে কুশল জিজ্ঞাসার জন্যে গমন করতেন। একদিন যায়নব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে একটু বেশি সময় অতিবাহিত করলেন এবং মধু পান করলেন। এতে আমার মনে ঈর্ষা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল এবং আমি হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার সাথে পরামর্শ করে স্থির করলাম যে, তিনি আমাদের মধ্যে যার কাছে আসবেন, সেই বলবেঃ আপনি “মাগাফার” পান করেছেন। (মাগাফীর এক প্রকার বিশেষ দুৰ্গন্ধযুক্ত আঠাকে বলা হয়।) সেমতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ না, আমি তো মধু-পান করেছি। সেই বিবি বললেনঃ সম্ভবত কোন মৌমাছি মাগাফীর বৃক্ষে বসে তার রস চুষেছিল। এ কারণেই মধু দুৰ্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুৰ্গন্ধযুক্ত বস্তু থেকে সযত্নে বেঁচে থাকতেন। তাই অতঃপর মধু খাবেন না বলে কসম খেলেন। যয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহা মনঃক্ষুন্ন হবেন চিন্তা করে তিনি বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্যেও বলে দিলেন। কিন্তু সেই স্ত্রী বিষয়টি অন্য স্ত্রীর গোচরীভূত করে দিল। ফলে এ আয়াত নাযিল হয়। [বুখারী: ৪৯১২, ৫২৬৭, ৬৬৯১, মুসলিম: ১৪৭৪]
কোন কোন বর্ণনায় আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন দাসীর সাথে থাকতেন বিধায় আয়েশা ও হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা রাসূলকে এমনভাবে কথাবার্তা বললেন যে, রাসূল সে দাসীর কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, ফলে এ আয়াত নাযিল হয়। [নাসায়ী: ৭/৭১, ৭২, নং ৩৯৫৯, দ্বিয়া আল-মাকদেসী: আল-আহাদিসুল মুখতারাহ: ১৬৯৪, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪৯৩]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) হে নবী! আল্লাহ তোমার জন্য যা বৈধ করেছেন, তুমি তা অবৈধ করছ কেন?[1] তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাচ্ছ? আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
[1] নবী করীম (সাঃ) যে জিনিসকে নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিলেন তা কি ছিল? যার কারণে মহান আল্লাহ অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা রয়েছে, যা সহীহ বুখারী ও মুসলিম ইত্যাদিতে বর্ণিত হয়েছে। ঘটনা হল, তিনি যয়নাব বিনতে জাহশ্ (রাঃ)র কাছে কিছুক্ষণ থাকতেন এবং সেখানে মধু পান করতেন। হাফসা এবং আয়েশা (রায্বিয়াল্লাহু আনহুমা) স্বাভাবিকতার অধিক সময় তাঁর সেখানে থাকার পথ বন্ধ করার জন্য ফন্দি আঁটলেন যে, তাঁদের কারো কাছে যখন তিনি আসবেন, তখন তাঁরা বলবেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি ‘মাগাফীর’ খেয়েছেন? আপনার মুখ থেকে ‘মাগাফীর’এর গন্ধ আসছে। (‘মাগাফীর’ এক প্রকার গাছের মিষ্ট আঠা, যা খেলে মুখে এক প্রকার গন্ধ সৃষ্টি হয়।) সুতরাং তাঁরা পরিকল্পনা অনুযায়ী তা-ই করলেন। উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘আমি তো যয়নাবের ঘরে কেবল মধু পান করেছি। এখন আমি শপথ করছি যে, আর কখনও তা পান করব না। তবে এ কথা তোমরা অন্য কাউকে বলো না।’’ (বুখারীঃ সূরা তাহরীমের তফসীর) সুনানে নাসাঈর বর্ণনায় এসেছে যে, তা ছিল একটি ক্রীতদাসী যাকে তিনি নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিলেন। (সুনানে নাসায়ী ৩/৮৩)
পক্ষান্তরে কিছু অন্য আলেমগণ নাসাঈর এ বর্ণনাকে দুর্বল গণ্য করেছেন। এর বিশদ বর্ণনা অন্যান্য কিতাবে এইভাবে এসেছে যে, তিনি ছিলেন মারিয়া ক্বিবত্বিয়া (রাঃ)। যাঁর গর্ভে নবী করীম (সাঃ)-এর পুত্র ইবরাহীম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একদা হাফসা (রাঃ) র ঘরে এসেছিলেন। তখন হাফসা (রাঃ) ঘরে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁদের (নবী (সাঃ) ও মারিয়া ক্বিবত্বিয়ার) উপস্থিতিতেই হাফসা (রাঃ) এসে যান। তাঁকে নবী (সাঃ)-এর সাথে নিজের ঘরে নির্জনে দেখে তিনি বড়ই নাখোশ হলেন। নবী (সাঃ)ও এ কথা অনুভব করলেন এবং তিনি হাফসা (রাঃ) কে খোশ করার জন্য কসম খেয়ে মারিয়া ক্বিবত্বিয়া (রাঃ) কে নিজের উপর হারাম করে নিলেন। আর হাফসা (রাঃ) কে তাকীদ করলেন যে, তিনি যেন এ কথা অন্য কাউকে না বলেন। ইমাম ইবনে হাজার প্রথমতঃ বলেন যে, এ ঘটনা বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যা একে অপরকে বলিষ্ঠ করে। দ্বিতীয়তঃ তিনি বলেন যে, হতে পারে একই সময়ে উভয় ঘটনাই এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হয়েছে। (ফাতহুল বারী, সূরা তাহরীমের তাফসীর) ইমাম শওকানীও এ কথার সমর্থন করে উভয় ঘটনাকে সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন। এ থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আল্লাহর হালাল করা জিনিসকে হারাম করার অধিকার কারো নেই। এমন কি রসূল (সাঃ)-এরও ছিল না।
-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের কসম হতে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা করেছেন। আর আল্লাহ তোমাদের অভিভাবক এবং তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২) আল্লাহ তোমাদের শপথ হতে অব্যাহতি লাভের ব্যবস্থা করেছেন,[1] আল্লাহ তোমাদের সহায় এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
[1] অর্থাৎ, কাফফারা আদায় করে সেই কাজ করার অনুমতি দিলেন, যে কাজ না করার জন্য তিনি কসম খেয়েছিলেন। কসমের এই কাফফারা সূরা মায়েদার ৮৯নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। তাই নবী (সাঃ)ও কাফফারা আদায় করলেন। (ফাতহুল ক্বাদীর) এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে যে, কেউ যদি কোন জিনিসকে নিজের উপর হারাম করে নেয়, তাহলে তার বিধান কি? কোন কোন উলামার নিকট স্ত্রী ছাড়া কোন জিনিসকে হারাম করে নিলে, না সে জিনিস হারাম হবে, আর না তার কাফফারা আদায় করতে হবে। (কিন্তু আলোচ্য আয়াত তাঁদের বিপক্ষে দলীল। যেহেতু এখানে মধু হারাম করার পর কাফফারা আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।) পক্ষান্তরে যদি স্ত্রীকে নিজের উপর হারাম করে নেয় এবং এতে যদি তার উদ্দেশ্য তালাক হয়, তাহলে তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না থাকে, তবে সঠিক উক্তি অনুযায়ী এটা কসম হবে এবং কসমের কাফফারা আদায় করা তার উপর জরুরী হবে। (আইসারুত তাফাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. আর স্মরণ করুন—যখন নবী তার স্ত্রীদের একজনকে গোপনে একটি কথা বলেছিলেন। অতঃপর যখন সে তা অন্যকে জানিয়ে দিয়েছিল এবং আল্লাহ নবীর কাছে তা প্ৰকাশ করে দিলেন, তখন নবী এ বিষয়ে কিছু ব্যক্ত করলেন এবং কিছু এড়িয়ে গেলেন।(১) অতঃপর যখন নবী তা তার সে স্ত্রীকে জানালেন তখন সে বলল, কে আপনাকে এটা জানাল? নবী বললেন, আমাকে জানিয়েছেন তিনি, যিনি সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।
(১) অর্থাৎ সেই স্ত্রী যখন গোপন কথাটি অন্য স্ত্রীর গোচরীভূত করে দিলেন এবং আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে অবহিত করে দিলেন, তখন তিনি সেই স্ত্রীর কাছে গোপনে কথা ফাঁস করে দেয়ার অভিযোগ করলেন, কিন্তু পূর্ণ কথা বললেন না। এটা ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভদ্রতা। তিনি দেখলেন সম্পূর্ণ কথা বললে সে অধিক লজ্জিত হবে। কোন স্ত্রীর কাছের গোপন কথা বলা হয়েছিল এবং কার কাছে ফাঁস করা হয়েছিল, পবিত্র কুরআনে তার বর্ণনা আসেনি। অধিকাংশ বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে গোপন কথা বলা হয়েছিল। তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে তা ফাঁস করে দেন। [দেখুন: বুখারী: ৪৯১৩, মুসলিম: ১৪৭৯]
কোন কোন বর্ণনায় আছে, গোপন কথা ফাঁস করে দেয়ার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে তালাক দেয়ার ইচ্ছা করেন; কিন্তু আল্লাহ তা'আলা জিবরীল আলাইহিস সালামকে প্রেরণ করে তাকে তালাক থেকে বিরত রাখেন এবং বলে দেন যে, হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা অনেক সালাত আদায় করে এবং অনেক সাওম পালন করে। তার নাম জান্নাতে আপনার স্ত্রীগণের তালিকায় লিখিত আছে। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ৪/১৬, ৬৭৫৩, ৪/১৭, ৬৭৫৪, আত-তাবাকাতুল কুবরা লি ইবনে সা'দ: ৮/৮৪, তাবরানী; ১৮/৩৬৫, ৯৩৪, বুগইয়াতুল বাহিস: ২/৯১৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) (স্মরণ কর,) নবী তাঁর স্ত্রীদের একজনকে গোপনে কিছু বলেছিলেন। [1] অতঃপর যখন সে তা অন্যকে বলে দিয়েছিল[2] এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তখন নবী এ বিষয়ে কিছু ব্যক্ত করল এবং কিছু অব্যক্ত রাখল,[3] যখন নবী তা তার সেই স্ত্রীকে জানাল, তখন সে বলল, ‘কে আপনাকে এটা অবহিত করল?’[4] নবী বলল, ‘আমাকে অবহিত করেছেন তিনি, যিনি সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।’ [5]
[1] সেই গোপন কথা ছিল মধু অথবা মারিয়া (রাঃ) কে হারাম করে নেওয়ার কথা যা তিনি (সাঃ) হাফসা (রাঃ) কে বলেছিলেন।
[2] অর্থাৎ, হাফসা (রাঃ) সে কথা আয়েশা (রাঃ)র কাছে গিয়ে বলে দিলেন।
[3] অর্থাৎ, হাফসা (রাঃ) কে বললেন যে, তুমি আমার গোপন কথা প্রকাশ করে দিয়েছ। তবে স্বীয় সম্মান ও মহত্ত্বের দিকে লক্ষ্য করে সমস্ত কথা খুলে বললেন না।
[4] যখন নবী (সাঃ) হাফসাকে বললেন যে, তুমি আমার গোপন কথা প্রকাশ করে দিয়েছ, তখন তিনি (হাফসা) আশ্চর্যান্বিতা হলেন। কারণ, তিনি আয়েশা (রাঃ) ব্যতীত অন্য কাউকেও এ কথা বলেননি এবং আয়েশা (রাঃ) যে এ কথা রসূল (সাঃ)-কে বলে দেবেন সে আশঙ্কাও তাঁর ছিল না। কেননা, তিনিও এই (ফন্দি আঁটার) কাজে তাঁর শরীক ছিলেন।
[5] এ থেকে বুঝা যায় যে, কুরআন ছাড়া অন্য বিষয়ের অহীও তাঁর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। (আরো বুঝা যায় যে, তিনি গায়বের খবর জানতেন না।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. যদি তোমরা উভয়ে আল্লাহর কাছে তাওবাহ কর (তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর), কারণ তোমাদের হৃদয় তো ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু তোমরা যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অন্যের পোষকতা কর(১) তবে জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ্ তার সাহায্যকারী এবং জিবরীল ও সৎকর্মশীল মুমিনরাও। তাছাড়া অন্যান্য ফেরেশতাগণও তার সহযোগিতাকারী।(২)
(১) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, আমি উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে চাইলাম। আমি তাকে বললামঃ কোন সে দুই নারী, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে একে অন্যের পোষকতা করেছে? আমার কথা শেষ হতে না হতেই তিনি বললেনঃ “তারা হল আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) ও হাফসা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)। [বুখারী: ৪৯১৪]
(২) অর্থাৎ যদি তোমরা অবস্থানে অনড় থাক, তবে আল্লাহ, তিনি তো তার বন্ধু ও সাহায্যকারী, অনুরূপভাবে জিবরীল ও সৎকর্মশীল মুমিনরাও। আল্লাহ নিজে তার সাহায্য করবেন, অনুরূপভাবে জিবরীল ও আল্লাহর ঈমানদার নেক বান্দারাও তাকে সাহায্য করবেন। তাকে সাহায্য না করার কেউ থাকবে না। আর আল্লাহ, জিবরীল ও সৎবান্দাদের সাহায্যের পরে ফেরেশতারাও তার সাহায্যকারী। তারা তাকে সাহায্য করবেন। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) যদি তোমরা উভয়ে (অনুতপ্ত হয়ে) আল্লাহর নিকট তওবা কর, তাহলে (আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন),[1] নিশ্চয় তোমাদের হৃদয় ঝুঁকে পড়েছে।[2] কিন্তু তোমরা যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরের পৃষ্ঠপোষকতা (সাহায্য) কর, তবে জেনে রেখো যে, আল্লাহই তার বন্ধু এবং জিবরীল ও সৎকর্মপরায়ণ বিশ্বাসীগণও, এ ছাড়া ফিরিশতাগণও তার সাহায্যকারী। [3]
[1] অথবা তোমাদের তওবা কবুল করে নেওয়া হবে। এখানে শর্ত (إِنْ تَتُوْبَا) এর জওয়াব ঊহ্য আছে।
[2] অর্থাৎ, সত্য থেকে সরে গেছে। আর তা হল, তাঁদের এমন জিনিস পছন্দ করা, যা ছিল নবী (সাঃ)-এর কাছে অপছন্দনীয়। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[3] অর্থাৎ, নবী (সাঃ)-এর ব্যাপারে তোমরা ঐক্যবদ্ধ হলেও তাঁর কিছুই বিগড়ে যাবে না। কারণ, তাঁর সাহায্যকারী (মওলা) তো আল্লাহ, মুমিনগণ এবং ফিরিশতাগণও।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. যদি নবী তোমাদের সকলকে তালাক দেয় তবে তার রব সম্ভবত তোমাদের স্থলে তাকে দেবেন তোমাদের চেয়ে উৎকৃষ্টতর স্ত্রী(১)—যারা হবে মুসলিম, মুমিন(২), অনুগত, তওবাকারী, ইবাদতকারী, সিয়াম পালনকারী, অকুমারী এবং কুমারী।
(১) বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ রাসূলের উপর অভিমান করে তার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে পড়ে। তখন আমি তাদেরকে বললাম, এমনও হতে পারে যে, রাসূল যদি তোমাদেরকে তালাক দেন তবে তার রব তাকে তোমাদের পরিবর্তে উত্তম স্ত্রীসমূহ দান করবেন। তখনই এ আয়াত নাযিল হয়। [বুখারী: ৪৯১৬]
(২) মুসলিম এবং মুমিন শব্দ এক সাথে ব্যবহৃত হলে মুসলিম শব্দের অর্থ হয় কার্যত আল্লাহর হুকুম আহকাম অনুযায়ী আমলকারী ব্যক্তি এবং মুমিন অর্থ হয় এমন ব্যক্তি যে সরল মনে ইসলামী আকীদা বিশ্বাসকে গ্ৰহণ করেছে। [দেখুন: বাগভী; কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) যদি সে (নবী) তোমাদেরকে পরিত্যাগ করে, তবে তার প্রতিপালক সম্ভবতঃ তাকে দেবেন তোমাদের অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্ত্রী;[1] যারা হবে আত্মসমর্পণকারিণী, বিশ্বাসিনী, আনুগত্যশীলা, তওবাকারিণী, উপাসনাকারিণী, রোযা পালনকারিণী, অকুমারী এবং কুমারী। [2]
[1] এটা সতর্কতাস্বরূপ নবী (সাঃ)-এর পবিত্রা স্ত্রীদেরকে বলা হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে তোমাদের চেয়েও উত্তম স্ত্রী দান করতে পারেন।
[2] ثَيِّبَاتٍ শব্দটি হল, ثَيِّبٌ এর বহুবচন। (অর্থ হল ফিরে আসা) অকুমারী পতিহীনা মহিলাকে ثَيِّبٌ এই জন্য বলা হয় যে, সে স্বামী থেকে ফিরে আসে এবং ঐরূপ স্বামীহীনা হয়ে যায়, যেমন সে বিবাহের পূর্বে ছিল। أَبْكَارٌ হল بِكْرٌ এর বহুবচন। অর্থ হল কুমারী মেয়ে। তাকে কুমারী এই জন্য বলা হয় যে, সে এখন পর্যন্ত সেই অবস্থাতেই থাকে, যার উপর তার সৃষ্টি হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর) কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, ثَيِّبٌ বলতে আসিয়াহ (ফিরআউনের স্ত্রী)-কে এবং بِكْرٌ বলতে মারয়্যাম (ঈসা (আঃ)-এর মা)-কে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, জান্নাতে এই উভয় মহিলাকে নবী (সাঃ)-এর স্ত্রী বানিয়ে দেওয়া হবে। এরূপ হতে পারে। কিন্তু এই বর্ণনাগুলোর ভিত্তিতে এ রকম ধারণা পোষণ করা অথবা বর্ণনা করা ঠিক নয়। কেননা, সনদের দিক দিয়ে এই বর্ণনাগুলো নির্ভরযোগ্য নয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. হে ঈমানদারগণ!(১) তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর আগুন থেকে(২), যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদেশপ্ৰাপ্ত হয় তা-ই করে।
(১) এই আয়াতে সাধারণ মুসলিমদেরকে বলা হয়েছে, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা কর। অতঃপর জাহান্নামের অগ্নির ভয়াবহতা উল্লেখ করে অবশেষে এ কথাও বলা হয়েছে যে, যারা জাহান্নামের যোগ্য পাত্র হবে, তারা কোন শক্তি, দলবল, খোশামোদ অথবা ঘুষের মাধ্যমে জাহান্নামে নিয়োজিত কঠোরপ্রাণ ফেরেশতাদের কবল থেকে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হবে না। এই ফেরেশতাদের নাম ‘যাবানিয়া’ ৷ এ আয়াত থেকে প্রকাশ পায় যে, আল্লাহর আযাব থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর মধ্যেই কোন মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য সীমাবদ্ধ নয়।
বরং যে পরিবারটির নেতৃত্বের বোঝা তার কাঁধে স্থাপন করেছে তার সদস্যরা যাতে আল্লাহর প্রিয় মানুষরূপে গড়ে উঠতে পারে সাধ্যমত সে শিক্ষা দেয়াও তার কাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা প্রত্যেকেই রাখাল বা দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার অধীনস্ত লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। শাসকও রাখাল বা দায়িত্বশীল, তাকে তার অধীনস্ত লোকদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নারী তার স্বামীর বাড়ী এবং তার সন্তান-সন্ততির তত্ত্বাবধায়িকা, তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।” [বুখারী: ৮৯৩, ৫১৮৮]
(২) এর উপায় এই যে, আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তোমরা তাদেরকে সেসব কাজ করতে নিষেধ কর এবং যেসব কাজ করতে আদেশ করেছেন, তোমরা পরিবার-পরিজনকেও সেগুলো করতে আদেশ কর। এই কর্মপন্থা তাদেরকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা করতে পারবে। [ইবন কাসীর] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তিকে রহমত করুন, যে নিজে রাতে সালাত আদায় করতে দাঁড়িয়েছে, এবং তার স্ত্রীকে জাগিয়েছে, সে যদি দাঁড়াতে অস্বীকার করে তার মুখে পানি ছিটিয়েছে। আল্লাহ ঐ মহিলাকেও রহমত করুন যে, নিজে রাতে সালাত আদায় করতে দাঁড়িয়েছে এবং তার স্বামীকে জাগিয়েছে, যদি সে দাঁড়াতে অস্বীকার করে তার মুখে পানি ছিটিয়েছে।” [আবু দাউদ: ১৪৫০, ইবনে মাজহ: ১৩৩৬]
হাদীসে আরও এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতের জন্য সাত বছর বয়সে পৌছলেই নির্দেশ দাও, আর তাদেরকে দশ বছর হলে এর জন্য দণ্ড দাও। আর তাদের শোয়ার জায়গা পৃথক করে দাও। [আবু দাউদ: ৪৯৫, মুসনাদে আহমাদ: ২/১৮০] অনুরূপভাবে পরিবার পরিজনকে সালাতের সময়, সাওমের সময় হলে স্মরণ করিয়ে দেয়াও এর অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই বিতর পড়তেন তখনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে ডাকতেন এবং বলতেন, “হে আয়েশা! দাঁড়াও এবং বিতর আদায় কর।” [সহীহ মুসলিম, ৭৪৪, মুসনাদে আহমাদ: ৬/১৫২]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি হতে, [1] যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম-হৃদয়, কঠোর-স্বভাব ফিরিশতাগণ, যারা আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে।
[1] এতে মু’মিনদের পালনীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আর তা হল, নিজেদেরকে সংস্কার ও সংশোধন করার সাথে সাথে পরিবারের লোকদেরকেও সংস্কার ও সংশোধন করতে হবে এবং তাদেরকে ইসলামী শিক্ষা ও তরবিয়ত দেওয়ার প্রতি যত্নবান হতে হবে। যাতে তারা জাহান্নামের জ্বালানী হওয়া থেকে বেঁচে যায়। আর এই কারণেই রসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘শিশুরা যখন সাত বছর বয়সে পৌঁছে যাবে, তখন তাদেরকে নামায পড়ার আদেশ দাও। আর দশ বছর বয়সে পৌঁছে যাওয়ার পর (তারা নামাযের ব্যাপারে উদাসীন হলে) তাদেরকে (শিক্ষামূলক) প্রহার কর।’’ (সুনানে আবূ দাউদ, সুনানে তিরমিযী নামায অধ্যায়) ফক্বীহগণ বলেন, এইভাবে তাদেরকে রোযা রাখারও আদেশ দিতে হবে এবং অন্যান্য শরীয়তী বিধি-বিধানের অনুসরণ করার শিক্ষা তাদেরকে দিতে হবে। যাতে সাবালক হওয়ার সাথে সাথে তাদের মধ্যে সত্য দ্বীন মানার অনুভূতি সৃষ্টি হয়ে যায়। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. হে কাফিরগণ! আজ তোমরা ওজর পেশ করার চেষ্টা করো না। তোমরা যা করতে তোমাদেরকে তার প্রতিফলই তো দেয়া হচ্ছে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) হে অবিশ্বাসীগণ! আজ তোমরা দোষ স্খালনের চেষ্টা করো না। তোমরা যা করতে, তোমাদেরকে তারই প্রতিফল দেওয়া হবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর—বিশুদ্ধ তাওবা(১); সম্ভবত তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না নবীকে এবং তার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের জন্য আমাদের নূরকে পূর্ণতা দান করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
(১) তাওবার শাব্দিক অৰ্থ ফিরে আসা। উদ্দেশ্য গোনাহ থেকে ফিরে আসা। কুরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় তওবার অর্থ বিগত গোনাহের জন্যে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তার ধারে কাছে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করা। আয়াতে বৰ্ণিত نصوح শব্দটির বিভিন্ন অর্থ হয়ে থাকে। এক. যদি نصحة থেকে উদ্ভূত ধরা হয়, তবে এর অর্থ খাঁটি করা। আর যদি نصاحة থেকে উদ্ভূত ধরা হয়, তবে এর অর্থ বস্ত্র সেলাই করা ও তালি দেয়া। প্রথম অর্থের দিক দিয়ে “তাওবাতুন নাসূহ” এর অর্থ এমন তাওবা, যা রিয়া ও নামযশ থেকে খাঁটি-কেবল আল্লাহ তা’আলার সস্তুষ্টি অর্জন ও আযাবের ভয়ে ভীত হয়ে এবং গোনাহের কারণে অনুতপ্ত হয়ে গোনাহ পরিত্যাগ করা। দ্বিতীয় অর্থের দিক দিয়ে “তাওবাতুন নাসূহ” শব্দটি এই উদ্দেশ্য ব্যক্ত করার জন্যে হবে যে, গোনাহের কারণে সৎকর্মের ছিন্নবস্ত্রে তাওবা তালি সংযুক্ত করে। কোন কোন তাফসীরবিদ বলেনঃ “তাওবাতুন নাসূহ” হল মুখে ক্ষমাপ্রার্থনা করা, অন্তরে অনুশোচনা করা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ভবিষ্যতে সেই গোনাহ থেকে দূরে রাখা। [দেখুন: কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা।[1] সম্ভবতঃ তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলোকে মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত। সেই দিন আল্লাহ নবী এবং তাঁর বিশ্বাসী দাসদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের জ্যোতি তাদের সম্মুখে ও ডান পার্শ্বে বিচ্ছুরিত হবে, তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান কর[2] এবং আমাদেরকে ক্ষমা কর। নিশ্চয় তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।’
[1] বিশুদ্ধ বা নিষ্ঠাপূর্ণ তওবা হল, (ক) তওবা একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে। (খ) যে গুনাহ হতে তওবা করা হচ্ছে, তা সত্বর ত্যাগ করতে হবে। (গ) এই গুনাহ করে ফেলার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। (ঘ) আগামীতে এই গুনাহ ‘আর করব না’ বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। (ঙ) যদি এই গুনাহের সম্পর্ক কোন বান্দার অধিকারের সাথে হয়, তবে যার অধিকার নষ্ট হয়েছে, তার সাথে মিটমাট করে নিতে হবে। যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। পক্ষান্তরে কেবল মৌখিক তওবা করার কোন অর্থ হয় না।
[2] এই দু’আ মু’মিনরা তখন করবে, যখন মুনাফিকদের জ্যোতি কেড়ে নেওয়া হবে এবং তাদের উপর অন্ধকার নেমে আসবে। এর আলোচনা সূরা হাদীদ ১২নং আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে। মু’মিনরা তখন বলবে, জান্নাতে প্রবেশ করা অবধি আমাদের এই জ্যোতিকে অবশিষ্ট রাখ এবং তাতে পূর্ণতা দান কর।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। আর তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম এবং তা কত নিকৃষ্ট ফিরে যাওয়ার স্থান!
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) হে নবী! অবিশ্বাসী ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর[1] এবং তাদের প্রতি কঠোর হও।[2] তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম, [3] আর তা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল!
[1] অর্থাৎ, কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর যুদ্ধের মাধ্যমে এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর তাদের উপর আল্লাহর দন্ডবিধিকে বাস্তবায়িত করার মাধ্যমে; যদি তারা এমন কাজ করে বসে, যার ফলে দন্ডবিধি প্রয়োগ করা হয়।
[2] অর্থাৎ, দাওয়াত ও তবলীগ এবং শরীয়তের বিধি-বিধানের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন কর। কেননা, লাথির ঢেঁকি চড়ে উঠবে না। এর অর্থ হল, তবলীগের কৌশল কখনো নরম পন্থা অবলম্বন করার দাবী করে এবং কখনো কঠোরতা। প্রত্যেক জায়গাতে নরম পন্থা অবলম্বন করা ফলপ্রসূ নয়; যেমন প্রত্যেক জায়গায় কঠোরতা অবলম্বন করাও উপকারী হয় না। দাওয়াত ও তবলীগের কাজে অবস্থা, পরিস্থিতি এবং কাল-পাত্র-ভেদে কখনো নরম ও কখনো কঠোর পন্থা অবলম্বন করার প্রয়োজন হয়।
[3] অর্থাৎ, কাফের এবং মুনাফিক উভয়েরই ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. যারা কুফরী করে, আল্লাহ্ তাদের জন্য দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন নূহের স্ত্রী ও লুতের স্ত্রীর, তারা ছিল আমাদের বান্দাদের মধ্যে দুই সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন। কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ফলে নূহ ও লুত তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারলেন না এবং তাদেরকে বলা হল, তোমরা উভয়ে প্ৰবেশকারীদের সাথে জাহান্নামে প্ৰবেশ কর।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্য নূহ ও লূতের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত উপস্থিত করেছেন; [1] তারা ছিল আমার দাসদের মধ্যে দুই সৎকর্মপরায়ণ দাসের অধীন। কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল,[2] ফলে তারা (নূহ ও লূত) তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারল না[3] এবং তাদেরকে বলা হল, ‘জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও তাতে প্রবেশ কর।’[4]
[1] مَثَلٌ (উপমা, উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত) এর অর্থ হল, এমন অবস্থাকে তুলে ধরা, যাতে থাকে বিরলতা ও বিচিত্রতা। যাতে এর দ্বারা অপর আর এক অবস্থার পরিচিতি লাভ হয়, যা বিরলতা ও বিচিত্রতায় তারই মত হয়। অর্থাৎ, এই কাফেরদের অবস্থার জন্য আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। তা হল নূহ (আঃ) এবং লূত (আঃ)-এর স্ত্রীর।
[2] এখানে খিয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা বলতে দাম্পত্যের খিয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা উদ্দেশ্য নয়। কেননা, এ ব্যাপারে সকলে একমত যে, কোন নবীর স্ত্রী ব্যভিচারিণী ছিলেন না। (ফাতহুল ক্বাদীর) খিয়ানত বলতে বুঝানো হয়েছে, এরা তাদের স্বামীদের উপর ঈমান আনেনি। তারা মুনাফিক্বী ও কপটতায় লিপ্ত ছিল এবং নিজেদের কাফের জাতির প্রতি তারা সমবেদনা পোষণ করত। যেমন, নূহ (আঃ)-এর স্ত্রী নূহ (আঃ)-এর ব্যাপারে লোকদেরকে বলে বেড়াত যে, এ একজন পাগল। আর লূত (আঃ)-এর স্ত্রী তার গোত্রের লোকদেরকে নিজ বাড়ীতে আগত অতিথির সংবাদ পৌঁছে দিত। কেউ কেউ বলেন, এরা উভয়ই তাদের জাতির লোকদের মাঝে নিজ নিজ স্বামীর চুগলি করে বেড়াত।
[3] অর্থাৎ, নূহ (আঃ) এবং লূত (আঃ) তাঁরা উভয়েই ছিলেন আল্লাহর পয়গম্বর, আর পয়গম্বররা আল্লাহর অতি নিকটতম বান্দাদের মধ্যে গণ্য হন, তা সত্ত্বেও তাঁরা তাঁদের স্ত্রীদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচাতে পারেননি।
[4] এ কথা তাদেরকে কিয়ামতের দিন বলা হবে অথবা মৃত্যুর সময় তাদেরকে বলা হয়েছে। কাফেরদের এই দৃষ্টান্ত বিশেষ করে এখানে পেশ করার উদ্দেশ্য হল, রসূল (সাঃ)-এর পবিত্রা সহধর্মিনীদেরকে সতর্ক করা যে, অবশ্যই তাঁরা রসূল গৃহের সৌন্দর্য যিনি সমস্ত সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। কিন্তু তাঁদের স্মরণে রাখা উচিত যে, যদি তাঁরা রসূলের বিরোধিতা করেন বা তাঁকে কষ্ট দেন, তবে তাঁরাও আল্লাহর কাছে শাস্তি পাবেন। আর যদি এ রকম হয়ে যায়, তাহলে তাঁদেরকে বাঁচাবার মত কেউ থাকবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান