-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. নিশ্চয় আমরা নূহকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের প্রতি এ নির্দেশসহ যে, আপনি আপনার সম্প্রদায়কে সতর্ক করুন তাদের প্রতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসার আগে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১) নিশ্চয় আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট[1] প্রেরণ করেছিলাম (এই নির্দেশ সহ যে,) তুমি তোমার সম্প্রদায়কে সতর্ক কর তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসার পূর্বে। [2]
[1] নূহ (আঃ) একজন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পয়গম্বর ছিলেন। সহীহ মুসলিম প্রভৃতি হাদীসগ্রন্থে বর্ণিত শাফাআ’ত সম্পর্কিত হাদীসে এসেছে যে, তিনি হলেন প্রথম রসূল। এও বলা হয় যে, তাঁরই সম্প্রদায় হতে শিরকের উৎপত্তি হয়েছে। এই জন্য মহান আল্লাহ তাঁকে তাঁর সম্প্রদায়ের হিদায়াতের জন্য প্রেরণ করেন।
[2] অর্থাৎ, কিয়ামতে অথবা দুনিয়াতে আযাব আসার পূর্বে। যেমন, এই সম্প্রদায়ের উপর তুফান এসেছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. তিনি বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী—
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২) সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী। [1]
[1] আল্লাহর আযাব সম্বন্ধে, যদি তোমরা ঈমান না আন। সুতরাং আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচার উপায় বাতলে দেওয়ার জন্য আমি এসেছি। যা পরের আয়াতে বর্ণিত হচ্ছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন কর, আর আমার আনুগত্য কর(১);
(১) নূহ আলাইহিস সালাম তার রিসালাতের দায়িত্ব পালনের শুরুতেই তার জাতির সামনে তিনটি বিষয় পেশ করেছিলেন। এক, আল্লাহর দাসত্ব, দুই, তাকওয়া বা আল্লাহভীতি এবং তিন, রাসূলের আনুগত্য। প্রথমেই ছিল আল্লাহর অবাধ্যতা না করার আহবান, কারণ তাঁর অবাধ্য হলে আযাব অনিবাৰ্য। তারপর তাকওয়ার আহবান। যার মাধ্যমে রাসূলকে মেনে নিয়ে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করার আহবান রয়েছে। তারপর রয়েছে রাসূলের আনুগত্যের আহবান। তিনি যা করতে আদেশ করেন তাই করা যাবে আর যা করতে নিষেধ করেন তা-ই ত্যাগ করতে হবে। [মুয়াস্সার]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) (এই বিষয়ে যে,) তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর[1] ও তাঁকে ভয় কর[2] এবং আমার আনুগত্য কর;[3]
[1] এবং তোমরা শিরক ত্যাগ কর। কেবলমাত্র এক আল্লাহরই ইবাদত কর।
[2] আল্লাহর অবাধ্যতা করা হতে দূরে থাক। কারণ এই অবাধ্যতার জন্য তোমরা আল্লাহর শাস্তিযোগ্য বিবেচিত হতে পার।
[3] অর্থাৎ, আমি তোমাদেরকে যে কথার আদেশ করব, তাতে তোমরা আমার আনুগত্য কর। কেননা, আমি আল্লাহর পক্ষ হতে রসূল ও তাঁর বার্তাবাহক হয়ে তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন(১) এবং তোমাদেরকে অবকাশ দেবেন। এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।(২) নিশ্চয় আল্লাহ কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত হলে তা বিলম্বিত করা হয় না; যদি তোমরা এটা জানতে!
(১) من অব্যয়টি প্রায়শঃ কতক অর্থ জ্ঞাপন করার জন্যে ব্যবহৃত হয়। এই অর্থে আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, ঈমান আনলে তোমাদের কতক গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এর অর্থ আল্লাহ তা'আলার হক সম্পর্কিত গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। কেননা বান্দার হক মাফ হওয়ার জন্যে ঈমান আনার পরও একটি শর্ত আছে। তা এই যে হকটি আদায়যোগ্য হলে তা আদায় করতে হবে; যেমন আর্থিক দায় দেনা এবং আদায় যোগ্য না হলে তা মাফ নিতে হবে যেমন মুখে কিংবা হাতে কাউকে কষ্ট দেয়া। কোন কোন তফসীরবিদ বলেনঃ আয়াতে من অব্যয়টি বর্ণনাসূচক। উদ্দেশ্য এই যে, ঈমান আনলে তোমাদের সব গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর]
(২) উদ্দেশ্য এই যে তোমরা ঈমান আনলে আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিবেন। বয়সের নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে তোমাদেরকে কোন আযাবে ধ্বংস করবেন না। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) (তাহলে) তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে অবকাশ দেবেন এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত।[1] নিশ্চয়ই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত কাল উপস্থিত হলে, তা বিলম্বিত হয় না।[2] যদি তোমরা এটা জানতে!’ [3]
[1] এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, তোমাদের মৃত্যুর যে সময়কাল নির্ধারণ করা আছে, ঈমান আনা অবস্থায় সেটাকে বাড়িয়ে দিয়ে বেঁচে থাকার আরো অবকাশ দেবেন এবং সেই আযাবকে তোমাদের উপর হতে দূর করে দেবেন, ঈমান না আনার ফলে যার আসাটা তোমাদের উপর অবধারিত ছিল। এই আয়াতকে দলীল বানিয়ে বলা হয় যে, আল্লাহর আনুগত্য, নেকীর কাজ এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায়ে সত্যিকারে আয়ু বৃদ্ধি হয়। হাদীস শরীফেও এসেছে যে, صِلَةُ الرِّحِمِ تَزِيْدُ فِي العُمُرِ অর্থাৎ, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় আয়ু বৃদ্ধি করে। (ইবনে কাসীর) কেউ কেউ বলেন, অবকাশ দেওয়ার মানে, বরকত দেওয়া। ঈমান আনলে আয়ুতে বরকত হবে। আর ঈমান না আনলে এই বরকত থেকে বঞ্চিত হতে হবে।
[2] বরং অবশ্যই তা সংঘটিত হয়ে থাকে। তাই তোমাদের জন্য এটাই মঙ্গল যে, তোমরা সত্বর ঈমান ও আনুগত্যের পথ অবলম্বন করে নাও। দেরী করলে আল্লাহর প্রতিশ্রুত আযাবে পতিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
[3] অর্থাৎ, যদি তোমাদের জ্ঞান থাকত, তাহলে তোমরা তা সত্বর অবলম্বন করতে, যার আমি তোমাদেরকে নির্দেশ করছি। অথবা যদি তোমরা এই কথা জানতে যে, আল্লাহর আযাব যখন এসে পড়ে, তখন তা রদ্দ হয় না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. তিনি বললেন, হে আমার রব! আমি তো আমার সম্প্রদায়কে দিনরাত ডেকেছি,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয় আমি আমার সম্প্রদায়কে দিবারাত্রি আহবান করেছি। [1]
[1] অর্থাৎ, তোমার নির্দেশ পালনে কোন প্রকার অবহেলা না করে দিন-রাত আমি তোমার বার্তা স্বীয় সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. কিন্তু আমার ডাক তাদের পলায়ন প্রবণতাই বৃদ্ধি করেছে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) কিন্তু আমার আহবান তাদের পলায়ন-প্রবণতাই বৃদ্ধি করেছে।[1]
[1] অর্থাৎ, আমার আহবানের ফলে এরা ঈমান হতে আরো দূরে সরে গেল। যখন কোন জাতি ভ্রষ্টতার শেষ সীমায় পৌঁছে যায়, তখন তাদের অবস্থা এইরূপই হয়। তাদেরকে যতই আল্লাহর প্রতি আহবান করা হয়, তারা ততই দূরে সরে যায়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. আমি যখনই তাদেরকে ডাকি যাতে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তারা নিজেদের কানে আঙ্গুল দিয়েছে, কাপড় দ্বারা ঢেকে দিয়েছে নিজেদেরকে(১) এবং জেদ করতে থেকেছে, আর খুবই ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে।
(১) মুখ ঢাকার একটি কারণ হতে পারে, তারা নূহ আলাইহিস সালামের বক্তব্য শোনা তো দূরের কথা তার চেহারা দেখাও পছন্দ করতো না। [মুয়াস্সার] আরেকটি কারণ হতে পারে, তারা তার সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় মুখ ঢেকে চলে যেতো যাতে তিনি তাদের চিনে কথা বলার কোন সুযোগ আদৌ না পান। [ইবন কাসীর] মক্কার কাফেররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যে ধরনের আচরণ করছিলো সেটিও ছিল অনুরূপ একটি আচরণ। পবিত্র কুরআনের অন্যত্র তাদের এ আচরণের উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে “দেখ, এসব লোক তাদের বক্ষ ঘুরিয়ে নেয় যাতে তারা রাসূলের চোখের আড়ালে থাকতে পারে। সাবধান! যখন এরা কাপড় দ্বারা নিজেদেরকে ঢেকে আড়াল করে তখন আল্লাহ তাদের প্রকাশ্য বিষয়গুলোও জানেন এবং গোপন বিষয়গুলোও জানেন। তিনি তো মনের মধ্যকার গোপন কথাও জানেন।” [সূরা হূদ: ৫]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) আমি যখনই তাদেরকে আহবান করি, যাতে তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর,[1] তখনই তারা কানে আঙ্গুল দেয়,[2] নিজেদেরকে কাপড় দিয়ে ঢেকে নেয়[3] ও জিদ করতে থাকে[4] এবং অতিশয় ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে। [5]
[1] অর্থাৎ, ঈমান এবং আনুগত্যের প্রতি আহবান করি, যা ক্ষমা লাভের কারণ।
[2] যাতে আমার আওয়াজ শুনতে না পায়।
[3] যাতে আমার চেহারা দেখতে না পায়। অথবা নিজেদের মাথার উপর কাপড় রেখে নেয়, যাতে আমার কথা-বার্তা শুনতে না পায়। এটা হল তাদের পক্ষ থেকে কঠোর শত্রুতা এবং ওয়ায-নসীহতের প্রতি অমনোযোগিতার বহিঃপ্রকাশ। কেউ কেউ বলেন, নিজেদেরকে কাপড়ে ঢেকে নেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, যাতে পয়গম্বর তাদেরকে চিনতে না পারেন এবং তাদেরকে তাঁর দাওয়াত কবুল করতে বাধ্য না করেন।
[4] অর্থাৎ, কুফরীতে অবিচল থাকে। তা হতে ফিরে আসে না এবং তওবা করে না।
[5] সত্যকে গ্রহণ করার এবং নির্দেশ পালন করার ব্যাপারে তারা চরম অহংকার প্রদর্শন করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. তারপর আমি তাদেরকে ডেকেছি প্ৰকাশ্যে
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) অতঃপর নিশ্চয় আমি তাদেরকে আহবান করেছি প্রকাশ্যে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. পরে আমি তাদের জন্য উচ্চস্বরে প্রচার করেছি ও উপদেশ দিয়েছি অতি গোপনে৷
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) পরে নিশ্চয় আমি তাদেরকে উচ্চ স্বরে (উপদেশ দিয়েছি) এবং গোপনে।[1]
[1] অর্থাৎ, বিভিন্নভাবে ও নানান পদ্ধতিতে আমি তাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি। কোন কোন আলেম বলেন, জনসমাবেশে ও তাদের মজলিসগুলোতে তাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি এবং এককভাবে ঘরে ঘরে গিয়েও তোমার বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. অতঃপর বলেছি, তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় তিনি মহাক্ষমাশীল,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) সুতরাং বলেছি, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, [1] নিশ্চয় তিনি মহা ক্ষমাশীল। [2]
[1] অর্থাৎ, ঈমান এবং আনুগত্যের পথ অবলম্বন কর এবং তোমাদের প্রভুর কাছে নিজেদের বিগত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে নাও।
[2] তিনি তাদের জন্য বড়ই দয়াবান এবং মহা ক্ষমাশীল যারা তওবা করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান