-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. হে বস্ত্ৰাচ্ছাদিত!(১)
(১) হাদীসে এসেছে, সর্বপ্রথম হেরা গিরি গুহায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ফেরেশতা জিবরীল আগমন করে ইকরা সূরার প্রাথমিক আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনান। ফেরেশতার এই অবতরণ ও ওহীর তীব্ৰতা প্রথম পর্যায়ে ছিল। ফলে এর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট গমন করলেন এবং তার কাছে বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করলেন। এরপর বেশ কিছুদিন পর্যন্ত ওহীর আগমন বন্ধ থাকে। বিরতির এই সময়কালকে “ফাতরাতুল ওহী” বলা হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীসে এই সময়কালের উল্লেখ করে বলেন, একদিন আমি পথ চলা অবস্থায় হঠাৎ একটি আওয়াজ শুনে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, হেরা গিরিগুহার সেই ফেরেশতা আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে এক জায়গায় একটি ঝুলন্ত চেয়ারে উপবিষ্ট রয়েছেন। তাকে এই আকৃতিতে দেখে আমি প্রথম সাক্ষাতের ন্যায় আবার ভীত ও আতংকিত হয়ে পড়লাম। আমি গৃহে ফিরে এলাম এবং গৃহের লোকজনকে বললাম, আমাকে বস্ত্ৰাবৃত করে দাও। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াত নাযিল হল। [বুখারী: ৪, মুসলিম: ১৬১]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! [1]
[1] সর্বপ্রথম যে অহী নাযিল হয় তা হল {اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ} এরপর অহী আসা কিছু দিন বন্ধ থাকে। ফলে নবী (সাঃ) খুবই অস্থির ও চিন্তিত হয়ে পড়েন। এক দিন আবারও তিনি প্রথমবার হিরা গুহায় অহী নিয়ে আগমনকারী ফিরিশতাকে আসমান ও যমীনের মধ্যস্থলে একটি কুরসীর উপর বসা অবস্থায় দেখেন। এ থেকে রসূল (সাঃ)-এর মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়। তাই তিনি ঘরে গিয়ে ঘরের লোকদেরকে বললেন, ‘‘আমাকে কোন কাপড় দিয়ে ঢেকে দাও। আমাকে কোন চাদর দিয়ে ঢেকে দাও।’’ ফলে তাঁরা রসূল (সাঃ)-এর শরীরে একটি কাপড় চাপিয়ে দিলেন। ঠিক এই অবস্থাতেই এই অহী অবতীর্ণ হয়। (বুখারী ও মুসলিম, সূরা মুদ্দাসসির ও ঈমান অধ্যায়ঃ) এই দিক দিয়ে এটা দ্বিতীয় অহী এবং অহী আসা বন্ধ থাকার পর এটা হল প্রথম অহী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. উঠুন, অতঃপর সতর্ক করুন(১),
(১) এখানে সর্বপ্রথম নির্দেশ হচ্ছে, قُمْ অর্থাৎ উঠুন। এর আক্ষরিক অর্থ ‘দাঁড়ান’ও হতে পারে। অর্থাৎ আপনি বস্ত্ৰাচ্ছাদন পরিত্যাগ করে দন্ডায়মান হোন। এখানে কাজের জন্যে প্রস্তুত হওয়ার অর্থ নেয়াও অবান্তর নয়। উদ্দেশ্য এই যে, এখন আপনি সাহস করে জনশুদ্ধির দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হন। أنذر শব্দটি إنذار থেকে উদ্ভুত। অর্থ সতর্ক করা। এখানে মক্কার কাফেরদেরকে সতর্ক করতে বলা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২) উঠ, সতর্ক কর, [1]
[1] অর্থাৎ, মক্কাবাসীদেরকে ভয় দেখাও, যদি তারা ঈমান না আনে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. আর আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) এবং তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. আর আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র করুন(১),
(১) এখানে বর্ণিত ثياب শব্দটি ثوب এর বহুবচন। এর আসল ও আক্ষরিক অর্থ কাপড়। কখনও কখনও অন্তর, মন, চরিত্র ও কর্মকেও বলা হয়। এটি একটি ব্যাপক অর্থবোধক কথা। এর একটি অর্থ হল, আপনি আপনার পোশাক-পরিচ্ছদ নাপাক বস্তু থেকে পবিত্ৰ রাখুন। কারণ শরীর ও পোশাক-পরিচ্ছদের পবিত্রতা এবং ‘রূহ’ বা আত্মার পবিত্ৰতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। [সা'দী] একথাটির আরেকটি অর্থ হলো, নিজের পোশাক পরিচ্ছদ নৈতিক দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র রাখুন। নিজেকে পবিত্র রাখুন। অন্য কথায় এর অর্থ হলো নৈতিক দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র থাকা এবং উত্তম নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হওয়া। অর্থাৎ নিজের নৈতিক চরিত্রকে পবিত্র রাখুন এবং সব রকমের দোষ-ত্রুটি থেকে দূরে থাকুন। [কুরতুবী]
সুতরাং নির্দেশের অর্থ হবে এই যে, আপন পোশাক ও দেহকে বাহ্যিক অপবিত্রতা থেকে পবিত্র রাখুন এবং অন্তর ও মনকে ভ্রান্ত বিশ্বাস ও চিন্তাধারা থেকে এবং কুচরিত্র থেকে মুক্ত রাখুন। আল্লাহ তা’আলা পবিত্ৰতা পছন্দ করেন। এক আয়াতে আছে, (إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ) [সূরা আল বাকারাহ: ২২২] তাছাড়া হাদীসে ‘পবিত্রতাকে ঈমানের অর্ধাংশ’ [মুসলিম: ২২৩] বলা হয়েছে। তাই মুসলিমকে সর্বাবস্থায় শরীর, স্থান ও পোশাককে বাহ্যিক নাপাকী থেকে এবং অন্তরকে আভ্যন্তরীণ অশুচি, যেমন লোক-দেখানো, অহংকার ইত্যাদি থেকে পবিত্র রাখার প্রতি সচেষ্ট হতে হবে। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) তোমার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখ। [1]
[1] অর্থাৎ, অন্তর ও নিয়তকে পবিত্র রাখার সাথে সাথে কাপড়কেও পবিত্র রাখ। এই নির্দেশ এই জন্য দেওয়া হয় যে, মক্কাবাসীরা পবিত্রতার প্রতি যত্ন নিত না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. আর শির্ক পরিহার করে চলুন(১),
(১) আয়াতে উল্লেখিত الرجز শব্দের এক অর্থ, শাস্তি। অর্থাৎ শাস্তিযোগ্য কাজ। [ফাতহুল কাদীর] এখানে এর অর্থ হতে পারে, পৌত্তলিকতা ও প্রতিমা পূজা। তাছাড়া সাধারণভাবে সকল গোনাহ ও অপরাধ বোঝানোর জন্যও শব্দটি ব্যবহৃত হতে পারে। তাই আয়াতের অর্থ এই যে, প্রতিমা পূজা, শাস্তিযোগ্য কর্মকাণ্ড অথবা গোনাহ পরিত্যাগ করুন। সকল প্রকার ছোট ও বড় অন্যায় ও গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করুন। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) অপবিত্রতা বর্জন কর। [1]
[1] অর্থাৎ, মূর্তিপূজা ছেড়ে দাও। এটা আসলে রসূল (সাঃ)-এর মাধ্যমে লোকদেরকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. আর বেশী পাওয়ার প্রত্যাশায় দান করবেন না।(১)
(১) এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। একটি অর্থ হলো, আপনি যার প্রতিই ইহসান বা অনুগ্রহ করবেন, নিঃস্বাৰ্থভাবে করবেন। আপনার অনুগ্রহ ও বদ্যান্যতা এবং দানশীলতা ও উত্তম আচরণ হবে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। ইহসান বা মহানুভবতার বিনিময়ে কোন প্রকার পার্থিব স্বাৰ্থ লাভের বিন্দুমাত্র আকাঙ্খাও করবেন না; বেশি পাওয়ার আশায়ও ইহসান করবেন না। দ্বিতীয় অর্থ হলো, নবুওয়াতের যে দায়িত্ব আপনি পালন করছেন এবং এর বিনিময়ে কোন প্রকার ব্যক্তি স্বাৰ্থ উদ্ধার করবেন না; যদিও অনেক বড় ও মহান একটি কাজ করে চলেছেন। কিন্তু নিজের দৃষ্টিতে নিজের কাজকে বড় কাজ বলে কখনো মনে করবেন না এবং কোন সময় এ চিন্তাও যেন আপনার মনে উদিত না হয় যে, নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করে আর এ কাজে প্রাণপণ চেষ্টা-সাধনা করে আপনি আপনার রবের প্রতি কোন অনুগ্রহ করছেন। [দেখুন: কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) অধিক পাওয়ার প্রত্যাশায় অনুগ্রহ করো না। [1]
[1] অর্থাৎ, অপরের প্রতি অনুগ্রহ করে এই আশা করো না যে, বিনিময়ে তার থেকে অধিক পাওয়া যাবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. আর আপনার রবের জন্যেই ধৈর্য ধারণ করুন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) এবং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ধৈর্যধারণ কর।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. অতঃপর যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে(১),
(১) ناقور শব্দের অর্থ শিংগা এবং نُقِرَ বলে শিংগায় ফুঁ দিয়ে আওয়াজ বের করা বোঝানো হয়েছে। এখানে শিঙ্গার দ্বিতীয় ফুঁ তথা কবর থেকে উঠে হাশরের ময়দানে জড়ো হওয়ার জন্য যে ফুঁক দেয়া হবে তা উদ্দেশ্য। [বাগভী, সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. সেদিন হবে এক সংকটের দিন-
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) সেদিন হবে এক সংকটের দিন।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. যা কাফিরদের জন্য সহজ নয়।(১)
(১) এ বাক্যটি থেকে স্বতঃই প্রতিভাত হয় যে, সেদিনটি ঈমানদারদের জন্য হবে খুবই সহজ এবং এর সবটুকু কঠোরতা সত্যকে অমান্যকারীদের জন্য নির্দিষ্ট হবে। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) যা অবিশ্বাসীদের জন্য সহজ নয়। [1]
[1] অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন কাফেরদের উপর ভারী হবে। কেননা, কিয়ামতে সেই কুফরীর ফল তাদেরকে ভোগ করতে হবে, যা তারা দুনিয়াতে করে বেড়াত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান