-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. কালপ্রবাহে মানুষের উপর কি এমন এক সময় আসে নি(১) যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না?(২)
(১) هل অব্যয়টি আসলে প্রশ্নবোধকরূপে ব্যবহৃত হয়। মাঝে মাঝে কোন জাজ্বল্যমান ও প্রকাশ্য বিষয়কে প্রশ্নের আকারে ব্যক্ত করা যায়, যাতে তার প্রকাশ্যতা আরও জোরদার হয়ে যায়। [ফাতহুল কাদীর] উদ্দেশ্য এই যে, যাকেই জিজ্ঞাসা করবে, সে এ উত্তরই দিবে, অপর কোন সম্ভাবনাই নেই।
(২) আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, মানুষের উপর এমন দীর্ঘ এক সময় অতিবাহিত হয়েছে, যখন পৃথিবীতে তার নাম-নিশানা এমন কি, আলোচনা পর্যন্ত ছিল না। আয়াতে বৰ্ণিত “যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না” এর অর্থ বৰ্ণনায় কয়েকটি মত রয়েছে, এক. এখানে মানবসৃষ্টির পূর্বের অবস্থা ব্যক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এ অন্তহীন মহাকালের মধ্যে একটি দীর্ঘ সময় তো এমন অতিবাহিত হয়েছে যখন মানব প্ৰজাতির আদৌ কোন অস্তিত্ব ছিল না। তারপর মহাকাল প্রবাহে এমন একটি সময় আসল যখন মানুষ নামের একটি প্রজাতির সূচনা করা হল। [কুরতুবী] দুই. সে একটি ধড় ছিল যার কোন নাম-নিশানা ছিল না। পরবর্তীতে রূহ এর মাধ্যমে তাকে স্মরণীয় করা হয়েছে। [বাগভী; কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১) অবশ্যই মানুষের উপর এমন এক সময় এসেছিল, যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না। [1]
[1] هَلْ এখানে قَدْ অর্থে ব্যবহূত। الإنسَان বলতে কেউ কেউ ‘আবুল বাশার’ অর্থাৎ, প্রথম মানুষ আদম (আঃ)-কে বুঝিয়েছেন। আর حِيْنٌ (এক সময়) বলতে রূহ ফুঁকার পূর্বের কালকে বুঝানো হয়েছে, আর তা ছিল ৪০ বছর। অধিকাংশ মুফাসসেরগণের নিকট ‘মানুষ’ শব্দটি শ্রেণীবাচক অর্থে ব্যবহার হয়েছে এবং তাঁরা حِيْنٌ (এক সময়) বলতে গর্ভধারণের সময়কে বুঝিয়েছেন। যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না। এতে আসলে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে যে, সে সুন্দর এক আকৃতি নিয়ে পৃথিবীতে আসার পর প্রতিপালকের সামনে অহংকার ও দাম্ভিকতা প্রদর্শন করে। তাকে তো নিজের অবস্থা স্মরণ রাখা উচিত যে, আমি তো সে-ই, যার কোন অস্তিত্ব ছিল না, তখন আমাকে কে চিনত?
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. আমরা তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু থেকে(১), আমরা তাকে পরীক্ষা করব(২); তাই আমরা তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন।(৩)
(১) এখানে মানব সৃষ্টির সূচনা এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, আমি মানুষকে মিশ্র বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি। বলাবাহুল্য এখানে নর ও নারীর মিশ্র বীর্য বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের সৃষ্টি পুরুষ ও নারীর দুটি আলাদা বীর্য দ্বারা হয়নি। বরং দুটি বীর্য সংমিশ্রিত হয়ে যখন একটি হয়ে গিয়েছে তখন সে সংমিশ্রিত বীর্য থেকে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ তফসীরবিদ তাই বলেছেন। [বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
(২) এই বাক্যে মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও রহস্য বিধৃত হয়েছে। অর্থাৎ মানুষকে এভাবে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য তাকে পরীক্ষা করা। [কুরতুবী] এটাই হলো দুনিয়ায় মানুষের এবং মানুষের জন্য দুনিয়ার প্রকৃত অবস্থান ও মর্যাদা।
(৩) বলা হয়েছে ‘আমরা তাকে বানিয়েছি শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী’। বিবেকবুদ্ধির অধিকারী করেছি বললে এর সঠিক অর্থ প্ৰকাশ পায়। আল্লাহ তা'আলা তাকে জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধির শক্তি দিয়েছেন যাতে সে পরীক্ষা দেয়ার উপযুক্ত হতে পারে। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২) নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে,[1] যাতে আমি তাকে পরীক্ষা করি, এই জন্য আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। [2]
[1] মিলিত শুক্র বা বীর্যবিন্দু বলতে নর-নারী উভয়ের মিশ্রিত বীর্য এবং তার বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন অবস্থা। মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হল, তাকে পরীক্ষা করা। যেমন তিনি বলেছেন, ‘‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করবার জন্য; কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম?’’ (সূরা মুলকঃ ২ আয়াত)
[2] অর্থাৎ, তাকে শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তি দান করেছি। যাতে সে সব কিছু দেখতে ও শুনতে পারে এবং তারপর আনুগত্যের অথবা অবাধ্যতার উভয় রাস্তার মধ্যে কোন এক রাস্তা অবলম্বন করতে পারে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. নিশ্চয় আমরা তাকে পথ নির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।(১)
(১) এ আয়াত পূর্বের আয়াতে বর্ণিত পরীক্ষার ফলে মানুষের কি অবস্থা হয়েছে তা বিধৃত হয়েছে। বলা হয়েছে, আমি রাসূল ও আসমানী গ্রন্থের মাধ্যমে তাকে পথ বলে দিয়েছি যে, এই পথ জান্নাতের দিকে এবং ঐ পথ জাহান্নামের দিকে যায়। এরপর তাকে ক্ষমতা দিয়েছি যে কোন পথ অবলম্বন করার। সুতরাং আমি তাকে শুধু জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি দিয়েই ছেড়ে দেইনি বরং এগুলো দেয়ার সাথে সাথে তাকে পথও দেখিয়েছি। যাতে সে জানতে পারে শোকরিয়ার পথ কোনটি এবং কুফরীর পথ কোনটি। এরপর যে পথই সে অবলম্বন করুক না কেন তার জন্য সে নিজেই দায়ী। এ বিষয়টিই অন্যত্র এভাবে বলা হয়েছে, “আমরা তাকে দুটি পথ (অর্থাৎ ভাল ও মন্দ পথ) স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছি।” [সূরা আল-বালাদ: ১০] অন্যত্র বলা হয়েছে এভাবে, “শপথ (মানুষের) প্রবৃত্তির আর সে সত্তার যিনি তাকে (সব রকম বাহ্যিক) ও আভ্যন্তরীণ শক্তি দিয়ে শক্তিশালী করেছেন। আর পাপাচার ও তাকওয়া-পরহেজগারীর অনুভূতি দু’টোই তার ওপর ইলহাম করেছেন।” [সূরা আশ-শামস: ৭–৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) নিশ্চয় আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি; হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে। [1]
[1] অর্থাৎ, উল্লিখিত শক্তি ও যোগ্যতাদি দেওয়ার সাথে সাথে আমি নিজেও আসমানী কিতাব, আম্বিয়া এবং হকপন্থী আহবানকারীদের মাধ্যমে সঠিক পথকে সুস্পষ্ট করে দিয়েছি। এখন তার ইচ্ছা আল্লাহর আনুগত্যের পথ অবলম্বন করে তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা গণ্য হোক অথবা তাঁর অবাধ্যতার পথ অবলম্বন করে অকৃতজ্ঞ বান্দা হোক। যেমন, এক হাদীসে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের আত্মার বেচা-কেনা করে। সুতরাং হয় সে তাকে ধ্বংস করে দেয় অথবা তাকে মুক্ত করে নেয়।’’ (মুসলিমঃ পবিত্রতা অধ্যায়, ওযু পরিচ্ছেদ) অর্থাৎ, নিজের আমল ও কর্মাকর্ম দ্বারা হয় তাকে ধ্বংস করে অথবা মুক্ত করে নেয়। যদি সে পাপকাজ করে, তাহলে ধ্বংস করে। আর যদি পুণ্যকাজ করে, তাহলে সে আত্মাকে মুক্ত করে নেয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. নিশ্চয় আমরা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি শেকল, গলার বেড়ি ও লেলিহান আগুন।(১)
(১) এখান থেকে উপরোক্ত আয়াতসমূহে বর্ণিত দুটি শ্রেণীর প্রতিফল ও পরিণাম উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাদের মধ্যকার কাফেরদের জন্যে রয়েছে শিকল, বেড়ি ও জাহান্নাম। আর ঈমান ও ইবাদত পালনকারীদের জন্যে রয়েছে অফুরন্ত নি'আমত। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) নিশ্চয় আমি অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি শৃঙ্খল, বেড়ি ও লেলিহান অগ্নি।[1]
[1] এটা হবে আল্লাহর দেওয়া স্বাধীনতার অপব্যবহারের পরিণাম।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. নিশ্চয় সৎকর্মশীলেরা(১) পান করবে এমন পূৰ্ণপাত্র-পানীয় থেকে যার মিশ্রণ হবে কাফূর(২)—
(১) তারা এমন সব মানুষ যারা পুরোপুরি তাদের রবের আনুগত্য করেছে, তার পক্ষ থেকে অৰ্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ পালন করেছে এবং তাঁর পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে বিরত রয়েছে। [কুরতুবী]
(২) সর্বপ্রথম পানীয় বস্তুর উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাদেরকে এমন শরাবের পাত্র দেয়া হবে, যাতে কাফুরের মিশ্রণ থাকবে। অর্থাৎ তা হবে এমন একটি প্রাকৃতিক ঝর্ণাধারা যার পানি হবে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন এবং শীতল আর তার খোশবু হবে অনেকটা কপূরের মত। কোন কোন তফসীরকারক বলেনঃ কাফুর জান্নাতের একটি ঝরণার নাম। এই শরাবের স্বাদ ও গুণ বৃদ্ধি করার জন্যে তাতে এই ঝরণার পানি মিলানো হবে। যদি কাফুরের প্রসিদ্ধ অর্থ নেয়া হয়, তবে জরুরী নয় যে, জান্নাতের কাফুর দুনিয়ার কাফুরের ন্যায় অখাদ্য হবে। বরং সেই কাফুরের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হবে। [দেখুন: কুরতুবী; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) নিশ্চয় সৎকর্মশীলরা পান করবে এমন পানীয় যার মিশ্রণ হবে কর্পূর। [1]
[1] অসৎ লোকদের কথা আলোচনা করার পর এখানে সৎ লোকদের কথা আলোচিত হয়েছে। كَاْسٌ এমন পানপাত্রকে বলা হয়, যা (শারাব দ্বারা) পরিপূর্ণ হয়ে উচ্ছলিত হতে থাকে। কর্পূর ঠান্ডা এবং বিশেষ এক সুগন্ধযুক্ত হয়। তার মিশ্রণে পানীয়র স্বাদ পরিশুদ্ধ পানীয়র মত হয় এবং তার সুগন্ধি মস্তিষ্ককে সতেজ ও সুগন্ধিময় করে তোলে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. এমন একটি প্রস্রবণ যা থেকে আল্লাহর বান্দাগণ(১) পান করবে, তারা এ প্রস্রবণকে যথেচ্ছা প্রবাহিত করবে।(২)
(১) ‘আল্লাহর বান্দাগণ’ কিংবা ‘রহমানের বান্দাগণ’ শব্দগুলো আভিধানিক অর্থে সমস্ত মানুষের জন্যই ব্যবহৃত হতে পারে। কারণ সবাই আল্লাহর বান্দা। কিন্তু তা সত্বেও কুরআন মজীদে যেখানেই এ ধরনের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তার দ্বারা আল্লাহর নেককার বান্দাগণকেই বুঝানো হয়েছে। অসৎ লোক, যারা নিজেরাই নিজেদেরকে আল্লাহর বন্দেগী তথা দাসত্বের বাইরে রেখেছে, তারা যেন এর যোগ্য-ই নয় যে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে নিজের মহান নামের সাথে যুক্ত করে অথবা এর মতো সম্মানিত উপাধিতে ভূষিত করবেন।
(২) অর্থাৎ জান্নাতের মধ্যে যেখানেই তারা চাইবে সেখানেই এ ঝর্ণা বইতে থাকবে। এ জন্য তাদের নির্দেশ বা ইংগিতই যথেষ্ট হবে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) এমন একটি ঝরণা;[1] যা হতে আল্লাহর দাসরা পান করবে, তারা এ (ঝরনা ইচ্ছামত) প্রবাহিত করবে।[2]
[1] অর্থাৎ, কর্পূর মিশ্রিত এই পানীয় দু’-চার কলসী বা ঘড়া হবে না, বরং তার ঝরণা হবে। অর্থাৎ, তা শেষ হবার নয়।
[2] অর্থাৎ, তাকে যেদিকে চাইবে ঘুরিয়ে নেবে। নিজেদের বাসভবনে, মজলিসে ও বৈঠকে এবং বাইরের ময়দানে ও বিনোদনের জায়গাতেও।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. তারা মানত পূর্ণ করে(১) এবং সে দিনের ভয় করে, যে দিনের অকল্যাণ হবে ব্যাপক।
(১) এতে বিধৃত হয়েছে যে, সৎকর্মশীল বান্দাগণকে এসব নি'আমত কিসের ভিত্তিতে দেয়া হবে। অর্থাৎ তারা আল্লাহর ওয়াস্তে যে কাজের মানত করে, তা পূর্ণ করে। ‘মানত’ বলা হয় নিজের জন্যে এমন কোন কাজ ওয়াজিব করে নেয়া, যা শরীয়তের তরফ থেকে তার দায়িত্বে ওয়াজিব নয়। এরূপ মানত পূর্ণ করা শরীয়তের আইনে ওয়াজিব। [কুরতুবী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের কেউ যদি আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করে সে যেন তা পূর্ণ করে, আর কেউ যদি নাফরমানির মানত করে সে যেন নাফরমানি না করে।” [বুখারী: ৬৭০০]
এখানে মানত পূর্ণ করাকে জান্নাতীদের মহান প্রতিদান ও অফুরন্ত নেয়ামত লাভের কারণ সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবে কাতাদাহ রাহেমাহুল্লাহ বলেন, এখানে نذر শব্দ দ্বারা ‘কর্তব্য’ বোঝানো হয়েছে। তখন অর্থ হবে, তারাই জান্নাতের অধিকারী হবে যারা নিজেদের কর্তব্য যেমন সালাত, সাওম, হজ, উমরা ইত্যাদি যথাযথভাবে পালন করেছে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) তারা মানত পূর্ণ করে[1] এবং সেদিনের ভয় করে, যেদিনের বিপত্তি হবে ব্যাপক। [2]
[1] অর্থাৎ, কেবলমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য করে। মানত করলেও কেবল আল্লাহর জন্য করে এবং তা পূরণও করে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মানত পূরণ করাও জরুরী। তবে শর্ত হল, তা যেন কোন পাপ কাজের না হয়। কেননা, হাদীসে এসেছে যে, ‘‘যে ব্যক্তি এই মানত করল যে, সে আল্লাহর আনুগত্য করবে, সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি মানত করল যে, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করবে, সে যেন তাঁর অবাধ্যতা না করে।’’
(বুখারীঃ ঈমান অধ্যায়, নেক কর্মে নযর পূরণ করার পরিচ্ছেদ)
[2] অর্থাৎ, সেই দিনকে ভয় করে হারাম কাজ এবং পাপাচারে পতিত হয় না। ‘যেদিনের বিপত্তি হবে ব্যাপক’ এর অর্থ হল, সেই দিনে আল্লাহর পাকড়াও হতে কেবল সেই বাঁচতে পারবে, যাকে আল্লাহ তাঁর রহমত ও ক্ষমার চাদরে ঢেকে নেবেন। অবশিষ্ট সকলেই বিপত্তির আওতাভুক্ত হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. আর তারা মহব্বত থাকা সাপেক্ষে(১) অভাবগ্ৰস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীকে(২) খাবার দান করে(৩),
(১) অর্থাৎ জান্নাতীদের এসব নেয়ামত এ কারণেও যে, তারা দুনিয়াতে অভাবগ্ৰস্ত, এতীম ও বন্দীদেরকে আহার্য দান করত। অধিকাংশ তাফসীরকারকের মতে, এখানে حبه এর সর্বনাম দ্বারা طعام বা খাবার উদ্দেশ্য। অর্থাৎ খাদ্য অত্যন্ত প্রিয় ও আকর্ষণীয় হওয়া সত্বেও এবং নিজেরাই খাদ্যের মুখাপেক্ষী হওয়া সত্বেও নেককার লোকেরা তা অন্যদেরকে খাওয়ান। আবু সুলাইমান আদ-দারানী বলেন, حبه এর সর্বনাম দ্বারা আল্লাহ্ তা'আলাকেই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তারা আল্লাহ তা’আলার মহব্বতে এরূপ করে থাকে। পরবর্তী আয়াতাংশ ‘আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যেই তোমাদের খাওয়াচ্ছি’ এ অর্থকেই সমর্থন করে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]
(২) এ আয়াতে বন্দী বলতে কাফের হোক বা মুসলিম, যুদ্ধবন্দী হোক বা অপরাধের কারণে বন্দী হোক সব রকম বন্দীকে বুঝানো হয়েছে। বন্দী অবস্থায় তাদেরকে খাদ্য দেয়া, মুসলিম কিংবা অমুসলিম, সর্বাবস্থায় একজন অসহায় মানুষকে-যে তার খাবার সংগ্রহের জন্য নিজে কোন চেষ্টা করতে পারে না- খাবার দেয়া অতি বড় সওয়াবের কাজ। [দেখুন: কুরতুবী]
(৩) কোন গরীবকে খেতে দেয়া যদিও বড় নেকীর কাজ, কিন্তু কোন অভাবী মানুষের অন্যান্য অভাব পূরণ করাও একজন ক্ষুধার্ত মানুষকে খেতে দেয়ার মতই নেক কাজ। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা কয়েদি মুক্ত কর, ক্ষুধার্তকে খাওয়াও এবং অসুস্থদের সুশ্রুষা কর”। [বুখারী: ৩০৪৬]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও[1] তারা অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীকে অন্নদান করে।
[1] অথবা সে আল্লাহর মহব্বতে অভাবীদেরকে খাদ্য দান করে। বন্দী অমুসলিম হলেও তার সাথে উত্তম ব্যবহার করার তাকীদ করা হয়েছে। যেমন বদর যুদ্ধের কাফের বন্দীদের ব্যাপারে নবী (সাঃ) সাহাবাদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, তাদের সম্মান কর। তাই সাহাবায়ে কেরাম প্রথমে তাদেরকে খাবার খাওয়াতেন এবং তাঁরা নিজেরা পরে খেতেন। (ইবনে কাসীর) অনুরূপ ক্রীতদাস এবং চাকর-ভৃত্যরাও এরই অন্তর্ভুক্ত। তাদের সাথেও উত্তম ব্যবহার করার তাকীদ করা হয়েছে। নবী (সাঃ)-এর শেষ অসিয়ত এটাই ছিল যে, ‘‘তোমরা নামায এবং নিজেদের ক্রীতদাস-দাসীদের প্রতি খেয়াল রাখবে।’’ (আহমাদ, ইবনে মাজাহ, অসীয়ত অধ্যায়)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. এবং বলে, শুধু আল্লাহর সস্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদেরকে খাবার দান করি, আমরা তোমাদের কাছ থেকে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়।(১)
(১) গরীবদের খাবার দেয়ার সময় মুখে একথা বলতে হবে এমনটা জরুরী নয়। মনে মনেও একথা বলা যেতে পারে। আল্লাহর কাছে মুখে বলার যে মর্যাদা অন্তরে বলারও সে একই মর্যাদা। তবে একথা মুখে বলার উল্লেখ করা হয়েছে এ জন্য যে, যাকে সাহায্য করা হবে তাকে যেন নিশ্চিত করা যায় যে, আমরা তার কাছে কোন প্রকার কৃতজ্ঞতা অথবা বিনিময় চাই না, যাতে সে চিন্তামুক্ত হয়ে খাবার গ্রহণ করতে পারে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) (তারা বলে,) ‘শুধু আল্লাহর মুখমন্ডল (দর্শন বা সন্তুষ্টি) লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদেরকে অন্নদান করি, আমরা তোমাদের নিকট হতে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. নিশ্চয় আমরা আশংকা করি আমাদের রবের কাছ থেকে এক ভীতিপ্ৰদ ভয়ংকর দিনের।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) আমরা আশংকা করি আমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের।’ [1]
[1] ইবনে আব্বাস (রাঃ) قَمْطَرِيرٌ এর অর্থ করেছেন সুদীর্ঘ। আর عَبُوْسٌ অর্থ কঠিন। অর্থাৎ, সেই দিন হবে অতীব কঠিন দিন। কঠিনতা ও ভয়াবহতার কারণে কাফেরদের জন্য তা হবে খুবই সুদীর্ঘ। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান