-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
* ১-৫ নং আয়াতে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ফেরেশতাদের কসম করা হয়েছে।
১. শপথ(১) নির্মমভাবে উৎপাটনকারীদের(২),
(১) এ সূরার শুরুতে কতিপয় গুণ ও অবস্থা বর্ণনা করে তাদের শপথ করা হয়েছে। এ পাঁচটি গুণাবলী কোন কোন সত্তার সাথে জড়িত, একথাও এখানে পরিস্কার করে বলা হয়নি। কিন্তু বিপুল সংখ্যক সাহাবী ও তাবেঈন এবং অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে এখানে ফেরেশতাদের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া শপথের জওয়াবও উহ্য রাখা হয়েছে। মূলত কেয়ামত ও হাশর-নশর অবশ্যই হবে এবং সেগুলো নিঃসন্দেহে সত্য, একথার ওপরই এখানে কসম খাওয়া হয়েছে। [কুরতুবী] অথবা কসম ও কসমের কারণ এক হতে পারে, কেননা ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা ঈমানের স্তম্ভসমূহের মধ্যে অন্যতম। [সা'দী]
(২) বলা হয়েছে, যারা নির্মমভাবে টেনে আত্মা উৎপাটন করে। এটা যাদের শপথ করা হয়েছে সে ফেরেশতাগণের প্রথম বিশেষণ। অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ী বলেন, ডুব দিয়ে টানা এবং আস্তে আস্তে বের করে আনা এমন সব ফেরেশতার কাজ যারা মৃত্যুকালে মানুষের শরীরে গভীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তার প্রতিটি শিরা উপশিরা থেকে তার প্রাণ বায়ু টেনে বের করে আনে। এখানে আযাবের, সেসব ফেরেশতা বোঝানো হয়েছে, যারা কাফেরের আত্মা নির্মমভাবে বের করে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া১। শপথ তাদের (ফিরিশতাদের); যারা নির্মমভাবে (কাফেরদের প্রাণ) ছিনিয়ে নেয়। [1]
[1] نزع শব্দের অর্থ হল বড় শক্তের সাথে টানা। غرقًا মানে ডুবে। এটি আত্মা হরণকারী ফিরিশতার গুণবিশেষ। ফিরিশতা কাফেরদের আত্মা খুবই কঠিনভাবে শরীরের ভিতর ডুবে বের করে থাকেন। (غرقًا -এর আর এক অর্থঃ নির্মমভাবে।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. আর মৃদুভাবে বন্ধনমুক্তকারীদের(১)
(১) এটা যাদের শপথ করা হয়েছে সে ফেরেশতাগণের দ্বিতীয় বিশেষণ। বলা হয়েছে যে, যে ফেরেশতা মুমিনের রূহ কবজ করার কাজে নিয়োজিত আছে, সে আনায়াসে রূহ কবজ করে- কঠোরতা করে না। প্রকৃত কারণ এই যে কাফেরের আত্মা বের করার সময় থেকেই বরযাখের আযাব সামনে এসে যায়। এতে তার আত্মা অস্থির হয়ে দেহে আত্মগোপন করতে চায়। ফেরেশতা জোরে-জবরে টানা-হেঁচড়া করে তাকে বের করে। পক্ষান্তরে মুমিনের রূহের সামনে বরযখের সওয়াব নেয়ামত ও সুসংবাদ ভেসে উঠে। ফলে সে দ্রুতবেগে সেদিকে যেতে চায়। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া২। শপথ তাদের; যারা মৃদুভাবে (মু’মিনদের প্রাণ) বের করে।[1]
[1] نشط শব্দের অর্থ হল গিরা খুলে দেওয়া। অর্থাৎ, ফিরিশতা মু’মিনদের আত্মা খুব সহজ ও মৃদুভাবে বের করে থাকেন; যেমন কোন জিনিসের গিরা খুলে দেওয়া হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. আর তীব্ৰ গতিতে সন্তরণকারীদের(১),
(১) এটা তাদের তৃতীয় বিশেষণ। سابحات এর আভিধানিক অর্থ সাঁতার কাটা। এই সাঁতারু বিশেষণটিও মৃত্যুর ফেরেশতাগণের সাথে সম্পর্কযুক্ত। মানুষের রূহ কবজ করার পর তারা দ্রুতগতিতে আকাশের দিকে নিয়ে যায়। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া৩। শপথ তাদের; যারা তীব্র গতিতে সন্তরণ করে। [1]
[1] سبح শব্দের অর্থ হল সাঁতার কাটা। ফিরিশতা আত্মা বের করার সময় মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এমনভাবে সাঁতার কাটেন যেমন, ডুবুরীরা মণিমুক্তা খোঁজার উদ্দেশ্যে সমুদ্রের গভীরে সাঁতার কেটে থাকে। অথবা অর্থ এটাও হতে পারে যে, আল্লাহর হুকুম নিয়ে ফিরিশতারা খুব শীঘ্রতার সাথে আসমান থেকে যমীনে সাঁতার কেটে অবতরণ করেন। কেননা, দ্রুতগামী ঘোড়াকেও سابح বলা হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. আর দ্রুতবেগে অগ্রসরমানদের(১),
(১) এটা তাদের চতুৰ্থ বিশেষণ। উদ্দেশ্য এই যে, যে আত্মা ফেরেশতাগণের হস্তগত হয় তাকে ভাল অথবা মন্দ ঠিকানায় পৌছানোর কাজে তারা দ্রুততায় একে অপরকে ডিঙ্গিয়ে যায়। তারা মুমিনের আত্মাকে জান্নাতের আবহাওয়ায় ও নেয়ামতের জায়গায় এবং কাফেরের আত্মাকে জাহান্নামের আবহাওয়ায় ও আযাবের জায়গায় পৌছিয়ে দেয়। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৪। অতঃপর (শপথ তাদের;) যারা দ্রুতবেগে অগ্রসর হয়। [1]
[1] এই ফিরিশতাগণ আল্লাহর প্রত্যাদেশ নিয়ে আম্বিয়াগণ পর্যন্ত দ্রুতগতিতে পৌঁছিয়ে থাকেন। যাতে শয়তানরা তার পাত্তা না পায়। কিংবা মু’মিনদের আত্মা জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অতিশয় দ্রুততা অবলম্বন করেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. অতঃপর সব কাজ নির্বাহকারীদের।(১)
(১) পঞ্চম বিশেষণ। অর্থাৎ মৃত্যুর ফেরেশতাদের সর্বশেষ কাজ এই যে, তারা আল্লাহ তা'আলার নির্দেশে দুনিয়ার বিভিন্ন কাজ নির্বাহের ব্যবস্থা করে। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া৫। অতঃপর (শপথ তাদের;) যারা সকল কর্ম নির্বাহ করে। [1]
[1] অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা যে সব কর্ম তাদেরকে অর্পণ করেন তা তাঁরা নির্বাহ করেন। পক্ষান্তরে আসল কর্মনির্বাহী হলেন আল্লাহ তাআলা। কিন্তু যেহেতু আল্লাহ তাআলা নিজের হিকমত অনুযায়ী ফিরিশতা দ্বারা কাজ নেন, সেহেতু তাঁদেরকেও কর্মনির্বাহী বলা হয়েছে। এই অনুপাতে উপরোক্ত পাঁচটি গুণই হল ফিরিশতাদের। আর ঐ ফিরিশতাদের আল্লাহ কসম খেয়েছেন। আর কসমের জওয়াব এখানে উহ্য আছে; অর্থাৎ, ‘‘নিশ্চয় তোমরা পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমাদেরকে অবহিত করা হবে, যা তোমরা করতে।’’ কুরআনে এই পুনরুত্থান ও প্রতিদান দিবসের সত্যতা প্রমাণের জন্য কয়েক জায়গায় কসম ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, সূরা তাগাবুন ৭নং আয়াতেও আল্লাহ তাআলা উল্লিখিত বাক্যের মাধ্যমে কসম খেয়ে এই প্রকৃতত্বকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এই পুনরুত্থান ও প্রতিদান দিবস কখন হবে? তার বর্ণনা আগামী আয়াতসমূহে দেওয়া হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
*অর্থাৎ প্রথম শিংগাধ্বনি।
৬. সেদিন প্ৰকম্পিতকারী প্ৰকম্পিত করবে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া৬। সেদিন প্রকম্পিত করবে (মহাপ্রলয়ের) প্রথম শিংগাধ্বনি। [1]
[1] এটা হল শিংগায় প্রথম ফুৎকার যাকে ধ্বংসের ফুৎকার বলা হয়। যার ফলে সারা বিশ্ব-জাহান প্রকম্পিত হবে এবং প্রতিটি জিনিস ধ্বংস হয়ে যাবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
*দ্বিতীয় শিংগাধ্বনি।
৭. তাকে অনুসরণ করবে পরবর্তী কম্পনকারী(১),
(১) প্রথম প্রকম্পনকারী বলতে এমন প্রকম্পন বুঝানো হয়েছে, যা পৃথিবী ও তার মধ্যকার সমস্ত জিনিস ধ্বংস করে দেবে। আর দ্বিতীয় প্রকম্পন বলতে যে কম্পনে সমস্ত মৃতরা জীবিত হয়ে যমীনের মধ্য থেকে বের হয়ে আসবে তাকে বুঝানো হয়েছে। [মুয়াস্সার] অন্যত্র এ অবস্থাটি নিম্নোক্তভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ “আর শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে। তখন পৃথিবী ও আকাশসমূহে যা কিছু আছে সব মরে পড়ে যাবে, তবে কেবলমাত্র তারাই জীবিত থাকবে যাদের আল্লাহ (জীবিত রাখতে) চাইবেন। তারপর দ্বিতীয়বার ফুঁক দেয়া হবে। তখন তারা সবাই আবার হঠাৎ উঠে দেখতে থাকবে।” [সূরা আয-যুমার: ৬৮] এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাত্রির দুই তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে দাঁড়িয়ে বলতেন, হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর যিকর কর, তোমরা আল্লাহর যিকর কর। ‘রাজেফাহ’ (প্রকম্পণকারী) তো এসেই গেল (প্রায়), তার পিছনে আসবে ‘রাদেফাহ’ (পশ্চাতে আগমনকারী), মৃত্যু তার কাছে যা আছে তা নিয়ে হাজির, মৃত্যু তার কাছে যা আছে তা নিয়ে হাজির।
সাহাবী উবাই ইবনে কা'ব বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার উপর বেশী বেশী সালাত (দরুদ) পাঠ করি। এ সালাত পাঠের পরিমান কেমন হওয়া উচিত? তিনি বললেন, তোমার যা ইচ্ছা। আমি বললাম, (আমার যাবতীয় দোআর) এক চতুর্থাংশ? তিনি বললেন, যা তোমার ইচ্ছা। তবে যদি এর থেকেও বেশী কর তবে সেটা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, অর্ধেকাংশ? তিনি বললেন, যা তোমার ইচ্ছা। তবে যদি এর থেকেও বেশী কর তবে সেটা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, যা তোমার ইচ্ছা। তবে যদি এর থেকেও বেশী কর তবে সেটা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, তাহলে আমি আপনার জন্য আমার সালাতের সবটুকুই নির্ধারণ করব, (অর্থাৎ আমার যাবতীয় দোআ হবে আপনার উপর সালাত বা দরুদ প্রেরণ) তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলে তা তোমার যাবতীয় চিন্তা দূর করে দিবে এবং তোমার গোনাহ ক্ষমা করে দিবে।” [তিরমিযী: ২৪৫৭, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৫১৩, দ্বিয়া: আল-মুখতারাহ: ৩/৩৮৮, ৩৯০]
তাফসীরে জাকারিয়া৭। তার অনুগামী হবে পরবর্তী (পুনরুত্থানের) শিংগাধ্বনি। [1]
[1] এটা হবে শিংগায় দ্বিতীয় ফুৎকার। যার ফলে সমস্ত লোক জীবিত হয়ে কবর থেকে বের হবে। এই দ্বিতীয় ফুৎকারটি প্রথম ফুৎকারের চল্লিশ বছর পর ঘটবে। তাকে رادفة বা পরবর্তী শিংগাধ্বনি এই জন্য বলা হয়েছে যে, এটা প্রথম ফুৎকারের পরে ঘটবে তাই। অর্থাৎ, দ্বিতীয় ফুৎকারটি হল প্রথম ফুৎকারের অনুগামী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. অনেক হৃদয় সেদিন সন্ত্রস্ত হবে(১),
(১) “কতক হৃদয়” বলতে কাফের ও নাফরমানদের বোঝানো হয়েছে। কিয়ামতের দিন তারা ভীত ও আতঙ্কিত হবে। [মুয়াস্সার] সৎ মুমিন বান্দাদের ওপর এ ভীতি প্রভাব বিস্তার করবে না। অন্যত্র তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “সেই চরম ভীতি ও আতংকের দিনে তারা একটুও পেরেশান হবে না এবং ফেরেশতারা এগিয়ে এসে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবে। তারা বলতে থাকবে, তোমাদের সাথে এ দিনটিরই ওয়াদা করা হয়েছিল।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৩]
তাফসীরে জাকারিয়া৮। কত হৃদয় সেদিন ভীত-সন্ত্রস্ত হবে। [1]
[1] কিয়ামতের ভয়াবহতা এবং কঠিনতার কারণে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. তাদের দৃষ্টিসমূহ ভীতি-বিহ্বলতায় নত হবে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া৯। তাদের দৃষ্টিসমূহ অবনমিত হবে। [1]
[1] অর্থাৎ, ঐ হৃদয়বিশিষ্ট লোকদের দৃষ্টিসমূহ। এমন ভীত-সন্ত্রস্ত লোকদের দৃষ্টিও সেদিন (অপরাধীদের মত) নিচের দিকে ঝুঁকে থাকবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. তারা বলে, আমরা কি আগের অবস্থায় ফিরে যাবই—
-
তাফসীরে জাকারিয়া১০। তারা (কাফেররা) বলে, ‘আমরা কি পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তিত হবই? [1]
[1] حافرة প্রথম অবস্থাকে বলা হয়। এটা কিয়ামতের দিনকে অস্বীকারকারীদের উক্তি যে, ‘আমাদেরকে কি পুনরায় ঐরূপ জীবিত করা হবে, যেরূপ মৃত্যুর পূর্বে ছিলাম!?’
তাফসীরে আহসানুল বায়ান