-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. সূর্যকে যখন নিষ্প্রোভ করা হবে(১),
(১) আরবী ভাষায় তাকভীর মানে হচ্ছে গুটিয়ে নেয়া। মাথায় পাগড়ী বঁধার জন্য ‘তাকভীরুল ইমামাহ’ বলা হয়ে থাকে। কারণ ইমাম তথা পাগড়ী লম্বা কাপড়ের হয়ে থাকে এবং মাথার চারদিকে তা জড়িয়ে নিতে হয়। এই সাদৃশ্য ও সম্পর্কের কারণে সূর্য থেকে যে আলোক রশ্মি বিছুরিত হয়ে সমগ্র সৌরজগতে ছড়িয়ে পড়ে তাকে পাগড়ীর সাথে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কিয়ামতের দিন এই সূর্যকে গুটিয়ে নেয়া হবে। অর্থাৎ তার আলোক বিচ্ছুরণ বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া كُوِّرَتْ এর অপর অর্থ নিক্ষেপ করাও হয়ে থাকে। হাদীসে এসেছে, “চাঁদ ও সূর্যকে কিয়ামতের দিন পেচিয়ে রাখা হবে।” [বুখারী: ৩২০০] [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া১। সূর্য যখন লেপটানো (নিষ্প্রভ) হবে, [1]
[1] অর্থাৎ, যেমন, মাথায় পাগড়ী লেপটানো হয় ঠিক তেমনি সূর্যের অস্তিত্বকে লেপটিয়ে ফেলে দেওয়া হবে। যার কারণে তার কিরণ আপনা আপনি শেষ হয়ে যাবে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, সূর্য ও চন্দ্রকে কিয়ামত দিবসে গুটিয়ে নেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী সৃষ্টির প্রারম্ভ অধ্যায়, সূর্য ও চন্দ্র কক্ষপথে আবর্তনের পরিচ্ছেদ) অন্যান্য বর্ণনা হতে বুঝা যায় যে, সূর্য ও চন্দ্রকে গুটিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। যাতে সেই মুশরিকরা অধিকভাবে লাঞ্ছিত হয় যারা এ সবের উপাসনা করত। (ফতহুল বারী)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. আর যখন নক্ষত্ররাজি খসে পড়বে(১),
(১) অর্থাৎ যে বাঁধনের কারণে তারা নিজেদের কক্ষপথে ও নিজেদের জায়গায় বাধা আছে তা খুলে যাবে এবং সমস্ত গ্ৰহ-তারকা বিশ্ব-জাহানের চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। এ ছাড়াও তারা শুধু ছড়িয়েই পড়বে না। বরং এই সঙ্গে আলোহীন হয়ে অন্ধকারও হয়ে যাবে। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া২। যখন নক্ষত্ররাজি দীপ্তিহীন হয়ে পড়বে, [1]
[1] এর দ্বিতীয় অর্থ হল যে, খসে পড়বে; অর্থাৎ, আসমানে তার অস্তিত্ব থাকবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. আর পর্বতসমূহকে যখন চলমান করা হবে(১),
(১) পাহাড়সমূহকে কয়েকটি পর্যায়ে চলমান করা হবে। প্রথমে তা বিক্ষিপ্ত বালুরাশির মত হবে, তারপর তা ধূনিত পশমের মত হবে, সবশেষে তা উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণা হয়ে যাবে এবং তার জায়গায় আর অবস্থিত থাকবে না। [সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া৩। পর্বতসমূহকে যখন চালিত করা হবে, [1]
[1] অর্থাৎ, যমীনকে উপড়ে দেওয়ার পর হাওয়াতে উড়িয়ে দেওয়া হবে। আর সে ধূনিত তুলোর ন্যায় উড়তে থাকবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. আর যখন পূর্ণগর্ভা মাদী উট উপেক্ষিত হবে(১),
(১) আরবদেরকে কিয়ামতের ভায়াবহ অবস্থা বুঝাবার জন্য এটি ছিল একটি চমৎকার বর্ণনা পদ্ধতি। কেননা কুরআন আরবদেরই সম্বোধন করা হয়েছে। আরবদের কাছে গর্ভবতী মাদী উট, যার প্রসবের সময় অতি নিকটে, তার চাইতে বেশী মূল্যবান আর কোন সম্পদই ছিল না। এ সময় তার হেফাজত ও দেখাশুনার জন্য সবচেয়ে বেশী যত্ন নেয়া হতো। এই ধরনের উষ্ট্রীদের থেকে লোকদের গাফেল হয়ে যাওয়ার মানে এই দাঁড়ায় যে, তখন নিশ্চয়ই এমন কোন কঠিন বিপদ লোকদের ওপর এসে পড়বে যার ফলে তাদের নিজেদের এই সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ সংরক্ষণের কথা তাদের খেয়ালই থাকবে না। [ইবন কাসীর, সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া৪। যখন পূর্ণ-গর্ভা উষ্ট্রী উপেক্ষিতা হবে, [1]
[1] عشار শব্দটি হল عشراء এর বহুবচন। অর্থাৎ, এমন গাভীন উট যার দশ মাস পূর্ণ হয়ে গেছে। এমন উট সে যুগে আরববাসীদের নিকট খুবই প্রিয় এবং মূল্যবান ছিল। যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে তখন এমন ভয়ানক দৃশ্য হবে যে, যদি কারো কাছে এ ধরনের মূল্যবান উটও থাকে তবুও সে তখন তারও পরোয়া করবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. আর যখন বন্য পশুগুলো একত্র করা হবে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া৫। যখন বন্য পশুগুলিকে একত্রিত করা হবে, [1]
[1] অর্থাৎ, তাদেরকেও কিয়ামতের দিবসে সমবেত করা হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. আর যখন সাগরকে অগ্নি-উত্তাল করা হবে(১),
(১) এর কয়েকটি অর্থ রয়েছে। একটি অর্থ হল অগ্নিসংযোগ করা ও প্রজ্জ্বলিত করা। কেউ কেউ বলেন, সমুদ্রগুলোকে স্ফীত করা হবে। কেউ কেউ এর অর্থ নিয়েছেন, পানি পূর্ণ করা হবে। অন্য কেউ অর্থ নিয়েছেন মিশ্রিত করা অর্থাৎ সমস্ত সমুদ্র এক করে দেয়া হবে, ফলে লবনাক্ত ও সুমিষ্ট পানি একাকার হয়ে যাবে। হাসান ও কাতাদাহ রাহিমাহুমাল্লাহ বলেন, এর অর্থ তার পানিসমূহ নিঃশেষ হয়ে যাবে। ফলে তাতে এক ফোটা পানিও থাকবে না। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া৬। এবং সমুদ্রগুলিকে যখন উদ্বেলিত করা হবে;[1]
[1] অন্য অর্থে, তাতে আল্লাহর আদেশে আগুন জ্বলে উঠবে এবং তার পানি শুকিয়ে যাবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. আর যখন আত্মাগুলোকে সমগোত্রীয়দের সাথে মিলিয়ে দেয়া হবে(১),
(১) এর অর্থ হচ্ছে, যখন মানুষকে জোড়া জোড়া করা হবে। অর্থাৎ মানুষের আমল অনুসারে তাদের শ্রেণীবিভাগ করা হবে। যখন হাশরে সমবেত লোকদেরকে বিভিন্ন দলে দলবদ্ধ করে দেয়া হবে। এই দলবদ্ধকরণ ঈমান ও কর্মের দিক দিয়ে করা হবে। কাফের এক জায়গায় ও মুমিন এক জায়গায়। কাফের এবং মুমিনের মধ্যেও কর্ম এবং অভ্যাসের পার্থক্য থাকে। এদিকে দিয়ে কাফেরদেরও বিভিন্ন প্রকার দল হবে আর মুমিনদেরও বিশ্বাস এবং কর্মের ভিত্তিতে দল হবে। যারা ভাল হোক মন্দ হোক একই প্রকার কর্ম করবে তাদেরকে এক জায়গায় জড়ো করা হবে।
উদাহরণত ইহুদীরা ইহুদীদের সাথে, নাসারারা নাসারাদের সাথে, মুনাফিকরা মুনাফিকদের সাথে এক জায়গায় সমবেত হবে। মূলত হাশরে লোকদের তিনটি প্রধান দল হবে- (১) পূর্ববর্তী সৎকর্মী লোকদের (২) আসহাবুল ইয়ামীনের এবং (৩) আসহাবুশ শিমালের দল। প্রথমোক্ত দুই দল মুক্তি পাবে এবং তৃতীয় দলটি হবে কাফের পাপাচারীদের। তারা মুক্তি পাবে না। [তাবারী, কুরতুবী] এ আয়াতের আরেকটি অর্থও হতে পারে। আর তা হল, “যখন আত্মাকে দেহের সাথে পুনঃমিলিত করা হবে। কেয়ামতের সময়ে সকলকে জীবিত করার জন্য প্রথমে দেহকে পুনরায় সৃষ্টি করা হবে। অতঃপর আত্মাকে দেহের সাথে সংযোজন করা হবে। [কুরতুবী, ইবন কাসীর] এ আয়াত এবং এর পূর্ববর্তী আয়াত থেকে কিয়ামতের দ্বিতীয় অংশের আলোচনা শুরু হচ্ছে।
তাফসীরে জাকারিয়া৭। যখন আত্মাসমূহকে (স্ব-স্ব দেহে) পুনঃসংযোজিত করা হবে,[1]
[1] এর কয়েকটি মর্মার্থ বর্ণনা করা হয়েছে। তার মধ্যে সর্বাধিক বেশী যুক্তিযুক্ত অর্থ এই যে, প্রতিটি মানুষকে তার পথ ও মতানুসারীর শ্রেণীভুক্ত করা হবে; অর্থাৎ মু’মিনকে মুমিনের সাথে, পাপীকে পাপী ব্যক্তির সাথে, ইহুদীকে ইহুদীর সাথে এবং খ্রিষ্টানকে খ্রিষ্টানের সাথে মিলানো হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. আর যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে(১) জিজ্ঞেস করা হবে,
(১) الْمَوْءُودَةُ শব্দের অর্থ জীবন্ত প্রোথিত কন্যা। জাহেলিয়াত যুগের কোন কোন আরব গোত্র কন্যা সন্তানকে লজ্জাকর মনে করত এবং জীবন্তই মাটিতে প্রোথিত করে দিত। [ইবন কাসীর, কুরতুবী] পরবর্তীতে ইসলাম এই কুপ্রথার মূলোৎপাটন করে।
তাফসীরে জাকারিয়া৮। যখন জীবন্ত-প্রোথিতা কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে,
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?(১)
(১) কোনো কোনো মুফাস্সির বলেন, এই আয়াতের বর্ণনাভঙ্গীতে মারাত্মক ধরনের ক্রোধের প্রকাশ দেখা যায়। যে পিতা বা মাতা তাদের মেয়েকে জীবিত পুঁতে ফেলেছে আল্লাহর কাছে তারা এত বেশী ঘৃণিত হবে যে, তাদেরকে সম্বোধন করে একথা জিজ্ঞেস করা হবে না, তোমরা এই নিষ্পাপ শিশুটিকে হত্যা করেছিলে কোন অপরাধে? বরং তাদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে ছোট্ট নিরপরাধ মেয়েকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাকে কোন অপরাধে মেরে ফেলা হয়েছিল? [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৯। কোন্ অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল? [1]
[1] এইরূপে আসলে হত্যাকারীকে ভৎর্সনা করা হবে সেদিন। কেননা, আসল অপরাধী তো সেই; সে কন্যা অপরাধিনী নয় যাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হয়েছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. আর যখন আমলনামাগুলো উন্মোচিত করা হবে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া১০। যখন আমলনামাকে উন্মোচিত করা হবে।[1]
[1] মৃত্যুর সময় মানুষের আমলনামা গুটিয়ে দেওয়া হয়। পুনরায় কিয়ামতের দিন হিসাবের জন্য তা খোলা হবে। যা প্রতিটি ব্যক্তি তা প্রত্যক্ষ করবে। বরং প্রত্যেকের হাতে তা ধরিয়ে দেওয়া হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান