-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১. শপথ রাতের, যখন সে আচ্ছন্ন করে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া১। শপথ রাত্রির, যখন তা আচ্ছন্ন করে।[1]
[1] অর্থাৎ, দিগন্তে ছেয়ে যায় এবং তার ফলে দিনের আলো বিলীন হয়ে যায় ও অন্ধকার নেমে আসে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
২. শপথ দিনের, যখন তা উদ্ভাসিত হয়
-
তাফসীরে জাকারিয়া২। শপথ দিবসের, যখন তা সমুজ্জ্বল হয়। [1]
[1] অর্থাৎ, রাতের অন্ধকার দূরীভূত হয় এবং দিনের উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়ে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৩. শপথ তাঁর, যিনি নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন—
-
তাফসীরে জাকারিয়া৩। শপথ তাঁর যিনি নর-নারীর সৃষ্টি করেছেন। [1]
[1] এখানে আল্লাহ তাআলা নিজ সত্তার কসম খেয়েছেন। কেননা, তিনি হলেন নর-নারী উভয়েরই সৃষ্টিকর্তা। এ ক্ষেত্রে ما মাওসূলা الذي -এর অর্থে। আর ما মাসদারিয়া হলে অর্থ হবে, ‘শপথ নর-নারীর সৃষ্টির।’
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৪. নিশ্চয় তোমাদের কর্মপ্ৰচেষ্টা বিভিন্ন প্রকৃতির।(১)
(১) এ কথার জন্যই রাত ও দিন এবং নারী ও পুরুষের জন্মের কসম খাওয়া হয়েছে। এর তাৎপর্য এই হতে পারে যে, যেভাবে রাত ও দিন এবং পুরুষ ও নারী পরস্পর থেকে ভিন্ন ও বিপরীত ঠিক তেমনই তোমরা যেসব কর্মপ্রচেষ্টা চালাচ্ছে সেগুলোও বিভিন্ন ধরনের এবং বিপরীত। কেউ ভালো কাজ করে, আবার কেউ খারাপ কাজ করে। [ইবন কাসীর] হাদীসে আছে, “প্রত্যেক মানুষ সকাল বেলায় উঠে নিজেকে ব্যবসায়ে নিয়োজিত করে। অতঃপর কেউ এই ব্যবসায়ে সফলতা অর্জন করে এবং নিজেকে আখেরাতের আযাব থেকে মুক্ত করে; আবার কেউ নিজেকে ধ্বংস করে।” [মুসলিম: ২২৩]
তাফসীরে জাকারিয়া৪। অবশ্যই তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা বিভিন্নমুখী। [1]
[1] অর্থাৎ, কেউ সৎকর্ম করে; সুতরাং তার প্রতিদান হবে জান্নাত। আর কেউ অসৎ কর্ম করে; আর তার পরিণাম হবে জাহান্নাম। এ আয়াতটি কসমের জবাব।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৫. কাজেই(১) কেউ দান করলে, তাকওয়া অবলম্বন করলে,
(১) আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কুরআনে কর্ম প্রচেষ্টার ভিত্তিতে মানুষকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন এবং প্রত্যেকের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। প্রথমে বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ যা নির্দেশ দিয়েছেন তা একমাত্র তারই পথে ব্যয় করে, আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ্ তা'আলা যা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তা থেকে দূরে থাকে এবং উত্তম কলেমাকে সত্য মনে করে। এখানে ‘উত্তম কলেমা’কে বিশ্বাস করা বলতে কলেমায়ে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এবং কালেমা থেকে প্রাপ্ত আকীদা-বিশ্বাস ও এর উপর আরোপিত পুরস্কার-তিরস্কারকে বিশ্বাস করা বুঝায়। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া৫। সুতরাং যে দান করে ও আল্লাহকে ভয় করে, [1]
[1] অর্থাৎ, ভাল কাজে খরচ করে এবং নিষিদ্ধ কর্ম হতে দূরে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৬. এবং যা উত্তম তা সত্য বলে গ্ৰহণ করলে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া৬। এবং সৎ বিষয়কে সত্য জ্ঞান করে। [1]
[1] অথবা উত্তম প্রতিদানকে সত্যজ্ঞান করে। অর্থাৎ, এ কথায় বিশ্বাস রাখে যে, দান করা এবং আল্লাহকে ভয় করার উত্তম প্রতিদান পাওয়া যাবে তাঁর কাছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৭. আমরা তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ।(১)
(১) এটি হচ্ছে উপরোক্ত প্রচেষ্টার ফল। যে ব্যক্তি উক্ত বিষয়গুলো সঠিকভাবে করে, তার জন্য আল্লাহ তা'আলা তার সব উত্তম কাজ করা ও উত্তম কাজের উপায় সহজ করে দেন, আর খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা সহজ করে দেন। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া৭। অচিরেই আমি তার জন্য সুগম করে দেব (জান্নাতের) সহজ পথ। [1]
[1] يُسرَى শব্দের অর্থ হল পুণ্য এবং সুন্দর আচরণ। অর্থাৎ, আমি তাকে পুণ্য কাজ করার এবং আনুগত্যের তওফীক দান করি এবং সেগুলি করা তার জন্য সহজ করে দিই। ব্যাখ্যাকারকগণ বলেন, এই আয়াতটি আবু বকর (রাঃ)-এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি ছয়জন ক্রীতদাসকে স্বাধীন করেছিলেন, যাদেরকে মুসলমান হওয়ার কারণে মক্কাবাসীরা খুবই কষ্ট দিত। (ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৮. আর(১) কেউ কার্পণ্য করলে এবং নিজেরা অমুখাপেক্ষী মনে করলে,
(১) এটি দ্বিতীয় ধরনের মানসিক প্রচেষ্টা। মহান আল্লাহ এখানে তাদের তিনটি কর্ম উল্লেখ করে বলেছেন যে, আল্লাহ যা নির্দেশ দিয়েছেন তা তাঁর পথে ব্যয় করার ব্যাপারে কৃপণতা করে তথা ফরয-ওয়াজিব-মুস্তাহাব কোন প্রকার সদকা দেয় না, আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বনের পরিবর্তে, তার প্রতি ইবাদত করার পরিবর্তে বিমুখ হয়ে নিজেকে অমুখাপেক্ষী মনে করে এবং উত্তম কলেমা তথা ঈমানের যাবতীয় বিষয়কে মিথ্যা মনে করে; তার জন্য কঠিন পথে চলা সহজ করে দিব। এখানে কঠিন পথ অর্থ কঠিন ও নিন্দনীয় অবস্থা তথা খারাপ কাজকে সহজ করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। [সা’দী] প্রথম ধরনের প্রচেষ্টাটির সাথে প্রতি পদে পদে রয়েছে এর অমিল। কৃপণতা মানে শুধুমাত্র প্রচলিত অর্থে যাকে কৃপণতা বলা হয় তা নয়, বরং এখানে কৃপণতা বলতে আল্লাহর ও বান্দার হকে সামান্য কিছু হলেও ব্যয় না করা বুঝাচ্ছে।
আর বেপরোয়া হয়ে যাওয়া ও অমুখাপেক্ষী মনে করা হলো তাকওয়া অবলম্বনের সম্পূর্ণ বিপরীত স্তর। তাকওয়া অবলম্বনের কারণে মানুষ তার নিজের দূর্বলতা এবং তার স্রষ্টার প্রতি মুখাপেক্ষীতার মর্ম বুঝতে পারে। এ-জন্য আল্লাহ্ তা'আলা আখুশি হন এমন কোন বিষয়ের ধারে কাছেও যায় না, আর যাতে খুশি হন তা করার সর্বপ্রচেষ্টা চালায়। আর যে ব্যক্তি নিজেকে তার রবের অমুখাপেক্ষী মনে করে, সে বেপরোয়া হয়ে যায় এবং আল্লাহ তা'আলা কোন কাজে খুশি হন। আর কোন কাজে নাখোশ হন তার কোন তোয়াক্কা করে না। তাই তার কাজকর্ম কখনো মুত্তাকীর কর্মপ্রচেষ্টার সমপর্যায়ের হতে পারে না। উত্তম কালমায় মিথ্যারোপ করা অর্থ ঈমানী শক্তিকে নষ্ট করে দিয়ে ঈমানের কালিমা ও আখেরাতের কথা মিথ্যা গণ্য করা। [দেখুন: বাদা’ই’উত তাফসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৮। পক্ষান্তরে যে কার্পণ্য করে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করে।[1]
[1] অর্থাৎ, যে আল্লাহর পথে ব্যয় করে না এবং আল্লাহর আদেশকে পরোয়া করে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
৯. আর যা উত্তম তাতে মিথ্যারোপ করলে,
-
তাফসীরে জাকারিয়া৯। আর সৎ বিষয়কে মিথ্যা জ্ঞান করে, [1]
[1] অথবা আখেরাতের বদলা এবং হিসাব-নিকাশকে অস্বীকার করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান-আল-বায়ান
-তাইসিরুল
-মুজিবুর রহমান
-Sahih International
১০. তার জন্য আমরা সুগম করে দেব কঠোর পথ।(১)
(১) অর্থ এই যে, যারা তাদের প্রচেষ্টা ও শ্রম প্রথমোক্ত তিন কাজে নিয়োজিত করে, (অর্থাৎ আল্লাহর পথে দান করা, আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করা এবং ঈমানকে সত্য মনে করা) তাদেরকে আমি সৎ ও উত্তম কাজের জন্যে সহজ করে দেই। পক্ষান্তরে যারা তাদের প্রচেষ্টা ও শ্রমকে শেষোক্ত তিন কাজে নিয়োজিত করে, আমি তাদেরকে খারাপ ও দুর্ভাগ্যের কাজের জন্য সহজ করে দেই। [মুয়াস্সার] এ আয়াতগুলোতে তাকদীরের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া আছে। হাদীসে এসেছে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা বাকী আল-গারকাদে এক জানাযায় এসেছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সেখানে আসলেন, তিনি বসলে আমরাও বসে গেলাম। তার হাতে ছিল একটি ছড়ি। তিনি সেটি দিয়ে মাটিতে খোচা দিচ্ছিলেন।
তারপর বললেন, “তোমাদের প্রত্যেকের এমনকি প্রতিটি আত্মারই স্থান জান্নাত কিংবা জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে গেছে। প্রত্যেকের ব্যাপারেই সৌভাগ্যশালী কিংবা দূর্ভাগা লিখে দেয়া হয়েছে। তখন একজন বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আমাদের লিখা গ্রন্থের উপর নির্ভর করে কাজ-কর্ম ছেড়ে দেব না? কারণ, যারা সৌভাগ্যশালী তারা তো অচিরেই সৌভাগ্যের দিকে ধাবিত হবে, আর যারা দূৰ্ভাগা তারা দূর্ভাগ্যের দিকে ধাবিত হবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যারা সৌভাগ্যশালী তাদের জন্য সৌভাগ্যপূর্ণ কাজ করা সহজ করে দেয়া হবে, পক্ষান্তরে যারা দূৰ্ভাগা তাদের জন্য দূর্ভাগ্যপূর্ণ কাজ করা সহজ করে দেয়া হবে। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন।” [বুখারী: ৪৯৪৮, মুসলিম: ২৬৪৭] [বাদা’ই’উত তাফসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া১০। অচিরেই তার জন্য আমি সুগম করে দেব (জাহান্নামের) কঠোর পরিণামের পথ।[1]
[1] عُسرَى (সংকীর্ণতা বা কঠোর পরিণামের পথ) বলতে কুফর, অবাধ্যতা ও মন্দ পথকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, তার জন্য আমি অবাধ্যতার পথ আসান করে দেব। যার কারণে তার জন্য ভাল ও সৌভাগ্যের পথ জটিল হয়ে যাবে। কুরআন মাজীদে কয়েক জায়গায় এই বিষয়কে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ভাল ও হিদায়াতের পথ অবলম্বন করে, তার প্রতিদানে আল্লাহ তাকে মঙ্গলের তওফীক দান করেন। আর যে ব্যক্তি মন্দ ও অবাধ্যতার পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তাকে সেই অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। আর এটা সেই ভাগ্য অনুযায়ী হয়, যা আল্লাহ নিজ ইলম অনুসারে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। (ইবনে কাসীর) এই বিষয়টি হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে। নবী (সাঃ) বলেছেন, তোমরা আমল কর। প্রত্যেক ব্যক্তিকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে কাজ সহজ করে দেওয়া হয়। যে সৌভাগ্যবান, তাকে সৌভাগ্যবানের কাজের জন্য তওফীক দেওয়া হয়। আর যে দুর্ভাগ্যবান, তাকে দুর্ভাগ্যবানের কাজের তওফীক দেওয়া হয়। (সহীহ বুখারীঃ সূরা লাইলের তফসীর পরিচ্ছেদ।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান