জানাযার কিছু বিধান সান্ত্বনা দান ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা শায়খ আব্দুল আযীয ইব্‌ন আব্দুল্লাহ ইব্‌ন বায রাহিমাহুল্লাহ (ইসলামহাউজ) ১৫ টি
প্রশ্ন ১- শোকবার্তা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া ও তাদের সাথে বৈঠক করা কি বৈধ?

উত্তর - শোকাহত মুসলিম পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়া মুস্তাহাব, এর মাধ্যমে তাদেরকে সুহৃদয়তা দেখানো হয়। এ সময় যদি তাদের নিকট চা, কফি ইত্যাদি পান করে বা আতর ইত্যাদি গ্রহণ করে, যা সাধারণত অন্যান্য সাক্ষাত প্রার্থীদের সাথে করা হয়, এতে কোন সমস্যা নেই।

প্রশ্ন ২- শোক প্রকাশের সময় এ কথা বলা কেমন যে, সে তার শেষ ঠিকানায় চলে গেছে?

উত্তর - আমার জানামতে তাতে কোন সমস্যা নেই, কারণ দুনিয়ার তুলনায় পরকাল নিশ্চয় তার শেষ ঠিকানা। তবে মুমিনদের সত্যিকারের শেষ ঠিকানা হচ্ছে জান্নাত আর কাফেরদের শেষ ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম।

প্রশ্ন ৩- সান্ত্বনা দেয়ার উদ্দেশ্যেঃ ﴿يَٰٓأَيَّتُهَا ٱلنَّفۡسُ ٱلۡمُطۡمَئِنَّةُ ٢٧﴾ [الفجر:27] “হে প্রশান্ত আত্মা” [ফজর: ২৭] বলে মৃতকে সম্বোধন করা কেমন?

উত্তর - এ ধরণের বাক্য পরিত্যাগ করা উচিত, কারণ তাদের জানা নেই যে মৃতের আত্মা বাস্তবিকেই কেমন। শরিয়ত অনুমোদিত আমল হচ্ছে মৃতের জন্যে প্রার্থনা করা, তার জন্যে ক্ষমা ও রহমতের দো‘আ করা।

প্রশ্ন ৪- পেপার পত্রিকায় শোকপ্রকাশ করা কেমন, এটা কি মাতমের অন্তর্ভূক্ত?

উত্তর - এটা নিষিদ্ধ মাতমের অন্তর্ভূক্ত না হলেও বর্জন করা উচিত, কারণ এতে নিষ্প্রয়োজনে অনেক অর্থ ব্যয় হয়।

প্রশ্ন ৫- মৃতের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী তিন দিন পর্যন্ত মৃতের বাড়িতে অবস্থান করে, এটা কেমন?

উত্তর – মৃতের পরিবারের সাথে হৃদ্যতা প্রকাশের জন্য সেখানে তিন দিন অবস্থান করা বৈধ, তবে এ ক্ষেত্রে ওলিমার ন্যায় লোকদের জন্য খাওয়ার অনুষ্ঠান করবে না।

প্রশ্ন ৬ - সান্ত্বনা দেয়ার জন্য কি কোন নির্ধারিত সময় আছে?

উত্তর - আমার জানামতে এর জন্য নির্ধারিত কোন সময় নেই।

প্রশ্ন ৭- শোকাহত পরিবারকে খানা পৌঁছানো বাবদ জবেহকৃত প্রাণী পাঠিয়ে দেয়া কেমন?

উত্তর - দেয়া যেতে পারে, নিকটতম আত্মীয়দের দ্বারা তা রান্না করে নেবে। মুতার যুদ্ধে সাহাবি জাফর ইবন আবু তালিব শাহাদত বরণ করলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারের লোকদেরকে বললেন, তোমরা জাফরের পরিবারের জন্য খানা তৈরি করে পাঠিয়ে দাও, কারণ তারা কঠিন বিপদগ্রস্থ খানা তৈরির মানষিকতা তাদের নেই।

প্রশ্ন ৮- মৃত ব্যক্তি অসিয়ত করেছে যে, তার ইন্তেকালের পর যেন বিলাপ করা না হয়, তবও যদি কেউ তার জন্য বিলাপ করে, তাহলে কি মৃতকে আযাব দেয়া হবে?

উত্তর - তার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন, প্রত্যেকের উচিত তার আপনজনদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক করা। ওয়ারিসদের সতর্ক করার পরও যদি কেউ তার জন্য বিলাপ করে তাহলে ইনশাআল্লাহ সে অপরাধী বলে সাব্যস্ত হবে না। মহান আল্লাহ তালা বলেন,

﴿وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰۚ ١٨﴾ [فاطر:18]

“আর কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না”। সূরা ফাতিরঃ (১৮)

প্রশ্ন ৯- শোকাহত পরিবারের জন্য প্রেরিত দুপর বা রাতের খাবারে অন্য কেউ অংশগ্রণ করলে তা কি মাতম বা বিলাপে পরিণত হবে?

উত্তর – না, তা মাতমের অন্তর্ভূক্ত হবে না। কারণ আগত লোকদের জন্য শোকাহত পরিবার খানার ব্যাবস্থা করেনি, বরং অন্যরা তাদের জন্য ব্যাবস্থা করেছে, আর তা অতিরিক্ত হওয়ায় অন্যরা তাতে অংশগ্রহণ করেছে, তাই এতে কোন সমস্যা নেই।

প্রশ্ন ১০ – অনিচ্ছায় যদি ক্রন্দনের মধ্যে বিলাপ এসে যায় তাহলে তার হুকুম কি?

উত্তর - বিলাপ সর্বাস্থায় নাজায়েয, তবে চক্ষু অশ্রুশিক্ত ও অন্তর বিষণ্ন হতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুত্র ইব্রাহিমের ইন্তেকালের পর তিনি বলেছেন,

«العين تدمع و القلب يحزن ولا نقول إلا ما يرضى الرب و إنا لفراقك يا إبراهيم لمحزونون» رواه البخاري)

“চক্ষু অশ্রু বিসর্জন করছে, অন্তর ব্যথিত হচ্ছে, তবুও প্রভূর অসন্তুষ্টির কারণ হয় এমন কথা বলব না, হে ইব্রাহীম, তোমার বিরহে আমরা ব্যথিত”। (বুখারি)

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »