ইসলামী জ্ঞান: নিত্যদিনের প্রয়োজনে শিয়া বিষয়ক ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া ৫ টি
শিয়ারা কেন শুধুমাত্র হুসাইনকে সম্মানিত ও মহিমান্বিত করে, আলী ইবনু আবি তালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর অন্য সন্তানদের নয়?

কেন হুসাইন, কিন্তু হাসান নয়?

শিয়ারা কেন শুধুমাত্র হুসাইনকে সম্মানিত ও মহিমান্বিত করে, আলী ইবনু আবি তালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর অন্য সন্তানদের নয়? আপনি কি কখনও নিজেকে এই প্রশ্ন করেছেন? এই ব্যাপারটি কি আপনাকে কখনও অবাক করেছে?

এমন এক তথ্য আছে, যা আপনাকে, অনেক মুসলিমকে, বিশেষ করে আরব শিয়াদেরও চমকে দিতে পারে। তবে তার আগে চলুন জেনে নেই আলী ইবনু আবি তালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর সন্তানদের সম্পর্কেঃ

সন্তানদের নামঃ
1. হাসান ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
2. হুসাইন ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
3. মুহসিন ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
4. আব্বাস ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
5. হিলাল ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
6. আব্দুল্লাহ ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
7. জাফর ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
8. উসমান ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
9. উবাইদুল্লাহ ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
10. আবু বকর ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
12. উমর ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব


আপনি কি কখনও দেখেছেন কোনো শিয়া পতাকায় লেখা আছে “ইয়া হাসান”? বা “ইয়া মুহসিন”, “ইয়া আব্বাস”? অবশ্যই না!
যদিও এভাবে মৃত মানুষকে সাহায্যের জন্য আহ্বান করা শির্ক। তারপরও তাদেরকে দেখবেন হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে নিয়ে এ শির্ক করে যাচ্ছে।

তাহলে কেন শুধু “ইয়া_হুসাইন”?
কেন তারা হুসাইনের কাছেই সাহায্য চায়? হে মুসলিমগণ কখনও কি নিজের কাছে এই প্রশ্ন করেছেন?

এখন শুনুন বিস্ময়কর একটি তথ্য!

  • আপনি কি জানেন, শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী বারো ইমাম সবাই শুধু হুসাইনের বংশধর?
  • শিয়ারা কেবল হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মহিমান্বিত করে, হাসান বা অন্য কাউকে নয়—
  • কারণ হুসাইন বিয়ে করেছিলেন একজন ইরানি (ফারসি) নারীকে, যিনি ছিলেন কিসরা (পারস্য সম্রাট) ইয়াজদগার্দের কন্যা, নাম ছিল শাহরবানু (বা শাহজানাহ)।
  • মুসলমানরা যখন কিসরার কন্যাদের বন্দী করে, তখন খলিফা উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে তাঁদের একজন, শাহজানাহকে উপহার দেন।
  • হুসাইন তাঁর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
  • এই কারণেই শিয়ারা হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর বংশধরদের (ইমামদের) সম্মান করে।
  • কারণ তাঁদের মতে, ওই ইমামগণের রক্তে ফারসি রাজবংশের (কিসরার) রক্ত মিশে আছে। আর তাই তারা বাস্তবে ভালোবাসে ফারসির রাজবংশকে, নবীজির (ﷺ) পরিবারকে নয়।

তাই মানুষকে জানতে দিন— শিয়ারা (বিশেষ করে ইরানের সাফাভী ঘরানার শিয়ারা) আসলে কিসরার বংশধরদের ভালোবাসে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ ﷺ এর আহলুল বাইতকে নয়।
এ বিষয়টি শুধু পড়বেন না, শেয়ারও করবেন যেন সবাই এটা জানে।

শাইখ মুহাম্মাদ ইবন উমর বাজমুল (হাফিযাহুল্লাহ) – ১৯ জুন ২০১৭

দ্রষ্টব্যঃ “আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ আল-গরীব” এর “ওয়া জাআ দাওরুল মাজূস” গ্রন্থটি পড়লে আপনি বর্তমান ইরানিদের ব্যাপারে স্পষ্ট বুঝতে পারবেন যে তারা পারস‍্যের সভ‍্যতাকে প্রমোট করছে, ইসলামী সভ্যতা না।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid0CSPpx3KigfeYoGtX7FJLSbH8akiXKD9bWRCgKPsyMuHv4xebiPp3BK4GZVxmsREPl
হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র শাহাদাত এর পটভূমি ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র শাহাদাত এর পটভূমি ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হচ্ছে, ইরাকের (কুফার) জনগণ হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে চিঠি লিখে আহ্বান জানিয়েছিল, যেন তিনি তাদের কাছে যান এবং তারা তাঁকে খেলাফতের বায়আত দেবে—এটি ঘটে মুʼআওয়িয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র মৃত্যুর পর এবং তাঁর ছেলে ইয়াজিদ খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর।
কিন্তু চিঠি লিখে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে আহ্বান করার পরে কুফার অবস্থা বদলে যায়। ইয়াজিদ ইবনু মুʼআওয়িয়ার পক্ষ থেকে উবাইদুল্লাহ ইবনু জিয়াদ কুফার শাসক নিযুক্ত হয় এবং সে হুসাইনের দূত মুসলিম ইবনু আকীলকে হত্যা করেন।
ফলে কুফার লোকদের কারও কারও অন্তরে হুসাইনের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও তাদের তলোয়ার ছিল উবাইদুল্লাহ ইবনু জিয়াদের পক্ষে। হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তখনো জানতেন না যে মুসলিম ইবনু আকীলকে হত্যা করা হয়েছে এবং কুফার লোকেরা তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এদিকে সাহাবীদের মধ্য হতে যারা হুসাইনকে ভালোবাসতেন ও হিকমতপূর্ণ পরামর্শ দিতেন, তাঁরা তাঁকে ইরাকে না যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।

যাঁরা তাঁকে এ পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন:

  1. আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস
  2. আবদুল্লাহ ইবন উমর
  3. আবু সাঈদ খুদরি
  4. জাবির ইবন আবদুল্লাহ
  5. মিসওয়ার ইবন মাখরামা
  6. আবদুল্লাহ ইবনুয যুবায়ের — রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম।

সকল পরামর্শ উপেক্ষা করে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইরাকের দিকে রওনা হন এবং কারবালায় অবস্থান নেন। সেখানে তিনি বুঝতে পারেন যে কুফার লোকেরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তখন হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শত্রু সেনাবাহিনীর কাছে তিনটি প্রস্তাব রাখেন:

আমাকে মক্কায় ফিরে যেতে দাও,
অথবা আমি ইয়াজিদের কাছে চলে যাই,
অথবা আমি সীমান্তে জিহাদে চলে যাই।
কিন্তু তারা কোনো প্রস্তাবই মেনে নেয়নি—বরং বললো, তাকে অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে।
হুসাইন তা অস্বীকার করলেন। এরপর তারা তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। ফলে তিনি নির্দোষ অবস্থায় শহীদ হন — রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু।

("আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ", ১১/৪৭৩–৫২০)

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:

"ইয়াজিদ ইবনু মুʼআওয়িয়াহ এর জন্ম হয় উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র খেলাফতের সময়ে। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পাননি এবং সাহাবি ছিলেন না—এ বিষয়ে সকল আলেম একমত।
তিনি ধার্মিকতা বা সালেহ হওয়ার জন্য বিখ্যাত ছিলেন না, বরং মুসলমান যুবকদের একজন ছিলেন। তবে তিনি কাফের বা মুনাফিকও ছিলেন না। তাঁর খেলাফতের বায়আত কিছু মুসলিমের অপছন্দ এবং কিছু মুসলিমের সম্মতিতে অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে সাহস ও দানশীলতা ছিল। তিনি -তার বিরোধীদের বর্ণনা অনুযায়ী- প্রকাশ্যে গুনাহ করতেন বলে যা বলা হয়ে থাকে তা প্রমাণিত হয়নি। 

তাঁর খেলাফতের সময় কিছু বড় ঘটনা ঘটে:
এর একটি হলো: হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র শাহাদাত।
তবে ইয়াজিদ তাঁকে হত্যা করার নির্দেশ দেননি, তাঁর শাহাদাতে আনন্দ প্রকাশ করেননি এবং তাঁর দাঁতের ওপর ছড়ি চালাননি। হুসাইনের মাথাও শামে পাঠানো হয়নি।
ইয়াজিদের নির্দেশ ছিল, হুসাইন যেন খেলাফতের দাবি না করে। তার সাথে যুদ্ধ যদি করতেই হয়, সেটা যেন সীমিত হয়। কিন্তু তাঁর প্রশাসকরা (যেমন ইবনু জিয়াদ) সীমা অতিক্রম করে।

হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু চেয়েছিলেন:
হয় আমি ইয়াজিদের কাছে যাই,
নয়তো সীমান্তে জিহাদে যাই,
অথবা মক্কায় ফিরে যাই।
তারা কোনোটি অনুমতি দিল না—বরং তাকে বন্দি করার জন্য জোর করে।

এরপর উমর ইবনু সা'দ তাঁকে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয় এবং তাঁকে হত্যা করা হয়—তিনি ছিলেন একজন নির্দোষ শহীদ।
তাঁর সঙ্গে আহলুল বাইতের আরও অনেকে শহীদ হন—রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম। হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র শাহাদাত ছিল এক বিশাল মুসীবত (বিপর্যয়)। উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহর শাহাদাতও এক বড় ফিতনার দরজা খুলে দেয়। এই দুই ঘটনার ফলে মুসলিমদের মাঝে বিশাল বিশাল বিভাজন ও সংঘাত সৃষ্টি হয়।
(তথ্যসূত্র: “মাজমু‘ আল-ফাতাওয়া” ৩/৪১০–৪১৩)।

তিনি আরেক জায়গায় বলেন (মাজমুʼ ফাতাওয়া ২৫/৩০২–৩০৫):
"যেদিন হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হন—অন্যায় ও জুলুমকারী একটি গোষ্ঠী তাঁকে হত্যা করে। আল্লাহ তাঁকে শহীদির মাধ্যমে সম্মানিত করেন, যেমন করে আল্লাহ আহলুল বাইতের অনেক শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে শহীদি মর্যাদা দেন—যেমন: হামযা, জাফর এবং তাঁর পিতা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম। শহীদির মাধ্যমে তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তাঁর স্তর উঁচু হয়। কারণ, তিনি ও তাঁর ভাই হাসান— যুবকদের নেতা এবং জান্নাতে তাদের উচ্চ স্তর রয়েছে। উচ্চ মর্যাদা পেতে হলে বিপদ ও পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
"সবচেয়ে বেশি পরীক্ষিত হন নবীগণ, তারপর সালেহগণ, তারপর তাদের পর যারা তাদের অনুসরণ করে।" (তিরমিযি)
হাসান ও হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ইসলামের সম্মান ও মর্যাদার মাঝে জন্ম নেন, মুসলিমরা তাঁদের সম্মান করত, তাঁরা সম্মান-প্রাচুর্যে বড় হয়েছেন। হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হন এবং তাঁর শাহাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের সঙ্গে মিলিয়ে দেন এবং যাঁরা তাঁকে হত্যা করেছে, তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন।

আল্লাহ তা'আলা হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর সহগামী শহীদদের উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তাঁদের মর্যাদা আরও উঁচু করুন। আর যেসব জালেম ও মুনাফিক এই উম্মাহর মধ্যে ফিতনার আগুন জ্বালিয়েছে—আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid02h6F743sA6J14U815DzdvTqEeRd5v5wbJxt7rpkXuiVfmnHbnapeHUT97hyzL5sryl
হত্যাকারীদের বংশধরদের কথা বলার অধিকার নেই

যারা আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে হত্যা করেছে, ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে হত্যা করেছে, তাঁর ভাই ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে আহত করেছে, এবং তাঁর (হুসাইনের) দুধের শিশু পুত্র আব্দুল্লাহকে হত্যা করেছে—তারা হলো:

১. আবদুর রহমান ইবনু মুলজিম – আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী।
২. সিনান ইবনু উকাইসার আল-আসাদী (উপনাম: আল-জাররাহ) – ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আঘাতকারী ও হত্যাকারী।
৩. হারমালা ইবনু কাহিন আল-আসাদী – দুধের শিশু (আবদুল্লাহ ইবনু হুসাইন)-এর হত্যাকারী।
৪. শিমর ইবনু যিল-জাওশন আল-কিলাবী – ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী।
৫. ইবনু হাউজা আল-কূফী – হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী।
৬. ইসহাক ইবনু হাইওয়াহ আল-খুদরামী – হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী।
৭. হাকীম ইবনু আত-তুফাইল – হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী।
৮. রাবঈ ইবনু শাবস আত-তামীমী – হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী।
৯. সিনান ইবনু আনাস – হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী।

  • এই সকল হত্যাকারীদের অনেকেই ছিল খলীফা আলী ইবনু আবি তালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর সেনাবাহিনীর সদস্য, তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুসারী ও নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি।
  • আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর শাহাদাতের পর এরা তাঁর বড় ছেলে ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আনুগত্য করেছিল।
  • হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর শাহাদাতের পর এরা তাঁর ভাই ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আনুগত্য করেছিল।
  • পরে তারা হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে বিশ্বাসঘাতকতা করে হত্যা করে।

উল্লেখ্য, এই হত্যাকারীরা কূফার বাসিন্দা ছিল এবং এখনো তারা কূফার কাছাকাছি এলাকায় বসবাস করে, যেখানে শহীদ হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর কবরও অবস্থিত। আরও কি কিছু বলার বাকি আছে?

- আসর আব্বাস আল-হায়দারী (শিয়া গবেষক)

বিশেষ তথ্য

দীর্ঘ অনুসন্ধান ও শিয়া উৎসের গবেষণার পর প্রথমবারের মতো ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর উপর বিষ মাখানো ছুরি দিয়ে আঘাতকারী ও হত্যাকারীর নাম প্রকাশ পেয়েছে: সে পাপিষ্ঠ হলো: সিনান ইবনু উকাইসার আল-আসাদী (উপনাম: আল-জাররাহ)।

আলহামদুলিল্লাহ, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের কেউ নবী পরিবারের কারো হত‍্যার সাথে জড়িত নন। সাহাবীগণের কেউ তো কোনোভাবেই নন। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের প্রখ‍্যাত কোনো তাবেঈ এর সাথে সংশ্লিষ্ট নন। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ইমামদের কেউ এতে যুক্ত নন। যারা এসব অপকর্ম করেছে তারা হয় শিয়া, না হয় নাসেবী।

তারপরও শিয়ারা সাহাবায়ে কেরামকে কেন কাফির বলে?
তারপরও শিয়ারা আহলুস সুন্নাতের বিরুদ্ধে কেন বিষোদগার করে?

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid02UPqgoTgr6fKZsLFiYifwoGS8teiZVsh5TuQa9LRHYPunuNjZeiwpxbVijwfa7hJ5l
মুসলিম আলেমগণের বিভিন্ন যুগে শিয়া (রাফেযী) সম্প্রদায় সম্পর্কে মন্তব্য

মুসলিম আলেমগণের বিভিন্ন যুগে শিয়া (রাফেযী) সম্প্রদায় সম্পর্কে করা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য নিচে উল্লেখ করা হলো, যেখানে তারা শিয়া রাফেযীদের ক্ষতিকর দিকসমূহ বর্ণনা করেছেন এবং ইহুদি-নাসারাদের চেয়েও তাদের বিপদজনক বলে আখ্যা দিয়েছেন:


১. ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহিমাহুল্লাহ) — “আর্‌-রদ্দু ‘আলা যানাদিকা ওয়াল জাহমিয়্যাহ” গ্রন্থে উদ্ধৃত:
“আমি এমন কোনো জাতি দেখিনি যারা ইসলাম সম্পর্কে রাফেযীদের মতো এতটা বিদ্বেষ পোষণ করে। তারা প্রতিটি যুগে ও স্থানে ইহুদি ও নাসারাদের সহায়ক হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।”


২. ইমাম আল-আজুরী (রহিমাহুল্লাহ) — “আশ-শরী‘আহ” গ্রন্থে বলেন:
“যে ব্যক্তি রাফেযী মতবাদ প্রকাশ করে, সে নিজেকে উম্মতের জন্য একটি মারাত্মক বিপদে পরিণত করে। তারা সবচেয়ে বিপজ্জনক ফিরকা; কারণ তারা বাহ্যত ইসলাম প্রদর্শন করে, কিন্তু অন্তরে ইসলামকে শত্রুতা করে।”


৩. ইমাম ইবনু হাযম আল-আন্দালুসি (রহিমাহুল্লাহ) — “আল-ফাসল ফিল মিলাল ওয়ান নিহাল” গ্রন্থে বলেন:
“আমরা এমন কোনো বিদআতী সম্প্রদায়কে জানি না, যারা ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য তাদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর, কিংবা যারা শরীয়ত ও এর বিধান ধ্বংসে এতটা অগ্রগামী।”

৪. ক্বাযী আবু বকর আল-বাকিলানি (রহিমাহুল্লাহ) — “আত্-তামহীদ” গ্রন্থে বলেন:
“রাফেযীরা ধর্মের মধ্যে এমনভাবে ধ্বংস ও ফিতনা সৃষ্টিকারী, যা ইহুদি-নাসারার চেয়েও বেশি ক্ষতিকর; কারণ তারা নিজেদের ইসলাম-অনুগামী দাবী করে, অথচ ইসলামি আকীদা ও বিধানসমূহকে বিকৃত করে।”

৫. ইমাম ইবনুল জাওযি (রহিমাহুল্লাহ) — “তালবিসু ইবলীস” গ্রন্থে বলেন:
“রাফেযীরা হলো সবচেয়ে বিভ্রান্ত সম্প্রদায়। তারা ইহুদি-নাসারাদের চেয়েও অধিক সত্য থেকে বিচ্যুত, কারণ তারা ইসলাম দাবী করে অথচ নিজের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী মুসলিমদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে।”

৬. ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহিমাহুল্লাহ) — “মিনহাজুস সুন্নাহ” গ্রন্থে বলেন:
“রাফেযীরা অনেক বিষয়ে ইহুদি ও নাসারাদের চেয়েও বেশি খারাপ… তারা সাহাবীদের প্রতি শত্রুতা প্রকাশ করে এবং তাঁদেরকে অপবাদ দেয়। এটি ইসলামের ভিত্তি ধ্বংস করার দিকে নিয়ে যায়।”

৭. হাফিয ইমাম যাহাবি (রহিমাহুল্লাহ) — “মীযানুল ই‘তিদাল” গ্রন্থে বলেন:
“যদি রাফেযীরা মুসলিম না হয়ে অন্য কোনো ধর্মের হতো, তাহলে তাদের ক্ষতি হালকা হতো; কারণ তারা বাহ্যত ইসলাম প্রদর্শন করে কিন্তু অন্তরে তার বিপরীত লালন করে। তারা উম্মতের ভেতর থেকেই ফিতনা সৃষ্টি করে।”

৮. ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) — “আস্‌-স্বাওইকুল মুরসালাহ” গ্রন্থে বলেন:
“রাফেযীরা ইসলাম ও মুসলিমদের উপর ইহুদি-নাসারাদের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর; তারা মুসলিমদের মাঝে ফিতনা, বিদ্বেষ ছড়ায় এবং শরীয়তের ভিত্তিমূল ধ্বংস করে।”

৯. ইমাম শওকানী (রহিমাহুল্লাহ) — “নাইলুল আওতার” গ্রন্থে বলেন:
“রাফেযীরা প্রতিটি যুগে ইসলামের শত্রু। তারা উম্মতের জন্য ইহুদি ও নাসারাদের চেয়েও বেশি বিপদজনক, কারণ তারা আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাহ ও তাঁর সাহাবীদের প্রতি আক্রমণ করে।”


উপসংহার:
এসব বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, মুসলিম আলেমগণ বিভিন্ন যুগে রাফেযীদের (শিয়া সম্প্রদায়কে) ইসলামের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তারা বাহ্যত ইসলাম দাবি করলেও ভেতরে ইসলামবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত—এ কারণে তাদের ক্ষতি বাহ্যিক শত্রুদের চেয়েও মারাত্মক।

আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন এবং ইসলামকে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করুন।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid02qPeCTQjiMACbnoQZA7xXtFbcTAqxa8Us5kTHCXyyhNsSKTPbxyqowMEHg4WYrGhgl
শিয়া রাফেযীদের নিকট তাকিয়্যাহ (التقية)

তাকিয়্যাহ অর্থ মিথ্যাচার, প্রতারণা ও কপটতা। রাফেযীদের (শিয়া) ধর্মে এটি এক বিশেষ উচ্চ স্থান দখল করে আছে এবং তাদের মূল গ্রন্থসমূহে এ সম্পর্কে বহু বর্ণনা এসেছে।
তাদের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, যেমন কুলাইনি ও অন্যান্য শিয়া লেখকরা তাদের মিথ্যা বর্ণনায় জাফর আস-সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) থেকে এ কথা নিয়ে এসেছেন যে:
"তাকিয়্যাহ আমার ধর্ম ও আমার পিতৃপুরুষদের ধর্ম থেকে, আর যার মধ্যে তাকিয়্যাহ নেই তার কোনো ঈমানই নেই।"

এছাড়াও তাদের বর্ণনা অনুযায়ী আবু আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত:
"ধর্মের নয়-দশমাংশ তাকিয়্যাহ, আর যার মধ্যে তাকিয়্যাহ নেই তার কোনো ধর্ম নেই, এটা সব কিছুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, শুধু নবীযের পানীয় ও মোজার উপর মাসাহ করা ছাড়া।"
বস্তুত শিয়ারা তাকিয়্যাহ নীতিতে বিশ্বাস করে এবং তা সব অবস্থায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে। তারা এটিকে বলে: “বাহিরে কুফর প্রকাশ ও অন্তরে ঈমান গোপন রাখা।” অর্থাৎ, একজন শিয়া তার আকিদার অংশ হিসেবে তাকিয়্যাহ করে – এমনকি অন্য মুসলিমদের সঙ্গেও – এবং তারা বিশ্বাস করে যে তারা যেকোনো সময় তাকিয়্যাহ ব্যবহার করে সুন্নিদের সাথে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের মুখোশ পরতে পারে, অথচ অন্তরে সুন্নি মাযহাবের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে।

তারা এমনকি এটাও দাবি করে যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও তাকিয়্যাহ করেছেন, যেমন তারা বর্ণনা করে যে, যখন মুনাফিকদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মারা গেল, তখন নবী (ﷺ) তার জানাজায় যান। তখন উমর বললেন: “আল্লাহ কি আপনাকে তা করতে নিষেধ করেননি?” রাসূল (ﷺ) জবাব দেন:
“তোমার কী জানা, আমি কী বলেছি? আমি বলেছি: হে আল্লাহ! তার পেট আগুনে পূর্ণ করে দাও, তার কবর আগুনে ভরে দাও এবং তাকে আগুনে ঢুকিয়ে দাও।” (ফরু' আল-কাফি, কিতাবুল জানায়িয, পৃষ্ঠা ১৮৮) - (আস্তাগফিরুল্লাহ, রাসূলের নামে কতবড় জঘন্য মিথ্যাচার) 

আস্তাগফিরুল্লাহ তারা এখান থেকে প্রমাণ করতে চায় যে রাসূল (ﷺ)ও নাকি তাকিয়্যাহ করেছেন, অথচ এটা এক ভয়ংকর মিথ্যা অপবাদ। কীভাবে সম্ভব যে সাহাবীরা তার জন্য দোয়া করছে আর রাসূল (ﷺ) তাকে অভিশাপ দিচ্ছেন?

আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হলো:
তারা (শিয়ারা তাকিয়্যাহর নামে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে কসম করাকেও বৈধ বলে মনে করে! যেমন, হুর আল-আমিলি তার কিতাব ʼওসাইলুশ শীআহ কিতাবে লিখেছেন:
ইবনে বাকির, যুরারাহ হতে, তিনি বলেন:
আমি জিজ্ঞাসা করলাম: আমরা তো শত্রুদের মাঝে দিয়ে যাই, তারা আমাদের সম্পদের ব্যাপারে কসম করায়, অথচ আমরা যাকাত দিয়ে দিয়েছি। তখন তিনি বললেন: “যদি তুমি ভয় পাও, তাহলে যা তারা চায় তাই দ্বারা কসম করো।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম: “তালাক বা দাস মুক্তির নামে?” তিনি বললেন: “যা তারা চায়।”

উক্ত কিতাবে আরও এসেছে:
সামা'আহ থেকে আবু আব্দুল্লাহ বলেন:
“যদি কেউ তাকিয়্যাহর কারণে কসম করে, তাহলে সেটা তার ক্ষতি করবে না, যদি সে বাধ্য হয়ে থাকে বা নির্যাতনের মুখে পড়ে।” (ওসাইলুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ১৩৭–১৩৯)

সারসংক্ষেপ:
রাফেযীদের মতে তাকিয়্যাহ একটি ফরয বিধান, তাদের মতামত তাকিয়্যাহ নীতি অবলম্বন করা ছাড়া দাঁড়াতেই পারে না। তারা নিজেদের তাকিয়্যাহর শিক্ষা গোপনে এবং প্রকাশ্যে নেয় এবং প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid03ULTUAv3dZSnHwif3P49pnrby7opzq84Y4e1sc4k1jxnRjcSVEbvft5QzV5A241Tl
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে