ইসলামী জ্ঞান: নিত্যদিনের প্রয়োজনে ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া ২২ টি
ইসলামী জ্ঞান: নিত্যদিনের প্রয়োজনে ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া ২২ টি
যে একটি আয়াত কুরআনে চারটি স্থানে পুনরাবৃত্ত হয়েছে!

একটি আয়াত যা কুরআনে চারটি স্থানে পুনরাবৃত্ত হয়েছে, সেই আয়াতটি হলো আল্লাহ তাআলার বাণীঃ


‎“رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ”

“আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট, এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।”

এই আয়াতটি চারটি সূরায় এসেছে:


সূরা মায়িদাহ: আয়াত ১১৯

( قَالَ اللّٰهُ هٰذَا یَوۡمُ یَنۡفَعُ الصّٰدِقِیۡنَ صِدۡقُهُمۡ ؕ لَهُمۡ جَنّٰتٌ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَاۤ اَبَدًا ؕ رَضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ ؕ ذٰلِكَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿۱۱۹﴾ )


• সূরা তাওবা: আয়াত ১০০

( وَ السّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ الۡمُهٰجِرِیۡنَ وَ الۡاَنۡصَارِ وَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡهُمۡ بِاِحۡسَانٍ ۙ رَّضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ وَ اَعَدَّ لَهُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ تَحۡتَهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَاۤ اَبَدًا ؕ ذٰلِكَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿۱۰۰﴾ )


• সূরা মুজাদালা: আয়াত ২২

( لَا تَجِدُ قَوۡمًا یُّؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ یُوَآدُّوۡنَ مَنۡ حَآدَّ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ وَ لَوۡ كَانُوۡۤا اٰبَآءَهُمۡ اَوۡ اَبۡنَآءَهُمۡ اَوۡ اِخۡوَانَهُمۡ اَوۡ عَشِیۡرَتَهُمۡ ؕ اُولٰٓئِكَ كَتَبَ فِیۡ قُلُوۡبِهِمُ الۡاِیۡمَانَ وَ اَیَّدَهُمۡ بِرُوۡحٍ مِّنۡهُ ؕ وَ یُدۡخِلُهُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ رَضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ ؕ اُولٰٓئِكَ حِزۡبُ اللّٰهِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ حِزۡبَ اللّٰهِ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۲۲﴾ )


• সূরা বাইয়্যিনাহ: আয়াত ৮

( جَزَآؤُهُمۡ عِنۡدَ رَبِّهِمۡ جَنّٰتُ عَدۡنٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَاۤ اَبَدًا ؕ رَضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ ؕ ذٰلِكَ لِمَنۡ خَشِیَ رَبَّهٗ ﴿۸﴾ )



এই আয়াতটি দুটি অংশে বিভক্তঃ

প্রথম অংশ:
“আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট”
– এটি এমন একটি অবস্থা, যা আমরা সবাই অর্জন করতে চাই।
এবং আমি মনে করি, এই অংশটি সকলের কাছেই বোধগম্য।

 দ্বিতীয় অংশ:
“এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।”
– এটি অনুধাবন করা এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা অধিক কঠিন।


- এখানে একটি প্রশ্ন আসে:
আপনি কি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট?
এটি একটি কঠিন প্রশ্ন, তাই না?
চলুন প্রশ্নটি একটু অন্যভাবে করি:
আপনি কি জানেন, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া মানে কী?

আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া মানে:

১. আপনার জীবনে যা কিছু আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন – ভালো হোক বা খারাপ – তার সবকিছুকে স্বীয় অন্তর দিয়ে মেনে নেওয়া ও সন্তুষ্ট থাকা।
২. যখন আল্লাহ আপনার জীবনে কোনো বিপদ দেন, তখন আপনার হৃদয়ে এই বিশ্বাস থাকা যে, আল্লাহ আপনার জন্য সেই বিপদেও কল্যাণ চেয়েছেন।
৩. মানুষের নিকট অভিযোগ না করে, বরং সমস্ত দুঃখ-কষ্টের কথা শুধুই আল্লাহর কাছে বলা এবং তাঁর ওপর সবকিছু সোপর্দ করে দেওয়া।
৪. আল্লাহ যখন দেন কিংবা কেড়ে নেন, সুস্থ করেন বা অসুস্থ করেন, অভাব দেন বা সম্পদ দেন — প্রতিটি অবস্থায় আপনি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন।

নিজেকে জিজ্ঞেস করুন:

আপনি কি নিজের চেহারা, জীবনসঙ্গী, পরিবার, সম্পদ, ভাগ্য এবং আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর প্রতি সন্তুষ্ট?
এসব কিছু তো আল্লাহই আপনার জন্য নির্ধারণ করেছেন।
তাহলে আপনি কি আল্লাহর এই নির্ধারণে সন্তুষ্ট?

- এই আয়াতের গভীর ভাবনা থেকে আমরা পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে পারিঃ

১. আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা মানে এই নয় যে, আপনি কখনো কষ্ট পাবেন না। আমরা মানুষ, এবং দুনিয়া পরীক্ষার স্থান। এমনকি রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও তাঁর ছেলের মৃত্যুতে কেঁদেছেন।

২. সবর ও রিদ্বা (সন্তুষ্ট থাকা) – এ দুটির মাঝে পার্থক্য রয়েছে। সবর মানে হলো ধৈর্য ধরে সহ্য করা। হয়তো আপনি অন্তরে অন্য কিছু চাচ্ছেন, কিন্তু বাধ্য হয়ে সহ্য করছেন।
কিন্তু রিদ্বা (সন্তুষ্টি) মানে হলো, আপনি যেটা পেয়েছেন তাতেই খুশি, আপনি এর পরিবর্তে কিছুই চান না। আর যদি আপনি এমন এক স্তরে পৌঁছে যান যে, বিপদের জন্যও আল্লাহকে শুকরিয়া আদায় করেন, তখন আপনি শোকরকারীর স্তরে চলে যান।

৩. আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা – এটি একটি উচ্চ মর্যাদার স্তর, যেখানে কেবল তারাই পৌঁছায় যাদের অন্তর আল্লাহর ভালোবাসায় পূর্ণ। তারা কষ্টের মধ্যেও বলে:
“আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট, মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রতি সন্তুষ্ট।”
– কী চমৎকার বিশ্বাস ও কী চমৎকার ভরসা!

৪. আপনি দৃঢ় ঈমান রাখুন, আল্লাহ আপনাকে কেবল আপনার কল্যাণের জন্যই পরীক্ষা করেন।

  • হয়তো কোনো ক্ষতি থেকে আপনাকে বাঁচাতে,
  • হয়তো আপনার গুনাহ মাফের জন্য,
  • হয়তো জান্নাতে আপনার মর্যাদা বাড়ানোর জন্য।

তাই আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন।

৫. যদি কেউ আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট না থাকে, তাহলে সে দুনিয়ার সবকিছু পেয়েও সন্তুষ্ট হতে পারবে না।
রাসূল ﷺ বলেন:
“যে সন্তুষ্ট হবে, তার জন্য সন্তুষ্টি আছে; আর যে অসন্তুষ্ট থাকবে, তার জন্য রয়েছে অসন্তুষ্টি।” সে জীবনের প্রতি পদে অসন্তুষ্ট থাকবে এবং সারাজীবন কষ্টে ও অশান্তিতে কাটবে।

তাহলে এই আয়াতের প্রতিফলন আমাদের জীবনে কিভাবে ঘটাতে পারি?

- নিজের জীবনের দিকে তাকান।

যা আপনি হারিয়েছেন বা যা আপনি পাননি – তা নিয়ে ভাবুন, আপনি কি তাতেও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট?

আবার বারবার বলুন:
“হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট, তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হও।”


- যা কিছু আপনাকে আল্লাহর দিকে টেনে নেয়, তা দ্বারা তাঁর নিকটে পৌঁছান।
কারণ আপনি যখন আল্লাহকে ভালোবাসবেন, তখন তাঁর নির্ধারণ (তাকদীর) ও ফায়সালাতেও ভালোবাসা অনুভব করবেন।

শেষ কথা:

আপনার যা কিছু হয়েছে, তা কখনোই আপনাকে এড়াতে পারত না।
আর যা আপনাকে এড়িয়েছে, তা কখনোই আপনার জন্য ছিল না।

আল্লাহ আমাদের এমন অন্তর দান করুন যা তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট, তাঁর ফায়সালায় প্রীত, এবং তাঁর রেযামন্দির যোগ্য হয়ে উঠতে চায়। আমীন।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid0pE3NXwpHH1saVpwNEL1ZbjchwMiwnd1RwfYadjfo6Azi5KgKEmPJzpQazhJY9VMxl
দ্রুয সম্প্রদায়ের আক্বীদা-বিশ্বাস

দ্রুয সম্প্রদায়ের আক্বীদা-বিশ্বাস

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল দ্রুয এবং নুসাইরীদের ব্যাপারে শরিয়তের বিধান কী?

তিনি জবাবে বলেন:

এই দ্রুয ও নুসাইরীরা মুসলিমদের ঐকমত্য অনুযায়ী কাফের। 
তাদের জবাই করা পশুর মাংস খাওয়া জায়েয নয়, তাদের নারীদের বিয়ে করা বৈধ নয়। বরং তাদের কাছ থেকে জিজিয়া গ্রহণ করাও বৈধ নয়, কারণ তারা ইসলাম ত্যাগকারী মুরতাদ। তারা না মুসলিম, না ইহুদি, না খ্রিস্টান।

তারা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, রমাদান মাসের রোযা, হজ্ব ফরজ হওয়ার বিষয় স্বীকার করে না। তারা মৃত জন্তু, মদ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব হারাম করেছেন সেগুলোকে হারাম মনে করে না। তারা যদি মুখে শাহাদাত পাঠ করেও উপরোক্ত বিশ্বাস রাখে, তাহলেও মুসলিমদের সর্বসম্মত মতে তারা কাফের।

  • নুসাইরীরা হল: আবু শু'আইব মুহাম্মদ ইবনু নুসাইর অনুসারী। সে ছিল গুলু (অতিশয় বাড়াবাড়িকারী)- একজন, তার অনুসারীরা বলে থাকত: ‘আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-ই হলেন আল্লাহ!
  • আর দ্রুযরা হল: হাশতাকীন আদ-দুরযীর অনুসারী। সে ছিল মিশরের বাতেনী শাসক ‘আল-হাকিম’ এর এক গোলাম। তাকে পাঠানো হয়েছিল ‘তাইমুল্লাহ ইবনু ছা'লাবাহ’র উপত্যকায়।

সে সেখানকার লোকদের ‘আল-হাকিম’-কে ইলাহ (উপাস্য) হিসেবে মানতে ডাক দেয়। তারা তাকে বলে “আল-বারি আল-গুলাম” (অর্থাৎ, "সৃষ্টিকর্তা কিশোর") এবং তার নামে শপথ করে।
তারা ইসমাঈলিয়া ফির্কার অন্তর্ভুক্ত, যারা বিশ্বাস করে যে, মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল ইবন মুহাম্মাদ আল-বাকের নামীয় ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরিয়ত রহিত করেছেন।
তারা গুলুকারী ফির্কাগুলোর চেয়েও বড় কাফের।
তারা বলে জগত চিরকাল থেকে আছে, পুনরুত্থান নেই, ইসলামি ফরজ ও হারামগুলোর কোনো বাস্তবতা নেই।
তারা হলো কারামিতা বাতেনিয়া ফির্কার লোক, যারা ইহুদি, খ্রিস্টান ও আরব মুশরিকদের চেয়েও কাফের।

তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো—

  • তারা হয় হবে এরিস্টটল ও তার মতাদর্শীদের পথ অনুসারী দার্শনিক, অথবা হবে অগ্নিপূজক (মজুস)।
  • তাদের আক্বিদা হলো দার্শনিক ও অগ্নিপূজকদের মতবাদের মিশ্রণ, আর তারা শুধুমাত্র চক্রান্তমূলকভাবে শিয়া মতাদর্শের মুখোশ পরিধান করে থাকে।


ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ দ্রুয সম্প্রদায় সম্পর্কে আরও বলেছেন:

এদের কুফর এমন এক বিষয় যা নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই, বরং যে ব্যক্তি এদের কুফর নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে, সেও তাদের মত কাফের। তারা না কিতাবী (ইহুদি/খ্রিস্টান), না মুশরিকদের পর্যায়ে পড়ে। বরং তারা হলো চূড়ান্ত বিভ্রান্ত কাফের। তাদের খাদ্য খাওয়াও বৈধ নয়...... ইত্যাদি।


উৎস: ফাতাওয়া আল লাজনাতুদ দায়েমাহ
(২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮৮ – ২৯২) থেকে সংক্ষিপ্ত ও সামান্য পরিবর্তিত।

 

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid02eto5tJT4r7XZrFgtiSwULqfEoEHuFTK777E19yZpCmfXFheCWjrNw9rGAeorAjaSl
স্ত্রী যদি নিজের নগ্ন ছবি স্বামীকে প্রবাসে পাঠায়—এর বিধান কী?

এ ব্যাপারে শাইখ সালেহ আল-ফাওযানের একটি বক্তব্য তাঁর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এসেছে, তাতে উপরের প্রশ্নের উত্তর এভাবে দেওয়া হয়েছে যে:

নারীদের ছবি তোলা সম্পূর্ণভাবে হারাম, কারণ এর মাধ্যমে বহু ফিতনা ও অনিষ্টের সৃষ্টি হয়, এর সাথে সাথে ছবির হুকুম মৌলিকভাবেও হারাম। তাই ভ্রমণের জন্য হোক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে হোক, নারীদের ছবি তোলা বৈধ নয়। সৌদি আরবের “হাইয়াতু কিবারিল উলামা”-ও এ বিষয়ে হারামের ফতওয়া দিয়েছেন।
সুতরাং

  • স্বামী, স্ত্রী হওয়ার অজুহাতে স্ত্রীর নগ্ন ছবি তুলতে পারবে না। এই জঘন্য কাজ স্ত্রীর সাথে বৈধ সম্পর্ক থাকলেও হালাল হয়ে যায় না।
  •  প্রবাসে স্ত্রীর অনুপস্থিতি এটিকে বৈধ করে না বরং নারীদের ছবি তোলাই মূলত নিষিদ্ধ।

তাছাড়া,
স্ত্রীর নগ্ন বা অর্ধনগ্ন ছবি সংরক্ষণ করলে যা যা ক্ষতি হতে পারে:

  • ছবিগুলো চুরি হয়ে যেতে পারে, হারিয়ে যেতে পারে, বা অসতর্কতাবশত কোথাও ফেলে রাখা হতে পারে—এর ফলে সেই ছবি অন্যদের হাতে পড়ে সমাজে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং নানা অনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।
  • যদি পরে তাদের তালাক হয়ে যায়, তাহলে সেই নারী স্বামীর জন্য পরপুরুষে পরিণত হবে—তখন তার নগ্ন ছবি রাখা বা দেখা সম্পূর্ণ হারাম হবে।
  • স্বামীই হয়তো পরে সেই ছবি দিয়ে স্ত্রীর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যেমন: অর্থিক পাওনা ছেড়ে দিতে বলা, কিংবা অবৈধ চাহিদা পূরণ করতে বাধ্য করা ইত্যাদি। বাস্তবে এমন বহু কাহিনী ঘটেছে যেখানে স্বামী স্ত্রীর ছবি দিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে।
  • স্ত্রীর নগ্ন ছবি দেখলে তা যৌন উত্তেজনা কমানোর বদলে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে স্বামী হস্তমৈথুন, ব্যভিচার বা সমকামিতার মতো পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়তে পারে – আল্লাহর কাছে পানাহ চাই!


অতএব, স্ত্রীর নগ্ন ছবি তোলা বা রাখা কোনো অজুহাতে বৈধ নয়, বরং এটি স্পষ্টভাবে হারাম এবং বহু অনিষ্ট ও ফিতনার দরজা খুলে দেয়।
একজন স্বামীর উচিত স্ত্রীকে ঢেকে রাখা, নগ্ন করা নয়। কারণ আল্লাহ বলেন: “তারা তোমাদের জন্য পোশাক, আর তোমরা তাদের জন্য পোশাক।” [সূরা আল-বাকারা: ১৮৭]
স্বামীর উচিত পরিবার থেকে দীর্ঘ সময় বিচ্ছিন্ন না থাকা, বরং নিজের ইফফাহ-চরিত্র রক্ষা ও পরিবারের দায়িত্ব পালনের জন্য যত দ্রুত সম্ভব পরিবারের কাছে ফিরে আসা।

যদি দূরে থাকাটাই আবশ্যক হয় এবং স্ত্রী এতে রাজি থাকে, তাহলে স্বামীর অবশ্যই:
• নারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা,
• হারাম দৃষ্টির থেকে বাঁচা,
• একাকিত্ব ও হারাম পরিবেশ থেকে দূরে থাকা,
• বেশি বেশি নেক আমল করা (বিশেষত রোযা রাখা) এবং
• সৎ সঙ্গীদের সাথে থাকা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সকলকে তাঁর নিজের সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করেন এবং সকল প্রকার ফিতনা থেকে হেফাজত করেন।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid0fD2xHNPbKH2b7v1rfzx9U3WembpuavQCXJpib5uVShSeotfKucq8DwiA6yXQZBB2l
শিয়ারা কেন শুধুমাত্র হুসাইনকে সম্মানিত ও মহিমান্বিত করে, আলী ইবনু আবি তালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর অন্য সন্তানদের নয়?

কেন হুসাইন, কিন্তু হাসান নয়?

শিয়ারা কেন শুধুমাত্র হুসাইনকে সম্মানিত ও মহিমান্বিত করে, আলী ইবনু আবি তালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর অন্য সন্তানদের নয়? আপনি কি কখনও নিজেকে এই প্রশ্ন করেছেন? এই ব্যাপারটি কি আপনাকে কখনও অবাক করেছে?

এমন এক তথ্য আছে, যা আপনাকে, অনেক মুসলিমকে, বিশেষ করে আরব শিয়াদেরও চমকে দিতে পারে। তবে তার আগে চলুন জেনে নেই আলী ইবনু আবি তালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর সন্তানদের সম্পর্কেঃ

সন্তানদের নামঃ
1. হাসান ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
2. হুসাইন ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
3. মুহসিন ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
4. আব্বাস ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
5. হিলাল ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
6. আব্দুল্লাহ ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
7. জাফর ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
8. উসমান ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
9. উবাইদুল্লাহ ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
10. আবু বকর ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব
12. উমর ইবনু আলী ইবনু আবি তালিব


আপনি কি কখনও দেখেছেন কোনো শিয়া পতাকায় লেখা আছে “ইয়া হাসান”? বা “ইয়া মুহসিন”, “ইয়া আব্বাস”? অবশ্যই না!
যদিও এভাবে মৃত মানুষকে সাহায্যের জন্য আহ্বান করা শির্ক। তারপরও তাদেরকে দেখবেন হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে নিয়ে এ শির্ক করে যাচ্ছে।

তাহলে কেন শুধু “ইয়া_হুসাইন”?
কেন তারা হুসাইনের কাছেই সাহায্য চায়? হে মুসলিমগণ কখনও কি নিজের কাছে এই প্রশ্ন করেছেন?

এখন শুনুন বিস্ময়কর একটি তথ্য!

  • আপনি কি জানেন, শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী বারো ইমাম সবাই শুধু হুসাইনের বংশধর?
  • শিয়ারা কেবল হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মহিমান্বিত করে, হাসান বা অন্য কাউকে নয়—
  • কারণ হুসাইন বিয়ে করেছিলেন একজন ইরানি (ফারসি) নারীকে, যিনি ছিলেন কিসরা (পারস্য সম্রাট) ইয়াজদগার্দের কন্যা, নাম ছিল শাহরবানু (বা শাহজানাহ)।
  • মুসলমানরা যখন কিসরার কন্যাদের বন্দী করে, তখন খলিফা উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে তাঁদের একজন, শাহজানাহকে উপহার দেন।
  • হুসাইন তাঁর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
  • এই কারণেই শিয়ারা হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর বংশধরদের (ইমামদের) সম্মান করে।
  • কারণ তাঁদের মতে, ওই ইমামগণের রক্তে ফারসি রাজবংশের (কিসরার) রক্ত মিশে আছে। আর তাই তারা বাস্তবে ভালোবাসে ফারসির রাজবংশকে, নবীজির (ﷺ) পরিবারকে নয়।

তাই মানুষকে জানতে দিন— শিয়ারা (বিশেষ করে ইরানের সাফাভী ঘরানার শিয়ারা) আসলে কিসরার বংশধরদের ভালোবাসে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ ﷺ এর আহলুল বাইতকে নয়।
এ বিষয়টি শুধু পড়বেন না, শেয়ারও করবেন যেন সবাই এটা জানে।

শাইখ মুহাম্মাদ ইবন উমর বাজমুল (হাফিযাহুল্লাহ) – ১৯ জুন ২০১৭

দ্রষ্টব্যঃ “আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ আল-গরীব” এর “ওয়া জাআ দাওরুল মাজূস” গ্রন্থটি পড়লে আপনি বর্তমান ইরানিদের ব্যাপারে স্পষ্ট বুঝতে পারবেন যে তারা পারস‍্যের সভ‍্যতাকে প্রমোট করছে, ইসলামী সভ্যতা না।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid0CSPpx3KigfeYoGtX7FJLSbH8akiXKD9bWRCgKPsyMuHv4xebiPp3BK4GZVxmsREPl
হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র শাহাদাত এর পটভূমি ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র শাহাদাত এর পটভূমি ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হচ্ছে, ইরাকের (কুফার) জনগণ হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে চিঠি লিখে আহ্বান জানিয়েছিল, যেন তিনি তাদের কাছে যান এবং তারা তাঁকে খেলাফতের বায়আত দেবে—এটি ঘটে মুʼআওয়িয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র মৃত্যুর পর এবং তাঁর ছেলে ইয়াজিদ খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর।
কিন্তু চিঠি লিখে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে আহ্বান করার পরে কুফার অবস্থা বদলে যায়। ইয়াজিদ ইবনু মুʼআওয়িয়ার পক্ষ থেকে উবাইদুল্লাহ ইবনু জিয়াদ কুফার শাসক নিযুক্ত হয় এবং সে হুসাইনের দূত মুসলিম ইবনু আকীলকে হত্যা করেন।
ফলে কুফার লোকদের কারও কারও অন্তরে হুসাইনের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও তাদের তলোয়ার ছিল উবাইদুল্লাহ ইবনু জিয়াদের পক্ষে। হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তখনো জানতেন না যে মুসলিম ইবনু আকীলকে হত্যা করা হয়েছে এবং কুফার লোকেরা তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এদিকে সাহাবীদের মধ্য হতে যারা হুসাইনকে ভালোবাসতেন ও হিকমতপূর্ণ পরামর্শ দিতেন, তাঁরা তাঁকে ইরাকে না যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।

যাঁরা তাঁকে এ পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন:

  1. আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস
  2. আবদুল্লাহ ইবন উমর
  3. আবু সাঈদ খুদরি
  4. জাবির ইবন আবদুল্লাহ
  5. মিসওয়ার ইবন মাখরামা
  6. আবদুল্লাহ ইবনুয যুবায়ের — রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম।

সকল পরামর্শ উপেক্ষা করে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইরাকের দিকে রওনা হন এবং কারবালায় অবস্থান নেন। সেখানে তিনি বুঝতে পারেন যে কুফার লোকেরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তখন হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শত্রু সেনাবাহিনীর কাছে তিনটি প্রস্তাব রাখেন:

আমাকে মক্কায় ফিরে যেতে দাও,
অথবা আমি ইয়াজিদের কাছে চলে যাই,
অথবা আমি সীমান্তে জিহাদে চলে যাই।
কিন্তু তারা কোনো প্রস্তাবই মেনে নেয়নি—বরং বললো, তাকে অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে।
হুসাইন তা অস্বীকার করলেন। এরপর তারা তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। ফলে তিনি নির্দোষ অবস্থায় শহীদ হন — রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু।

("আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ", ১১/৪৭৩–৫২০)

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:

"ইয়াজিদ ইবনু মুʼআওয়িয়াহ এর জন্ম হয় উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র খেলাফতের সময়ে। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পাননি এবং সাহাবি ছিলেন না—এ বিষয়ে সকল আলেম একমত।
তিনি ধার্মিকতা বা সালেহ হওয়ার জন্য বিখ্যাত ছিলেন না, বরং মুসলমান যুবকদের একজন ছিলেন। তবে তিনি কাফের বা মুনাফিকও ছিলেন না। তাঁর খেলাফতের বায়আত কিছু মুসলিমের অপছন্দ এবং কিছু মুসলিমের সম্মতিতে অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে সাহস ও দানশীলতা ছিল। তিনি -তার বিরোধীদের বর্ণনা অনুযায়ী- প্রকাশ্যে গুনাহ করতেন বলে যা বলা হয়ে থাকে তা প্রমাণিত হয়নি। 

তাঁর খেলাফতের সময় কিছু বড় ঘটনা ঘটে:
এর একটি হলো: হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র শাহাদাত।
তবে ইয়াজিদ তাঁকে হত্যা করার নির্দেশ দেননি, তাঁর শাহাদাতে আনন্দ প্রকাশ করেননি এবং তাঁর দাঁতের ওপর ছড়ি চালাননি। হুসাইনের মাথাও শামে পাঠানো হয়নি।
ইয়াজিদের নির্দেশ ছিল, হুসাইন যেন খেলাফতের দাবি না করে। তার সাথে যুদ্ধ যদি করতেই হয়, সেটা যেন সীমিত হয়। কিন্তু তাঁর প্রশাসকরা (যেমন ইবনু জিয়াদ) সীমা অতিক্রম করে।

হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু চেয়েছিলেন:
হয় আমি ইয়াজিদের কাছে যাই,
নয়তো সীমান্তে জিহাদে যাই,
অথবা মক্কায় ফিরে যাই।
তারা কোনোটি অনুমতি দিল না—বরং তাকে বন্দি করার জন্য জোর করে।

এরপর উমর ইবনু সা'দ তাঁকে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয় এবং তাঁকে হত্যা করা হয়—তিনি ছিলেন একজন নির্দোষ শহীদ।
তাঁর সঙ্গে আহলুল বাইতের আরও অনেকে শহীদ হন—রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম। হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-র শাহাদাত ছিল এক বিশাল মুসীবত (বিপর্যয়)। উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহর শাহাদাতও এক বড় ফিতনার দরজা খুলে দেয়। এই দুই ঘটনার ফলে মুসলিমদের মাঝে বিশাল বিশাল বিভাজন ও সংঘাত সৃষ্টি হয়।
(তথ্যসূত্র: “মাজমু‘ আল-ফাতাওয়া” ৩/৪১০–৪১৩)।

তিনি আরেক জায়গায় বলেন (মাজমুʼ ফাতাওয়া ২৫/৩০২–৩০৫):
"যেদিন হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হন—অন্যায় ও জুলুমকারী একটি গোষ্ঠী তাঁকে হত্যা করে। আল্লাহ তাঁকে শহীদির মাধ্যমে সম্মানিত করেন, যেমন করে আল্লাহ আহলুল বাইতের অনেক শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে শহীদি মর্যাদা দেন—যেমন: হামযা, জাফর এবং তাঁর পিতা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম। শহীদির মাধ্যমে তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তাঁর স্তর উঁচু হয়। কারণ, তিনি ও তাঁর ভাই হাসান— যুবকদের নেতা এবং জান্নাতে তাদের উচ্চ স্তর রয়েছে। উচ্চ মর্যাদা পেতে হলে বিপদ ও পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
"সবচেয়ে বেশি পরীক্ষিত হন নবীগণ, তারপর সালেহগণ, তারপর তাদের পর যারা তাদের অনুসরণ করে।" (তিরমিযি)
হাসান ও হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ইসলামের সম্মান ও মর্যাদার মাঝে জন্ম নেন, মুসলিমরা তাঁদের সম্মান করত, তাঁরা সম্মান-প্রাচুর্যে বড় হয়েছেন। হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হন এবং তাঁর শাহাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের সঙ্গে মিলিয়ে দেন এবং যাঁরা তাঁকে হত্যা করেছে, তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন।

আল্লাহ তা'আলা হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর সহগামী শহীদদের উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তাঁদের মর্যাদা আরও উঁচু করুন। আর যেসব জালেম ও মুনাফিক এই উম্মাহর মধ্যে ফিতনার আগুন জ্বালিয়েছে—আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid02h6F743sA6J14U815DzdvTqEeRd5v5wbJxt7rpkXuiVfmnHbnapeHUT97hyzL5sryl
হত্যাকারীদের বংশধরদের কথা বলার অধিকার নেই

যারা আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে হত্যা করেছে, ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে হত্যা করেছে, তাঁর ভাই ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে আহত করেছে, এবং তাঁর (হুসাইনের) দুধের শিশু পুত্র আব্দুল্লাহকে হত্যা করেছে—তারা হলো:

১. আবদুর রহমান ইবনু মুলজিম – আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী।
২. সিনান ইবনু উকাইসার আল-আসাদী (উপনাম: আল-জাররাহ) – ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আঘাতকারী ও হত্যাকারী।
৩. হারমালা ইবনু কাহিন আল-আসাদী – দুধের শিশু (আবদুল্লাহ ইবনু হুসাইন)-এর হত্যাকারী।
৪. শিমর ইবনু যিল-জাওশন আল-কিলাবী – ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী।
৫. ইবনু হাউজা আল-কূফী – হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী।
৬. ইসহাক ইবনু হাইওয়াহ আল-খুদরামী – হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী।
৭. হাকীম ইবনু আত-তুফাইল – হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী।
৮. রাবঈ ইবনু শাবস আত-তামীমী – হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী।
৯. সিনান ইবনু আনাস – হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর হত্যাকারী।

  • এই সকল হত্যাকারীদের অনেকেই ছিল খলীফা আলী ইবনু আবি তালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর সেনাবাহিনীর সদস্য, তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুসারী ও নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি।
  • আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর শাহাদাতের পর এরা তাঁর বড় ছেলে ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আনুগত্য করেছিল।
  • হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর শাহাদাতের পর এরা তাঁর ভাই ইমাম হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আনুগত্য করেছিল।
  • পরে তারা হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে বিশ্বাসঘাতকতা করে হত্যা করে।

উল্লেখ্য, এই হত্যাকারীরা কূফার বাসিন্দা ছিল এবং এখনো তারা কূফার কাছাকাছি এলাকায় বসবাস করে, যেখানে শহীদ হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর কবরও অবস্থিত। আরও কি কিছু বলার বাকি আছে?

- আসর আব্বাস আল-হায়দারী (শিয়া গবেষক)

বিশেষ তথ্য

দীর্ঘ অনুসন্ধান ও শিয়া উৎসের গবেষণার পর প্রথমবারের মতো ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর উপর বিষ মাখানো ছুরি দিয়ে আঘাতকারী ও হত্যাকারীর নাম প্রকাশ পেয়েছে: সে পাপিষ্ঠ হলো: সিনান ইবনু উকাইসার আল-আসাদী (উপনাম: আল-জাররাহ)।

আলহামদুলিল্লাহ, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের কেউ নবী পরিবারের কারো হত‍্যার সাথে জড়িত নন। সাহাবীগণের কেউ তো কোনোভাবেই নন। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের প্রখ‍্যাত কোনো তাবেঈ এর সাথে সংশ্লিষ্ট নন। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ইমামদের কেউ এতে যুক্ত নন। যারা এসব অপকর্ম করেছে তারা হয় শিয়া, না হয় নাসেবী।

তারপরও শিয়ারা সাহাবায়ে কেরামকে কেন কাফির বলে?
তারপরও শিয়ারা আহলুস সুন্নাতের বিরুদ্ধে কেন বিষোদগার করে?

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid02UPqgoTgr6fKZsLFiYifwoGS8teiZVsh5TuQa9LRHYPunuNjZeiwpxbVijwfa7hJ5l
আশআরীরা প্রতি বছর নতুন একটি আকীদা নিয়ে আসে!

ইমাম গাযালী (আশআরি) তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে আল্লাহর আরশে থাকার ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন:

ইহইয়া উলূমিদ্দীন গ্রন্থে বলেন:
"আল্লাহ আরশের উপর অবস্থান করছেন — আরশের সাথে কোনো সংযোগ (মুমাসসা) ব্যতীত এবং তিনি আরশের উপরে…"

ইলজাম আল-'আওয়াম আন ইলমিল কালাম গ্রন্থে বলেন:
"আল্লাহর ঊর্ধ্বতা হলো মর্যাদাগত ঊর্ধ্বতা, স্থানগত ঊর্ধ্বতা নয়।"

আল-ইকতিসাদ ফিল ই'তিকাদ গ্রন্থে বলেন:
"যদি বলা হয় আল্লাহ আরশের উপর অবস্থান করছেন, তাহলে তো এ কথা মানতে হবে — তিনি হয় আরশের চেয়ে বড়, অথবা ছোট।"

— এই বক্তব্যগুলো থেকে বুঝা গেল যে, আশআরিরা একেক সময় একেক রকম ব্যাখ্যা দেন আল্লাহর আরশে থাকার ব্যাপারে, যা তাদের আকীদায় স্থিরতা নেই— এটা সপ্রমাণ করে।

এর মূল কারণ,
১- কুরআন ও সুন্নাহর ভাষ্যের কাছে আত্মসমর্পণ না করা।
২- সালাফে সালেহীনের মানহাজ সম্পর্কে অজ্ঞতা।
৩- নিজেদের বিবেকের যুক্তির প্রতি অতি নির্ভরতা।
৪- দর্শন শাস্ত্রের বিশুদ্ধতা নিয়ে অতি সুধারণা।
৫- আল্লাহর কাছে কায়োমনোবাক্যে হিদায়াত না চাওয়া।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid02h6u5v2khpkomvjdh5KjwHadgWyBWMTdvofp4kX8bFTkopAgJFREuzcpKxBChj3Bul
মুসলিম আলেমগণের বিভিন্ন যুগে শিয়া (রাফেযী) সম্প্রদায় সম্পর্কে মন্তব্য

মুসলিম আলেমগণের বিভিন্ন যুগে শিয়া (রাফেযী) সম্প্রদায় সম্পর্কে করা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য নিচে উল্লেখ করা হলো, যেখানে তারা শিয়া রাফেযীদের ক্ষতিকর দিকসমূহ বর্ণনা করেছেন এবং ইহুদি-নাসারাদের চেয়েও তাদের বিপদজনক বলে আখ্যা দিয়েছেন:


১. ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহিমাহুল্লাহ) — “আর্‌-রদ্দু ‘আলা যানাদিকা ওয়াল জাহমিয়্যাহ” গ্রন্থে উদ্ধৃত:
“আমি এমন কোনো জাতি দেখিনি যারা ইসলাম সম্পর্কে রাফেযীদের মতো এতটা বিদ্বেষ পোষণ করে। তারা প্রতিটি যুগে ও স্থানে ইহুদি ও নাসারাদের সহায়ক হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।”


২. ইমাম আল-আজুরী (রহিমাহুল্লাহ) — “আশ-শরী‘আহ” গ্রন্থে বলেন:
“যে ব্যক্তি রাফেযী মতবাদ প্রকাশ করে, সে নিজেকে উম্মতের জন্য একটি মারাত্মক বিপদে পরিণত করে। তারা সবচেয়ে বিপজ্জনক ফিরকা; কারণ তারা বাহ্যত ইসলাম প্রদর্শন করে, কিন্তু অন্তরে ইসলামকে শত্রুতা করে।”


৩. ইমাম ইবনু হাযম আল-আন্দালুসি (রহিমাহুল্লাহ) — “আল-ফাসল ফিল মিলাল ওয়ান নিহাল” গ্রন্থে বলেন:
“আমরা এমন কোনো বিদআতী সম্প্রদায়কে জানি না, যারা ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য তাদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর, কিংবা যারা শরীয়ত ও এর বিধান ধ্বংসে এতটা অগ্রগামী।”

৪. ক্বাযী আবু বকর আল-বাকিলানি (রহিমাহুল্লাহ) — “আত্-তামহীদ” গ্রন্থে বলেন:
“রাফেযীরা ধর্মের মধ্যে এমনভাবে ধ্বংস ও ফিতনা সৃষ্টিকারী, যা ইহুদি-নাসারার চেয়েও বেশি ক্ষতিকর; কারণ তারা নিজেদের ইসলাম-অনুগামী দাবী করে, অথচ ইসলামি আকীদা ও বিধানসমূহকে বিকৃত করে।”

৫. ইমাম ইবনুল জাওযি (রহিমাহুল্লাহ) — “তালবিসু ইবলীস” গ্রন্থে বলেন:
“রাফেযীরা হলো সবচেয়ে বিভ্রান্ত সম্প্রদায়। তারা ইহুদি-নাসারাদের চেয়েও অধিক সত্য থেকে বিচ্যুত, কারণ তারা ইসলাম দাবী করে অথচ নিজের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী মুসলিমদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে।”

৬. ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহিমাহুল্লাহ) — “মিনহাজুস সুন্নাহ” গ্রন্থে বলেন:
“রাফেযীরা অনেক বিষয়ে ইহুদি ও নাসারাদের চেয়েও বেশি খারাপ… তারা সাহাবীদের প্রতি শত্রুতা প্রকাশ করে এবং তাঁদেরকে অপবাদ দেয়। এটি ইসলামের ভিত্তি ধ্বংস করার দিকে নিয়ে যায়।”

৭. হাফিয ইমাম যাহাবি (রহিমাহুল্লাহ) — “মীযানুল ই‘তিদাল” গ্রন্থে বলেন:
“যদি রাফেযীরা মুসলিম না হয়ে অন্য কোনো ধর্মের হতো, তাহলে তাদের ক্ষতি হালকা হতো; কারণ তারা বাহ্যত ইসলাম প্রদর্শন করে কিন্তু অন্তরে তার বিপরীত লালন করে। তারা উম্মতের ভেতর থেকেই ফিতনা সৃষ্টি করে।”

৮. ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) — “আস্‌-স্বাওইকুল মুরসালাহ” গ্রন্থে বলেন:
“রাফেযীরা ইসলাম ও মুসলিমদের উপর ইহুদি-নাসারাদের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর; তারা মুসলিমদের মাঝে ফিতনা, বিদ্বেষ ছড়ায় এবং শরীয়তের ভিত্তিমূল ধ্বংস করে।”

৯. ইমাম শওকানী (রহিমাহুল্লাহ) — “নাইলুল আওতার” গ্রন্থে বলেন:
“রাফেযীরা প্রতিটি যুগে ইসলামের শত্রু। তারা উম্মতের জন্য ইহুদি ও নাসারাদের চেয়েও বেশি বিপদজনক, কারণ তারা আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাহ ও তাঁর সাহাবীদের প্রতি আক্রমণ করে।”


উপসংহার:
এসব বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, মুসলিম আলেমগণ বিভিন্ন যুগে রাফেযীদের (শিয়া সম্প্রদায়কে) ইসলামের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তারা বাহ্যত ইসলাম দাবি করলেও ভেতরে ইসলামবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত—এ কারণে তাদের ক্ষতি বাহ্যিক শত্রুদের চেয়েও মারাত্মক।

আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন এবং ইসলামকে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করুন।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid02qPeCTQjiMACbnoQZA7xXtFbcTAqxa8Us5kTHCXyyhNsSKTPbxyqowMEHg4WYrGhgl
শিয়া রাফেযীদের নিকট তাকিয়্যাহ (التقية)

তাকিয়্যাহ অর্থ মিথ্যাচার, প্রতারণা ও কপটতা। রাফেযীদের (শিয়া) ধর্মে এটি এক বিশেষ উচ্চ স্থান দখল করে আছে এবং তাদের মূল গ্রন্থসমূহে এ সম্পর্কে বহু বর্ণনা এসেছে।
তাদের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, যেমন কুলাইনি ও অন্যান্য শিয়া লেখকরা তাদের মিথ্যা বর্ণনায় জাফর আস-সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) থেকে এ কথা নিয়ে এসেছেন যে:
"তাকিয়্যাহ আমার ধর্ম ও আমার পিতৃপুরুষদের ধর্ম থেকে, আর যার মধ্যে তাকিয়্যাহ নেই তার কোনো ঈমানই নেই।"

এছাড়াও তাদের বর্ণনা অনুযায়ী আবু আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত:
"ধর্মের নয়-দশমাংশ তাকিয়্যাহ, আর যার মধ্যে তাকিয়্যাহ নেই তার কোনো ধর্ম নেই, এটা সব কিছুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, শুধু নবীযের পানীয় ও মোজার উপর মাসাহ করা ছাড়া।"
বস্তুত শিয়ারা তাকিয়্যাহ নীতিতে বিশ্বাস করে এবং তা সব অবস্থায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে। তারা এটিকে বলে: “বাহিরে কুফর প্রকাশ ও অন্তরে ঈমান গোপন রাখা।” অর্থাৎ, একজন শিয়া তার আকিদার অংশ হিসেবে তাকিয়্যাহ করে – এমনকি অন্য মুসলিমদের সঙ্গেও – এবং তারা বিশ্বাস করে যে তারা যেকোনো সময় তাকিয়্যাহ ব্যবহার করে সুন্নিদের সাথে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের মুখোশ পরতে পারে, অথচ অন্তরে সুন্নি মাযহাবের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে।

তারা এমনকি এটাও দাবি করে যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও তাকিয়্যাহ করেছেন, যেমন তারা বর্ণনা করে যে, যখন মুনাফিকদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মারা গেল, তখন নবী (ﷺ) তার জানাজায় যান। তখন উমর বললেন: “আল্লাহ কি আপনাকে তা করতে নিষেধ করেননি?” রাসূল (ﷺ) জবাব দেন:
“তোমার কী জানা, আমি কী বলেছি? আমি বলেছি: হে আল্লাহ! তার পেট আগুনে পূর্ণ করে দাও, তার কবর আগুনে ভরে দাও এবং তাকে আগুনে ঢুকিয়ে দাও।” (ফরু' আল-কাফি, কিতাবুল জানায়িয, পৃষ্ঠা ১৮৮) - (আস্তাগফিরুল্লাহ, রাসূলের নামে কতবড় জঘন্য মিথ্যাচার) 

আস্তাগফিরুল্লাহ তারা এখান থেকে প্রমাণ করতে চায় যে রাসূল (ﷺ)ও নাকি তাকিয়্যাহ করেছেন, অথচ এটা এক ভয়ংকর মিথ্যা অপবাদ। কীভাবে সম্ভব যে সাহাবীরা তার জন্য দোয়া করছে আর রাসূল (ﷺ) তাকে অভিশাপ দিচ্ছেন?

আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হলো:
তারা (শিয়ারা তাকিয়্যাহর নামে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে কসম করাকেও বৈধ বলে মনে করে! যেমন, হুর আল-আমিলি তার কিতাব ʼওসাইলুশ শীআহ কিতাবে লিখেছেন:
ইবনে বাকির, যুরারাহ হতে, তিনি বলেন:
আমি জিজ্ঞাসা করলাম: আমরা তো শত্রুদের মাঝে দিয়ে যাই, তারা আমাদের সম্পদের ব্যাপারে কসম করায়, অথচ আমরা যাকাত দিয়ে দিয়েছি। তখন তিনি বললেন: “যদি তুমি ভয় পাও, তাহলে যা তারা চায় তাই দ্বারা কসম করো।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম: “তালাক বা দাস মুক্তির নামে?” তিনি বললেন: “যা তারা চায়।”

উক্ত কিতাবে আরও এসেছে:
সামা'আহ থেকে আবু আব্দুল্লাহ বলেন:
“যদি কেউ তাকিয়্যাহর কারণে কসম করে, তাহলে সেটা তার ক্ষতি করবে না, যদি সে বাধ্য হয়ে থাকে বা নির্যাতনের মুখে পড়ে।” (ওসাইলুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ১৩৭–১৩৯)

সারসংক্ষেপ:
রাফেযীদের মতে তাকিয়্যাহ একটি ফরয বিধান, তাদের মতামত তাকিয়্যাহ নীতি অবলম্বন করা ছাড়া দাঁড়াতেই পারে না। তারা নিজেদের তাকিয়্যাহর শিক্ষা গোপনে এবং প্রকাশ্যে নেয় এবং প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid03ULTUAv3dZSnHwif3P49pnrby7opzq84Y4e1sc4k1jxnRjcSVEbvft5QzV5A241Tl

জীবন হচ্ছে আখিরাতের জন্য কর্মের সময়কাল। এই জীবনের সময়ই এমন এক সুযোগ যেখানে স্থায়ী সুখ বা চিরস্থায়ী দুর্ভাগ্য নির্ধারিত হয়। এটি হলো পাথেয় সংগ্রহের পথ, মুক্তি ও সফলতার সিঁড়ি। যে ব্যক্তি জানে এই অল্প সময়ই স্থায়ী জান্নাত বা জাহান্নামের মূল চাবিকাঠি—সে অবশ্যই এর মূল্য বুঝে নেয়। আর যে বুঝে না, সে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত, আর আখিরাতে হবে চরম অনুতপ্তদের একজন।

ইমাম ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
“যে জানে এই অল্প সময়ের জীবন চিরস্থায়ী জান্নাতে পৌঁছার সফরের পুঁজি, সে একে নষ্ট করে না।”
- হিফজুল উমর, পৃষ্ঠা ৫৭

তিনি আরেক জায়গায় বলেন,
“মানুষের উচিত সময়ের মর্যাদা ও মূল্য বুঝা, যেন একটি মুহূর্তও আল্লাহর নৈকট্য ছাড়া ব্যয় না হয়।”
- সায়দুল খাতির

কারো কারো বাণী:
“যদি তোমার মূলধনই হয় সময়, তবে তা ব্যয় করো শুধু প্রয়োজনীয় বিষয়ে।”

ইমাম ইবনু কুদামা আল-মাকদিসী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
“হে আল্লাহর বান্দা! তোমার মূল্যবান জীবনকে কাজে লাগাও, তোমার সময়ের যত্ন নাও, মনে রেখো—তোমার আয়ু সীমিত, নিশ্বাসগুলো গোনাযোগ্য। প্রতিটি নিশ্বাস তোমার জীবন থেকে কিছুটা অংশ কমিয়ে দেয়। পুরো জীবন সংক্ষিপ্ত, আর তারও যে অংশ বাকি সেটাই সবচেয়ে কম। প্রতিটি মুহূর্ত একেকটি বহুমূল্য রত্ন—যার কোনো তুলনা নেই, কোনো বিকল্প নেই।
এই স্বল্প জীবনের বিনিময়েই নির্ধারিত হবে চিরস্থায়ী জান্নাত বা চিরস্থায়ী জাহান্নাম।

এই জীবন চিরস্থায়ী জীবনের তুলনায় এমন, যেন একটি মুহূর্ত এক হাজার হাজার বছর সুখের সমান হতে পারে, বা বিপরীত। এই জীবনের তাই অমূল্য মূল্য। 
তাই নিজের সময় অপচয় করো না, সেগুলো বিনিময়হীন চলে গেলে হতাশ হবে, এমন কাজ করো না যাতে কোনো প্রতিদান নেই। চেষ্টা করো, তোমার প্রতিটি নিশ্বাস যেন আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর নৈকট্যের কোনো কাজে ব্যয় হয়।
তোমার যদি একটি মূল্যবান হীরা হারিয়ে যায়, তুমি দুঃখ পেতে—তবে কিভাবে সময় নষ্ট করো? সময় চলে গেলে কি তোমার দুঃখ হবে না?”
- গিযাউল আলবাব, ২/৪৪৮


কে সফল, কে ব্যর্থ?
সফল সেই ব্যক্তি যে বুঝে নিয়েছে—এই দুনিয়া একটি পরীক্ষার স্থান, এবং এখানেই আখিরাতের জন্য পাথেয় জমা করতে হয়। সে পরিশ্রম করে, যাতে তার মালিক তার থেকে সেই আমল গ্রহণ করেন এবং তাকে জান্নাতের বিনিময়ে সেই আমল কিনে নেন।
আর ব্যর্থ সেই ব্যক্তি যে গাফেলতায় জীবন পার করে দিয়েছে, সুযোগ হাতছাড়া করেছে, নেয়ামত অপচয় করেছে, সময় নষ্ট করেছে, দুনিয়ার রঙিনতায় মগ্ন থেকেছে। যখন মৃত্যু এসে উপস্থিত হলো, তখন সে খালি হাতে ফিরে এলো। তখন অনুতাপ করে কিন্তু আর ফিরতে পারবে না। আল্লাহ তাদের ব‍্যাপারে বলেন,
“তারা ধৈর্য ধরলেও জাহান্নামই হবে তাদের আবাস, আর তারা ক্ষমা চাইলে তাও কবুল হবে না।” - সূরা ফুসসিলাত: ২৪।


নবী (ﷺ) এর উপদেশ – সুযোগের সদ্ব্যবহার করো
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি আসার আগে কাজে লাগাও:

  • তোমার যৌবন বার্ধক্যের আগে,
  • সুস্থতা অসুস্থতার আগে,
  • সম্পদ দারিদ্র্যের আগে,
  • অবসর ব্যস্ততার আগে,
  • জীবন মৃত্যুর আগে।”

তাই, তুমি যতদিন জীবিত, করো সৎ কাজ, কারণ মৃত্যু এসে গেলে কাজ করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না।


আহলে দুনিয়ার অবস্থা – ইমান ইবনু কুদামা রাহিমাহুল্লাহর পেশকৃত একটি উপমা
তিনি বলেন, দুনিয়াবাসীর অবস্থা এমন:
একদল লোক এক জাহাজে উঠে সমুদ্রে যাত্রা করে। ঝড়ে তাদের জাহাজ এক দ্বীপে গিয়ে লাগে। সে দ্বীপে ছিলো অমূল্য রত্ন, হীরা, মুক্তা, মণি, সব রকম ধনসম্পদ। আবার সেখানে ছিলো মূল্যহীন জিনিসও। বলা হলো, “তোমাদের সময় সীমিত—একদিন ও একরাত, যা পারো সংগ্রহ করে জাহাজে তোলো।”

১. প্রজ্ঞাবানরা:
তারা রাতদিন পরিশ্রম করে রত্ন সংগ্রহ করে। বিশ্রাম ভুলে তারা চিন্তা করে—এই অল্প সময়ে যা সংগ্রহ করবো, তা-ই পরকালে কাজে লাগবে।

২. মাঝারি গোষ্ঠী:
তারা কিছু সংগ্রহ করে, কিছু সময় বিশ্রাম নেয়।

৩. গাফেলরা:
তারা কিছুই নেয় না, খালি খেলাধুলা, ঘরবাড়ি তৈরি, অথবা মূল্যহীন বস্তু সংগ্রহ করে—কারণ তারা বলে, “হাতের কিছুই ভালো, ভবিষ্যতের আশার চেয়ে!”

৪. সীমালঙ্ঘনকারী:
তারা রাজপ্রাসাদে ঢুকে পড়েছে—অন্যায়ভাবে মালামাল লুট করেছে, সীমা লঙ্ঘন করেছে। বলেছে, “এই দ্বীপই আমাদের স্থায়ী বাসস্থান!”
শেষে কি হলো?
সবার ফিরে যাওয়ার সময় হলো।

  • প্রজ্ঞাবানরা ফিরে গেলো রত্নে পরিপূর্ণ ঝুলিতে।
  • মাঝারিরা আফসোস করলো—যেহেতু কম সংগ্রহ করেছিলো।
  • গাফেলরা কাঁদতে লাগলো—একেবারেই খালি হাতে!
  • সীমালঙ্ঘনকারীদের গলায় শেকল পরানো হলো—রাজপ্রাসাদের জিনিস লুট করার শাস্তি স্বরূপ।


রাজপ্রাসাদে পৌঁছার পর:

  • যারা রত্ন এনেছে—তাদের সম্মান দেওয়া হলো, রাজাদের আসনে বসানো হলো।
  • যারা কিছু আনেনি—তারা লজ্জিত ও অনুতপ্ত।
  • যারা অপরাধ করেছিল—তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হলো, জাহান্নামের দিকে টেনে নেওয়া হলো।


তাদের ব‍্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হলো,
“তারা ধৈর্য ধরলেও জাহান্নামই হবে তাদের আবাস, আর তারা ক্ষমা চাইলে তাও কবুল হবে না।” - সূরা ফুসসিলাত: ২৪।


উপসংহার:
হে পাঠক, এই ছোট জীবনের সময়টি অমূল্য রত্নস্বরূপ। এই সময়টাই আখিরাতের গন্তব্য নির্ধারণ করবে। তাই—

মনকে ব‍্যস্ত রাখো:

  • আল্লাহর নেয়ামত স্মরণে—শুকরিয়া আদায় করো,
  • গুনাহ স্মরণে—তওবা করো,
  • সময় অপচয় স্মরণে—অনুতপ্ত হও,
  • আল্লাহর সৃষ্টির গভীরতা চিন্তা করো—তাঁর গুণাবলি বুঝার জন্য।


জিহ্বাকে নিয়োজিত রাখো:

  • আল্লাহর জিকির, দোয়া, ইস্তিগফার, কুরআন তিলাওয়াতে,
  • উপদেশ দেওয়া, হিদায়াত প্রদান, শিক্ষা দেওয়া ও অন্যায় থেকে বিরত রাখতে

 

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যস্ত থাকুক:

  • সালাত আদায়ে,
  • মানুষের কল্যাণে,
  • বিশেষ করে দ্বীনি কল্যাণে—যা তাদের হেদায়াতের দিকে আনে।

সাবধান থেকো:

  • এমন কিছু থেকে যা আমল নষ্ট করে ফেলে,
  • যাতে তুমি পার্থিব জীবনও হারাও, আবার আখিরাতও পাবে না!


“হে মানুষ! নিঃসন্দেহে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। অতএব, দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদের ধোঁকায় না ফেলে এবং প্রতারক যেন আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের প্রতারিত না করে।”- সূরা ফাতির: ৫।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid0tT7Jyy5eNqCJ1nev7EyGfMUr5w88WjxeYaVVqy8kBcPrpaFAitJZ5Vfcqj8RWQDNl
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 পরের পাতা »