১. মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তির রিযিকে সংকট দেখা দেয় এবং তার জীবনে কোন বরকত হয় না।
আবূ হুরাইরাহ্ এবং আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُّبْسَطَ لَهُ فِيْ رِزْقِهِ، وَأَنْ يُّنْسَأَ لَهُ فِيْ أَثَرِهِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ.
‘‘যে ব্যক্তি রিযিকে প্রশস্ততা ও বয়সে বরকত চায় তার উচিৎ সে যেন নিজ আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে’’।
(বুখারী ২০৬৭, ৫৯৮৫, ৫৯৮৬; মুসলিম ২৫৫৭)
কারোর জন্য নিজ মাতা-পিতার চাইতেও নিকটাত্মীয় আর কে হতে পারে?
২. মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তি কখনো আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে না।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :
رِضَا الرَّبِّ فِيْ رِضَا الْوَالِدَيْنِ وَسَخَطُهُ فِيْ سَخَطِهِمَا.
‘‘প্রভুর সন্তুষ্টি মাতা-পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং তাঁর অসন্তুষ্টি তাঁদের অসন্তুষ্টির মধ্যে’’। (সাহীহুল্ জা’মি’ : ৩/১৭৮)
৩. মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তির সন্তানও তার অবাধ্য হবে অথবা হওয়া স্বাভাবিক।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«مَنْ عَمِلَ صَالِـحًا فَلِنَفْسِهِ، وَمَنْ أَسَآءَ فَعَلَيْهَا، وَمَا رَبُّكَ بِظَلاَّمٍ لِّلْعَبِيْدِ»
‘‘যে ব্যক্তি সৎ কাজ করলো সে তা তার ভালোর জন্যই করলো। আর যে মন্দ কাজ করলো সে অবশ্যই উহার প্রতিফল ভোগ করবে। আপনার প্রভু তাঁর বান্দাহ্দের প্রতি কোন যুলুম করেন না’’। (ফুস্সিলাত/ হা’ মীম আস্ সাজ্দাহ্ : ৪৬)
৪. মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তি যখন তার অপরাধের কথা বুঝতে পারবে তখন সে চরমভাবে লজ্জিত হবে। তার বিবেক সর্বদা তাকে দংশন করতে থাকবে। কিন্তু তখন এ লজ্জা আর কোন কাজে আসবে না।
৫. কোন সন্তান তার মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়ার কারণে তার মাতা-পিতা তাকে কোন বদদো‘আ বা অভিশাপ দিলে তা তার সমূহ অকল্যাণ বয়ে আনবে।
আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
ثَلَاثُ دَعْوَاتٍ لَا تُرَدُّ: دَعْوَةُ الْوَالِدِ لِوَلَدِهِ، وَدَعْوَةُ الصَّائِمِ، وَدَعْوَةُ الْـمُسَافِرِ.
‘‘তিনটি দো‘আ কখনো না মঞ্জুর করা হয়না: মাতা-পিতার দো‘আ তার সন্তানের জন্য, রোযাদারের দো‘আ ও মুসাফিরের দো‘আ’’। (সাহীহুল্ জা’মি’ : ৩/৬৩)
যেমনিভাবে মাতা-পিতার দো‘আ সন্তানের কল্যাণে আসে তেমনিভাবে তাদের বদদো‘আও তার সকল অকল্যাণ ডেকে আনে।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘‘জুরাইজ’’ নামক জনৈক ইবাদাতগুযার ব্যক্তি কোন এক গির্জায় ইবাদাত করতো। একদা তার মা তার গির্জায় এসে তাকে ডাকতে শুরু করলো। বললো: হে ‘‘জুরাইজ’’! আমি তোমার মা। তুমি আমার সাথে কথা বলো। তার মা তাকে নামায পড়তে দেখলো। তখন সে তাঁর ডাকে বললো: হে আল্লাহ্! আমার মা এবং আমার নামায! এ কথা বলেই সে নামাযে রত থাকলো। এভাবে তার মা তিন দিন তাকে ডাকলো এবং সে প্রতি দিন তাঁর সঙ্গে একই আচরণ দেখালো। তৃতীয় দিন তার মা তাকে এ বলে বদদো‘আ করলো: হে আল্লাহ্! আপনি আমার ছেলেটিকে মৃত্যু দিবেন না যতক্ষণ না সে কোন বেশ্যা মহিলার চেহারা দেখে। আল্লাহ্ তা‘আলা তার মায়ের বদদো‘আ কবুল করেন।
জনৈক মেষচারক তার গির্জায় রাত্রিযাপন করতো। একদা এক সুন্দরী মহিলা গ্রাম থেকে বের হয়ে আসলে সে তার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। অতঃপর মহিলাটি একটি ছেলে জন্ম দেয়। মহিলাটিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে: সন্তানটি ইবাদাতগুযার ব্যক্তির। এ কথা শুনে সাধারণ জনগণ কুড়াল-সাবল নিয়ে গির্জায় উপস্থিত হয়। তারা গির্জায় এসে তাকে নামায পড়তে দেখে তার সাথে কোন কথা বলেনি। বরং তারা গির্জাটি ধ্বংস করার কাজে লেগে গেলো। সে এ কান্ড দেখে গির্জা থেকে নেমে আসলো। তখন তারা তাকে বললো: কিছু জিজ্ঞাসা করার থাকলে এ মহিলাটিকে জিজ্ঞাসা করো। ইবাদাতগুযার ব্যক্তিটি মুচকি হেসে বাচ্চার মাথায় হাত রেখে বললো: তোমার পিতা কে? বাচ্চাটি বললো: মেষচারক। জনগণ তা শুনে তাকে বললো: আমরা তোমার ধ্বংসপ্রাপ্ত গির্জা সোনা-রূপা দিয়ে বানিয়ে দেবো। সে বললো: তা করতে হবে না। বরং তোমরা মাটি দিয়েই বানিয়ে দাও যেভাবে পূর্বে ছিলো। (মুসলিম ২৫৫০)
৬. মানুষ তার বদনাম করবে এবং তার দিকে সুদৃষ্টিতে তাকাবেনা।
৭. মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
أَتَانِيْ جِبْرِيْلُ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ! مَنْ أَدْرَكَ أَحَدَ وَالِدَيْهِ فَمَاتَ، فَدَخَلَ النَّارَ، فَأَبْعَدَهُ اللهُ، قُلْ: آمِيْنُ، فَقُلْتُ: آمِيْنُ.
‘‘আমার নিকট জিব্রীল এসে বললো: হে মুহাম্মাদ! যে ব্যক্তি মাতা-পিতার কোন একজনকে জীবিত পেয়েও তাদের খিদমত করেনি। বরং তার অবাধ্য হয়েছে এবং যদ্দরুন সে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে নিজ রহমত থেকে বঞ্চিত করুক। আপনি বলুন: হে আল্লাহ্! আপনি দো‘আটি কবুল করুন। আমি বললাম: হে আল্লাহ্! আপনি দো‘আটি কবুল করুন’’। (সাহীহুল্ জা’মি’ : ১/৭৮)