পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮২১-[১০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি বলে যে, মানুষ ধ্বংস হোক, তখন সে নিজেই সবচেয়ে বেশি ধ্বংসপ্রাপ্ত। (মুসলিম)[1]
بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ
وَعَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا قَالَ الرَّجُلُ: هَلَكَ النَّاسُ فَهُوَ أَهْلَكُهُمْ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যাঃ কোন ব্যক্তির এই কথা বলা যে ‘মানুষের ধ্বংস হোক’ এর অর্থ হলো : অন্যদের খারাপ ‘আমলের কারণে জাহান্নামে যাওয়াকে আবশ্যক বলে মনে করা, এটিও একটি অভিসম্পাত। সুতরাং কারো জন্য বা কোন জাতির জন্য এরূপ অভিসম্পাত করা আদৌ বৈধ নয়।
হাদীসের শব্দ فَهُوَ أَهْلَكُهُمْ ‘সেই সর্বাধিক ধ্বংসপ্রাপ্ত, এর "كُ" বর্ণে পেশ এবং যবর উভয় চিহ্ন যোগে পাঠ সিদ্ধ। যবরযোগে পাঠ করলে তা فِعْلٌ مَاضٍ অতীতকালের ‘সীগাহ্’ বা শব্দ হিসেবে অর্থ প্রদান করবে। তখন এর অর্থ হয় সীমালঙ্ঘনকারী তারাই যারা মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করে থাকে এবং বলে থাকে, ‘মানুষ ধ্বংস হোক’। মানুষ যখন এ কথা বলেই ফেলে তখন আল্লাহ নয় বরং সে নিজে তার জন্য ধ্বংস আবশ্যক করে নেয়। "ك" বর্ণে পেশ যোগে পাঠ করলে এর অর্থ হয়, যে এ কথা বলবে সেই হবে অধিক ধ্বংসশীল। কেননা সে নিজেকে অপরের চেয়ে অধিক ভালো মনে করেছে আর আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে অন্যকে বঞ্চিত মনে করে নিজের জন্য কেবল নির্ধারণ করে নিয়েছে।
ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত আছে, যদি কেউ অন্যকে হেয় এবং তুচ্ছ মনে করে নিজেকে বেশী ভালো মনে করে এ কথা বলে থাকে, তবে নিঃসন্দেহে তা অপছন্দনীয় এবং নিষিদ্ধ। আর যদি অন্যকে তুচ্ছ জ্ঞান করে নয়, বরং অন্যের মধ্যে দীনের ত্রুটি লক্ষ্য করে তাদের শাসন হিসেবে এ কথা বলা হয়ে থাকে তাহলে তা দোষণীয় নয়, এটা জামহূরেরও মত।
কেউ কেউ বলেছেন, এটা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিদ্‘আতী দল, যারা মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করে থাকে এবং (গুনাহের কারণে) চিরজাহান্নামী বলে মনে করে থাকে।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ [২৬২৩]-১৩৯; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৭৫)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮২২-[১১] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কিয়ামতের দিন সবচেয়ে খারাপ লোক তাকে পাবে, যে দ্বিমুখী (কপট)। সে এক মুখ নিয়ে এদের কাছে যায় এবং অপর মুখ নিয়ে ওদের কাছে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ
وَعَنْهُ: قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَجِدُونَ شَرَّ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ذَا الْوَجْهَيْنِ الَّذِي يَأْتِي هَؤُلَاءِ بوجهٍ وَهَؤُلَاء بوجهٍ» . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ দুই চেহারা বিশিষ্ট লোক হলো মুনাফিক। তারা একদলের কাছে বলে, আমরা তোমাদের সাথে; অন্যদের কাছে গিয়ে বলে, আমরা মূলত তোমাদের সাথে।
মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ফাসাদ সৃষ্টি। এরা হলো মুনাফিক সদৃশ লোক। ‘আল্লামা নাবাবী বলেনঃ এরা প্রত্যেক দলের কাছে গিয়ে নিজেদেরকে তাদের দলের লোক বলে পরিচয় দেয় এবং তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে প্রচার করে থাকে। মূলত তাদের এ সকল কার্যক্রম হলো নিরেট প্রতারণা এবং ধোঁকা, যা দুই দলের গোপন তথ্যাদি প্রকাশে উৎসাহিত করে এবং ঝগড়া বাধিয়ে দেয়। এটা সম্পূর্ণ হারাম। কিন্তু কেউ যদি ব্বিদমান দু’টি দলের মধ্যে সন্ধি স্থাপন কিংবা মীমাংসার নিয়্যাতে এরূপ কাজ করে থাকে তবে তা নিন্দনীয় এবং হারাম নয় বরং প্রশংসনীয়। মুনাফিকের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে, আল্লাহ বলেনঃ ‘‘নিশ্চয় মুনাফিকেরা জাহান্নামের নিম্নস্তরে থাকবে’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১৪৫)। হাদীসে এসেছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকবে দ্বিমুখী লোক অর্থাৎ মুনাফিকগণ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ [২৫২৬]-১৯৯; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০২৫)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮২৩-[১২] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ চোগলখোর বা নিন্দাকারী জান্নাতে যাবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় قَتَّاتٌ-এর স্থলে نَمَّامٌ (একই অর্থ- চোগলখোর) শব্দ রয়েছে।
بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ
وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةِ مُسْلِمٍ: «نَمَّامٌ»
ব্যাখ্যাঃ (قَتَّاتٌ) বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যে কারো গোপন বা সিক্রেট কথা অন্যমনস্কভাব নিয়ে বা আড়ালে থেকে সতর্কতার সাথে এবং অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে (কান লাগিয়ে) শোনে এবং সেটা অন্যের কাছে কিংবা ঐ লোকের প্রতিপক্ষর নিকট তা পৌঁছে দেয়। (نَمَّامٌ) বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যে প্রকাশ্যে থেকেই কারো কথা শুনে এবং তা অপরের কাছে পৌঁছে দেয়। এ উভয় কর্মই হারাম ও নিন্দনীয়, কেননা এতে উদ্দেশ্য থাকে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহ সৃষ্টি করা অথবা অনিবার্য কারণেই এতে পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া কলহ সৃষ্টি হয়ে যায়। এরূপ কর্ম সম্পূর্ণরূপে হারাম। ইবনুল মালিক বলেনঃ যদি পরস্পরের দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসনের জন্য এরূপ কার্য সম্পাদন করা হয় তবে তা নিন্দনীয় এবং হারাম হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘অধিকাংশ গুপ্ত পরামর্শে কোন কল্যাণ নিহিত থাকে না, হ্যাঁ তবে যে ব্যক্তি দান অথবা কোন নেক কাজ কিংবা জনগণের মধ্যে পরস্পর সন্ধি স্থাপনে উৎসাহিত করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এরূপ কাজ করবে আমি সত্বরই তাকে মহান পুরস্কার প্রদান করব।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১১৪)
এ বিষয়ে ‘আল্লামা গাযালী (রহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য, যার সংক্ষিপ্ত সার হলো : যার কাছে গীবত বা পরের কথা নিয়ে কেউ উপস্থিত হবে তার উচিত হলো তাকে সত্য বলে না জানা এবং তার কথা বিশ্বাস না করা। আর যার সম্পর্কে যা কিছু বলেছে তা নিয়ে তত্ত্ব অনুসন্ধানে লিপ্ত না হওয়া এবং কথা বহনকারীকে এরূপ কর্মকাণ্ড থেকে বারণ করা। এরূপ কাজকে সে খারাপ জানবে এবং ঘৃণাও করবে, কখনও এরূপ কাজের প্রতি সন্তুষ্ট হবে না। ‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ একজনের (গোপন) কথা অপরকে বলার মধ্যে যদি দীনের কোন কল্যাণ নিহিত থাকে তাহলে তা নিষেধ বা হারাম তো নয়ই বরং প্রকাশ করাটাই মুস্তাহাব, এমনকি কখনো তা ওয়াজিবও হয়ে যেতে পারে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০৫৬; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০২৬; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৬৩)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮২৪-[১৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সত্যানুসারী হওয়া উচিত। কেননা সত্যবাদিতা পুণ্যের দিকে পথপ্রদর্শন করে, আর পুণ্য জানণাতের দিকে পথপ্রদর্শন করে। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বলে এবং সত্য বলতে চেষ্টা করে, আল্লাহ তা’আলার দরবারে তাকে সত্যবাদী বলে লেখা হয়। তোমরা মিথ্যাচার থেকে বেঁচে থাকো। মিথ্যা পাপাচারের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের দিকে পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যা বলতে সচেষ্ট থাকে, আল্লাহ তা’আলার দরবারে তাকে বড় মিথ্যুক বলে লেখা হয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ সত্য বলা পুণ্যের কাজ, আর পুণ্য মানুষকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। মিথ্যা বলা পাপের কাজ, আর পাপ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়।
بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ صِدِّيقًا. وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَة مُسلم قَالَ: «إِنَّ الصِّدْقَ بِرٌّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ. وَإِنَّ الْكَذِبَ فُجُورٌ وَإِنَّ الْفُجُورَ يهدي إِلَى النَّار»
ব্যাখ্যাঃ সত্যবাদিতা মানব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ গুণ এবং মিথ্যাচারিতা নিকৃষ্ট মানবীয় দোষ। সত্য কথা বলা, সত্য বলার চেষ্টা এবং এর উপর অবিচল থাকার প্রত্যয় মু’মিন জীবনের জন্য একান্তই কাম্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, (عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ) এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ الْزَمُوا الصِّدْقَ অর্থাৎ তোমরা সত্যবাদিতাকে নিজের জন্য ওয়াজিব করে নাও। সত্যবাদিতা মানুষকে পুণ্যের পথ ধরিয়ে জান্নাতে পৌঁছিয়ে থাকে। মানুষ যখন সত্যাশ্রয়ী হয়, সত্যই হয় জীবনের একমাত্র অবলম্বন, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে সিদ্দীক বা চরম সত্যবাদীরূপে লিখে নেন। আল্লাহর নিকট নবীগণের মর্যাদার পরই ‘সিদ্দীক্বীনদের’ মর্যাদা। সত্যবাদী সিদ্দীকানের মর্যাদা নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে মিথ্যা বলা বা মিথ্যাচারিতা স্খলিত চরিত্রের বিভৎসরূপ। মিথ্যাবাদী আল্লাহর নিকট ভীষণ অপছন্দনীয় ব্যক্তি। মিথ্যা মানুষকে পাপাচারিতার পথ ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। কোন মানুষ যখন মিথ্যা বলে, মিথ্যা বলার চিন্তা ফিকর নিয়েই সর্বদা থাকে, তখন আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাকে মিথ্যুক হিসেবে লিখে নেয়া হয়।
‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- يُكْتَبُ তাকে লিখা হয়, এখানে তার অর্থ হলো : তার ওপর ঐ গুণের হুকুম লাগানো হয়, ফলে সে ঐ গুণের অধিকারী হয়ে হয়তো সিদ্দীক্বীনদের পুরস্কার লাভ করে না হয় মিথ্যাবাদী হয়ে তার শাস্তি ভোগ করে।
..... মাখলূক বা সৃষ্টির কাছে এটা প্রকাশের উদ্দেশ্য হলো : হয় সে ভালো-মন্দ লেখক মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) হাতে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে আর না হয় আল্লাহর অপ্রিয় হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬ খন্ড, হাঃ ২৬০৭/১০৩)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮২৫-[১৪] উম্মু কুলসূম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তি মিথ্যুক নয়, যে লোকেদের মধ্যে মীমাংসা করে, ভালো কথা বলে এবং ভালো কথা আদান-প্রদান করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ
وَعَنْ أُمِّ كُلْثُومٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «لَيْسَ الْكَذَّابُ الَّذِي يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ وَيَقُولُ خيرا وينمي خيرا» . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ মিথ্যা সর্বদাই নিন্দনীয় এবং মিথ্যুক ব্যক্তি আল্লাহর অপ্রিয় বান্দা। তবে মিথ্যা যদি মানুষের মধ্যকার পারস্পারিক দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসনের নিমিত্তে হয় তখন তা নিন্দনীয় নয় এবং ঐ মিথ্যুক ব্যক্তি প্রকৃত মিথ্যাবাদী নয়। সে যদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে মিথ্যা কথা বলেও থাকে। কিন্তু তার কথার অন্তর্নিহিত অর্থ হবে সত্য অথবা তার উদ্দেশ্য হবে মহৎ। যেমন যায়দ এবং ‘আমর-এর মধ্যকার দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসনে কোন ব্যক্তি ‘আমরকে গিয়ে (মিথ্যাভাবে) বলল, ওহে ‘আমর! যায়দ তোমাকে সালাম জানিয়েছে। সে তোমার প্রশংসা করে বলল, আমি ‘আমরকে ভালোবাসি। অনুরূপ যায়দ-এর কাছে গিয়েও ‘আমর সম্পর্কে অনুরূপ কথা বলল, ফলে উভয় উভয়ের প্রতি শত্রুভাব এবং আত্মকলহ দূর হয়ে বন্ধুত্বের মানসিকতা সৃষ্টি হয়ে গেল। (মিরকাত; ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৯২; শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৬০৫/১০১)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮২৬-[১৫] মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা প্রশংসায় বাড়াবাড়িকারীদের দেখবে, তখন তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ
وَعَنِ
الْمِقْدَادِ بْنِ الْأَسْوَدِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا رَأَيْتُمُ الْمَدَّاحِينَ فَاحْثُوا فِي وُجُوهِهِمُ التُّرَاب» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ কারো প্রশংসায় যখন অতিরঞ্জন হবে অথবা অহেতুক হবে অথবা প্রশংসা হবে নিজেকে চাটুকারিতামূলক কিংবা কিছু খাওয়া পাওয়ার জন্য তখন এ হুকুম।
এ হাদীসে রয়েছে তার চেহারায় মাটি নিক্ষেপ কর। কোন কোন সংকলনে রয়েছে তার মুখে মাটি পুরে দাও। মুখে মাটি পুরে দেয়া অথবা ধূলা নিক্ষেপ করা হলো হাদীসের প্রকাশ্য বা বাহ্যিক অর্থ। কিন্তু কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ হলো তার চাহিদার মাল-সম্পদ তাকে দিয়ে দাও। কেননা দুনিয়ার মাল-সম্পদ ইযযত সম্মানের তুলনায় ধূলাবালির মতই তুচ্ছ বস্তু, সুতরাং সেই বস্তু তাকে দিয়ে তার মুখ বন্ধ করে ফেলো।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, তাকে সামান্য কিছু দিয়ে দাও, এই সামান্য কিছুকেই ধূলার সাথে সাদৃশ্য দিয়েছেন। (এছাড়াও আরো অনেকে অনেক ব্যাখ্যা করেছেন, বিস্তারিত মূল মিরক্বাতুল মাফাতীহ দ্রঃ)
মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সামনে প্রশংসাকারীকে তিরস্কার করা এবং এ কাজ থেকে বিরত থাকার প্রতি উৎসাহিত করা। কেননা কারো সামনে তার প্রশংসা তাকে দাম্ভিক-অহংকারী বানিয়ে ফেলে।
‘আল্লামা খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কিছু মানুষ আছে যারা স্বভাবগতভাবে মানুষের প্রশংসা করে তার নিকট থেকে কিছু খেতে বা পেতে চায়, নিশ্চয় এদের জন্য অত্র হাদীসের বিধান যথার্থ। কিন্তু যে ব্যক্তি সমাজের কল্যাণে প্রশংসনীয় কোন ভালো কাজ করল, অন্যদেরকেও এমন ভালো কাজে উৎসাহ দানের লক্ষ্যে এবং কল্যাণকর কাজে অনুপ্রাণিত করতে কারো প্রশংসা করল, সে ঐ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৯৬)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮২৭-[১৬] আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির খুব প্রশংসা করল। এটা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ’’হায় দুর্ভাগা! তুমি তোমার ভাইয়ের গলা কাটলে’’। এ বাক্য তিনবার বললেন। অতঃপর বললেনঃ যদি তোমরা কারো প্রশংসা করা প্রয়োজন মনে করো, তবে এরূপ বলবে, ’’আমি অমুক ব্যক্তি সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করি, প্রকৃত অবস্থার সঠিক হিসাব আল্লাহ তা’আলাই জানেন’’। আর এটা ঐ সময় বলবে, যখন সে ব্যক্তি সম্পর্কে সত্যি সত্যিই তুমি এ ধারণা পোষণ করবে। কাউকে পূত-পবিত্র আখ্যায়িত করতে আল্লাহ তা’আলার ওপর বাড়াবাড়ি করবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ
وَعَن أبي بكرَة قَالَ: أَثْنَى رَجُلٌ عَلَى رَجُلٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «وَيْلَكَ قَطَعْتَ عُنُقَ أَخِيكَ» ثَلَاثًا مَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَادِحًا لَا محَالة فَلْيقل: أَحسب فلَانا وَالله حسيبه إِنْ كَانَ يُرَى أَنَّهُ كَذَلِكَ وَلَا يُزَكِّي على الله أحدا . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে যে লোকটি অন্য আরেকজন লোকের প্রশংসা করছিল এই প্রশংসা ছিল মাত্রাতিরিক্ত এবং প্রশংসার ক্ষেত্রে অতি বাড়াবাড়ি, ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ব্যাপারে বলেন (وَيْلَكَ) তোমার ধ্বংস হোক। (وَيْلَكَ) শব্দটি ‘আরবদের বর্ণনা বাগধারায় সতর্ক করণার্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। এর অর্থ (هَلَكْتَ هَلَاكًا) তুমি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছ অথবা ধ্বংস করে ফেলেছ। অর্থাৎ প্রশংসার ক্ষেত্রে তুমি অতিরঞ্জন করে নিজেকে মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে ফেলেছ, অথবা যার অতিরিক্ত প্রশংসা করছ তাকে ভীষণ ক্ষতির মধ্যে ফেলেছ। এ শব্দটি নিখাদ বদ্দু‘আ অর্থে নয় বরং ধমকী কিংবা আফসোস ও পরিতাপ প্রকাশার্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। সুতরাং (وَيْلَكَ) অর্থ তোমার জন্য আফসোস ও পরিতাপ। কোন কোন সংকলনে (وَيْحَكَ) শব্দ ব্যবহার হয়েছে। এটাও ধমকী অর্থে ব্যবহার হয়, তবে এতে থাকে মুহববাত ও দয়াশীলতা।
প্রশংসাকারীকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা (قَطَعْتَ عُنُقَ أَخِيكَ) ‘‘তুমি তোমার ভাইয়ের গর্দান কেটে দিলে’’ এটা রূপকার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে ধ্বংস দ্বারা দীনের ক্ষতি বা ধ্বংস উদ্দেশ্য। কারো প্রশংসা করতে হলে, নিজের ধারণার কথাটুকু ব্যক্ত করবে মাত্র। সে এভাবে বলবে আমার ধারণা মতে অমুকে ভালো বা এমন। অথবা আমি তো তাকে ভালো বলেই মনে করি বা ধারণা করি। প্রকৃত ভালো কে সে তো আল্লাহ জানেন। অতএব আল্লাহর জ্ঞানের ও জানার উপর অতি প্রশংসাই আল্লাহর ওপর বাড়াবাড়ি করা, যা নিষিদ্ধ।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৬২; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৯৭; শারহুন নাবাবী ১৮শ খন্ড, হাঃ ৩০০০/৬৫)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮২৮-[১৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? সাহাবীগণ বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভালো জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমার মুসলিম ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা তার কাছে খারাপ লাগবে। জিজ্ঞেস করা হলো, যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে সে ত্রুটি বিদ্যমান থাকে, তুমি যে দোষ-ত্রুটির কথা বললে, তার মধ্যে সে দোষ-ত্রুটি থাকলেই তো তুমি গীবত করলে। আর যদি দোষ-ত্রুটি বর্তমান না থাকে, তবে তুমি ’’বুহতান’’ (মিথ্যারোপ) করলে। (মুসলিম)[1]
অপর এক বর্ণনায় রয়েছে যে, যদি তুমি তোমার ভাইয়ের এমন দোষের কথা বলো, যা তার মধ্যে রয়েছে, তবে তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তার সম্পর্কে এমন দোষের কথা বলো, যা তার মধ্যে নেই, তবে তুমি তার প্রতি ’’বুহতান’’ (মিথ্যা অপবাদ) দিলে।
بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ
وَعَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَتُدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ . قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ؟ قَالَ: «إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدْ بَهَتَّهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَفِي رِوَايَةٍ: «إِذَا قُلْتَ لِأَخِيكَ مَا فِيهِ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِذَا قُلْتَ مَا لَيْسَ فِيهِ فقد بَهته»
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি আল কুরআনের এ আয়াতের ব্যাখ্যাঃ وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا ‘‘তোমাদের কেউ একে অপরের গীবত করবে না।’’ (সূরাহ্ আল হুজুরাত ৪৯ : ১২)
এ আয়াত নাযিল হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন, (أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟) তোমরা কি জান গীবত কি? তারা তখন জওয়াব দিলেন আল্লাহ ও তার রসূলই ভালো জানেন। এভাবে প্রশ্ন-উত্তর পরম্পরায় বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা অত্র হাদীসে বিধৃত হয়েছে।
ইমাম নাবাবী বলেনঃ গীবত হলো জঘন্য অপরাধসমূহের একটি অপরাধ। এটা যখন মানব সমাজে ব্যাপকভাবে বিস্তার ঘটে তখন তা থেকে অল্প মানুষই ফিরে আসতে সক্ষম হয়।
গীবতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهٗ) তোমার (দীনী) ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা যা সে অপছন্দ করে তাই গীবত।
এ বাক্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তোমার ভাই সম্পর্কে তার অসাক্ষাতে কিছু বলার বিষয়টি ব্যাপক। তার শারীরিক কোন বিষয়েও হতে পারে, তার জান-মাল, চরিত্র এমনকি আর্থিক, পারিবারিক, সন্তান-সন্ততি কিংবা পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়েও হতে পারে। আর কারো সম্পর্কে গীবত যে শুধু মুখের ভাষায় হবে এমনটি নয়, কারো লিখনির মাধ্যমে, ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে, চোখ টিপের মাধ্যমে, হাত-মাথা বা অন্য কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমেও হতে পারে। মোটকথা যা দ্বারা অন্যের কাছে তোমার মুসলিম ভাইয়ের ত্রুটি বা তুচ্ছতা তুলে ধরবে এবং সে তা বুঝতে পেরে অপছন্দ করবে সেটাই গীবত, যা সম্পূর্ণরূপে হারাম। অনুরূপ খুড়িয়ে চলা, লাঠি, ভর দিয়ে চলা ইত্যাদি দ্বারা যদি কারো ত্রুটি বুঝানো উদ্দেশ্য হয় তবে সেটাও গীবতের অন্তর্ভুক্ত হবে। কারো মধ্যে কোন দোষ বিদ্যমান থাকলে সেটা অন্যের কাছে বর্ণনা করায় তা গীবত হয়। কিন্তু তার মধ্যে যদি ঐ দোষ না থাকে আর তা অন্যের কাছে প্রকাশ করা হয় তবে সেটা হয় ‘বুহতান’ বা অপবাদ তথা (কারো সম্পর্কে) মহা মিথ্যাচার।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৫৮৯/৭০; ‘আওনুল মাবূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮৬৬; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৩৪)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮২৯-[১৮] ’আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)-কে) বললেনঃ তাকে আসার অনুমতি দাও। সে নিজের গোত্রের খারাপ ব্যক্তি। যখন লোকটি তাঁর দরবারে এসে বসল, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রশস্ত ললাটে তার দিকে তাকালেন এবং মৃদু-হাস্যে তার সাথে কথা বললেন। যখন লোকটি চলে গেল, তখন ’আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি লোকটি সম্পর্কে এমন এমন বলেছেন, অতঃপর আপনিই তার সাথে প্রশস্ত ললাটে সাক্ষাৎ করলেন এবং মৃদু হেসে কথা বললেন। এটা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি আমাকে কখনো অশ্লীলভাষী পেয়েছ? কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে মানুষের মধ্যে মর্যাদার দিক দিয়ে সে-ই নিকৃষ্ট হবে, যাকে মানুষ তার অনিষ্টের ভয়ে ত্যাগ করে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, যাকে মানুষ তার অশ্লীলতার ভয়ে পরিত্যাগ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَجُلًا اسْتَأْذَنَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَقَالَ: «ائْذَنُوا لَهُ فَبِئْسَ أَخُو الْعَشِيرَةِ» فَلَمَّا جَلَسَ تَطَلَّقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي وَجْهِهِ وَانْبَسَطَ إِلَيْهِ. فَلَمَّا انْطَلَقَ الرَّجُلُ قَالَتْ عَائِشَةُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ قُلْتَ لَهُ: كَذَا وَكَذَا ثُمَّ تَطَلَّقْتَ فِي وَجْهِهِ وَانْبَسَطْتَ إِلَيْهِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَتى عهدتني فحاشا؟ ؟ إِن شَرّ النَّاس مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ شَرِّهِ» وَفِي رِوَايَةٍ: «اتِّقَاءَ فُحْشِهِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ যে লোকটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করেছিল তার নাম এখানে উল্লেখ নেই। কেউ বলেছেন, তার নাম ছিল ‘উয়াইনাহ্ আল ফাযারী। আবার কেউ বলেছেন, মাখরামাহ্ ইবনু নাওফাল। লোকটি প্রবেশের সময় তার সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মন্তব্য করলেন- সে গোত্রের কতই না নিকৃষ্ট লোক। সহীহুল বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, সে গোত্রের কতই না নিকৃষ্ট লোক এবং কতই না নিকৃষ্ট লোকের সন্তান। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে এমন কথা বলার কারণ হলো- সে তখনও ইসলাম গ্রহণ করেনি, কিন্তু জনসম্মুখে ভূয়াভাবে ইসলাম প্রকাশ করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অবস্থা প্রকাশের জন্য এমন কথা বলেছেন যাতে কেউ তার কথায় ধোঁকায় না পরে এবং প্রতারিত না হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় দেখা করেন এবং মিষ্টি ও নরম কথা বলেন। এটা ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বভাবজাত অভ্যাস, তিনি শত্রুর সাথেও নরম ও মিষ্টি কথা বলতেন। তাছাড়া ঐ লোকটির অন্তর জয় করাও ছিল একটি উদ্দেশ্য।
শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থকার এ হাদীসের ভিত্তিতে বলেন, ফাসিক ব্যক্তির ভিতরের অসৎ রূপ প্রকাশ করা বৈধ, যাতে জনগণ তার অনিষ্টতা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। এরূপ বলা বা করা গীবতের অন্তর্ভুক্ত হবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অন্তরের লুকায়িত কুফরী প্রকাশ করে স্বীয় নুবুওয়াতী মু‘জিযা প্রকাশ করেছেন, এটা গীবত হবে না।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যে নিজের পাপাচারী এবং বিদ্‘আত প্রকাশ করে বেড়ায় তার গীবত দোষণীয় নয়। এরূপ আটস্থলে গীবত করা বৈধ, বিস্তারিত দেখুন- রিয়াযুস্ সলিহীন, গীবত অধ্যায়।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০৩২; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৮৩; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯৬)
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৩০-[১৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাত ক্ষমাপ্রাপ্তদের মধ্যে আছে; কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের অপরাধ প্রকাশকারী, সে ক্ষমাপ্রাপ্তদের মধ্যে নয়। এটা কতই না লজ্জাহীনতার কাজ যে, লোক রাতে খারাপ কাজ করে, আর আল্লাহ তা’আলা তার কুকর্ম গোপন করে রাখেন। অতঃপর সকাল হতেই লোকেদেরকে বলে ফেলে, হে অমুক! আমি রাতে এরূপ কাজ করেছি। আল্লাহ তা’আলা রাতে তার দোষ ঢেকে ছিলেন, কিন্তু সকাল হতেই সে আল্লাহ তা’আলার পর্দা উন্মুক্ত করে দিলো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
এ প্রসঙ্গে আবূ হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস مَنْ كَانَ يُؤمِنُ بِاللهِ الخ যিয়াফাত অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।
بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى إِلَّا الْمُجَاهِرُونَ وَإِنَّ مِنَ الْمَجَانَةِ أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ عَمَلًا بِاللَّيْلِ ثُمَّ يُصْبِحَ وَقَدْ سَتَرَهُ اللَّهُ. فَيَقُولَ: يَا فُلَانُ عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللَّهِ عَنْهُ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
وَذكر فِي حَدِيث أبي هُرَيْرَة: «من كَانَ يُؤمن بِاللَّه» فِي «بَاب الضِّيَافَة»
ব্যাখ্যাঃ অনেক মানুষ এমন রয়েছে, যে রাতের অন্ধকারে গোপনে পাপ করে, তার এ পাপের কথা কেউ জানে না, আল্লাহ তা‘আলা তার পাপকে গোপন করে রাখেন, কিন্তু সে আল্লাহর সেই গোপনীয়তার পর্দা উন্মোচন করে দিয়ে দিনের বেলা নিজের গোপন পাপের কথা মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেয়। আল্লাহ এ কাজে ভীষণ অসন্তুষ্ট হন এবং তিনি আর তাকে ক্ষমা করেন না। গোপনীয় পাপ প্রকাশ না করলে কোন না কোনভাবে তা মাফ হয়ে যায়। হয়তো সে নিজেই অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করে ক্ষমা প্রার্থনা করে, ফলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন, অথবা তিনি অন্য কোন নেক ‘আমল করেন যার কারণে তার ঐ গোপন পাপ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যখন সে তা মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেয়ার ধৃষ্টতা দেখান তখন আল্লাহ তার ক্ষমার পথ বন্ধ করে দেন। কারণ এটা এক প্রকার অহংকার ও সীমালঙ্ঘন, আল্লাহ অহংকারী এবং সীমালঙ্ঘনকারীকে ভালোবাসেন না।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০৬৯; শারহুন নাবাবী ১৮শ খন্ড, হাঃ ২৯৯০/৫২)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৩১-[২০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা পরিত্যাগ করবে, অথচ মিথ্যা হলো প্রকৃতই বাতিল, তার জন্য জান্নাতের এক প্রান্তে একটি প্রাসাদ তৈরি করা হবে। যে ব্যক্তি ঝগড়াঝাটি পরিত্যাগ করবে অথচ ন্যায়ত সে ঝগড়ার হকদার, তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। আর যে ব্যক্তি নিজের চরিত্রকে উত্তম করবে, তার জন্য জান্নাতের উঁচু এলাকায় একটি প্রাসাদ বানানো হবে। (তিরমিযী। ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান। শারহুস্ সুন্নাহ্য়ও হাসান বলা হয়েছে; কিন্তু মাসাবীহ গ্রন্থকার বলেনঃ হাদীসটি গরীব।)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘সালামাহ্ ইবনু ওয়ারদান’’ নামের বর্ণনাকারী, সে য‘ঈফ। সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১০৫৬।
عَنْ أَنَسٍ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «من تَرَكَ الْكَذِبَ وَهُوَ بَاطِلٌ بُنِيَ لَهُ فِي ربض الْجنَّة وَمن ترك المراء وَهُوَ مُحِقٌّ بُنِيَ لَهُ فِي وَسَطِ الْجَنَّةِ وَمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ بُنِيَ لَهُ فِي أَعْلَاهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ. وَكَذَا فِي شَرْحِ السُّنَّةِ وَفِي الْمَصَابِيحِ قَالَ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যাঃ মিথ্যা সর্বদাই পরিহারযোগ্য। সুতরাং এটাকে সাধারণভাবে নেয়াই উচিত। তবে ক্ষেত্রবিশেষ তার বৈধতা সার্বজনীন আলোচনার বিষয় নয়। হাদীসের বাণী, (وَهُوَ بَاطِلٌ) বাক্যটি শর্ত এবং জাযার মাঝে জুমলায়ে মু‘তারাযা বা বিছিন্ন বাক্য। এর মূল প্রতিপাদ্য কথা হলো তা (মিথ্যা) বাতিল। অথবা বাক্যটি জুমলায়ে হালিয়া হয়েছে অর্থাৎ হাল বা অবস্থা হলো এই যে, মিথ্যা বাতিল এতে কোন কল্যাণ নেই (মাত্র তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত)। এই হাল কর্তা এবং কর্ম বা فاعل কিংবা مَفْعُولٍ যে কোন বাক্যটি থেকে হতে পারে।
(ربض الْجنَّة) হলো জান্নাতের অভ্যন্তরের পার্শ্বস্থল। মিথ্যা পরিহারকারীর জন্য জান্নাতের পার্শদেশে বিশেষ একটি মহল তৈরি করা হবে। ‘আরবীতে المراء শব্দের অর্থ الجدال, ঝগড়ায় সর্বদা যে ন্যায় কথা বলা সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করে চলে তার জন্য জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি বিশেষ প্রাসাদ বা মহল তৈরি করে দেয়া হবে। চরিত্র সুন্দর করার অর্থ হলো মিথ্যা বলা থেকে, ঝগড়া থেকে এবং যাবতীয় খারাপ চারিত্রিক অসৎ গুণাবলী থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে সৎকর্ম দ্বারা স্বীয় চরিত্রকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা, এর জন্য জান্নাতের উচ্চশৃঙ্গে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। এই উচ্চশৃঙ্গ ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য কিংবা অর্থগত দিক থেকেও হতে পারে। এ হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, চরিত্র মানুষের উপার্জিত তথা নিজ হাতে গড়া বস্তু, যদিও তাতে প্রকৃতি বা স্বভাবজাত প্রভাব রয়েছে। সহীহ হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা দু‘আ করেছেন, اَللّٰهُمَّ حَسِّنْ خُلُقِي كَمَا حَسَّنْتَ خَلْقِي ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার দেহ অবয়বকে যেভাবে সুন্দর করেছ অনুরূপভাবে আমার চরিত্রকেও সুন্দর করে দাও।’’
সহীহ মুসলিম-এর এক বর্ণনায় এভাবে দু‘আ এসেছে : اَللّٰهُمَّ اهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أَنْتَ ‘‘হে আল্লাহ! আমাকে চরিত্র সুন্দর করার পথ দেখাও, চরিত্র সুন্দর করার পথ তুমি ছাড়া আর কেউই দেখাতে পারে না।’’
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযালী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ المراء হলো মানুষের কথা এড়িয়ে চলা, এতে প্রকাশ্যে ত্রুটি থাক বা আভ্যন্তরীণ ত্রুটি থাক, শাব্দিক ত্রুটি থাক বা আত্মিক ত্রুটি থাক অথবা বক্তার ইচ্ছাগত ত্রুটিই থাক না কেন। তুমি যে কথাই শুনবে তা হয় হক হবে আর না হয় নাহক বা বাতিল। যদি হক হয় তাহলে তুমি তার সত্যায়ন কর আর যদি বাতিল হয় আর সেটা যদি দীন সংক্রান্ত না হয় তাহলে তা থেকে তুমি নিরবতা অবলম্বন কর। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯৩)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৩২-[২১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো, মানুষকে কোন্ জিনিস সবচেয়ে বেশি জান্নাতের প্রবেশ করাবে? সেটা হলো, আল্লাহভীতি ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জানো, মানুষকে কোন্ জিনিস সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করাবে? সেটা হলো, দু’টো গহ্বর; একটি মুখ, অপরটি জননেন্দ্রিয়। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
وعنن أَبِي
هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتُدْرُونَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ؟ تَقْوَى اللَّهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ. أَتُدْرُونَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ؟ الْأَجْوَفَانِ: الْفَمُ وَالْفَرْجُ رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যাঃ কোন্ জিনিস মানুষকে অধিক হারে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? এর অর্থ হলো কোন্ বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষকে সফলকামী মানুষের সাথে জান্নাতের অধিকারী করবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই তার উত্তর দেন। জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো : আল্লাহভীতি। আল্লাহভীতির ন্যূনতম পন্থা হলো উত্তম চিন্তা। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো উত্তম চরিত্র বা উত্তম আচরণ। প্রতিটি সৃষ্টিজীবের সাথে উত্তম আচরণ করা। সৎ চরিত্র এবং উত্তম আচরণের ন্যূনতম পন্থা হলো তাদের কষ্ট দান থেকে বিরত থাকা, আর সর্বোচ্চ পর্যায় হলো যে কষ্ট দেয় তার সাথে ভালো আচরণ করা এবং তার প্রতি ইহসান করা।
এখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নাকারে কথা উপস্থাপনা করার উদ্দেশ্য হলো এ কথার প্রভাব যেন ভালোভাবে মানুষের হৃদয়ে বসে যায়।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপভাবেই প্রশ্নাকারে উত্থাপন করেছেন যে, কোন বস্তু মানুষকে অধিকহারে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে। এখানেও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই তার উত্তরে বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দু’টি গহ্বর অর্থাৎ মানব দেহের দু‘টি গহবর যা মানুষকে অধিকারে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে।
মানবদেহের এ গহ্বর দু’টি হলো মুখ এবং যৌনাঙ্গ। কেননা মানুষ অধিকাংশ সময় এ দু’টির কারণে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হয়ে থাকে এবং তার পরিণামে সে জাহান্নামের অধিকারী হয়ে যায়।
‘আল্লামা ত্বীবী (تَقْوَى اللهِ) ‘আল্লাহভীতি’ এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেনঃ এ বাক্যটি আল্লাহর আদেশ পালনের মাধ্যমে এবং নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে উত্তম মুআমলাহর দিকে ইশারা করছে। অনুরূপ (حُسْنُ الْخُلُقِ) ‘হুসনু খুলুক’ দ্বারা সকল সৃষ্টিজীবের প্রতি উত্তম আচরণের দিকে ইশারা করছে। এ দু’টি উত্তম বৈশিষ্ট্যই মানুষকে জান্নাতের অধিকারী করে থাকে। এর বিপরীতে জাহান্নাম। আল্লাহ তা‘আলা মুখ এবং যৌনাঙ্গকে তার মোকাবেলায় তৈরি করেছেন। জিহ্বাকে মুখের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। শারী‘আতের সকল নির্দেশিত কাজে তার হিফাযাত যেমন জরুরী তেমনি সকল হালাল খাদ্য খাওয়াও তাকওয়ার শীর্ষস্তর।
অনুরূপ যৌনাঙ্গের হিফাযাতও দ্বীনের সবচেয়ে বড় মর্যাদাপূর্ণ একটি স্তর। আল্লাহ মু’মিনদের নিদর্শন ও গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ ‘‘আর যারা তাদের যৌনাঙ্গের হিফাযাতকারী’’- (সূরাহ্ আল মু’মিন ৪০ : ০৫)। শাহ্ওয়াত বা প্রবৃত্তির তাড়নার প্রাধান্যকালে যিনার সকল উপকরণ ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে বিরত রাখা সিদ্দীক্বীনদের দরজায় পৌঁছার শামিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০০৪)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৩৩-[২২] বিলাল ইবনু হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ মুখ দিয়ে ভালো কথা বলে; কিন্তু সে এর মর্যাদা জানে না। আল্লাহ তা’আলা তার জন্য তাঁর সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করেন, যাবৎ না সে আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ করে। অপরদিকে মানুষ মুখ দিয়ে মন্দ কথা বলে; কিন্তু সে জানে না তার পরিণাম কী। আল্লাহ তা’আলা এ কারণে তার ওপর নিজের ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করতে থাকেন, যতক্ষণ না সে আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ করে। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
ইমাম মালিক, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ (রহিমাহুল্লাহ) অনুরূপ অর্থে বর্ণনা করেছেন।
وَعَن بلالِ
بن الحارثِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنَ الْخَيْرِ مَا يَعْلَمُ مَبْلَغَهَا يَكْتُبُ اللَّهُ لَهُ بِهَا رِضْوَانَهُ إِلَى يَوْمِ يَلْقَاهُ. وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنَ الشَّرِّ مَا يَعْلَمُ مَبْلَغَهَا يَكْتُبُ اللَّهُ بِهَا عَلَيْهِ سَخَطَهُ إِلَى يَوْمِ يَلْقَاهُ» . رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ
وَرَوَى مَالِكٌ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه نَحوه
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসের ব্যাখ্যা অনেকাংশে ৪৮১৩ নং হাদীসের ব্যাখ্যানুরূপ। মানুষ অনেক সময় মুখে এমন কথা উচ্চারণ করে যা খুবই কল্যাণকর কথা এবং আল্লাহর কাছে অতীব পছন্দনীয় বাক্য। কিন্তু সে জানে না আল্লাহ তার ঐ কথার কি মূল্য ও মর্যাদা। উচ্চারণকারী তাকে ক্ষীণ বা ছোট করেই দেখেছে, কিন্তু আল্লাহর নিকট ঐ কথার সাওয়াব তার জন্য দীর্ঘায়িত করে দেন এবং আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাত পর্যন্ত স্বীয় সন্তষ্টি তার জন্য অবধারিত করে নেন।
পক্ষান্তরে আল্লাহর অতীব অপছন্দনীয় এবং অসন্তুষ্টির কিছু কথা রয়েছে, যা তার বান্দা উচ্চারণ করে থাকে। উচ্চারণকারী সে নিজেও জানে না যে ঐ কথা আল্লাহর কত অপ্রিয় এবং অনিষ্টকর, ফলে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তার ওপর অসন্তুষ্টির সিদ্ধান্ত লিখে নেন।
আল্লাহর সাথে সাক্ষাত পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি সন্তষ্টি লিখে নেন, এর অর্থ হলো আল্লাহ তা‘আলা তাকে নেক কাজের তাওফীক দান করেন, আর কল্যাণকর কাজে তিনি অগ্রণী হয়ে যান, ফলে তিনি জীবদ্দশায় প্রশংসনীয় জীবন পান এবং মৃত্যুর পর বারযাখী জীবনে কবরের ‘আযাব থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে থাকেন। তার কবর হয়ে যায় প্রশস্ত এবং আরামদায়ক। তাকে বলা হয় তুমি নব দুলহার ন্যায় ঘুমাও, যাকে পরিবারের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি ছাড়া কেউ জাগাতে সাহস করে না। কিয়ামতের দিন সে নেককার সৌভাগ্যশীলদের সাথে উঠবে ফলে আল্লাহ তাকে তার ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন। এরপর তাকে চিরস্থায়ী নি‘আমাতের ঘর জান্নাতে স্থান দিবেন, অতঃপর মহান আল্লাহর দীদারে তাকে ধন্য করবেন। এর বিপরীতটাও অনুরূপ, অর্থাৎ খারাপ কথার খারাপ প্রতিদান সে পাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৩১৯)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৩৪-[২৩] বাহয ইবনু হাকীম (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন, তিনি (দাদা) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ধ্বংস তাদের জন্য, যারা কথা বলে আর জনতাকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে। তার ওপর ধ্বংস, তার ওপর ধ্বংস। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও দারিমী)[1]
وَعَنْ بَهْزِ
بْنِ حَكِيمٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جده قا ل: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَيْلٌ لِمَنْ يُحَدِّثُ فَيَكْذِبُ لِيُضْحِكَ بِهِ الْقَوْمَ وَيْلٌ لَهُ وَيْلٌ لَهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد والدارمي
ব্যাখ্যাঃ আরবীতে (وَيْلٌ) শব্দের অর্থ হলো هَلَاكٌ عَظِيمٌ মহাধ্বংস অথবা (وَيْلٌ) হলো وَادٍ عَمِيقٌ فِي جَهَنَّمَ জাহান্নামের ভিতরের গভীর একটি গর্ত।
মিথ্যা বলা সর্বাস্থায় নিষিদ্ধ, তা হাস্য রসিকতারচ্ছলে হলেও নিষিদ্ধ এবং পাপ। কেউ কাউকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বললেও তার পরিণতি কি? তাই অত্র হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য কথা সত্য হলে তা দ্বারা মানুষ হাসানো এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয় এবং সে এ ধ্বংসের অন্তর্ভুক্ত হবে না। যেমন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সময় তার স্ত্রীদের কারো ওপর রাগ করলে ‘উমার (রাঃ) তখন কোন হাসানো (সত্য কথা) বলে তাকে হাসাতেন। এ অবস্থা ঘটনাক্রমে হলে অথবা কখনো কখনো হলে তবে তা নিষিদ্ধ নয় কিন্তু হাস্যরসিকতা কেউ যদি পেশা বানিয়ে নেয় এবং সর্বদাই এতে লিপ্ত থাকে তাহলে তার জন্য হাদীসে বর্ণিত ধ্বংস অবধারিত।
(وَيْلٌ) শব্দটি একাধিকবার উল্লেখ করা হয়েছে তাকীদ হিসেবে অথবা প্রথমটি বারযাখ বা কবরের জীবনে, দ্বিতীয়টি হাশরে এবং তৃতীয়টি জাহান্নামে।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৩১৫; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৮২)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৩৫-[২৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা একটি কথা বলে এজন্য যে, সে এটা দ্বারা লোক হাসাবে। সে এ কথার দরুন জাহান্নামের মধ্যে এত দূরে নিক্ষিপ্ত হবে যা আকাশমণ্ডলী ও জমিনের দূরত্বের সমান। বান্দার পা পিছলানোর তুলনায় মুখ পিছলানো ভয়ানক ক্ষতিকর। (বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন।)[1]
وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْعَبْدَ لَيَقُولُ الْكَلِمَةَ لَا يَقُولُهَا إِلَّا لِيُضْحِكَ بِهِ النَّاسَ يَهْوِي بِهَا أَبْعَدَ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَإِنَّهُ لَيَزِلُّ عَنْ لِسَانِهِ أَشَدَّ مِمَّا يَزِلُّ عَنْ قَدَمِهِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
(لم تتمّ دراسته)
ব্যাখ্যাঃ ‘‘বান্দা একটি কথা বলে’’ এ বাক্যে ‘কথা’ বলতে মিথ্যা কথা উদ্দেশ্য, অর্থাৎ মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা অথবা অশ্লীল কিংবা অনর্থক কথা বলে থাকে। এ কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে এবং সে জাহান্নামের এত গভীর পতিত হবে যে, তার গভীরতা আকাশ পাতালের দূরত্বের সমান হবে। কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ হলো ঐ মিথ্যা অথবা অনর্থক অশ্লীল হাসানো কথার কারণে সে আল্লাহর রহমত ও কল্যাণ থেকে আকাশমণ্ডলী এবং জমিনের দূরত্ব সমান দূরে সরে পড়বে।
মিথ্যা কথা বলা অথবা অন্য কোন গীবত পরনিন্দা ইত্যাদির ক্ষতি দৈহিক ক্ষতির চেয়ে অধিক ভয়ানক। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; জামি‘উস সগীর হাঃ ২০৬১)
কবি বলেন, ‘‘তীর দ্বারা আঘাতের ক্ষত এক সময় শুকে যায় কিন্তু জিহ্বার ক্ষত কখনো শুকায় না।’’
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৩৬-[২৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিশ্চুপ রইল, সে মুক্তি পেলো। (আহমাদ, তিরমিযী, দারিমী ও বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন)[1]
وَعَنْ عَبْدِ
اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من صَمَتَ نَجَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যাঃ ‘‘যে বিরত থাকলো সে মুক্তি পেল’’ এর অর্থ হলো, যে অশ্লীল ও মিথ্যা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকলো সে তার পাপ ও শাস্তি থেকে মুক্তি পেল।
ইমাম রাগিব ইস্পাহানী (রহিমাহুল্লাহ) [শব্দ বিজ্ঞানী] বলেনঃ الصَّمْتُ ‘চুপ থাকা’ শব্দটি السُّكُوتِ ‘চুপ থাকা’ বা নীরব থাকা শব্দ হতে অধিক পূর্ণতা প্রকাশকারী শব্দ। কেননা الصَّمْتُ শব্দটি বাকশক্তিসম্পন্ন সত্তা এবং বাকশক্তিহীন সত্ত্বা উভয়ের ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়ে থাকে, পক্ষান্তরে السُّكُوتِ শব্দটি কেবলমাত্র বাকশক্তি সম্পন্ন সত্তার ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়ে থাকে।
ইমাম গাযালী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথাটি مِنْ فَصْلِ الْخِطَابِ وَجَوَامِعِ الْكَلِمِ وَجَوَاهِرِ الْحِكَمِ এর অন্তর্ভুক্ত, কোন ব্যক্তিই এর অর্থ করে শেষ করতে পারবে না। বহুবিধ অর্থ সমৃদ্ধ বাক্যটির অর্থ অনুসন্ধানে সর্বকালের ‘আলিমগণই শ্রম সাধনা ব্যয় করে চলছেন।
মানুষের জিহ্বার স্খলনজনিত বিপদ অত্যন্ত বড় এবং তার অনিষ্টতা খুব বেশী। কেননা মিথ্যা, গীবত, অপবাদ, অশ্লীল কথা ইত্যাদি মুখ থেকে অবলীলাক্রমে অনায়াসেই বেড়িয়ে পড়ে এবং অন্তরও এতে অগ্রণী হয়, না এগুলোতে কোন বেগ পোহাতে হয় না। আর অন্তর তার একটি মিষ্টতাও অনুভব করে থাকে, অপরদিকে প্রবৃত্তি এবং শয়তানের সহযোগিতা থাকে পুরোদমে। সুতরাং কথা বলাই ঝুঁকিপূর্ণ এবং চুপ থাকাই নিরাপদ।
মানুষের প্রতিটি কথাই রেকর্ড করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ
‘‘মানুষ যে কোন কথাই বলুক না কেন, তা লিপিবদ্ধ করার জন্যে তৎপর প্রহরী (ফেরেশতা) তার নিকটই রয়েছে।’’ (সূরাহ্ কাফ ৫০ : ১৮)
এ আয়াত দ্বারা চুপ থাকার নির্দেশ পাওয়া যায়। মানুষের কথা চার প্রকার, তন্মধ্যে এক প্রকার কথায় শুধু ক্ষতিই বিদ্যমান। দ্বিতীয় এক প্রকারের মধ্যে রয়েছে উপকার, তৃতীয় প্রকার লাভ ক্ষতি মিলে আর চতুর্থ প্রকার যার মধ্যে কোন লাভও নেই কোন ক্ষতিও নেই। যে কথায় শুধু ক্ষতিই তা থেকে নীরব থাক আবশ্যক। অনুরূপ লাভন্ডক্ষতি উভয়টি যেখানে বিদ্যমান, সে কথা থেকেও নীরব থাকা আবশ্যক। আর যে কথায় কোন লাভন্ডক্ষতি কিছুই নেই, নিঃসন্দেহে তা অহেতুক বা বেহুদা কথা, তা বলা সময় অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়, সুতরাং তাও ক্ষতিকর। চতুর্থ আরেকটি প্রকার যাতেও রয়েছে ক্ষতির আশংকা। অতএব চুপ থাকা নিঃসন্দেহে নিরাপদ ও বাঁচার পথ।
মানুষের জিহ্বার অনিষ্টতা সীমাহীন, নিরবতাই তা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৫০১)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৩৭-[২৬] ’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞেস করলামঃ (হে আল্লাহর রসূল!) মুক্তির উপায় কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি নিজের জিহ্বাকে আয়ত্তে রাখো, নিজের ঘরে পড়ে থাকো এবং নিজের পাপের জন্য ক্রন্দন করো। (আহমাদ ও তিরমিযী)[1]
وَعَن عُقْبةَ
بن عامرٍ قَالَ: لَقِيتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: مَا النَّجَاةُ؟ فَقَالَ: «أَمْلِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلَى خَطِيئَتِكَ» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ ‘‘লোকটি প্রশ্ন করেছিল, মুক্তি কিসে বা মুক্তির উপায় কি?’’ অর্থাৎ কোন কাজ করলে আল্লাহর ‘আযাব এবং অসন্তুষ্টি থেকে মুক্তির পাওয়া যাবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমার জন্য যে কথায় কোন কল্যাণ নেই সে কথা থেকে বিরত থাক। তোমার জিহ্বার উপর তোমার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা কর।’
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জওয়াবটি ছিল একটি বিজ্ঞচিত রীতিতে। লোকটি প্রশ্ন করেছিল মুক্তির হাকীকাত সম্পর্কে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মুক্তির কারণ বলে দিলেন। কেননা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আরো বললেন, তোমার ঘরকে তোমার জন্য প্রশস্ত কর। এর অর্থ হলো তুমি তোমার ঘরেই অবস্থান কর। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ো না এবং সর্বদা ঘরে অবস্থানে বিরক্ত হয়ো না, বরং এটাকে নিজের জন্য গনীমাত মনে কর। কেননা সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক নানা অনিষ্টতা এবং ফিৎনাহ্ থেকে মুক্তি বা বেঁচে থাকার এটাই প্রকৃষ্ট পন্থা। বলা হয়ে থাকে ‘‘নীরব থাকার জন্য ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান আবশ্যক।’’
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে অতীতের গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে কান্না-কাটি করে ক্ষমা প্রার্থনার পরামর্শ দিলেন। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘কান্না’ শব্দের মধ্যে রয়েছে লজ্জিত হওয়া এবং অনুশোচনা প্রকাশ করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৪০৬)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৩৮-[২৭] আবূ সাঈদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি বলে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তান সকালে ঘুম থেকে উঠলে, তার সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিহ্বার কাছে অনুনয়-বিনয় করে বলে, আমাদের ব্যাপারে তুমি আল্লাহকে ভয় করো। কেননা আমরা তোমার সাথে জড়িত। তুমি ঠিক থাকলে আমরাও ঠিক থাকব, আর তুমি বাঁকা পথ অনুসরণ করলে আমরাও বাঁকা পথ অনুসরণ করব। (তিরমিযী)[1]
وَعَن أبي
سعيدٍ رَفَعَهُ قَالَ: إِذَا أَصْبَحَ ابْنُ آدَمَ فَإِنَّ الْأَعْضَاءَكُلَّهَا تُكَفِّرُ اللِّسَانَ فَتَقُولُ: اتَّقِ اللَّهَ فِينَا فَإنَّا نَحْنُ بِكَ فَإِنِ اسْتَقَمْتَ اسْتَقَمْنَا وَإِنِ اعْوَجَجْتَ اعوَججْنا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ সকাল বা প্রভাতকাল হলো সফলতার দরজার চাবি। মানুষের জিহ্বার (ভাষার) আপদ হলো সমাজের সাথে মেলামেশা, লেনদেন সংক্রান্ত কথাবার্তা, আর এই কার্যক্রম শুরু হয় সকাল তথা প্রভাতকাল থেকেই কাজের মধ্যে ইচ্ছা-অনিচ্ছা নানাভাবেই তা থেকে অনুষ্ঠিত হয় মিথ্যা, প্রতারণা, গীবত, অশ্লীল কথা-বার্তা ইত্যাদি। যা তাকে প্রকৃত মুত্তাক্বী হওয়াতে বাধা প্রদান করে থাকে।
মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিনয়ের সাথে অনুগত হয়ে জিহ্বার কাছে জিজ্ঞেস করে (বলে), ওহে জিহ্বা! আমাদের হক বিষয়ে তুমি আল্লাহকে ভয় কর, আমরা তো তোমার অনুগত-অনুগামী এবং তোমার সাথে সংশ্লিষ্ট। তুমি যদি সঠিক পথে চল তাহলে আমরা সঠিক পথে চলতে পারব, আর তুমি যদি হাকের উপর অটল-অবিচল থাকতে না পার এবং বক্রপথে চল তাহলে আমরাও হাকের উপর থাকতে সক্ষম হব না বরং বক্র পথে পরিচালিত হব।
অত্র হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, মানুষের মুখ নিয়ন্ত্রণ থাকলেই সকল পাপ থেকে বাঁচা যায়। কিন্তু অন্য আরেকটি প্রসিদ্ধ হাদীসে রয়েছে, ‘মানব দেহে’ একটি গোশত টুকরা আছে যদি সেটি ভালো থাকে তাহলে সারা দেহই ভালো থাকে আর যদি সেটি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সারা দেহই নষ্ট হয়ে যায়, সেটি হলো কাল্ব (অন্তর)।’
এ দুই হাদীসের বাহ্যিক বিরোধের প্রেক্ষিতে ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ জিহ্বা হলো কাল্ব বা অন্তরের মুখপত্র এবং বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতিনিধি।
অর্থাৎ মানুষের কাল্বই তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভালো-মন্দের মূল উৎস। জিহ্বা বা ভাষা হলো তার ঘোষক বা প্রকাশক মাত্র। তার দিকে এ সম্পর্ক রূপকার্থে করা হয়েছে।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৪০৭)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৩৯-[২৮] ’আলী ইবনু হুসায়ন (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য এই যে, সে অনর্থক কথা ও কাজ পরিত্যাগ করবে। (মালিক ও আহমাদ)[1]
وَعَنْ
عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ» . رَوَاهُ مَالك وَأحمد
ব্যাখ্যাঃ একজন মুসলিমের ঈমান এবং ইসলামের পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের সামগ্রিক রূপ হলো- সকল প্রকার অনর্থক অহেতুক কথাবার্তা এবং কর্ম বর্জন করা। সে আল্লাহর সকল নির্দেশের কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। অনুরূপ সে সকল নিষেধাজ্ঞা থেকে সর্বদার জন্য দূরে থাকবে। হাদীসে উল্লেখিত تَرْكُهٗ مَا لَا يَعْنِيهِ এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘আল্লামা গাযালী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যেক্ষেত্রে তুমি নীরব থাকলে তোমার জীবন এবং সম্পদের কোন ক্ষতি হয় না, সেগুলোও বর্জন করে চলা। যেমন তুমি কোন বৈঠকে তোমার কোন সফরের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তোমার দেখা নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, খানা-পিনা এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিদ্বানদের নানা ঘটনা প্রবাহ বর্ণনা করছ। তুমি যখন এগুলো বর্ণনা করবে তখন তাতে থাকবে অতিরঞ্জন, বাড়াবাড়ী, গীবত-নিন্দা ইত্যাদি।
সর্বোপরি ঐ সময়টুকু তুমি তো আল্লাহর জিকর থেকে বিরত থাকলে, যা ছিল তোমার জন্য কল্যাণকর।
হাদীসে উল্লেখ আছে, জান্নাতীগণ দুনিয়ায় আল্লাহর জিকরবিহীন যে সময় কাটিয়েছে তার জন্য যেরূপ আফসোস করবে এরূপ আফসোস আর অন্য কিছুর জন্যই করবে না। সুতরাং কোন কথা না বলে চুপ থাকাই নিরাপদ। এটা ঈমানের হিফাযাত এবং তাকওয়া। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৩১৭)
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮৪০-[২৯] ইমাম ইবনু মাজাহ (রহিমাহুল্লাহ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।
وَرَوَاهُ
ابْن مَاجَه عَن أبي هُرَيْرَة