শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) এর কিছু মূল্যবান বাণী
১. ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
❝আল্লাহ্র একটি সুন্নাহ (নিয়ম) হলো—যখন তিনি তাঁর দীনকে বিজয়ী করতে চান, তখন তিনি এমন কাউকে দাঁড় করান, যে তার বিরোধিতা করে। অতঃপর তিনি তাঁর কালেমার মাধ্যমে হককে প্রকাশ করেন এবং তিনি বাতিলের উপর হককে ছুড়ে মারেন, ফলে তা (বাতিল) গুঁড়িয়ে যায়।❞
(মাজমূ‘ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৮, পৃঃ ৫৭)
২. ইবনুল কাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:
❝দুনিয়াতেই একটি জান্নাত আছে, যে এতে প্রবেশ করেনি, সে আখিরাতের জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না।❞
(মাদারিজুস সালিকীন, খণ্ড ১, পৃঃ ৪৫২)
৩. ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
❝ধৈর্য ও দৃঢ়-ঈমানের মাধ্যমেই দীনের নেতৃত্ব অর্জিত হয়।❞ আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আর আমি তাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে নেতা বানিয়েছিলাম, যারা আমাদের আদেশে পথ দেখাতো—যখন তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল এবং আমাদের আয়াতসমূহে দৃঢ়-ঈমান রাখত।”
[সূরা আস-সাজদা: ২৪]
(মাজমূ‘ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৩, পৃঃ ৩৫৮)
৪. ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
❝যেমন দেহ রোগে আক্রান্ত হলে খাদ্যের স্বাদ পায় না, তেমনি দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা থাকলে অন্তর আল্লাহর যিক্রের স্বাদ পায় না।❞
(মাজমূ‘ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৯, পৃঃ ৩১২)
৫. ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
❝আমার শত্রুরা আমার সঙ্গে কী করতে পারবে? আমার জান্নাত ও বাগান তো আমার বুকে। আমি যেখানেই যাই, তা আমার সঙ্গেই থাকে—তাতে কোনো বিচ্ছেদ ঘটে না। আমাকে বন্দি করলে তা আমার একান্ত নির্জনতা, আমাকে হত্যা করলে তা শহীদি, আর আমাকে দেশছাড়া করলে তা আল্লাহর পথে সফর।❞
(আল-ওয়াবিলুস সাইয়্যিব, ইবনুল কাইয়্যিম, পৃঃ ৪২)
৬. ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
❝যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ইসতিখারাহ করে, মানুষদের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং নিজের কাজে স্থির থাকে—সে কখনো অনুতপ্ত হয় না।❞
(আল-ওয়াবিলুস সাইয়্যিব, পৃঃ ১১২)
৭. ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
❝‘إيّاك نعبد’ — এই বাক্য রিয়া (লোক দেখানো) থেকে বাঁচায়, আর
‘وإيّاك نستعين’ — এই বাক্য অহংকার থেকে বাঁচায়।❞
(মাদারিজুস সালিকীন, খণ্ড ১, পৃঃ ৭৮)
৮. ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
❝যে চিরন্তন সুখ চায়, সে যেন দাসত্বের দরজায় লেগে থাকে।❞
(মাদারিজুস সালিকীন, খণ্ড ১, পৃঃ ৪২৯)
৯. ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
❝প্রশংসনীয় ভয় হলো—যা তোমাকে আল্লাহর হারাম কাজ থেকে বিরত রাখে।❞
(মাদারিজুস সালিকীন, খণ্ড ১, পৃঃ ৫১১)
১০. ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
❝আলেম ও আরেফ ব্যক্তি কারও ওপর নিজের কোনো অধিকার মনে করে না এবং অন্যের ওপর নিজের কোনো মর্যাদাও দেখায় না। এজন্য সে কাউকে দোষারোপ করে না, দাবি করে না, কিংবা ঝগড়াও করে না।❞
(মাদারিজুস সালিকীন, খণ্ড ১, পৃঃ ৫১৯)
১১. ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
❝যা আখিরাতে কোনো উপকারে আসবে না, তা বর্জন করাই হলো ‘যুহদ’ (সংসার বিমুখতা);
আর যা আখিরাতে ক্ষতি ডেকে আনতে পারে বলে ভয় হয়, তা বর্জন করাই হলো ‘ওয়ারা‘’ (সতর্কতা)।❞
(মাদারিজুস সালিকীন, খণ্ড ২, পৃঃ ১২)
১২. ইবন তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
❝সত্যিকার সম্মান (কারামাত)-এর চূড়ান্ত পরিণতি হলো — দীনের উপর সুদৃঢ় থাকা (ইস্তিকামা)।❞
(মাজমূ‘ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১১, পৃঃ ২৯৮)
১৩. ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
❝অহংকার শির্কের চেয়েও খারাপ, কারণ অহংকারী ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করতেই অস্বীকৃতি জানায়, অথচ মুশরিক ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকেও ইবাদত করে।❞
(মাদারিজুস সালিকীন, খণ্ড ২, পৃঃ ৩১৬)
১৪. ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
❝যে দলীল থেকে সরে যায়, সে পথ হারিয়ে ফেলে। আর প্রকৃত দলীল কেবলই তা—যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এনেছেন।❞
(মিফতাহু দারিস্-সা‘আদাহ, খণ্ড ১, পৃঃ ৮৩)
১৫. ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
❝জীবনের বিপদ ও পরীক্ষাগুলো গরম-ঠাণ্ডার মতোই। যদি বান্দা বুঝে যায় যে এগুলো আসবেই, তাহলে সে সেগুলোর কারণে রাগান্বিত হয় না, হতাশ হয় না, এবং দুঃখিতও হয় না।❞
(মাদারিজুস সালিকীন, খণ্ড ৩, পৃঃ ৩৬১)
ইমাম তিরমিযী রহিমাহুল্লাহ্ বলেছেন
যুবকের উত্তমতা হচ্ছে জ্ঞান-চর্চায়;
প্রৌঢ় ব্যক্তির উত্তমতা হচ্ছে মসজিদে;
নারীর উত্তমতা হচ্ছে ঘরে অবস্থানে;
আর কষ্ট দানকারীর জন্য উত্তমতা হচ্ছে কারাগারে।
[আস-সিয়ার ১৩/৪৪১]
এটি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য উত্তম অবস্থান ও চরিত্র কেমন হওয়া উচিত — সে বিষয়ে এক গভীর দিকনির্দেশনা।
ইমাম সুফিয়ান ইবন সাঈদ আস সাওরী (রহিমাহুল্লাহ) এর কিছু উপদেশের মধ্যে রয়েছে:
- “তুমি সর্ব অবস্থায় সত্যবাদিতাকে আঁকড়ে ধরো, মিথ্যা ও বিশ্বাসঘাতকতা এবং যারা এগুলোর সঙ্গী—তাদের সঙ্গ থেকে বেঁচে চলো।
- হে আমার ভাই! কথায় ও কাজে রিয়াকারের (দেখানোর) পথ অবলম্বন কোরো না, কেননা এটি প্রকৃত শির্ক। অহংকার থেকেও বেঁচে চলো, কেননা যে আমলে অহংকার থাকে, সে সৎকর্ম আল্লাহর দিকে উঠে না।
- তোমার দীন কেবল সেই ব্যক্তির কাছ থেকেই গ্রহণ করো, যে তার দীনের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকে (নিজেকে পাক্কা ঈমানদার দাবী না করে আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে)। আর তোমার সঙ্গী হোক সেই ব্যক্তি, যে তোমাকে দুনিয়া থেকে বিমুখ করে আর আখিরাতের প্রতি উৎসাহিত করে।
- দুনিয়াবাজ লোকদের সাথে বসো না, যারা দুনিয়ার কথাবার্তায় মশগুল থাকে; কেননা তারা তোমার দীন ও হৃদয়কে নষ্ট করে দেয়। মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করো, আর অতীতে হয়ে যাওয়া গোনাহ থেকে বেশি বেশি ইস্তিগফার করো।”
- হিলইয়াতুল আওলিয়া ৭/৪৭।
শাইখ আল-আলবানী রহিমাহুল্লাহ বলেন:
আজকের মুসলিমরা—দুঃখজনক হলেও সত্য—যা যা বিপদে পড়েছে, আল্লাহর বাণী অনুযায়ী তাই হয়েছে:
﴿بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ﴾
“তাদের হাতের উপার্জনের কারণে (বিপদ এসেছে), আর অনেক কিছু আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।”
আজকের মুসলিমরা তাদের দীন থেকে কেবল কিছু বাহ্যিক ও আকারগত বিষয় জানে, অথচ তারা ইসলামের বাস্তব সত্য থেকে পুরোপুরি দূরে সরে গেছে।
[সিলসিলা আল-হুদা ওয়ান নূর, টেপ : ৫২৭]
শাইখুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন:
এই বিদআতসমূহ এবং এ জাতীয় ইসলাম-বিরোধী মন্দ কাজগুলোর কারণে আল্লাহ শত্রুদেরকে মুসলিমদের উপর আধিপত্য দান করেছেন।
আল্লাহ বলেছেন:
{وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥۤ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِىٌّ عَزِيزٌ (٤٠) ٱلَّذِينَ إِن مَّكَّنَّـٰهُمۡ فِى ٱلۡأَرۡضِ أَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَمَرُوا۟ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَنَهَوۡا۟ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۗ وَلِلَّهِ عَـٰقِبَةُ ٱلۡأُمُور (٤١)}
“আর অবশ্যই আল্লাহ তাঁর সাহায্যপ্রার্থীদের সাহায্য করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিশালী, পরাক্রমশালী। তারা হলো সেইসব লোক, যাদেরকে যদি আমরা জমিনে ক্ষমতা দিই, তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহর কাছেই।”
[সূরা আল-হাজ্জ : ৪০-৪১]
[মাজমূআ আল-ফাতাওয়া, ১২/৫১১]
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন:
{فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ أَضَاعُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّبَعُوا۟ ٱلشَّهَوَاتِۖ فَسَوۡفَ یَلۡقَوۡنَ غَیࣰّا (٥٩) إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَـٰلِحࣰا فَأُو۟لَـٰۤىِٕكَ یَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ وَلَا یُظۡلَمُونَ شَیۡـࣰٔا (٦٠)}
“তাদের পর এমন উত্তরসূরী এলো যারা নামাজ নষ্ট করল এবং খাহেশ-খেয়াল অনুসরণ করল। অতএব তারা অচিরেই গোমরাহির শাস্তির সম্মুখীন হবে। তবে যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে—তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সামান্যতমও বঞ্চিত হবে না।”
[সূরা মারইয়াম : ৫৯-৬০]
শাইখ ইবনু বায রহিমাহুল্লাহ বলেন:
সালাত ইসলামের স্তম্ভ, শাহাদাতের পর সবচেয়ে বড় ফরজ। যে সালাত ছেড়ে দেয়, সে কাফির হয়ে যায়—আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই এ থেকে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“আমাদের সাথে তাদের মধ্যে পার্থক্যের অঙ্গীকার হলো সালাত। যে সালাত ছেড়ে দেয়, সে কাফির হয়ে যায়।”
আরও বলেছেন:
“মানুষ আর কুফর ও শিরকের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ছেড়ে দেওয়া।” সালাত ছেড়ে দেওয়ার পরিণতি: দুনিয়ায় দুঃখ-কষ্ট, আখিরাতে শাস্তি, শত্রুর মুখোমুখি হলে পরাজয়। কারণ আল্লাহর সাহায্য আসে তাঁর দীনের আনুগত্যের মাধ্যমে। সালাত ছেড়ে দেওয়া মানে আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত হওয়া। সালাত কায়েম করা, তা রক্ষা করা ও জামাতে আদায় করা হলো বিজয়, সাহায্য ও সুখের কারণ। যে জামাত থেকে পিছিয়ে গিয়ে ঘরে সালাত পড়ে, সে গোনাহগার এবং মুনাফিকদের সাথে সাদৃশ্য রাখে। তাই মুসলিমদের অবশ্যই জামাতে সালাত আদায় করতে হবে।
[ফাতাওয়া আল-দুরুস, প্রশ্ন : ৩৯৮৪]
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রহিমাহুল্লাহ বলেন:
আল্লাহ বলেন:
{وَلَوْ قَاتَلَكُمُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَوَلَّوُا ٱلۡأَدْبَارَ ثُمَّ لَا یَجِدُونَ وَلِیࣰّا وَلَا نَصِیرࣰا سُنَّةَ ٱللَّهِ ٱلَّتِی قَدۡ خَلَتۡ مِن قَبۡلُۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ ٱللَّهِ تَبۡدِیلࣰا}
“যদি কাফিররা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করত, তবে তারা অবশ্যই পশ্চাদপসরণ করত। আর তারা কোনো সহায় ও সাহায্যকারী পেত না। এটি আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত নিয়ম, যা আগে থেকেই চলে আসছে। আর তুমি আল্লাহর নিয়মে কোনো পরিবর্তন পাবে না।”
[সূরা আল-ফাতহ : ২২-২৩]
যেখানেই কাফিররা প্রাধান্য পায়, তা মুসলিমদের গুনাহের কারণেই হয়ে থাকে, যা তাদের ঈমানকে দুর্বল করেছে। যখন তারা তাওবা করে এবং ঈমান পূর্ণ করে নেয়, তখন আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন।
আল্লাহ বলেন:
{وَلَا تَهِنُوا۟ وَلَا تَحْزَنُوا۟ وَأَنتُمُ ٱلۡأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ}
“তোমরা দুর্বল হয়ো না, দুঃখ করো না। আর যদি তোমরা ঈমানদার হও, তবে তোমরাই শ্রেষ্ঠ।”
[সূরা আলে ইমরান : ১৩৯]
আরও বলেছেন:
{قُلْ هُوَ مِنْ عِندِ أَنْفُسِكُمْ}
“বল: এটা তোমাদের নিজেদের কাছ থেকেই এসেছে।”
[সূরা আলে ইমরান : ১৬৫]
[আল-জাওয়াব আস-সহীহ, ৬/৪৫০]
ইমাম ইবনু কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন:
যে ব্যক্তি নিজের নফসের বিরুদ্ধে প্রথমে জিহাদ করবে না—যাতে সে আল্লাহর হুকুম মানে এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে বেঁচে থাকে—সে বাহ্যিক শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পারবে না।
কীভাবে সম্ভব, যে তার ভেতরের শত্রু—তার নফস—তাকে জয় করে নিয়েছে, সে বাহ্যিক শত্রুর মোকাবিলা করবে! তাই আগে নফসকে জিহাদ করতে হবে, এরপরই বাইরের শত্রুর মোকাবিলা সম্ভব।
[যাদুল মা‘আদ, ৩/৮-৫]
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রহিমাহুল্লাহ বলেন:
মুসলিমদের মধ্যে দুর্বলতা দেখা দিলে এবং শত্রুরা শক্তিশালী হয়ে উঠলে তা তাদের গুনাহ ও অন্যায়ের কারণেই হয়ে থাকে। হয় তারা আল্লাহর ফরজ ইবাদতে অবহেলা করেছে, প্রকাশ্যে বা গোপনে। অথবা তারা সীমালঙ্ঘন করেছে, প্রকাশ্যে বা গোপনে।
আল্লাহ বলেন:
{إِنَّ ٱلَّذِينَ تَوَلَّوْا۟ مِنكُمۡ يَوْمَ ٱلۡتَقَى ٱلۡجَمۡعَانِ إِنَّمَا ٱسۡتَزَلَّهُمُ ٱلشَّیۡطَـٰنُ بِبَعۡضِ مَا كَسَبُوا۟}
“যেদিন দুই বাহিনী মুখোমুখি হয়েছিল, যেসব লোক তোমাদের মধ্য থেকে পিছিয়ে গিয়েছিল, শয়তান তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের কারণে পা ফসকাতে বাধ্য করেছিল।”
[সূরা আলে ইমরান : ১৫৫]
আরও বলেন:
{قُلْ هُوَ مِنْ عِندِ أَنْفُسِكُمْ}
“বল: এটা তোমাদের নিজেদের কাছ থেকেই এসেছে।”
[সূরা আলে ইমরান : ১৬৫]
আল্লাহ আরও বলেন:
{وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥۤۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِىٌّ عَزِيزٌ (٤٠) ٱلَّذِينَ إِن مَّكَّنَّـٰهُمۡ فِى ٱلۡأَرۡضِ أَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَمَرُوا۟ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَنَهَوۡا۟ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۗ وَلِلَّهِ عَـٰقِبَةُ ٱلۡأُمُور (٤١)}
“আর অবশ্যই আল্লাহ তাঁর সাহায্যপ্রার্থীদের সাহায্য করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিশালী, পরাক্রমশালী। তারা হলো সেইসব লোক, যাদেরকে যদি আমি জমিনে ক্ষমতা দিই, তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, সৎকাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহর কাছেই।”
[সূরা আল-হাজ্জ : ৪০-৪১]
[মাজমূআ আল-ফাতাওয়া, ১১/৬৪৫]
হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন:
“নিশ্চয়ই নেককার কল্যাণবানদের এমন কিছু নিদর্শন (গুণাবলি) আছে, যার দ্বারা তাদের চেনা যায়—
- তারা সত্য কথা বলে,
- আমানত (দায়িত্ব) আদায় করে,
- অঙ্গীকার পূরণ করে,
- গর্ব ও অহঙ্কার কম করে,
- আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে,
- দুর্বলদের প্রতি দয়া করে,
- সৎকাজে উদার হয়,
- চরিত্রে উত্তম হয়,
- সহিষ্ণু ও ধৈর্যশীল হয়,
- জ্ঞান দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা ও প্রচারে নিয়োজিত রাখে,
- এবং নারীদের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় মেলামেশা কম করে। (অর্থাৎ— নারী ও কামুক লোকদের আসরে বসে না।)”
সূত্র: আদাবুল হাসান আল-বাসরী ও যাহদুহু ও মাওয়াইজুহু
লেখক: ইমাম জামালুদ্দীন আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযী রাহিমাহুল্লাহ
ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আইয়ূব ইবনু কাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ (৬৯১–৭৫১ হি.) বলেন,
কোনো এক আলেম বলেছেন,
“আমি চিন্তা করেছি, মানুষ (বুদ্ধিমানরা) যে বিষয়ের জন্য চেষ্টা-পরিশ্রম করে — দেখলাম, তাদের সকল প্রচেষ্টা একটিই লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে, যদিও তা অর্জনের পদ্ধতি ও পথগুলো একে অপরের থেকে ভিন্ন। দেখলাম, তারা সবাই দুঃখ, উদ্বেগ ও কষ্ট দূর করার প্রচেষ্টা করছে।
এইজন্য কেউ তা করে খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে, কেউ করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও উপার্জনের মাধ্যমে, কেউ করে বিবাহের মাধ্যমে, কেউ করে সুর ও সংগীত শুনে, কেউ করে খেলাধুলা ও বিনোদনের মাধ্যমে।
আমি বললাম: প্রকৃতপক্ষে মানুষের চাওয়াটা এক — মনে প্রশান্তি ও দুঃখের দূরীকরণ। কিন্তু এ সব পথই আসলে প্রকৃত উদ্দেশ্যের দিকে পৌঁছে দেয় না, বরং অধিকাংশ সময় তা বিপরীত ফল দেয়।
আর আমি দেখিনি এসব পথের মধ্যে এমন কোনো পথ, যা নিশ্চিতভাবে প্রকৃত প্রশান্তি ও সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যায় — অন্তরকে একমাত্র আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেওয়া ও তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা ছাড়া।”
⸻
- ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম, আদ-দা ওয়াদ-দাওয়া পৃষ্ঠা ৪৫০।
⸻
সারকথা:
মানুষ জীবনের সকল প্রয়াসে মূলত দুঃখ-চিন্তা থেকে মুক্তি খুঁজে। কেউ খাওয়া-দাওয়া, ব্যবসা, বিবাহ, গান-বাজনা বা বিনোদনের মাধ্যমে তা চায়। কিন্তু প্রকৃত প্রশান্তি ও দুঃখমুক্তি কেবলমাত্র আল্লাহর সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপন ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব — অন্য কোনো পথে নয়।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:
“নিয়তের স্থান হলো অন্তর (হৃদয়) — জিহ্বা নয়; সব ধরনের আমলের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য।
সুতরাং, কেউ যদি সালাত, সাওম, হজ, ওজু বা অন্য কোনো আমল করার আগে জিহ্বায় নিয়ত উচ্চারণ করে, তাহলে সে বিদআত (নব উদ্ভাবিত কাজ) করেছে এবং আল্লাহর দীন সম্পর্কে এমন কথা বলেছে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
কারণ, নবী ﷺ ওজু করতেন, সালাত আদায় করতেন, সদকা দিতেন, সাওম রাখতেন, হজ করতেন —
কিন্তু তিনি কখনও বলেননি:
“আল্লাহুম্মা ইন্নী নাওয়াইতু আন আতাওয়াদ্দা,”
“আল্লাহুম্মা ইন্নী নাওয়াইতু আন উসাল্লি,”
“আল্লাহুম্মা ইন্নী নাওয়াইতু আন আতাসাদ্দাক,”
“আল্লাহুম্মা ইন্নী নাওয়াইতু আন আছুম,”
“আল্লাহুম্মা ইন্নী নাওয়াইতু আন আহুজ্জ।”
তিনি এসব কিছুই বলেননি,
কারণ নিয়ত অন্তরের বিষয় এবং আল্লাহ তা’আলা অন্তরের সব কিছু জানেন, তাঁর কাছে কিছুই গোপন থাকে না।
যেমন আল্লাহ বলেন:
“বলুন, তোমরা যদি তোমাদের বুকে যা আছে তা গোপন রাখো অথবা প্রকাশ করো—আল্লাহ তা জানেন।”
(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ২৯)
- [শারহ রিয়াদুস সালিহীন, ১৩/১–১৪]