মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) সর্বমোট হাদিসঃ ৬২৯৩ টি

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ

৫৬৪৩-[৩২] আবূ আইয়ুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক বেদুঈন নবী (সা.) -এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ঘোড়াকে খুব বেশি ভালোবাসি, জান্নাতে ঘোড়া আছে কি? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যদি তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়, তবে তোমাকে মুক্তার তৈরি এমন একটি ঘোড়া দেয়া হবে যার দুটি ডানা রয়েছে, তোমাকে তার উপরে আরোহণ করানো হবে। অতঃপর তুমি যেখানে যেতে চাবে, তা উড়িয়ে তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবে।

[তিরমিযী; তিনি (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটির সূত্র নির্ভরযোগ্য নয়। এতে বর্ণনাকারী আবূ সাওরাহ্-কে হাদীস বর্ণনায় দুর্বল গণ্য করা হয়। ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) আরো বলেছেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল বুখারী (রহিমাহুল্লাহ)-কে বলতে শুনেছি, আবূ সাওরাহ্ ’মুনকারুল হাদীস’। তিনি মুনকার হাদীস বর্ণনা করেন।]

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)

وَعَنْ أَبِي أَيُّوبَ قَالَ أَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أُحِبُّ الْخَيْلَ أَفِي الْجَنَّةِ خَيْلٌ؟ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ أُدْخِلْتَ الْجَنَّةَ أُتِيتَ بِفَرَسٍ مِنْ يَاقُوتَةٍ لَهُ جَنَاحَانِ فَحُمِلْتَ عَلَيْهِ ثُمَّ طَارَ بِكَ حَيْثُ شِئْتَ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ لَيْسَ بِالْقَوِيِّ وَأَبُو سَوْرَةَ الرَّاوِي يُضَعَّفُ فِي الْحَدِيثِ وَسَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَاعِيلَ يَقُولُ: أَبُو سَوْرَةَ هَذَا مُنكر الحَدِيث يروي مَنَاكِير

حسن ، رواہ الترمذی (2544) * و للحدیث شاھد عند البیھقی فی البعث و النشور (439) و سندہ حسن لذاتہ ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে জান্নাতে মানুষ প্রবেশ করার পর যা চাইবে, তাই পাবে- এটা বলা হয়েছে। ইমাম কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীসের উদ্দেশ্য হলো মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করার পর তাদের মনের চাহিদা অনুপাতে যা চাইবে তাই সেখানে পাবে। যদি কেউ চায় ঘোড়ায় আরোহণ করতে তাহলে তাকে ঘোড়ায় আরোহণ করানো হবে। যদি কেউ চায় মণি-মুক্তার ঘোড়ায় আরোহণ করতে তাহলে তাকে অনুরূপ আকৃতির ঘোড়ায় আরোহণ করানো হবে। মোটকথা জান্নাতবাসীরা তাদের মনের চাহিদা অনুপাতে যা চাইবে তাই তারা সেখানে বিদ্যমান পাবে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী হা. ২৫৪৪)।


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ

৫৬৪৪-[৩৩] বুরয়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতাবাসীদের একশত বিশ কাতার হবে। তন্মধ্যে আশি কাতার হবে এই উম্মতের আর অবশিষ্ট চল্লিশ কাতার হবে অন্যান্য উম্মতের। (তিরমিযী, দারিমী ও বায়হাকী’র “কিতাবুল বাসি ওয়ান্ নুশূর”)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)

وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَهْلُ الْجَنَّةِ عِشْرُونَ وَمِائَةُ صَفٍّ ثَمَانُونَ مِنْهَا مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ وَأَرْبَعُونَ مِنْ سَائِرِ الْأُمَمِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي كتاب الْبَعْث والنشور

حسن ، رواہ الترمذی (2546 وقال : حسن) و الدارمی (2 / 337 ح 2838) و البیھقی فی البعث و النشور (لم اجدہ) [و صححہ ابن حبان (الموارد : 2639) و الحاکم علی شرط مسلم (2 / 81 ۔ 82) و وافقہ الذھبی] ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে এই উম্মাতের সংখ্যার আধিক্যতা বুঝানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জান্নাতবাসীরা একশত বিশ কাতার হবে। এর মাঝে উম্মতে মুহাম্মাদী আশি কাতার, আর অন্যান্য জাতি ৪০ কাতার। ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর উক্ত হাদীস এবং তার থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, আমি আশা করি তোমরা জান্নাতের এক-চতুর্থাংশ হবে। এরপরে তিনি (সা.) আবার বলেছেন যে, আমি আশা করি তোমরা জান্নাতের এক-তৃতীয়াংশ হবে। এরপর তিনি (সা.) বলেছেন, আমি আশা করি তোমরা জান্নাতের অর্ধেক হবে। এই হাদীসের মাঝে কি সমাধান হবে?
ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) উক্ত দুই হাদীসের সমাধানে বলেন, সম্ভবত ঐ আশি কাতারই সংখ্যার দিক থেকে চল্লিশ কাতারের সমান হবে। আর (ثلث)(ربع) এরপর যে বলা হয়েছে, (نِصْفَ أَهْلُ الْجَنَّةِ) তোমরা জান্নাতের অর্ধেক হবে, এটা আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর সম্মানার্থে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
শায়খ আবদুল হক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূল -এর বাণী, (أَنْ تَكُونُوانِصْفَ أَهْلِ الْجَنَّثِ) এটা পূর্বের বাণীর সাথে সাংঘর্ষিক নয়। কারণ তিনি (সা.) প্রথমে আশা করেছেন যে, তোমরা জান্নাতের (ثلث) বা (ربع) হবে। এটা ছিল শুধুমাত্র তাঁর আশা। এরপর বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে অতিরিক্ততার সংবাদ দেয়া হয়েছে। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা, ২৫৪৬)।


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ

৫৬৪৫-[৩৪] সালিম তাঁর পিতা [ইবনু উমার (রাঃ)] হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার উম্মাত জান্নাতের যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, তার প্রশস্ততা হবে উত্তম অশ্বারোহীর তিনদিন অথবা তিন বছরের পথের দূরত্ব। এছাড়াও দরজা অতিক্রমের সময় এত ভিড় হবে যে, ধাক্কার চোটে তাদের কাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হবে।

[তিরমিযী; আর তিনি বলেছেন, হাদীসটি য’ঈফ। তিনি আরো বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল বুখারী (রহিমাহুল্লাহ)-কে অত্র হাদীস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি হাদীসটি সম্পর্কে অবগত নন বলে ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন, অধস্তন রাবী ইয়াখলুদ ইবনু আবূ বা মুনকার হাদীস বর্ণনা করেন।]

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)

وَعَن سَالم عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَابُ أُمَّتِي الَّذِينَ يَدْخُلُونَ مِنْهُ الْجَنَّةَ عَرْضُهُ مَسِيرَةُ الرَّاكِبِ الْمُجَوِّدِ ثَلَاثًا ثُمَّ إِنَّهُمْ لَيُضْغَطُونَ عَلَيْهِ حَتَّى تَكَادُ مَنَاكِبُهُمْ تَزُولُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ ضَعِيفٌ وَسَأَلْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَاعِيلَ عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ فَلَمْ يَعْرِفْهُ وَقَالَ: خَالِد بن أبي بكر يروي الْمَنَاكِير

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2548) * خالد بن ابی بکر : فیہ لین وعد الذھبی ھذا الحدیث من مناکیرہ ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: মুহাদ্দিসগণ বলেন: উক্ত হাদীসে জান্নাতের দরজার দুই পার্শ্বের যে চৌকাঠ রয়েছে এবং উভয় চৌকাঠের মাঝে যে প্রশস্ততা রয়েছে তার দূরত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে, তা উত্তম অশ্বারোহীর তিন দিন বা তিন বছরের পথের দূরত্বের মতো হবে। অন্য এক রিওয়ায়াতে এসেছে, উভয় পার্শ্বের দূরত্ব হবে মক্কাহ ও হাজার শহরের দূরত্বের ন্যায়। কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা আধিক্যতা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ অনেক প্রশস্ত হবে এবং এক সাথে অনেক মানুষ প্রবেশ করতে পারবে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা জান্নাতবাসীরা যে তাদের মর্যাদা অনুপাতে বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে তা বুঝানো হয়েছে। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ২৫৪৮)।


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ

৫৬৪৬-[৩৫] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতে একটি বাজার রয়েছে, সেখানে ক্রয়বিক্রয় নেই, বরং তাতে নারী-পুরুষদের আকৃতিসমূহ থাকবে। অতএব যখনই কেউ কোন আকৃতিকে পছন্দ করবে, তখন সে সেই আকৃতিতে প্রবেশ করবে।

[ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব।]

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)

وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِن فِي الْجَنَّةِ لَسُوقًا مَا فِيهَا شِرًى وَلَا بَيْعٌ إِلَّا الصُّوَرَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ فَإِذَا اشْتَهَى الرَّجُلُ صُورَةً دَخَلَ فِيهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2550) * فیہ عبد الرحمن بن اسحاق الکوفی ضعیف (تقدم : 5597) ۔
(ضَعِيفٌ)

ব্যাখ্যা: উক্ত বাজার মূলত সৌন্দর্য ও কামনিয়তা দ্বারা সজ্জিত হওয়ার এবং সুন্দর হতে সুন্দর আকার আকৃতিতে রূপান্তরিত হওয়ার এক মিলনকেন্দ্র হবে। সেখানে চতুর্দিকে মনোরম ও মনোমুগ্ধকর আকার আকৃতি উপস্থিত থাকবে। আর জান্নাতবাসী নারী-পুরুষদের যে কেউ উক্ত আকার-আকৃতি হতে যেটি পছন্দ করবে তাতে রূপান্তরিত হতে পারবে। ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর দ্বারা দু’টি উদ্দেশ্য হতে পারে:
১) জান্নাতবাসীদের নিকট বিভিন্ন প্রকার মনোমুগ্ধকর ও মনোরম আকার-আকৃতি পেশ করা হবে প্রত্যেকেই তাদের ইচ্ছা মতো সেটিতে রূপান্তরিত হতে পারবে।
২) জান্নাতে ঐ বাজারে বিভিন্ন আকৃতির মনোরম ও মনোমুগ্ধকর সাজ-সজ্জা থাকবে যা সাধারণত মানুষ গ্রহণ করে থাকে যেমন স্বর্ণ অলংকার, সোনার মালা ও সোনার টুপি ইত্যাদি। জান্নাতবাসীরা তাদের ইচ্ছা অনুপাতে সেগুলো দ্বারা সাজ-সজ্জা করবে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী হা, ২৫৫০)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ

৫৬৪৭-[৩৬] সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রহ.) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তখন আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কাছে আমি এ দু’আ করি, আমাকে ও তোমাকে তিনি যেন জান্নাতের বাজারে একত্রিত করেন। তখন সা’ঈদ (রাঃ) বললেন, সেখানে কি বাজারও আছে? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যা, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতবাসীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন তারা নিজ নিজ ’আমালের মান অনুযায়ী স্থান লাভ করবে। অতঃপর দুনিয়ার দিনগুলোর হিসাব ও পরিমাণ অনুযায়ী সপ্তাহের জুমু’আর দিন তাদেরকে একটি বিশেষ অনুমতি প্রদান করা হবে, আর তা হলো তারা তাদের প্রভুর সাক্ষাৎ লাভ করবে। সেদিন আল্লাহ তা’আলা তাঁর ’আরশকে জনসম্মুখে করে দেবেন এবং জান্নাতবাসীদের সামনে জান্নাতের বৃহৎ বাগান একটি বাগানে আত্মপ্রকাশ করবেন এবং জান্নাতবাসীদের জন্য তাদের মান ও মর্যাদা অনুপাতে নূরের, মণি-মুক্তার, মতি এবং সোনা-রোপার মিম্বার স্থাপন করা হবে। তাদের মধ্যে সাধারণ মর্যাদাবান ব্যক্তি- অথচ জান্নাতীদের মধ্যে কেউ হীন হবে না- কাফুর কস্তুরীর টিলার উপর বসবে। এ সমস্ত টিলায় বসা লোকেরা কুরসী বা আসনে বসা ওই লোকেদেরকে নিজেদের অপেক্ষা অধিক মর্যাদা লাভকারী বলে ধারণা করবে না। (অর্থাৎ প্রত্যেক জান্নাতী স্বীয় স্থানে সন্তুষ্ট থাকবে)

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, দেখতে পাবে। আচ্ছা বল দেখি, সূর্য এবং পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে তোমাদের কোন প্রকারের সন্দেহ হয়? আমরা বললাম, না। কোন সন্দেহ হয় না। রাসূল (সা.) বললেন, ঐভাবে তোমাদের রবকে দেখতে তোমাদের কোন রকমের সন্দেহ হবে না এবং উক্ত বৈঠকে এমন কোন লোক অবশিষ্ট থাকবে না, যার সাথে আল্লাহ তা’আলা সরাসরি কথা বলবেন না। এমনকি আল্লাহ তা’আলা উপস্থিত এক লোককে বলবেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমার কি স্মরণ আছে যে, অমুক দিন তুমি এ কথাটি বলেছিলে? মোটকথা, দুনিয়াতে সে যে সকল অন্যায় করেছিল তার কিছু কিছু তাকে আল্লাহ তা’আলা স্মরণ করিয়ে দেবেন। তখন সে বলবে, হে আমার প্রভু! তুমি কি আমাকে ক্ষমা করে দাওনি? আল্লাহ তা’আলা বলবেন, হ্যাঁ, নিশ্চয়। আমার ক্ষমার বদৌলতেই তুমি আজ এ মর্যাদার অধিকারী হয়েছ।
ফলকথা, তারা এ অবস্থায় থাকতেই একখণ্ড মেঘ এসে তাদেরকে ওপর থেকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে এবং তা তাদের ওপর এমন সুগন্ধি বর্ষণ করবে যে, ঐ রকম সুগন্ধি তারা আর কখনো পায়নি। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমরা উঠ এবং তার দিকে চল, যা আমি তোমাদের সম্মান বৃদ্ধির জন্য তৈরি করে রেখেছি। আর তোমাদের মনে যা যা চায় তা থেকে নিয়ে নাও। অতঃপর আমরা এমন একটি বাজারে আসব, যাকে ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে রেখেছেন। তাতে এমন সকল জিনিস রক্ষিত থাকবে, যা মানব চক্ষু কখনো দেখতে পারেনি, তার সংবাদ কানে শুনতে পাইনি, এমনকি মানুষের হৃদয়ও কল্পনা করতে পারেনি। অতএব আমাদেরকে সেই বাজার থেকে এমন সব কিছু দেয়া হবে যা আমরা পছন্দ করব, অথচ উক্ত বাজারে কোন জিনিসই ক্রয়-বিক্রয় হবে না, বরং সেখানে জান্নাতীগণ একজন অন্যজনের সাথে সাক্ষাৎ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সেই বাজারে একজন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন লোক একজন সাধারণ ধরনের লোকের সাথে সাক্ষাৎ করবে, অবশ্য জান্নাতীদের মধ্যে কেউ হীন নয়। তখন সে তার পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে আশ্চর্যান্বিত হবে কিন্তু তার কথা শেষ হতে না হতেই সে অনুধাবন করবে যে, তার পোশাক তার চেয়ে আরো উত্তম হয়ে গেছে। আর এটা এজন্য যে, জান্নাতে কোন লোকের অনুতপ্ত ও দুশ্চিন্তায় পতিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

অতঃপর (উক্ত বাজার ও পরস্পরে দেখা-সাক্ষাৎ করে) আমরা নিজ নিজ বাসস্থানের দিকে ফিরে যাব। এ সময় আমাদের স্ত্রীগণ আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করে বলবে, মারহাবা, খোশ আমদেদ! মূলত যখন তোমরা আমাদের কাছ থেকে পৃথক হয়েছিলে, সে অবস্থা অপেক্ষা এখন তোমরা আরো অধিক সুন্দর চেহারা ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে আমাদের কাছে ফিরে এসেছ। তখন আমরা বলব, আজ আমরা আমাদের মহাপরাক্রশালী প্রভুর সাথে বসার সৌভাগ্য লাভ করেছি। কাজেই এ মর্যাদার অধিকারী হয়ে প্রত্যাবর্তন করা আমাদের জন্য যথার্থ উপযোগী হয়েছে এবং এমন হওয়াই উচিত ছিল।

[তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন হাদীসটি গরীব]

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)

وَعَن سعيد بن الْمسيب أَنه لقيَ أَبَا هريرةَ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: أَسْأَلُ اللَّهَ أَنْ يَجْمَعَ بَيْنِي وَبَيْنَكَ فِي سُوقِ الْجَنَّةِ. فَقَالَ سَعِيدٌ: أَفِيهَا سُوقٌ؟ قَالَ: نَعَمْ أَخْبَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ إِذَا دَخَلُوهَا نَزَلُوا فِيهَا بِفَضْلِ أَعْمَالِهِمْ ثُمَّ يُؤْذَنُ لَهُمْ فِي مِقْدَارِ يَوْمِ الْجُمُعَةِ مِنْ أَيَّامِ الدُّنْيَا فَيَزُورُونَ رَبَّهُمْ وَيَبْرُزُ لَهُمْ عَرْشُهُ وَيَتَبَدَّى لَهُم فِي روضةٍ من رياضِ الجنَّة فَيُوضَع لَهُم مَنَابِر من نور ومنابرمن لُؤْلُؤٍ وَمَنَابِرُ مِنْ يَاقُوتٍ وَمَنَابِرُ مِنْ زَبَرْجَدٍ وَمَنَابِرُ مِنْ ذَهَبٍ وَمَنَابِرُ مِنْ فِضَّةٍ وَيَجْلِسُ أَدْنَاهُم - وَمَا فيهم دنيٌّ - عَلَى كُثْبَانِ الْمِسْكِ وَالْكَافُورِ مَا يَرَوْنَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَرَاسِيِّ بِأَفْضَلَ مِنْهُمْ مَجْلِسًا» . قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَهَلْ نَرَى رَبَّنَا؟ قَالَ: «نَعَمْ هَلْ تَتَمَارَوْنَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ وَالْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ؟» قُلْنَا: لَا. قَالَ: كَذَلِكَ لَا تَتَمَارَوْنَ فِي رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ وَلَا يَبْقَى فِي ذَلِكَ الْمَجْلِسِ رَجُلٌ إِلَّا حَاضَرَهُ اللَّهُ مُحَاضَرَةً حَتَّى يَقُولَ لِلرَّجُلِ مِنْهُمْ: يَا فلَان ابْن فلَان أَتَذكر يَوْم قلت كَذَا وَكَذَا؟ فيذكِّره بِبَعْض غدارته فِي الدُّنْيَا. فَيَقُولُ: يَا رَبِّ أَفَلَمْ تَغْفِرْ لِي؟ فَيَقُولُ: بَلَى فَبِسِعَةِ مَغْفِرَتِي بَلَغْتَ مَنْزِلَتَكَ هَذِهِ. فَبَيْنَا هُمْ عَلَى ذَلِكَ غَشِيتْهُمْ سَحَابَةٌ مِنْ فَوْقِهِمْ فَأَمْطَرَتْ عَلَيْهِمْ طِيبًا لَمْ يَجِدُوا مِثْلَ رِيحِهِ شَيْئًا قَطُّ وَيَقُولُ رَبُّنَا: قُومُوا إِلَى مَا أَعْدَدْتُ لَكُمْ مِنَ الْكَرَامَةِ فَخُذُوا مَا اشْتَهَيْتُمْ فَنَأْتِي سُوقًا قَدْ حَفَّتْ بِهِ الْمَلَائِكَةُ فِيهَا مَا لَمْ تَنْظُرِ الْعُيُونُ إِلَى مِثْلِهِ وَلَمْ تَسْمَعِ الْآذَانُ وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى الْقُلُوبِ فَيُحْمَلُ لَنَا مَا اشْتَهَيْنَا لَيْسَ يُبَاعُ فِيهَا وَلَا يُشْتَرَى وَفِي ذَلِكَ السُّوقِ يَلْقَى أَهْلُ الْجَنَّةِ بَعْضُهُمْ بَعْضًا . قَالَ: فَيُقْبِلُ الرَّجُلُ ذُو الْمَنْزِلَةِ الْمُرْتَفِعَةِ فَيَلْقَى مَنْ هُوَ دُونَهُ - وَمَا فيهم دنيٌّ - فيروعُه مَا يرى عَلَيْهِ من اللباسِ فِيمَا يَنْقَضِي آخِرُ حَدِيثِهِ حَتَّى يَتَخَيَّلَ عَلَيْهِ مَا هُوَ أحسن مِنْهُ وَذَلِكَ أَنَّهُ لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ أَنْ يَحْزَنَ فِيهَا ثُمَّ نَنْصَرِفُ إِلَى مَنَازِلِنَا فَيَتَلَقَّانَا أَزْوَاجُنَا فَيَقُلْنَ: مَرْحَبًا وَأَهْلًا لَقَدْ جِئْتَ وَإِنَّ بِكَ مِنَ الْجَمَالِ أَفْضَلَ مِمَّا فَارَقْتَنَا عَلَيْهِ فَيَقُولُ: إِنَّا جَالَسْنَا الْيَوْمَ رَبَّنَا الْجَبَّارَ وَيَحِقُّنَا أَنْ نَنْقَلِبَ بِمِثْلِ مَا انْقَلَبْنَا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2549) و ابن ماجہ (4336) * ھشام بن عمار صدوق اختلط ، ولم یثبت بانہ حدث بھذا الحدیث قبل اختلاطہ ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: (أَسْأَلُ اللَّهَ أَنْ يَجْمَعَ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) সা'ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহিমাহুল্লাহ)-কে বলেন, আল্লাহর রাব্বুল আলামীন যেন আমাকে ও তোমাকে জান্নাতের বাজারে একত্রিত করেন। আসলে জান্নাতে প্রতি সপ্তাহে একদিন সকলের মিলন হবে সেটাকেই জান্নাতের বাজার বলা হয়েছে উক্ত হাদীসে। উক্ত বাজারে মনোমুগ্ধকর অনেক আকার-আকৃতি থাকবে যে কেউ তার মনের চাহিদা অনুপাতে তাতে রূপান্তরিত হতে পারবে। জান্নাতবাসীরা তাদের ‘আমল অনুপাতে সেই বাজারে উপস্থিত হবে। প্রতি জুমু'আর দিন একবার করে অনুমতি পাবে। প্রত্যেকের জন্য আসন থাকবে। তাদের ‘আমল অনুপাতে কারো জন্য মণি-মুক্তার আসন থাকবে। কারো জন্য ইয়াকূত ও পান্না পাথরের এবং কারো জন্য স্বর্ণ ও রূপার। জান্নাতবাসীদের সর্বনিম্ন ব্যক্তি মিশক আম্বারের আসনে বসবে।
(هَلْ نَرَى رَبَّنَا) জান্নাতে মু'মিনরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে দেখতে পাবে কোন প্রকার কষ্ট-ক্লেশ ছাড়া। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকলের সামনে উপস্থিত হয়ে জান্নাতবাসীদের সাথে সরাসরি কথা বললেন এবং তাদেরকে দেয়া বিভিন্ন নি'আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ হা. ৫৬৪৭, তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ২৫৪৯)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ

৫৬৪৮-[৩৭] আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: নিম্নমানের জান্নাতবাসীর জন্য আশি হাজার সেবক এবং বাহাত্তর জন স্ত্রী হবে, তার জন্য গম্বুজ আকৃতির ছাউনি স্থাপন করা হবে, যা মণি-মুক্তা, হীরা ও ইয়াকুত দ্বারা তৈরি। উক্ত ছাউনির প্রশস্ততা হবে জাবিয়াহ্ থেকে সন্‌’আ পর্যন্ত মধ্যবর্তী দূরত্বের পরিমাণ। উক্ত সূত্রে আরো বর্ণিত হয়েছে, তিনি (সা.) বলেছেন: ছোট বয়সে কিংবা বৃদ্ধ বয়সে যে কোন জান্নাতী লোক (দুনিয়াতে) মারা যাবে, সে জান্নাতে ত্রিশ বছর বয়সী (যুবক) হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং বয়স (-এর আকৃতি) কখনো বৃদ্ধি পাবে না। জাহান্নামবাসীরাও ঐ রকম (৩০ বছর বয়সী) হবে।
উক্ত সূত্রে অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, জান্নাতবাসীদের মাথায় এমন মুকুট রাখা হবে, যার সাধারণ মুক্তা দুনিয়ার পূর্বপ্রান্ত থেকে পশ্চিমপ্রান্ত পর্যন্ত আলোকিত করবে।
অত্র সনদে অপর এক বর্ণনায় আছে (সহীহ লিগায়রিহী), জান্নাতে সন্তান কামনা করবে, তখন গর্ভ, প্রসব এবং তার বয়স চাহিদা অনুযায়ী মুহুর্তের মধ্যে সংঘটিত হয়। জান্নাতে যখনই সন্তানের আকাঙ্ক্ষা করবে, তখনই সে সন্তান পাবে, তবে কেউই আশা করবে না। (এ কথাটি ইসহাক-এর)

ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি আরো বলেছেন, হাদীসটি গরীব; ইবনু মাজাহ চতুর্থটি আর দারিমী কেবলমাত্র শেষাংশটি বর্ণনা করেছেন।

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ الَّذِي لَهُ ثَمَانُونَ أَلْفَ خَادِمٍ وَاثْنَتَانِ وَسَبْعُونَ زَوْجَةً وَتُنْصَبُ لَهُ قُبَّةٌ مِنْ لُؤْلُؤٍ وَزَبَرْجَدٍ وَيَاقُوتٍ كَمَا بَيْنَ الْجَابِيَةِ إِلَى صَنْعَاءَ» وَبِهَذَا الْإِسْنَاد قَالَ (ضَعِيف) : «وَمَنْ مَاتَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ مِنْ صَغِيرٍ أَوْ كَبِيرٍ يُرَدُّونَ بَنِي ثَلَاثِينَ فِي الْجَنَّةِ لَا يَزِيدُونَ عَلَيْهَا أَبَدًا وَكَذَلِكَ أَهْلُ النَّارِ» وَبِهَذَا الْإِسْنَاد قَالَ (ضَعِيف) : «إِنَّ عليهمُ التيجانَ أَدْنَى لُؤْلُؤَةٍ مِنْهَا لَتُضِيءُ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ والمغربِ» وَبِهَذَا الإِسناد قَالَ (صَحِيح لغيره) : «الْمُؤْمِنُ إِذَا اشْتَهَى الْوَلَدَ فِي الْجَنَّةِ كَانَ حَمْلُهُ وَوَضْعُهُ وَسِنُّهُ فِي سَاعَةٍ كَمَا يُشْتَهَى» وَقَالَ إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ فِي هَذَا الْحَدِيثِ: إِذَا اشْتَهَى الْمُؤْمِنُ فِي الْجَنَّةِ الْوَلَدَ كَانَ فِي سَاعَة وَلَكِن لَا يَشْتَهِي (قَول اسحاق لَيْسَ من الحَدِيث) رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث غَرِيب. روى ابْن مَاجَه الرَّابِعَة والدارمي الْأَخِيرَة

حسن ، رواہ الترمذی (1 / 2562) * قلت : و رواہ عبداللہ بن وھب : اخبرنی عمرو بن الحارث بہ (ابن حبان ، الاحسان : 7358 / 7401) و سندہ حسن ۔ ۔ ۔ حسن ، رواہ الترمذی (2 / 2562)و ابن ابی داود کما فی النھایۃ فی الفتن و الملاحم (2 / 132 ح 1203 و سندہ حسن) * قلت : رواہ ابن وھب : اخبرنا عمرو بن الحارث بہ ۔۔۔ حسن ، رواہ الترمذی (3 / 2563) و ابن حبان (الاحسان : 7354 / 7397 و سندہ حسن) * قلت : رواہ ابن وھب : أخبرنی عمرو بن الحارث بہ ۔ 0 حدیث ’’ المومن اذا اشتھی ‘‘ الخ سندہ حسن ، رواہ الترمذی (2563 وقال : حسن غریب) و ابن ماجہ (4328) والدارمی (2 / 337 ح 2837) ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে সর্বনিম্ন জান্নাতী ব্যক্তির জন্য আশি হাজার খাদেম ও বাহাত্তরজন স্ত্রী হবে হুরদের মধ্য থেকে এবং তাদের জন্য মণিমুক্তা, হীরা ও ইয়াকুত পাথরের গোলাকৃতির ছাউনি স্থাপন করা হবে। তাতে তারা বসে আনন্দ প্রকাশ করবে। অনেকে বলেছেন, উপরোক্ত সংখ্যা দ্বারা আধিক্যতা বুঝানো হয়েছে।
(مَنْ مَاتَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ مِنْ صَغِيرٍ) অর্থাৎ জান্নাতবাসী কেউ দুনিয়াতে ছোট অবস্থায় মারা গেলে সে জান্নাতে ত্রিশ বছর বয়সী যুবক হয়ে প্রবেশ করবে। উক্ত বয়স কখনো দুনিয়ার মতো বৃদ্ধি পাবে না। মোটকথা জান্নাতবাসীরা চিরকাল উক্ত বয়সেই থাকবে, বার্ধক্য কখনো তাদেরকে স্পর্শ করবে না।
(كَذَلِكَ أَهْلُ النَّارِ) জাহান্নামবাসীরাও অনুরূপ ত্রিশ বছর বয়সী হবে অর্থাৎ যেভাবে জান্নাতবাসীরা ত্রিশ বছর বয়সী হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে দুনিয়াতে তারা যেই বয়সেই মৃত্যুবরণ করুক না কেন? অনুরূপভাবে জাহান্নামবাসীরাও ত্রিশ বছর বয়সী হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং তারা চিরকাল সেখানে বসবাস করবে।
ত্রিশ বছর নির্ধারণের কারণ: যাতে করে জান্নাতবাসীরা পরিপূর্ণরূপে আরাম-আয়েশ ভোগ করতে পারে এবং জাহান্নামবাসীরা পরিপূর্ণরূপে ‘আযাব ভোগ করতে পারে। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৫৬৪৮)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ

৫৬৪৯-[৩৮] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতের হুরগণ এক জায়গায় সমবেত হয়ে উঁচুস্বরে এমন সুন্দর লহরীতে গাইবে, সৃষ্ট জীব সেই ধরনের লহরী কখনো শুনতে পায়নি। তারা বলবে, আমরা চিরদিন থাকব, কখনো ধ্বংস হব না। আমরা সর্বদা সুখে-সানন্দে থাকব, কখনো দুঃখ ও দুশ্চিন্তায় পতিত হব না। আমরা সদা খুশি থাকব কখনো নাখোশ হব না। অতএব তাকে ধন্যবাদ, যার জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যিনি। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)

وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَمُجْتَمَعًا لِلْحُورِ الْعِينِ يَرْفَعْنَ بِأَصْوَاتٍ لَمْ تَسْمَعِ الْخَلَائِقُ مِثْلَهَا يَقُلْنَ: نَحْنُ الْخَالِدَاتُ فَلَا نَبِيدُ وَنَحْنُ النَّاعِمَاتُ فَلَا نَبْأَسُ وَنَحْنُ الرَّاضِيَاتُ فَلَا نَسْخَطُ طُوبَى لِمَنْ كانَ لنا وَكُنَّا لَهُ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2564 ، 2550) * عبد الرحمن بن اسحاق الکوفی ضعیف ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: জান্নাতে হুরদের জন্য একটি মিলনকেন্দ্র হবে, সেখানে হুরেরা বিভিন্ন প্রকার কবিতা আবৃত্তি করবে সুরভিত কণ্ঠে, উঁচু আওয়াজে যা মানুষ কখনো শুনেনি। তারা বলবে,
(نَحْنُ الْخَالِدَاتُ فَلَا نَبِيدُ) আমরা চিরদিন থাকব কখনো ধ্বংস হব না। (وَنَحْنُ النَّاعِمَاتُ فَلَا نَبْأَسُ) আমাদের সর্বদা মুখে আনন্দ থাকবে কখনো দুঃখ ও দুশ্চিন্তায় পতিত হব না। (وَنَحْنُ الرَّاضِيَاتُ فَلَا نَسْخَطُ) আমরা সর্বদা সন্তুষ্ট থাকব কখনো নাখোশ হব না। (طُوبَى لِمَنْ كانَ لنا وَكُنَّا لَهُ) অতএব সুসংবাদ তাকে যার জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যিনি।
অন্য এক রিওয়ায়াতে এসেছে, সাহাবীরা বলেন, আমরা বললাম, হে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)! সেই গানটি কি হবে? তিনি বলেন, তা হবে আল্লাহর তাসবীহ ও প্রশংসা এবং তার পবিত্রতা বর্ণনা করা। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৫৬৪৯)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ

৫৬৫০-[৩৯] হাকীম ইবনু মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতে রয়েছে পানির সমুদ্র, মধুর দরিয়া, দুধের সমুদ্র এবং শরাবের দরিয়া। অতঃপর তা থেকে আরো বহু নদী প্রবাহিত হবে। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)

وَعَن حكيمِ بن مُعَاوِيَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَحْرُ الْمَاءِ وَبَحْرُ الْعَسَلِ وَبَحْرُ اللَّبَنِ وَبَحْرُ الْخَمْرِ ثُمَّ تشقَّقُ الأنهارُ بعدُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

حسن ، رواہ الترمذی (2571 وقال : حسن صحیح) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে যে, জান্নাতে পানির ও মধুর সাগর থাকবে এবং দুধের সাগর থাকবে ও মদের সাগর থাকবে। ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) (بَحْرُ) দ্বারা উদ্দেশ্য দাজলা ও ফুরাত এবং জান্নাতের নদীসমূহ। উপরে উল্লেখিত প্রত্যেকটির আলাদা আলাদাভাবে নদী হবে। যে যেটি থেকে পান করার ইচ্ছা পান করবে।
(تشقَّقُ الأنهارُ) উপরোল্লেখিত প্রত্যেকটির যে আলাদা আলাদা নদী হবে সেগুলো থেকে যেই শাখাপ্রশাখা বের হবে সেগুলোকে (أَنْهَارُ) বলা হয়েছে। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৫৬৫০)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ

৫৬৫১-[৪০] আর দারিমী হাদীসটি মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) হতে রিওয়ায়াত করেছেন।

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)

رَوَاهُ الدَّارمِيّ عَن مُعَاوِيَة

حسن ، رواہ الدارمی (2 / 337 ح 2839) ۔
(صَحِيح)


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ

৫৬৫২-[৪১] আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.)  থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: কোন জান্নাতী লোক সত্তরটি গদিতে (সিংহাসনে) হেলান দিয়ে বসবে। এটা শুধু তার একই স্থান থাকবে। অতঃপর একজন মহিলা (হুর) এসে তার কাঁধে চাপড় মারবে, তখন সে ঐ মহিলার দিকে দৃষ্টি দেবে, তার চেহারার উজ্জ্বলতা আয়নার চেয়ে বেশি স্বচ্ছ হবে এবং তার গায়ে রক্ষিত মামুলি মুক্তার আলো পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মধ্যবর্তী স্থানকে আলোকিত করে ফেলবে। মহিলাটি উক্ত পুরুষটিকে সালাম করবে, সে সালামের জবাব দিয়ে প্রশ্ন করবে, তুমি কে? মহিলাটি উত্তরে বলবে, আমি ’অতিরিক্ত সেবকদের অন্তর্ভুক্ত। তার পরনে বিভিন্ন রঙের সত্তরটি কাপড় থাকবে এবং তার ভিতর দিয়েই তার পায়ের নলার মজ্জা দেখা যাবে। আর তার মাথায় এমন মুকুট হবে, যার নিম্নমানের মুক্তার আলো পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্তের মধ্যবর্তী স্থান আলোকিত করে দেবে। (আহমাদ)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ الرَّجُلَ فِي الْجَنَّةِ لَيَتَّكِئُ فِي الْجَنَّةِ سَبْعِينَ مَسْنَدًا قَبْلَ أَنْ يَتَحَوَّلَ ثُمَّ تَأْتِيهِ امْرَأَةٌ فَتَضْرِبُ عَلَى مَنْكِبِهِ فَيَنْظُرُ وَجْهَهُ فِي خَدِّهَا أَصْفَى مِنَ الْمِرْآةِ وَإِنَّ أَدْنَى لُؤْلُؤَةٍ عَلَيْهَا تُضِيءُ مَا بينَ المشرقِ والمغربِ فتسلِّمُ عَلَيْهِ فيردُّ السلامَ وَيَسْأَلُهَا: مَنْ أَنْتِ؟ فَتَقُولُ: أَنَا مِنَ الْمَزِيدِ وَإِنَّهُ لَيَكُونُ عَلَيْهَا سَبْعُونَ ثَوْبًا فَيَنْفُذُهَا بَصَرُهُ حَتَّى يَرَى مُخَّ سَاقِهَا مِنْ وَرَاءِ ذَلِكَ وإِنَّ عَلَيْهَا من التيجان أَن أدنىلؤلؤة مِنْهَا لَتُضِيءُ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ . رَوَاهُ أَحْمد

حسن ، رواہ احمد (3 / 75 ح 11738) و ابن حبان فی صحیحہ (الاحسان : 7354 / 7397 و سندہ حسن) ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: (لَيَتَّكِئُ فِي الْجَنَّةِ سَبْعِينَ مَسْنَدً) জান্নাতী ব্যক্তি জান্নাতে সত্তরটি সোফার সেটে হেলান দিবে। প্রত্যেকটি সোফার সেট অনন্য হবে একটি অন্যটির সাথে মিশবে না।
এক একটির রং, উচ্চতা, বসার আরাম ইত্যাদির বিবেচনায় অন্যটির থেকে ভিন্নতর হবে। আর এটিই আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, (وَّ فُرُشٍ مَّرۡفُوۡعَۃٍ) “আর উঁচু উঁচু বিছানায়” (সূরাহ আল ওয়াকি'আহ্ ৫৬ : ৩৪)। এ আয়াতও প্রমাণ করে যে, জান্নাতীদের বিছানা, আরাম করার আসবাবপত্র অনেক বেশি হবে। এই সমস্ত আসবাবপত্রের ধরণ ও সৌন্দর্য ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ

৫৬৫৩-[৪২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী (সা.) কথাবার্তা বলছিলেন। এ সময় তাঁর কাছে একজন গ্রাম্য বেদুইন উপস্থিত ছিল। তিনি (সা.) বললেন, জান্নাতবাসী এক লোক সেখানে কৃষিকাজ করার জন্য তার প্রভুর কাছে অনুমতি চাবে। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে বলবেন, তোমার চাহিদা মতো সবই কি পাচ্ছ না? লোকটি বলল, হ্যা, তবে আমি কৃষিকাজ ভালোবাসি। অতঃপর সে বীজ বপন করবে এবং চক্ষুর পলকে তা উদ্গত হবে, পোক্ত হবে এবং ফসল কাটা হবে। এমনকি পাহাড়ের সমান স্তুপ হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, হে আদম সন্তান নিয়ে যাও, কোন কিছুতেই তোমার তৃপ্তি হয় না। তখন গ্রাম্য বেদুইন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ! দেখবেন, সে হয়তো কোন কুরায়শী অথবা আনসার গোত্রীয় লোক হবে। কেননা তারাই কৃষিকাজ করে থাকে। আর আমরা তো কৃষিকাজ করি না। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার কথা শুনে হেসে দিলেন। (বুখারী)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَتَحَدَّثُ - وَعِنْدَهُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ -: إِنَّ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ اسْتَأْذَنَ رَبَّهُ فِي الزَّرْعِ. فَقَالَ لَهُ: أَلَسْتَ فِيمَا شِئْتَ؟ قَالَ: بَلَى وَلَكِنْ أُحِبُّ أَنْ أَزْرَعَ فَبَذَرَ فَبَادَرَ الطَّرْفَ نَبَاتُهُ وَاسْتِوَاؤُهُ وَاسْتِحْصَادُهُ فَكَانَ أَمْثَالَ الْجِبَالِ. فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: دُونَكَ يَا ابْن آدم فَإِنَّهُ يُشْبِعُكَ شَيْءٌ . فَقَالَ الْأَعْرَابِيُّ: وَاللَّهِ لَا تَجِدُهُ إِلَّا قُرَشِيًّا أَوْ أَنْصَارِيًّا فَإِنَّهُمْ أَصْحَابُ زَرْعٍ وَأَمَّا نَحْنُ فَلَسْنَا بِأَصْحَابِ زَرْعٍ فَضَحِكَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

رواہ البخاری (2348) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ) অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তখন তাঁর পাশে একজন বেদুইন ব্যক্তি বসা ছিল। যিনি মরুতে বাস করেন।
(أَلَسْتَ فِيمَا شِئْتَ؟) আল্লাহ তা'আলা জান্নাতী লোকটিকে সম্বোধন করে বললেন, হে আমার বান্দা! তুমি যে জান্নাতে আছ তাতে কি সকল প্রকারের নাজ-নিআমাত নেই? এখানে তো খাদ্য-পানিয় ও সব ধরনের চাওয়া-পাওয়া বিদ্যমান। এখানে কৃষি উৎপন্ন শষ্যাদিও বিদ্যমান আছে। অতএব তুমি যা চাইবে তাই পাইবে।
(دُونَكَ يَا ابْن آدم) আল্লাহ তা'আলা বলবেন, হে আদম সন্তান! গ্রহণ কর যা তোমার মন চায়। এখানে সবকিছুই আছে। এটা সব কিছু পাওয়ার স্থান।
(فَإِنَّهُ يُشْبِعُكَ شَيْءٌ) অর্থাৎ জান্নাতে এত সব জিনিস থাকতেও তুমি কৃষি করতে চাচ্ছ। তাহলে কি কোন জিনিস দ্বারাই তুমি তৃপ্তি লাভ করবে না?
(فَقَالَ الْأَعْرَابِيُّ: وَاللَّهِ لَا تَجِدُهُ إِلَّا قُرَشِيًّا أَوْ أَنْصَارِيًّا) বেদুইন লোকটি অবাক হয়ে বলল, জান্নাতে গিয়েও কৃষিকাজ করতে চাইবে? তাহলে এই স্বভাবের লোক কেবল কুরায়শের ও আনসারীদের মধ্য থেকেই হবে। এখানে বেদুইন লোকটি কুরায়শ বলতে মক্কাবাসী ও আনসারী বলতে মদীনাবাসীদেরকে বুঝিয়েছে। কেননা মক্কাহ্ ও মদীনাবাসী কৃষিকাজ করে থাকে। (ফাতহুল বারী হা. ২৩৪৮)


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ

৫৬৫৪-[৪৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে জিজ্ঞেস করল, জান্নাতবাসীগণ কি ঘুমাবে? তিনি বললেন, নিদ্রা তো মৃত্যুর সহোদর। আর জান্নাতবাসী মরবে না (অতএব তাদের কোন নিদ্রা নেই)। (বায়হাকী’র শু’আবূল ঈমান)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: سَأَلَ رَجُلٌ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيَنَامُ أَهْلُ الْجَنَّةِ؟ قَالَ: «النَّوْمُ أَخُو الْمَوْتِ وَلَا يَمُوتُ أَهْلُ الجنةِ» . رواهُ البيهقيُّ فِي «شعب الْإِيمَان»

اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (4745 ، نسخۃ محققۃ : 4416) * سفیان الثوری مدلس و عنعن و لحدیثہ شواھد ضعیفۃ و مرسلۃ فی الصحیحۃ للالبانی (1087) و معناہ صحیح

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে যখন প্রশ্ন করা হলো যে, জান্নাতীরা কি ঘুমাবে? তখন রাসূল (সা.) দলীলে বুরহানী দ্বারা উত্তর দিয়েছেন। আর সরাসরি “না” দ্বারা উত্তর না দিয়ে এভাবে উত্তর দেয়ায় আত্মার প্রশান্তি এবং ঈমানের দৃঢ়তা আসে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ

৫৬৫৫-[১] জাবীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: শীঘ্রই তোমরা নিশ্চিত তোমাদের প্রভুকে স্বচক্ষে প্রকাশ্যে দেখতে পাবে। আর অপর এক বর্ণনাতে আছে- জারীর (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে বসাছিলাম। তিনি (সা.) পূর্ণিমার রাত্রে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা অচিরেই তোমাদের প্রভুকে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা এই চাঁদকে দেখছ। তাঁর দর্শনে তোমরা কোনরূপ বাধাপ্রাপ্ত হবে না। অতএব তোমরা সাধ্যমত চেষ্টা করবে সূর্য উদয়ের পূর্বের সলাত সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের আগের সলাত সূর্যাস্তের আগে আদায় করতে যেন ব্যর্থ না হও। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করলেন- (وَ سَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ قَبۡلَ طُلُوۡعِ الشَّمۡسِ وَ قَبۡلَ غُرُوۡبِهَا) “সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে আপন প্রভুর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা কর”- (সূরাহ্ ত্ব-হা- ২০ : ১৩০)। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)

عَن جَرِيرِ بْنِ عَبْدُ اللَّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ عِيَانًا» . وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ فَقَالَ: «إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ لَا تُضَامُونَ فِي رُؤْيَتِهِ فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لَا تُغْلَبُوا عَلَى صَلَاةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا فَافْعَلُوا» ثُمَّ قَرَأَ (وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبهَا) مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (554) و مسلم (211 / 632)، (1432) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: (إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ عِيَانًا) হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের রবকে কোন ধরনের পর্দা বা প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই স্বচক্ষে দেখবে।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের মাযহাব হচ্ছে, আল্লাহ তা'আলাকে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই দেখা সম্ভব, আর তা মু'মিনদের জন্য পরকালে হবে।
মুতাজিলা, খারিজী এবং মুরজিয়ারা বলেন, কোন সৃষ্টি আল্লাহকে দেখতে পাবে না আর আল্লাহ তা'আলাকে দেখা সম্পূর্ণ অসম্ভব। কেননা কুরআন হাদীস এবং সাহাবীদের ইজমা এবং তাদের পরবর্তী সালাফদের বক্তব্য এ ব্যাপারে দলীল হয়ে আছে। বিশজন সাহাবী রাসূল এ থেকে আল্লাহকে দেখার ব্যাপারে হাদীস বর্ণনা করেছেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ২৫৫১)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ

৫৬৫৬-[২] সুহায়ব (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: জান্নাতবাসীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলবেন, তোমরা কি আরো কিছু চাও, যা আমি তোমাদেরকে অতিরিক্ত প্রদান করব। তারা বলবে, তুমি কি আমাদের মুখমণ্ডলকে আলোকিত করনি? তুমি কি আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাওনি। তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর আল্লাহ তা’আলা হিজাব বা পর্দা তুলে ফেলবেন, তখন তারা আল্লাহ তা’আলার দর্শন লাভ করবে। মূলত আল্লাহ তা’আলার দর্শন লাভ ও তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকার তুলনায় বেশি প্রিয় কোন বস্তুই তাদেরকে প্রদান করা হয়নি। অতঃপর তিনি কুরআনের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন- “যারা উত্তম কাজ করেছে তার প্রতিদান ভালোই (অর্থাৎ জান্নাত তার উপর অতিরিক্ত)”- (সূরাহ্ ইউনুস ১০: ২৬)। তার উপর অতিরিক্ত হলো- তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান এবং তার উপর অতিরিক্ত অবদান (অর্থাৎ দীদারে এলাহী)। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)

وَعَن صُهَيْب عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: تُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا؟ أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ؟ قَالَ: «فَيُرْفَعُ الْحِجَابُ فَيَنْظُرُونَ إِلَى وَجْهِ اللَّهِ فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ» ثُمَّ تَلَا (لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَة) رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (298 ، 297 / 181)، (449) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (فَيُرْفَعُ الْحِجَابُ) অর্থাৎ পর্দা উঠিয়ে নেয়া হবে। মূলত আল্লাহ তা'আলা পর্দাবৃত হওয়া থেকে মুক্ত এবং পবিত্র, তাহলে পর্দা উঠিয়ে নেয়ার মর্মার্থ হচ্ছে, মানুষের চক্ষু থেকে পর্দা উঠিয়ে নেয়া হবে তখন তারা আল্লাহ তা'আলার চেহারার দিকে তাকাবে। আর কুরআনে বর্ণিত, (لِلَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوا الۡحُسۡنٰی وَ زِیَادَۃٌ ؕ…) “যারা কল্যাণকর কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ...”- (সূরাহ্ ইউনুস ১০ : ২৬)। এ আয়াতে (زِیَادَۃٌ) এর ব্যাখ্যায় অধিকাংশ মুফাসসিরগন বলেছেন, তা হচ্ছে আল্লাহ তা'আলাকে দেখা। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা, ২৫৫২)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ

৫৬৫৭-[৩] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: নিম্নমানের জান্নাতী তার উদ্যানসমূহ, স্ত্রীগণ, নি’আমাতের সারি, সেবক ও সেবককুল এবং তার আসনসমূহ একহাজার বছরের দূরত্ব পরিমাণ বিস্তীর্ণ দেখতে পাবে। আর আল্লাহ তা’আলার কাছে সেই লোকই উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানী হবে, যে সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহ তা’আলার দর্শন লাভ করবে। অতঃপর রাসূল (সা.) এ আয়াতটি পাঠ করলেন, “সেদিন কিছু সংখ্যক চেহারা স্বীয় প্রভুর দর্শন লাভে তরতাজা ও আলোকিত হয়ে উঠবে এবং তাদের প্রভুর দিকে তাকিয়ে থাকবে”- (সূরাহ আল কিয়ামাহ ৭৫: ২২-২৩)। (আহমাদ ও তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً لَمَنْ يَنْظُرُ إِلَى جِنَانِهِ وَأَزْوَاجِهِ وَنَعِيمِهِ وَخَدَمِهِ وَسُرُرِهِ مَسِيرَةَ أَلْفِ سَنَةٍ وَأَكْرَمَهُمْ عَلَى اللَّهِ مَنْ يَنْظُرُ إِلَى وَجْهِهِ غُدْوَةً وَعَشِيَّةً» ثُمَّ قَرَأَ (وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ إِلَى ربّها ناظرة) رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ

اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (2 / 64 ح 5317) و الترمذی (2553) * فیہ ثویر : ضعیف ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: (إِنَّ أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ) অত্র হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বনিম্ন সুবিধাপ্রাপ্ত জান্নাতীর নি'আমাতরাজির কথা বলেছেন তাকে যে পরিমাণ আসবাবপত্র এবং নাজ-নি'আমাত দেয়া হবে এর দিকে যদি তাকায় এবং তার বাগান, অন্যান্য নি'আমাত খাদিম, খাট-পালংক ইত্যাদির দিকে যদি তাকায় এবং তা হিসাব করে, তাহলে এগুলোর দূরত্ব হবে এক হাজার বছর চলার দূরত্ব। অর্থাৎ তার রাজত্ব হবে এক হাজার বছরের দূরত্ব পরিমাণ। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী হা. ২৫৫৩)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ

৫৬৫৮-[8] আবূ রযীন আল ’উকায়লী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন আমাদের প্রত্যেক লোকই কি স্বতন্ত্রভাবে তার প্রভুকে দেখতে পাবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা দেখতে পাবে। আবূ রযীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আবার প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা, তার সৃষ্টিকুলের মাঝে এর কোন উপমা আছে কি? উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, হে আবূ রযীন! তোমাদের প্রত্যেক লোক কি মানুষের ভিড় ছাড়া স্বতন্ত্রভাবে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে পায় না? আবূ রযীন (রহিমাহুল্লাহ) বললেন, হা। তখন তিনি [রাসূলুল্লাহ (সা.)] বললেন, চাঁদ হলো আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিসমূহের একটি সৃষ্টি। অথচ আল্লাহ তা’আলা হলেন সুমহান ও বিরাট সত্তা। (আবূ দাউদ)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)

وَبَعْضهمْ يُحسنهُ) وَعَن أبي رزين الْعقيلِيّ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَكُلُّنَا يَرَى رَبَّهُ مُخْلِيًا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ: «بَلَى» . قَالَ: وَمَا آيَةُ ذَلِكَ فِي خَلْقِهِ؟ قَالَ: «يَا أَبَا رَزِينٍ أَلَيْسَ كُلُّكُمْ يَرَى الْقَمَرَ لَيْلَةَ البدرِ مُخْلِيًا بِهِ؟» قَالَ: بَلَى. قَالَ: «فَإِنَّمَا هُوَ خَلْقٌ مِنْ خَلْقِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَجَلُّ وَأَعْظَمُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

اسنادہ حسن ، رواہ ابوداؤد (4731)

ব্যাখ্যা: (كُلُّنَا يَرَى رَبَّهُ) সাহাবী আশ্চর্য হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে প্রশ্ন করল, আমাদের সবাই কি আল্লাহ তা'আলাকে স্বচক্ষে দেখতে পাবে। সাহাবী পুনরায় প্রশ্ন করল- আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টির মাঝে এর কি নিদর্শন আছে? উত্তরে রাসূল বললেন, তোমাদের সবাই কি চন্দ্রকে দেখতে পাও না? সাহাবী বলল, হ্যা, দেখতে পাই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, চন্দ্র হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার একটি সৃষ্টিমাত্র। তিনি এর চেয়েও অনেক মহান সুউচ্চ ও মর্যাদাবান। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ

৫৬৫৯-[৫] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি (মি’রাজের রাত্রে) আপনার প্রভুকে দেখেছেন? জবাবে তিনি (সা.) বললেন, তিনি তো এক বিরাট জ্যোতি বা আলো, অতএব আমি তাকে কিভাবে দেখতে পারি? (মুসলিম)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)

عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ سَأَلَتْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَلْ رَأَيْتَ رَبَّكَ؟ قَالَ: «نُورٌ أَنَّى أَرَاهُ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (291 / 178)، (443) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (نُورٌ أَنَّى أَرَاهُ) ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহ তা'আলার পর্দা তথা নূর। অতএব কিভাবে তাকে দেখব? ইমাম আবূ আবদুল্লাহ আল মাযীব্যু আয যমীর (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (أَرَاهُ) শব্দের জমির ফিরবে, আল্লাহর দিকে। এর অর্থ হলো, তার নূর তাকে দেখতে বাধা দিয়েছে।
কেউ কেউ বলেছেন, একটি নূর কোথায় থেকে তা দেখতে পাব? তখন (أَنِّىْ) এর স্থলে (أَنَّى) হবে। কোন কোন হানাফী মাশায়েখ বলেন, মূল ইবারত হবে (نُورٌأَنَّى أَرَاهُ) অর্থাৎ আমি নূরানী আল্লাহকে দেখেছি।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, (نُورٌ أَنَّى) দুই শব্দকে একসাথে মিশিয়ে এক শব্দ বানানো বড় ভুল এবং হাদীসের ইবারতে হস্তক্ষেপ করার শামিল। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩২৮২)


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ

৫৬৬০-[৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি (مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى. . . . وَلَقَدْ رَآهُ نزلة أُخْرَى)  “(নবীর) অন্তঃকরণ মিথ্যে মনে করেনি যা সে দেখে ছিল। সে যা দেখেছে সে বিষয়ে তোমরা কি তার সঙ্গে বিতর্ক করবে? অবশ্যই সে [নবী (সা.)] তাঁকে (জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে) আরেকবার দেখেছিল” (সূরাহ আন্ নাজুম ৫৩: ১১-১৩); আয়াতের তাফসীর বা ব্যাখ্যায় বলেছেন, মুহাম্মাদ (সা.) অন্তর-চক্ষু দ্বারা আল্লাহ তা’আলাকে দু’বার দেখেছেন। (মুসলিম)

আর তিরমিযীর বর্ণনাতে আছে- উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, মুহাম্মাদ (সা.) তার প্রভুকে দেখেছেন, “ইকরিমাহ্ বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহ তা’আলা কি বলেননি- (لَا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ وَهُوَ يدْرك الْأَبْصَار) “চক্ষুসমূহ তাঁকে দেখতে পারে না, কিন্তু তিনি চক্ষুসমূহকে দেখতে পান”- (সূরা আল আ’আম ৬ : ১০৩)। উত্তরে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তোমার প্রতি আক্ষেপ। আরে! তা তো সেই সময়ের সম্পর্কে বলা হয়েছে, যখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর বিশেষ জ্যোতিতে আত্মপ্রকাশ করবেন (তখন তাঁকে দেখা সম্ভব নয়) তবে মুহাম্মাদ (সা.) তার প্রভুকে (স্বাভাবিক অবস্থায়) দু’বার দেখেছেন।

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)

وَعَن ابْن عَبَّاس: (مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى. . . . وَلَقَدْ رَآهُ نزلة أُخْرَى) قَالَ: رَآهُ بِفُؤَادِهِ مَرَّتَيْنِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَة لِلتِّرْمِذِي قَالَ: رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ. قَالَ عِكْرِمَةُ قُلْتُ: أَلَيْسَ اللَّهُ يَقُولُ: (لَا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ وَهُوَ يدْرك الْأَبْصَار) ؟ قَالَ: وَيحك إِذَا تَجَلَّى بِنُورِهِ الَّذِي هُوَ نُورُهُ وَقَدْ رأى ربه مرَّتَيْنِ

رواہ مسلم (285 / 176)، (437) و الترمذی (3279 وقال : حسن غریب) و حدیث الترمذی حدیث حسن و رواہ ابن خزیمۃ فی التوحید (ص 198 ح 273) و ابن ابی عاصم فی السنۃ (437 / 446) بسند حسن بہ ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (ربه مرَّتَيْنِ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, নবী মুহাম্মাদ (সা.) - কে দু’বার দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ নবী মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তা'আলাকে দু'বার দেখেছেন। উল্লেখিত ইবারতটুকু অধিকাংশ সালাফে-সালিহীনের অভিমতের বিপক্ষে এবং সরাসরি কুরআনের আয়াতেরও বিরুদ্ধে যায়। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী হা. ৩২৭৯)


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ

৫৬৬১-[৭] শা’বী (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে ’আরাফাতের মাঠে কাবে আহবার (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি তাঁকে এ বিষয়ে (আল্লাহ তা’আলার দর্শন সম্পর্কে) প্রশ্ন করলেন। তা শ্রবণে কা’ব (রাঃ) এমন জোরে আল্লা-হু আকবার আওয়াজ দিলেন যে, তা পাহাড় পর্যন্ত প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠল। তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমরা হাশিম-এর বংশধর (অর্থাৎ যথার্থ জ্ঞানের অধিকারী, অতএব অবাস্তব ও অযৌক্তিক কথা আমরা বলি না)। অতঃপর কা’ব (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা’আলা তাঁর দর্শন ও বচনকে মুহাম্মাদ (সা.) ও মূসা আলায়হিস সালাম-এর মাঝে বিভক্ত করেছেন। অতএব মূসা আলায়হি সালাম আল্লাহ তা’আলার সাথে দু’বার কথাবার্তা বলেছেন এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহকে দু’বার দেখেছেন। মাসরূক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর কাছে উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন করলাম, মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রভুকে দেখেছেন কি? জবাবে ’আয়িশাহ্ (সাঃ) বললেন, হে মাসরূক! তুমি আমাকে এমন এক কথা জিজ্ঞেস করেছ, যা শ্রবণে আমার দেহের পশম খাড়া হয়ে গেছে। মাসরূক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি বললাম, আপনি আমাকে সুযোগ দিন। অতঃপর আমি এ আয়াতটি পাঠ করলাম- (لقد رأى من آيَات ربّه الْكُبْرَى) “মুহাম্মাদ ও তাঁর প্রভুর বিরাট বিরাট নিদর্শনসমূহ দেখেছেন"- (সূরা আন্ নাজম ৫৩ : ১৮)। তখন ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, এ আয়াত তোমাকে কোথায় নিয়ে পৌছিয়েছে? বরং তা দ্বারা জিবরীল (আঃ)-কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। [অতঃপর ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন,] যে লোক তোমাকে বলে, মুহাম্মাদ (সা.) তার প্রভুকে দেখেছেন অথবা তাঁকে যা কিছু নির্দেশ করা হয়েছে, তা থেকে তিনি কিছু গোপন করেছেন অথবা মুহাম্মাদ (সা.) সেই পাঁচটি বিষয় অবগত ছিলেন, যেগুলো এ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে- (اِنَّ اللّٰهَ عِنۡدَهٗ عِلۡمُ السَّاعَۃِ ۚ وَ یُنَزِّلُ الۡغَیۡثَ) “কিয়ামাতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই আছে, তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন...”- (সূরা লুকমান ৩১ : ৩৪)। [অর্থাৎ সে লোক মুহাম্মাদ (সা.) -এর ওপর জঘন্য মিথ্যারোপ করল।
প্রকৃত কথা হলো, না তিনি আল্লাহকে দেখেছেন, না তিনি আল্লাহর কোন বিধান গোপন করেছেন, আর না তিনি ঐ পাঁচটি ব্যাপারে অবগত ছিলেন, যেগুলোর জ্ঞান আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত ও তার একক বৈশিষ্ট্য]
হ্যাঁ; বরং তিনি জিবরীল (আঃ)-কে দেখেছেন। অবশ্য জিবরীল আলায়হিস সালাম-কেও তিনি তাঁর আসলরূপে মাত্র দু’বার দেখেছেন। একবার সিদরাতুল মুনতাহার কাছে, আরেকবার ’উক্বার ’আজইয়াদে। (আজইয়াদ মক্কা নগরীতে একটি বস্তির নাম। (أَجْيَادٍ) নামে হেরেম শরীফের একটি দ্বারও আছে) রাসূলুল্লাহ (সা.) - যখন তাঁকে প্রকৃত আকৃতিতে দেখেছেন তখন তাঁর ছয়শত ডানা ছিল এবং তা গোটা আকাশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল। (তিরমিযী)

তবে বুখারী ও মুসলিম-এর বর্ণনাতে কিছু বাক্য বৃদ্ধি ও পার্থক্যসহ বর্ণিত আছে। যথা- মাসরূক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ) -কে প্রশ্ন করলাম, দূরত্বে যদি তাই হয়, যা আপনি বলেছেন, তাহলে আল্লাহর বাণী- (ثُمَّ دَنَا فَتَدَلّٰی ۙ﴿۸﴾ فَکَانَ قَابَ قَوۡسَیۡنِ اَوۡ اَدۡنٰی ۚ﴿۹﴾) “অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন, অতঃপর আরো কাছে এলেন, তখন সে নৈকট্য ছিল দু’ ধনুকের পরিমাণ, অথবা তারও কম”- (সূরাহ আন্ নাজম ৫৩ : ৮-৯)। এটার অর্থ কি? উত্তরে ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, এর দ্বারা জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে বুঝানো হয়েছে। তিনি সাধারণত মানুষের আকৃতিতে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে আসতেন, কিন্তু এবার তিনি তাঁর প্রকৃতরূপে রাসূল-এর সামনে এসেছিলেন, ফলে তা গোটা আকাশ জুড়ে গিয়েছিল।

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)

وَعَن الشّعبِيّ قَالَ: لَقِيَ ابْنُ عَبَّاسٍ كَعْبًا بِعَرَفَةَ فَسَأَلَهُ عَنْ شَيْءٍ فَكَبَّرَ حَتَّى جَاوَبَتْهُ الْجِبَالُ. فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: إِنَّا بَنُو هَاشِمٍ. فَقَالَ كَعْبٌ: إِنَّ اللَّهَ قَسَّمَ رُؤْيَتَهُ وَكَلَامَهُ بَيْنَ مُحَمَّدٍ وَمُوسَى فَكَلَّمَ مُوسَى مَرَّتَيْنِ وَرَآهُ مُحَمَّدٌ مَرَّتَيْنِ. قَالَ مسروقٌ: فَدخلت على عَائِشَة فَقلت: هَل رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ؟ فَقَالَتْ: لَقَدْ تَكَلَّمْتَ بِشَيْءٍ قَفَّ لَهُ شَعَرِي قُلْتُ: رُوَيْدًا ثُمَّ قَرَأْتُ (لقد رأى من آيَات ربّه الْكُبْرَى) فَقَالَتْ: أَيْنَ تَذْهَبُ بِكَ؟ إِنَّمَا هُوَ جِبْرِيلُ. مَنْ أَخْبَرَكَ أَنَّ مُحَمَّدًا رَأَى رَبَّهُ أَوْ كَتَمَ شَيْئًا مِمَّا أُمِرَ بِهِ أَوْ يَعْلَمُ الْخَمْسَ الَّتِي قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: (إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ) فَقَدْ أَعْظَمَ الْفِرْيَةَ وَلَكِنَّهُ رَأَى جِبْرِيلَ لَمْ يَرَهُ فِي صُورَتِهِ إِلَّا مَرَّتَيْنِ: مَرَّةً عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَمَرَّةً فِي أَجْيَادٍ لَهُ سِتُّمِائَةِ جَنَاحٍ قَدْ سَدَّ الْأُفُقَ رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَرَوَى الشَّيْخَانِ مَعَ زِيَادَةٍ وَاخْتِلَافٍ وَفِي رِوَايَتِهِمَا: قَالَ: قُلْتُ لِعَائِشَةَ: فَأَيْنَ قَوْلُهُ (ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى) ؟ قَالَتْ: ذَاكَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ يَأْتِيهِ فِي صُورَةِ الرَّجُلِ وَإِنَّهُ أَتَاهُ هَذِهِ الْمَرَّةَ فِي صُورَتِهِ الَّتِي هِيَ صُورَتُهُ فَسَدَّ الْأُفُقَ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3278) * فیہ مجالد بن سعید : ضعیف و اصل الحدیث عند البخاری [4855] و مسلم [177]، بغیر ھذا اللفظ) و الروایۃ الثانیۃ صحیحۃ متفق علیھا (رواھا البخاری : 3235 و مسلم : 290 / 177)، (439) ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: (حَتَّى جَاوَبَتْهُ الْجِبَالُ) ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন যে, তিনি (কাব) আওয়াজ উঁচু করে এমন তাকবীর দিলেন পাহাড় পর্যন্ত আকাশ প্রতিধ্বনি দিল, মনে হচ্ছিল যে, তিনি প্রশ্নটাকে খুব বড় মনে করেছিলেন তাই তিনি তাকবীর দিয়েছেন। হয়তো ঐ প্রশ্নটি ছিল আল্লাহর দর্শন সম্পর্কিত, তাই তার শরীরের পশম পর্যন্ত দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
(هَل رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ؟) ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি প্রতিটি আয়াত পড়েছি, যার উপসংহার হলো এই আয়াতটি, (لَقَدۡ رَاٰی مِنۡ اٰیٰتِ رَبِّهِ الۡکُبۡرٰی) “সে তার প্রতিপালকের বড় বড় নিদর্শন দেখেছিল”- (সূরা আন নাজম ৫৩: ১৮)। যেমন অন্য আরেকটি বর্ণনাতে তার সমর্থন করে, অর্থাৎ: قُلْتُ لِعَائِشَةَ: فَأَيْنَ قَوْلُهُ (ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى) অতএব আমি বলব, অন্য বর্ণনাটির মধ্যেও (رَأَى) শব্দটি নেই, অতএব স্পষ্ট হয়ে গেল যে, তিনি (আল্লাহ) উদ্দেশ্য নিয়েছেন তার মান মুতাবেক বড় একটি নিদর্শন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(فَقَالَتْ: أَيْنَ تَذْهَبُ بِكَ؟) আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ তুমি আয়াতের অর্থ থেকে যা বুঝেছ ভুল বুঝেছ এবং এই মত পোষণ করছ। আর আয়াত তাকে এই ভুল মতের দিকে নিয়ে যাওয়ার কথাটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, অতএব সার কথা হলো উক্ত আয়াতে জিবরীল আলায়হিস সালাম-ই উদ্দেশ্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩২৭৮)


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ

৫৬৬২-[৮] ইবনু মাস’উদ (রাঃ) বর্ণনা করেন। আল্লাহর বাণী- (فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى) ফলে [নবী (সা.) ও জিবরীলের মাঝে] দুই ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা আরো কম”- (সূরা আন্ নাজম ৫৩ : ৯) এবং (مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى) “(নবীর) অন্তঃকরণ মিথ্যে মনে করেনি যা সে দেখেছিল” (সূরা আন্ নাজম ৫৩ : ১১) ও (لَقَدۡ رَاٰی مِنۡ اٰیٰتِ رَبِّهِ الۡکُبۡرٰی) “সে তার প্রতিপালকের বড় বড় নিদর্শন দেখেছিল”- (সূরাহ্ আন্ নাজম ৫৩ : ১৮) এ সকল আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) জিবরীল (আঃ)-কে দেখেছেন এবং তার ছয়শত ডানা আছে। (বুখারী ও মুসলিম)

আর তিরমিযীর বর্ণনায় আছে, ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) (مَا کَذَبَ الۡفُؤَادُ مَا رَاٰی) (সূরা আন নাজম ৫৩ : ১১)-এর সম্পর্কে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) - জিবরীল (আঃ)-কে এক জোড়া সবুজ পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছেন, তিনি আকাশ ও জমিনের মধ্যবর্তী শূন্যতাকে জুড়ে রেখেছেন।
আর বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, (لَقَدۡ رَاٰی مِنۡ اٰیٰتِ رَبِّهِ الۡکُبۡرٰی) (সূরা আন্ নাজম ৫৩ : ১৮)-এর ব্যাখ্যায় ইবনু মাস্উদ (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সবুজ রঙের রফরফ (পরিহিত জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে) দেখেছেন, যা গোটা আকাশ জুড়ে রেখেছে।

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)

وَعَن ابْن مَسْعُود فِي قَوْلِهِ: (فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى) وَفِي قَوْلِهِ: (مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى) وَفِي قَوْلِهِ: (رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى) قَالَ فِيهَا كُلِّهَا: رَأَى جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَهُ سِتُّمِائَةِ جَنَاحٍ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةِ التِّرْمِذِيِّ قَالَ: (مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى) قَالَ: رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جِبْرِيلَ فِي حُلَّةٍ مِنْ رَفْرَفٍ قَدْ مَلَأَ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَهُ وَلِلْبُخَارِيِّ فِي قَوْلِهِ: (لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى) قَالَ: رَأَى رَفْرَفًا أَخْضَرَ سَدَّ أُفُقَ السَّمَاءِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4856 و الروایۃ الاخیرۃ : 4858) و مسلم (282 ، 281 / 174)، (432) و الترمذی (3283 وقال : حسن صحیح) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)


দেখানো হচ্ছেঃ ৫৬৪১ থেকে ৫৬৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৯৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 280 281 282 283 284 · · · 312 313 314 315 পরের পাতা »