কুরআনে কারীমে "ভয়" এর অনুভূতির জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দ

কুরআনে কারীমে কিছু শব্দ রয়েছে, যেগুলো মানুষের এমন মানসিক অবস্থাকে বোঝায়, যা কোনো ভালো বা খারাপ কাজের কারণে তার মনে সৃষ্টি হয়। এসব অনুভূতির প্রকাশ কুরআনে কারীমে বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে করা হয়েছে, যেমন: 

খাশিয়া (ভয় সহ শ্রদ্ধা), 
খাওফ (ভয়), 
ফাযাʼ (আতঙ্ক), 
রু'ব (ভীতিকর আতঙ্ক), 
রাহবা (আতঙ্ক সহ সাবধানতা), 
ওয়াজাফ (কম্পন), 
ওয়াজাল (ভীত সন্ত্রস্ত হওয়া)। 
এই শব্দগুলোর মধ্যে সাধারণ কিছু মিল থাকলেও, কুরআনে ব্যবহৃত প্রসঙ্গ অনুযায়ী এদের মাঝে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্যও রয়েছে। আমাদের আলোচনায় আমরা প্রথমে এসব শব্দের ভাষাগত অর্থ তুলে ধরব, এরপর তাদের তাৎপর্যমূলক পার্থক্য ব্যাখ্যা করব।

১. আল-জাযা‘ (الجزع)
‘জাযাʼ শব্দের অর্থ এমন একটি দুঃখ বা কষ্ট, যা মানুষকে সে যেটা করছিল, তা করা থেকে বিচ্যুত করে। এর মূল অর্থ হলো: কোনো দড়িকে মাঝখান থেকে কেটে ফেলা। এটি ধৈর্যের বিপরীত। কুরআনে এটি এসেছে দুইবার:
ফেল করা অর্থে: {আমরা ধৈর্য ধরি বা চিৎকার করি, কিছুই তফাৎ হয় না} (ইব্রাহিম: ২১)
নামরূপে: {যখন বিপদ আসে, তখন সে হয়ে পড়ে অতিশয় জাজুয়া} (আল-মাআরিজ: ২০)

২. আল-হাযার (الحذر)
হাযার অর্থ এমন এক সতর্কতা, যা কোনো ভয়ের আশঙ্কায় নেওয়া হয়। কুরআনে এটি এসেছে ১৭ বার। যেমন:
ক্রিয়াপদ হিসেবে: {আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর কাছ থেকে সতর্ক করছেন} (আল-ইমরান: ২৮)
নামরূপে: {আমরা সবাই সতর্ক ছিলাম} (আশ-শু‘আরা: ৫৬)

৩. আল-খাশইয়া (الخشية)
খাশইয়া হলো এমন এক ধরনের ভয়, যা শ্রদ্ধা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে হয়। কুরআনে এটি এসেছে ২৩ বার। যেমন:
{আল্লাহকে তাঁর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী, তারাই ভয় করে} (ফাতির: ২৮)

৪. আল-খাওফ (الخوف)
খাওফ মানে হলো: এমন এক শঙ্কা, যার ভিত্তি হতে পারে কোনো অনুমান বা নিশ্চিত প্রমাণ। এটি আশা (রজা) ও ভরসার বিপরীত। কুরআনে এসেছে ৬৫ বার। যেমন, 
{তারা তাঁর রহমত আশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে} (ইসরা: ৫৭)

৫. আর-রু‘ব (الرعب)
রু‘ব মানে হলো: এমন ভয়, যা সম্পূর্ণ আত্মার ভিতর কাঁপন ধরিয়ে দেয়। কুরআনে এসেছে ৫ বার:
{আমি কাফেরদের অন্তরে রু‘ব ছড়িয়ে দেব} (আলে ইমরান: ১৫১)

৬. আর-রাহবা (الرهبة)
রাহবা অর্থ: ভয় সহ নিরাপত্তার চেষ্টা, অভ্যন্তরীণ উদ্বেগ। কুরআনে এসেছে ৮ বার:
{তারা তাদের রবকে ভয় করে} (আল-আ‘রাফ: ১৫৪)

৭. আর-রওʼউ (الروع)
রওʼউ এর অর্থ হলো: হৃদয়ে ভয় বা আতঙ্কের অনুভূতি। কুরআনে একবার এসেছে:
{যখন ইব্রাহিমের কাছ থেকে আতঙ্ক দূর হয়ে গেল} (হূদ: ৭৪)

৮. আল-ফারক (الفرق)
ফারক মানে হলো: প্রচণ্ড ভয়। কুরআনে তা এসেছে একবার:
{তারা (মনাফিকরা) এমন এক সম্প্রদায় যারা ভয় পায়} (আত-তাওবা: ৫৬)

৯. আল-ফাযা‘ (الفزع)
ফাযা‘ অর্থ: হঠাৎ ভীত হওয়া, আতঙ্ক। কুরআনে তা এসেছে ৬ বার:
{তাদেরকে মহাআতঙ্ক কষ্ট দিবে না} (আল-আম্বিয়া: ১০৩)

১০. আল-হালাআ‘ (الهلع)
হালাআ‘ মানে হলো: সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ের অস্থিরতা ও আতঙ্ক। কুরআনে একবার:
{নিশ্চয় মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে হালুআ (অস্থির প্রকৃতির)} (আল-মাʼআরিজ: ১৯)

১১. আল-ওয়াজাফ (الوجف)
ওয়াজাফ অর্থ: কম্পন, হৃদয়ের কাঁপুনি। কুরআনে তা এসেছে একবার: 
{সেদিন অনেক হৃদয় কাঁপবে} (আন-নাযিʼআত: ৮)

১২. আল-ওয়াজাল (الوجل)
ওয়াজাল মানে হলো: চিত্তে ভয়ের অনুভূতি। কুরআনে তা এসেছে ৫ বার। যেমন, 
{যারা তাদের রবের যিকিরে ভীত হয়} (আল-হাজ্জ: ৩৫)

 

কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য:

 

১. খাওফ ও ওয়াজাল এর মধ্যে পার্থক্য
খাওফ: নিরেট ভয়ের অনুভব।
ওয়াজাল: সেই ভয় যার মধ্যে আত্মগ্লানি, কম্পন, আত্মবিস্ময় কাজ করে।

২. খাওফ ও রাহবা এর পার্থক্য
খাওফ: ভয় পাওয়ার সাধারণ অবস্থা।
রাহবা: সেই ভয় যা মানুষকে পালাতে বা গোপন হতে প্ররোচিত করে।

৩. খাওফ ও খাশইয়া এর পার্থক্য
খাওফ: কেবল ভয় (অন্তরাত্মায় সম্ভাব্য ক্ষতির অনুভব)।
খাশইয়া: জ্ঞান থেকে উদ্ভূত শ্রদ্ধাভয়ে কাঁপা।

৪. খাওফ ও হাযার এর পার্থক্য
খাওফ: এমন কিছুর ভয়, যা ঘটতে পারে।
হাযার: সাবধানতা অবলম্বন, এমনকি তা নিশ্চিত হুমকির ক্ষেত্রেও কার্যকর।

৫. খাওফ ও ফাযা‘ এর পার্থক্য
খাওফ: ধীরে গঠিত মানসিক অবস্থা।
ফাযা‘: হঠাৎ ভয়, যা তাৎক্ষণিক বিস্ময় সৃষ্টি করে।

৬. আল-জাযা ও আল-হালাআ‘ এর পার্থক্য
জাযা: সাধারণ আতঙ্ক বা অস্থিরতা।
হালাআ‘: সেই জাযা যা অতিমাত্রায় বাড়ে এবং দুর্বহ হয়ে ওঠে।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid0o7HDxzu2bSEhmeiqT2b8qLfGyMTF5bNfVKZXuV2k4YeomYbK4CmmpYomHkZRjZyCl
কোনো প্রসিদ্ধ ইমাম কর্তৃক কোনো সহীহ হাদীস না গ্রহণ না করা

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ্ বলেছেন:

“যদি কোনো ফকীহের একটি মতামত পাওয়া যায়, যার বিপরীতে সহীহ হাদীস পাওয়া যায় — তাহলে হাদীসটিকে গ্রহণ না করার জন্য তার অবশ্যই কোনো ওজর থাকবে। কোনো ফকীহ যখন কোনো হাদীস গ্রহণ না করেন, তার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকে। সেগুলো হলো:

প্রথম কারণ:

হাদীসটি ঐ ফকীহের কাছে পৌঁছায়নি।
যার কাছে হাদীস পৌঁছেনি, তাকে তা অনুযায়ী আমল করার জন্য দায়িত্ববান করা যায় না। যদি তার কাছে হাদীসটি না পৌঁছে থাকে এবং সে ঐ বিষয়ে কুরআনের কোনো আয়াত, অন্য কোনো হাদীস, কিয়াস অথবা ইস্তিসহাবের ভিত্তিতে কোনো ফতোয়া দিয়ে থাকেন — তাহলে কখনো তা হাদীসের সাথে মিলতে পারে, আবার কখনো বিরোধ করতেও পারে।
এটাই সবচেয়ে বেশি ঘটে সালাফদের অনেক বক্তব্যের ক্ষেত্রে যেগুলো কিছু হাদীসের বিরোধী মনে হয়; কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর সকল হাদীস সম্পর্কে কারো পূর্ণ জ্ঞান ছিল না।

দ্বিতীয় কারণ:

হাদীসটি ফকীহের কাছে পৌঁছেছে, কিন্তু তা তার নিকট সহীহ সাব্যস্ত হয়নি।

তৃতীয় কারণ:

ফকীহের ইজতিহাদ অনুযায়ী হাদীসটি দুর্বল — যদিও অন্য কেউ তার সঙ্গে একমত নন।

চতুর্থ কারণ:

উক্ত ফকীহ হাদীস বর্ণনাকারী ‘আদল’ (ন্যায়বান) এবং হিফজ (স্মরণশক্তি)-সম্পন্ন রাবির ক্ষেত্রে এমন কোনো শর্ত রেখেছেন যা অন্য কেউ মানেননি।

পঞ্চম কারণ:

হাদীসটি ফকীহের কাছে পৌঁছেছে এবং তা তার নিকট সহীহও হয়েছে — কিন্তু তিনি হাদীসটি ভুলে গেছেন।

ষষ্ঠ কারণ:

হাদীসটির অর্থ বা দিকনির্দেশনা ফকীহ বুঝতে পারেননি।

সপ্তম কারণ:

ফকীহ মনে করেন হাদীসে কোনো দালালাত (প্রামাণ্য ইঙ্গিত) নেই।
এটি আগের কারণ থেকে ভিন্ন, কারণ আগেরটিতে দিকনির্দেশনা বোঝেননি, আর এখানে দিকনির্দেশনা বুঝেছেন, কিন্তু সেটাকে সঠিক দালালাত মনে করেননি।

অষ্টম কারণ:

ফকীহ মনে করেন, হাদীসটির যে দালালাত আছে তা বাতিল হয়ে গেছে অন্য কোনো প্রমাণ দ্বারা; যেমন:
১) সাধারণ অর্থকে নির্দিষ্ট অর্থ দ্বারা বিশেষায়িত করা,
২) মুক্ত বক্তব্যকে সীমাবদ্ধ করা,
৩) সাধারণ আদেশকে এমন প্রমাণ দ্বারা বাধ্যতামূলক না রাখা,
৪) আসল অর্থকে রূপক অর্থ দ্বারা প্রতিস্থাপন — 
বস্তুত এসব বিরোধের বিষয় অনেক বড় ও বিশাল একটি অধ্যায়।
শারঈ নস বা বক্তব্যসমূহের মধ‍্যকার ইঙ্গিতসমূহের বিরোধ ও পরস্পরকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পদ্ধতি এক বিরাট সাগরের মতো।

নবম কারণ:

ফকীহ মনে করেন, হাদীসটি এমন কিছুর সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হয়েছে যা তার দুর্বলতা, রহিত হওয়া, অথবা ভিন্ন কোনো ব্যাখ্যা থাকার প্রমাণ বহন করে, যদি সেখানে ব‍্যাখ‍্যার সুযোগ থাকে— তবে সে ব‍্যাখ‍্যা থাকার বিষয়টি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণযোগ্য হতে হবে; যেমন: অন্য আয়াত, অন্য হাদীস, বা ইজমার বিরোধী হওয়া।

দশম কারণ:

ফকীহ হাদীসটির বিরোধিতা করেছেন এমন কিছু দিয়ে, যা তার নিকট দুর্বলতা, নাসিখ (রহিতকারী) বা ব্যাখ্যা থাকার দলীল — কিন্তু অন্য কেউ সেটিকে দলীল মনে করেন না, বা প্রকৃতপক্ষে তা উপযুক্ত বিরোধী নয়।
যেমন: অনেক কূফী আলিম সহীহ হাদীসের বিরোধিতা করেছেন কুরআনের ‘জেনারেল’ অর্থ দ্বারা এবং তারা মনে করেন কুরআনের সাধারণ অর্থ হাদীসের ‘নাস’ (স্পষ্ট ভাষ্য)-এর ওপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত।

তথ্যসূত্র:

মাজমূ‘ ফাতাওয়াঃ ইবনু তায়মিয়াহ, ২০তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৯–২৫০।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid02PbUWnD93MSwAAT1KCgSN5Bin88yY5qXCNVrsJ6NrDPAKxpz2WRLS1ZW7ncdKzybvl
উসূলের (মূলনীতি বিষয়ক) কিছু সাধারণ নিয়ম

উসূলের (মূলনীতি বিষয়ক) কিছু সাধারণ নিয়ম

মানুষের আদত বা অভ্যাস ও প্রথার বিষয়ে মূলনীতি হলো: তা হালাল — যতক্ষণ না হারামের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়।

ইবাদতের বিষয়ে মূলনীতি হলো: কেবল শরী‘আতের দলীলযুক্ত ইবাদতই গ্রহণযোগ্য — দলীল ছাড়া কোনো ইবাদত বৈধ নয়।

মানুষের বিষয়ে মূলনীতি হলো: প্রত্যেক ব্যক্তি দোষমুক্ত (নির্দোষ) — যতক্ষণ না তার অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়।

অদৃশ্য বিষয়ে (গায়েব সম্পর্কে) মূলনীতি হলো: কেবল শরী‘আতের অনুমোদিত খবরই গ্রহণযোগ্য — দলীল ছাড়া বিশ্বাসযোগ্য নয়।

বস্তু বা জিনিসপত্রের বিষয়ে মূলনীতি হলো: তা পবিত্র (পবিত্র ধরা হবে) — যতক্ষণ না অপবিত্রতার প্রমাণ পাওয়া যায়।

ইবাদত করার ব্যাপারে মূলনীতি হলো: অন্য কেউ কারো পক্ষ থেকে ইবাদত করতে পারে না।

নারী সম্ভোগ বিষয়ক মূলনীতি হলোঃ হারাম হওয়া, যতক্ষণ না শরীআতের নীতি মেনে হালাল করা হয়। 

লেনদেন বিষয়ক মূলনীতি হলোঃ ধোঁকা, অজ্ঞতা, প্রতারণা, ক্ষতিকর, সুদ সম্পৃক্ততা, ঝগড়া উৎপাদনকারী না হলে তা বৈধ। 

ইবাদত যদি নির্ধারিত সময়ে আদায় করা হয়, তবে তাকে “আদায় (أداء)” বলে, আর নির্ধারিত সময়ের পরে আদায় করলে তাকে “ক্বাযা (قضاء)” বলে — এবং ক্বাযা করার বৈধতা একমাত্র শরী‘আতের দলীল দ্বারা প্রমাণিত হলে তবেই তা বৈধ।

যদি কোনো ফরয (ওয়াজিব) কাজ ও মুস্তাহাব কাজ পরস্পরের বিরোধে পড়ে, তবে ফরযকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

যদি ফরযে কিফায়া ও ফরযে ‘আইন সংঘাতে পড়ে, তবে ফরযে ‘আইনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

যদি দুইটি ক্ষতিকারক বিষয়ের কোনো একটিকে বাছাই করে নিতে হয়, তবে কম ক্ষতিকরটিকে বেছে নিতে হবে।

যদি একটি মুস্তাহাব ইবাদতের সময় অনেক প্রসারিত হয় আর অন্যটি সময়সীমায় সংকীর্ণ হয়, তবে সংকীর্ণ সময়ের মুস্তাহাব ইবাদতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে— একই বিধান ফরয ইবাদতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

ক্ষতি দূরীকরণকে লাভ আনয়নের চেয়ে অগ্রগণ্য করতে হবে, তবে যদি লাভটি অধিকতর প্রাধান্যপ্রাপ্ত স্বার্থ সংরক্ষণ করে এমন হয়, তাহলে সেটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া যায়।

যখন কেউ কোনো ফরয কাজ করতে অপারগ হয়, তখন সেটি থেকে তার দায়িত্ব সরে যায়।

হারাম কাজ কোনো নিরুপায় (ضرورة) অবস্থায় হালাল হয়ে যেতে পারে, তবে তা কেবল প্রয়োজনীয়তার পরিমাণ অনুযায়ী — এর বেশি বাড়ানো যাবে না।

কুরআন ও হাদীসের নির্দেশের মূলনীতি হলো: তা ওয়াজিব, যতক্ষণ না কোনো দলীল তা মুস্তাহাবে পরিণত করে।

আর কুরআন ও হাদীসের নিষেধাজ্ঞার মূলনীতি হলো: তা হারাম, যতক্ষণ না কোনো দলীল তা মাকরুহে পরিণত করে।

 


এবং (জেনে রাখা দরকার যে), হক (সত্য) হলো — যা কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। মানুষ কী বলেছে বা কী করেছে, সেটা কখনো হক নয়।
বেশিরভাগ মানুষের কোনো কিছু করা বা বলা — সত্যতার প্রমাণ নয়। কারণ, হক নির্ভর করে দলীলের ওপর — মানুষের সংখ্যার ওপর নয়।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid0onVtaLkwPPRDm2oLZWxDip2gxWEazshoUV7wymLJMQ6guG3V8ei79QkNryWysDDsl

হাদীস দুর্বল হওয়ার কারণসমূহ


দুনিয়ায় যত দুর্বল হাদীস আছে, সব কিছুর দুর্বলতার কারণ মূলত চারটি বিষয়ের বাইরে নয়—এর তিনটি বর্ণনাকারীদের সঙ্গে সম্পর্কিত, একটি সনদের সঙ্গে সম্পর্কিত:

১. (বর্ণনাকারীর দুর্বলতা): তার হিফজ (মুখস্থশক্তি) বা ইনসাফ/আদালতের ক্ষেত্রে কোনো দোষ থাকলে।

২. (বর্ণনাকারীর অজানা হওয়া): অর্থাৎ, তাকে ইনসাফ বা সমালোচনার ভিত্তিতে চেনা না গেলে।

৩. (বর্ণনাকারীর বিরোধিতা করা): যেমন, ‘মুʿআল্লাল’ (ত্রুটিযুক্ত) হাদীস, যার বিভিন্ন প্রকার রয়েছে।

৪. (সনদের মধ্যে ছেঁটে যাওয়া/সঙ্কোচন): এটি ছয় রকম—মুরসাল, মুʿআল্লাক, মুʿদ্বাল, মুনকাতিʿ, মুদাল্লাস, এবং মুরসাল খাফি।


উপরোক্ত চারটি কারণকে সংক্ষেপে হাফিয ইবনু হাজার রাহিমাহুল্লাহ মাত্র দুইটি প্রধান শ্রেণিতে সংক্ষিপ্ত করেছেন:

১. (বর্ণনাকারীর সমালোচনা): এর মধ্যে রয়েছে—বর্ণনাকারীর দুর্বলতা, অজানা হওয়া এবং তার বিরোধিতা করা।

২. (সনদের ছেঁটে যাওয়া): যার মধ্যে পূর্বোক্ত ছয়টি ধরন অন্তর্ভুক্ত।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid0j4P5jeNdBJrSEUKQgeoFUUSaZUPfqWu9EEvL2VSQo2mmo3fecScpLQf5bQP9vNTPl
তালাক, খোলা এবং ফসখ-এর মধ্যে পার্থক্য

তালাক (الطلاق) খোলা (الخلع) ফসখ (الفسخ)

সংজ্ঞা কী?

তালাক হলো স্বামীর নির্দিষ্ট কিছু বলা বা তার সমতুল্য এমন কিছু যার মাধ্যমে দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে যায়, স্ত্রী রাজি হোক বা না হোক। খোলা হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ, যেখানে স্ত্রী মুক্তির জন্য কিছু দিয়ে থাকে (মহর বা অন্য কিছু), এমনকি মহরের চেয়ে বেশি হলেও। ফসখ হলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া বিচারকের রায়ের মাধ্যমে, বা স্বাভাবিক কারণবশত চুক্তি বাতিল হয়ে যাওয়া।

কীভাবে সংঘটিত হয়?

তালাক কেবল স্বামীর কথায় বা তার প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে। খোলা স্ত্রীর পক্ষ থেকে অনুরোধে হয়, স্বামী গ্রহণ করলে কার্যকর হয়। ফসখ কেবল বিচারকের রায়ের মাধ্যমে হয়।

কোন প্রকার বিচ্ছেদ হয়?

তালাক রাজঈ (رجعي) বা বাইন (بائن) হতে পারে। খোলা সর্বদা বাইন (চূড়ান্ত বিচ্ছেদ)। ফসখও সর্বদা বাইন (চূড়ান্ত বিচ্ছেদ)।

স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার বিধান কী?

তালাকের ক্ষেত্রে স্বামী ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারে যদি তালাক রাজঈ হয়। খোলার পর স্বামী স্ত্রীর কাছে ফিরে যেতে পারে না, তবে নতুন চুক্তি ও মহরের মাধ্যমে পুনরায় বিয়ে করতে পারে।ফসখ হলে নতুন বিয়ে ছাড়া ফিরে আসা সম্ভব নয়।

কোনটি কার অধিকার?

তালাক স্বামীর অধিকারের মধ্যে পড়ে। খোলা স্ত্রীর অধিকারের মধ্যে পড়ে। ফসখ বিচারকের অধিকারের মধ্যে পড়ে।

কোনটিতে তালাকের সংখ্যা যোগ হ‍য়?

তালাক তালাকের সংখ্যায় যোগ হয়। খোলা তালাকের সংখ্যায় যোগ হয়। ফসখ তালাকের সংখ্যায় যোগ হয় না।

কোনটির ইদ্দত কখন শুরু হবে?

তালাকের ইদ্দত শুরু হয় উচ্চারণের সময় থেকে। খোলার ইদ্দত শুরু হয় ঘটনার সময় থেকে। ফসখের ইদ্দত শুরু হয় বিচারকের রায়ের সময় থেকে।

আর্থিক লেনদেন কী হবে?

তালাকের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে কিছু দিতে হয় না। খোলার ক্ষেত্রে স্ত্রী তার স্বামীকে মহর ফেরত দিয়ে বা অন্য কিছু দিয়ে স্বামীকে মুক্তি নেয়। ফসখে স্ত্রীকে কিছু দিতে হয় না।

https://www.facebook.com/abubakar.m.zakaria/posts/pfbid02MESXAGQd71RoxxS3nLu7bHLLdk2RvYooZTT6RRswL8cPbkWAuYPuTVhBAPrQgibPl
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে